বিখ্যাত সফল উদ্যোক্তাদের ৮টি অবাক করা গুণাবলী একজন সফল উদ্যোক্তার গুণাবলী আসলে কি! আপনি যদি বিখ্যাত সফল উদ্যোক্তাদের জীবনী পড়ের তাহলে, দেখবেন প্রত্যেকের মাঝে কমন কিছু গুণাবলী রয়েছে। আর, তাদের ব্যবসায়ে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে এসব গুণাবলী আঠার মত কাজ করেছে।
আপনি যদি সফল হতে চান তাহলে, একজন সফল উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য আপনার মাঝে ধারণ করতে হবে। আমরা এখানে সফল ব্যক্তিদের জীবনী থেকে নেয়া কিছু গুণাবলী আলোচনা করেছি।
প্রত্যেক সফল উদ্যোক্তা সফলতা পাওয়ার পূর্বে জীবনের কঠিন পথগুলো পারি দিয়েছেন। আর, এই কঠিন সময়গুলো কাটিয়ে উঠতে নিচের গুণাবলীগুলো অনেক সাহায্যে করেছে। ইতোমধ্যে আমরা পৃথিবীর বিখ্যাত ৫ জন সফল উদ্যোক্তার সেরা ৫টি বৈশিষ্ট্য আলোচনা করেছি। এবার বিখ্যাত সফল উদ্যোক্তাদের ৮টি অবাক করা গুণাবলী জানা যাক।
একজন সফল উদ্যোক্তার গুণাবলী
১. সফল উদ্যোক্তারা জানে কখন ‘না’ বলতে হয়
আপনি যখন একজন উদ্যোক্তা হয়ে যাবেন, তখন আপনার সামনে অনেক সুযোগ আসবে। সুযোগ হাতছাড়া করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তবে, কোন সুযোগটি নিতে হবে আর কোন সুযোগটি বাদ দিতে হবে এটা জানা জরুরি। পৃথিবীতে অনেক উদ্যোক্তা ব্যর্থ হয়েছে শুধু মাত্র ‘না’ বলতে না পারার কারণে। তার, সুযোগ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে চিন্তা করেনি, এটা তাদের জন্য উপকারী কিনা।
যাই হোক এক্ষেত্রে, মাস্টার ছিলেন সফল উদ্যোক্তা স্টিভ জবস। স্টিভ জবস জানতেন কখন ‘না’ বলতে হয়। ১৯৯৭ সালে অ্যাপেল কোম্পানিতে তিনি যখন পুনরায় আগমন করেন, তখন কোম্পানির ৩৫০টি পণ্য ছিল। কিন্তু জবস ২ বছরে ১০টির মত প্রোডাক্ট বাদ করেন। তিনি ঐ ১০টি প্রোডাক্ট ‘না’ কারার মাধ্যমে, অ্যাপেলের লাভবান প্রোডাক্টগুলোতে ফোকাস করতে পেরেছিলেন।
২. সফল উদ্যোক্তারা জানে কিভাবে ভাল টিম গঠন করতে হয়
আপনি যদি সফল উদ্যোক্তা হতে চান, তাহলে আপনি খুব দ্রুত বুঝতে পারবেন আপনি নিজেই সবকিছু করতে পারবেন না । এটি একটি শারীরিক অসম্ভবতা। একজন মানুষের পক্ষে কখনও সব বিষয়ে এক্সপার্ট হওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া, যে কোন মানুষ, সে যতই বুদ্ধিমান, শিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ হোক না কেন, নিজেদের দ্বারা কখনও সফলভাবে কোম্পানি চালানোর সম্ভব নয়।
সফল উদ্যোক্তাদের অধিকাংশ উদ্যোক্তা বিশ্বস্ত, সৃজনশীল এবং দক্ষ মানুষের টিম গড়ার মাধ্যমে সফলতা পেয়েছে। এই টিম হতে পারে ২ জন কিংবা তারও বেশি। সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে অন্যদের সাথে কাজ করা, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে।
আমরা এখন যে উবার দেখি এটা কিন্তু ৫ বন্ধু ফিলিপ ক্রিম, নিল পারিখ, টি. লিউক শেরউইন, গ্যাব্রিয়েল ফ্ল্যাটম্যান এবং জেফ চ্যাপিন এর উদ্যোগ।
- মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার বন্ধুদের সাথে নিয়েই। তার টিম ওয়ার্ক সফল হওয়ার পরেও বাদ যায়নি। অনিক্কা ফ্রেগোড্ট নামে নারী ইঞ্জিনিয়ার সাত বছর ধরে তার সহকারী ছিলেন। মার্ক জুকারবার্গ সফলতার অংশীদার। তাইতো তিনি তাকে, “ফেসবুকের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মহিলা” হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।
অ্যাপল সিইও, টিম কুক এর কথায় ধরুন। তিনি খুব ক্যারিশমেটিক নেতা ছিলেন না। কিন্তু তারপরেও স্টিভ জবস কুকের উপর নির্ভর করেছিলেন। এটাই টিম ওয়ার্ক।
৩. সফল উদ্যোক্তারা প্রত্যেকের পরামর্শের গুরুত্ব দেয়া
যারা স্টিভ জবস সম্পর্কে বা তার জীবনী যারা পড়েছেন তারা জানেন, তিনি কতটা কঠিন কাজ করেছেন। এই কঠিন সময়গুলোতে তাকে আত্মবিশ্বাসী করে ছিল তার মেধাবী টিম তথা সহকর্মীরা। তার সহকর্মীরা ছিল অত্যন্ত মেধাবী। যারা পর্দার অন্তরালেই কাজ করতো। স্টিভ জবসকে পরামর্শ ও আইডিয়া প্রদান করতো।
রিচার্ড ব্র্যানসন তার তিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের নীতির থেকে বলেন,
′অন্যের নিকট থেকে শোনা আমাদের একে অপরের কাছ থেকে শিখতে সক্ষম করে।”
৪. সফল উদ্যোক্তারা ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত থাকে
