বর্তমানে বাংলাদেশের ক্রীড়া অঙ্গনের মধ্যে সবচেয়ে ধনী হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। যার ফলে এ বোর্ডটি রাজকীয় ভাবেই চলে থাকে। যেখানে দেশের অন্য সকল ফেডারেশন অর্থের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) দিকে তাকিয়ে তাকে, আর উল্টো চিত্র বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র। প্রতি বছরে বিসিবির আয় কত?
বিসিবি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) থেকে কোন বার্ষিক অনুদান নেয় না। বরং তারা অন্য ফেডারেশনকে টাকা দিয়ে বিপদের সময় সহায়তা করে থাকে। এই রাজকীয় বোর্ডের সদস্য হওয়ার জন্য কতইনা দেন দরবার চলে। কারণ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া যায় সহজেই। সেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র আয়ের খাত ও টাকার পরিমান দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। যা অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানে। এটি ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য ভাল দিক। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আশা করছে চলতি অর্থ বছরে (২০১৭-১৮) ২৪০ কোটি টাকার ওপরে তাদের আয় হবে। সেভাবে তারা কাজ করছে।
২০১৪ সালে এককভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করার পর ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ২২৯ কোটি ৫ লাখ ৪ হাজার ৮৫২ টাকা আয় করে রেকর্ড করেছিল। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অতীতের সেই রেকর্ডকে পিছনে ফেলতে চাচ্ছে। চলতি অর্থ বছরে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) কোন বড় আসর আয়োজনের সুযোগ না পাওয়ার পরও ২৪০ কোটি ৩৬ লাখ ৪২ হাজার ৫১৩ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আর আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে নীট মুনাফা হবে ৬২ কোটি ৭৫ লাখ ১৮ হাজার ৯২৫ টাকা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র আয় ও ব্যয়ের পার্থক্য দেখলে বুঝা যায় তাদের বার্ষিক বাজেট কত।
গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র পরিচালনা পরিষদের সভায় তাদের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র সূত্র থেকে জানা যায়, আয়ের খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থ আসে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি)’র টেস্ট ফান্ড থেকে। এই খাত থেকে চলতি অর্থ বছরে ৭২ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এই খাত থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পেয়েছিল ৭০ কোটি ২ লাখ টাকা। আয়ের খাতে দ্বিতীয় বড় অর্থ আসে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) থেকে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই আসর থেকে ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই খাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র আয় ছিল ৪৪ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক গচ্ছিত ফিক্সড ডিপোজিটের সুদ থেকে ৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয়ের কথা ভাবছে কর্তাব্যক্তিরা। গত অর্থ বছরে এই খাত থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র আয় হয়েছিল ৩২ কোটি টাকা। এতেই অনুমেয় বিভিন্ন ব্যাংকে কত টাকা রয়েছে। জাতীয় দলের বিভিন্ন স্পন্সর থেকে আয় সেখানে ৩৯ কোটি ৮৮ লাখ ৫২ হাজার ৫১৩ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এই খাত থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র আয় করেছিল ২৯ কোটি ৭১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪২ টাকা।
গত অর্থ বছরের মতো চলতি অর্থবছরেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইনস্টেডিয়া রাইটস বিক্রি থেকে ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
২০১৮ সালে এশিয়া কাপ ক্রিকেট হলে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অংশগ্রহনের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র তহবিলে জমা হবে ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
তবে এই অর্থ বছরে টেলিভিশন সম্প্রচার সত্ত্ব থেকে আয়ের পরিমান হতাশাজনক। অষ্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ এবং শ্রীলংকার বিপক্ষে আসন্ন ২ ম্যাচের টেস্ট এবং ২ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ থেকে আয় হতে পারে ১১ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
গত ৮ অর্থ বছরে টেলিভিশন সম্প্রচার সত্ত্ব থেকে আয়ের এই অঙ্ক তৃতীয় সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ছাড়া বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে তেমন কোন আয়ের সম্ভাবনা নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র। মূলত বিদেশী টুর্ণামেন্ট থেকেই বেশী আয় করে থাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র।
দেশের বিভিন্ন টুর্নামেন্ট থেকে মাত্র ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আয়ের আশা করছে তার। ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক প্রথম শ্রেনীর আসর বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগ (বিসিএল), দেশের প্রথম শ্রেনীর আসর জাতীয় ক্রিকেট লীগ (এনসিএল) থেকে এই পরিমান আয়ের কথা ভাবছে তারা। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের জৌলুস হারিয়েছে অনেক আগেই, তার প্রভাব পড়েছে এই অর্থ বছরে। চলতি অর্থবছরেও বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হবে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ এবং ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের অন্য সব আসরগুলো।
এই খাত থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র আয়ের লক্ষ্যমাত্র মাত্র ৭০ লাখ টাকা। তবে এটা ঠিকবাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ঘরোয়া ক্রিকেট আয়োজন করলেও স্পন্সরের দিকে তাদের তেমন কোন নজর থাকে না। ঘরোয়া ক্রিকেটের দিকে একটু নজর দিলেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র বার্ষিক আয় আরো বাড়বে। অন্য সকল দেশগুলো ঘরোয়া ক্রিকেট দিয়ে প্রচুর আয় করে থাকে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র ঘরোয়া কাঠামো তেমন শক্তিশালী নয়। ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচগুলো যদি টেলিভিশনে দেখানো যেত, তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বিসিবি আরো সমৃদ্ধশালী হতে পারত।
Comments (No)