সঙ্গত কারণেই লোনের জন্য উদ্যোক্তাদের প্রথম পছন্দ বাণিজ্যিক ব্যাংক। সব ধরনের ব্যবসার জন্যই বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা আছে। এসএমই ফাউন্ডেশন বর্তমানে ৩টি ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য ব্যাংক নিজেদের নিয়মকানুনের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মনীতিকে বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন খাতে ঋণ প্রদান করছে। নতুন ব্যবসার জন্য লোন পাওয়ার উপায়
আইডিএলসি স্টার্ট-আপ লোন ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে। ঋণটি ৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও বিনা জামানতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে।
উদ্ভাবন লোন হিসেবে সর্বনিম্ন ৫ লাখ, আনসিকিউরড লোন ২৫ লাখ, আংশিক সিকিউরড লোন সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা দেয় আইডিএলসি ফিন্যান্স। সর্বনিম্ন ১৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৬০ মাস পর্যন্ত এই ঋণের মেয়াদ। যারা বেসিসের সদস্য, তাঁরা এই ঋণ প্রাপ্তিতে বিশেষ সুবিধা পান। এ জন্য ব্যাবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ২ বছরের। তবে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১ বছরের অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট। উদ্যোক্তার বয়স হতে হবে ২০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে।
অন্যদিকে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক স্মল বিজনেস লোন সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা দেয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনও জামানতের প্রয়োজন হয় না। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৫ বছর, তবে ব্যবসার সময়কাল কমপক্ষে ১ বছর হতে হবে।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ লোন
মূলত যেসব নারী উদ্যোক্তা ক্ষুদ্র এবং কুটিরশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের আইএফআইসি উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর লোন দেওয়া হয়। এ জন্য একজন নারী উদ্যোক্তাকে কমপক্ষে ২ বছর সেই ব্যবসাটির সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।
ক্ষুদ্রঋণ
বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত এনজিও, যেমন গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা বাংলাদেশ ইত্যাদি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের আওতায় ঋণ প্রদান করে। তারা মূলত তৃণমূল পর্যায়ে এমন উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করে, যাঁদের জন্য ক্ষুদ্রঋণই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
স্টার্ট-আপের জন্য সরকারি প্রকল্প
বিভিন্ন সময় সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলমান সমস্যা সমাধানের উপায় খোঁজে। তাছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্টার্ট-আপের জন্য মূলধন দেওয়ার সুযোগও পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে একজন উদ্যোক্তা তাঁর আইডিয়াটি জমা দেন, তারপর কমিটি সেটি বিচার–বিশ্লেষণের পর গ্রহণ করলে তহবিল পাওয়া যায়। স্টার্ট-আপের অর্থায়নের জন্যে এ ধরনের সরকারি প্রকল্পগুলো বেশ কার্যকর। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় প্রায়ই এ ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়। এছাড়া অন্য যে কোন উপায় অবলম্বন করে অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব।
লোন পাওয়া যোগ্যতা
১। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হতে হবে।
২। আবেদনকারী ও গ্যারেন্টার উভয়েরই জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে।
৩। আবেদনকারী ও গ্যারেন্টার উভয়েরই সদ্য তোলা রঙিন ফটোগ্রাফ থাকতে হবে।
৪। ব্যাংকের নিজস্ব ফরম সংগ্রহকরণ এবং তা যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।
৫। আপডেট ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি থাকতে হবে।
৬। ব্যবসায়ের টিন নম্বর থাকতে হবে।
৭। ইউটিলিটি বিল যেমন-গ্যাস বিল, ইলেকট্রিক বিল, টেলিফোন বিল ইত্যাদির ফটোকপি থাকতে হবে।
৮। ফ্যাক্টরি স্থাপনার রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
৯। ট্যাক্স ও ভ্যাট, কোয়ালিটি সার্টিফিকেশন থাকতে হবে।
১০। ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন থাকতে হবে।
১১। আবেদনকারীর সম্পত্তির ভ্যালুয়েশন (যেখানে শিল্পটি প্রতিষ্ঠা করা হবে) ও সম্পত্তি নেয়া হলে তার বৈধ চুক্তিনামা থাকতে হবে।
১২। ব্যাংকের হিসাব নাম্বার এবং জামানত স্থিতি থাকতে হবে।
১৩। পৌরসভার বাসিন্দা হলে কমিশনারের সনদ। স্থানীয় পর্যায়ের হলে চেয়ারম্যান অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সনদ থাকতে হবে
১৪। লিমিটেড কোম্পানি হলে মেমেরেন্ডাম এবং আর্টিক্যাল অব এসোসিয়েশনের কপি এবং অংশীদারি প্রতিষ্ঠান হলে অংশীদারি চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি থাকতে হবে।
১৫। প্রতিষ্ঠান চালু থাকা অবস্থায় ঋণ গ্রহণে ইচ্ছুক হলে ব্যবসার ১ বছরের লাভ ক্ষতির হিসাব বিবরণী দেখাতে হবে।
১৬। প্রতি ব্যাংকের ফর্মে উল্লেখযোগ্য একটি দিক রয়েছে যাকে লেটার অব গেরান্টি বলা হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে দুইজন যোগ্য গেরান্টারের সনদ প্রদানের ব্যবস্থা রাখতে হয়।
১৭। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পূর্বে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ করে থাকলে তার হিসাবের একটি হালনাগাদ ও যথাযথ বিবরণ থাকতে হবে।
Comments (No)