আপনি যদি অবিবেচক হন তাহলে, আপনি কখনো সাফল্য পাবেন না। আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে। সবসময় মেনে নিতে হবে যে সেখানে ব্যর্থতা থাকবে, পাশাপাশি সাফল্যও থাকবে। প্রায় প্রত্যেক সফল উদ্যোক্তার জীবনের কিছু ব্যর্থতার গল্প থাকে।
স্টিভ জবস কে এক পর্যায়ে অ্যাপল বোর্ড সিইও হিসেবে বহিষ্কার করেছিলেন। বহিষ্কার পরবর্তী সময় তিনি নেক্সট এবং পিক্সার উন্নয়নে ব্যয় করেছিলেন। তারপর তিনি অ্যাপেলের মন জয় করেছিলেন এর মাধ্যমে।
স্টিভ জবস তার নির্মিত সফল কোম্পানি থেকে ব্যর্থ হয়ে মন হারায়নি। এটা শুধুমাত্র তাকে ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করতে এবং আরও সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
৫. লক্ষ্যে দিকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ
অনেক মানুষ আসলে জানেই না, তারা আসলে কিসে আগ্রহী বা কি করতে ভাল লাগে। সফল উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এটা ভিন্ন। তারা জানে তাদের আগ্রহ এবং লক্ষ্য। আর তাই তারা লক্ষ্য পূরণে দৃঢ়
প্রত্যয়ী হ গ্রাহাম ইয়ং, প্যাশনে ১০১ এ বলেন,
শুধুমাত্র সফল উদ্যোক্তারা তাদের লক্ষ্য কি তা নির্ধারণ করে না, তারা তা সফল করার জন্য মনে প্রাণে পরিশ্রম করে যায়।
৬. অত্যন্ত কৌতূহলী
থমাস এডিসন থেকে আমরা কখনই ফোনোগ্রাফ, মোশন পিকচার ক্যামেরা কিংবা দীর্ঘস্থায়ী বৈদ্যুতিক বাল্ব পেতাম না, যদি সে কৌতূহলী না হত ।
ইনোমের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও নবীন জৈন, তার পোস্টে এই বৈশিষ্ট্যের সারমর্ম তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল যারা বড় স্বপ্ন দেখে। তিনি বলেন,
′′ তোমার সবসময় নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে পাগলাটে আইডিয়া থেকে সফলতার শুরু হয়। ′′
কৌতূহল যেকোনো সফল উদ্যোক্তার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। সফল উদ্যোক্তারা তাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া কর্মকাণ্ডের প্রতি উদাসীন হয়ে থাকে না। তারা, নতুন বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে থাকে। নতুন কিছুতে বিনিয়োগ করে কৌতূহলের অবসান ঘটায়।
৭. শেখার মধ্যে থাকে
সফল উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে একটি সাধারণ ভুল ধারণা হল, “তারা প্রায়ই অহংকারী হয় এবং বিশ্বাস করে যে তারা সবকিছু জানে।” আপনার মধ্যে যদি এই ধারণা থাকে তাহলে, আজই তা পরিহার করুন। এটা সত্য, অধিকাংশ সফল উদ্যোক্তারা প্রথম স্বীকার করেন যে তারা এটা জানেন না। কিন্তু, তারা সেই অজানা বিষয়টিকে খুব দ্রুত আয়ত্তে নিয়ে আসে।
সত্যিকার অর্থে সফল হতে হলে জীবনে অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হয়। নতুন কিছু শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। রিচার্ড ব্র্যানসন বলেন,
′′ শেখা এবং নেতৃত্ব একসাথে যায়। সাফল্যগুলো ঘটে কাজ করা এবং শেখার মাধ্যমে।”
৮. সফল উদ্যোক্তারা পরিবার ও ব্যবসায়ের মধ্যে ব্যালেন্স রাখতে পারে
সফল উদ্যোক্তারা জানেন যে তাদের ব্যবসা চালানোর চেয়ে জীবনে অনেক বেশি কিছু আছে। তারা তাদের পরিবারের সাথেও আনন্দ ও গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যয় করে। তারাও বিরতি নেয় এবং ছুটি নেয়।
ওয়ারেন বাফেটকে একবার একসভায় এমবিএ শিক্ষার্থীরা জিজ্ঞাসা করছিল তার সাফল্যের কারণ। তিনি বলেন,
তার সফলতার দুটি কারণ ছিল,
- তিনি সঠিক স্ত্রী বাছাই করছেন
- নিউ ইয়র্ক শহরে যাওয়ার পরিবর্তে নেব্রাস্কায় অবস্থান করা।
আপনার জীবনের সম্পূর্ণ সময়টা ব্যবসায়ের পেছনে দিয়ে দেয়ার অর্থ হল হলও আপনি ব্যবসায়ে হয়তো সফল কিন্তু জীবনের দিক দিয়ে ব্যর্থ। কারণ মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ থেকে আপনি বঞ্চিত হয়েছেন।
পরিশেষে
রিচার্ড ব্র্যানসন, স্টিভ জবস, ল্যারি পেজ, ওয়ারেন বাফেট এবং বিশ্বের সবচেয়ে সফল উদ্যোক্তাদের মধ্যে উপরে-উল্লেখিত প্রতিটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। সফল হতে, আপনিও নিজের মধ্যে এসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসুন। এছড়া, কিভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায় এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন।
Comments (No)