চোরাবালির রহস্য

চোরাবালির রহস্য

১৯৬৪ সালে দুই বন্ধু জ্যাক আর ফ্রেড,
দুজনেই কলেজের ছাত্র, দক্ষিণ
ফ্লোরিডার অকিচবি হ্রদের
চারপাশের জলাজমির
মধ্যে পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ খুঁজছিল। হঠাত্ জ্যাকের পা নরম বালিতে ঢুকে গেল। সে তার
বন্ধুকে সতর্ক করতে বলল, সে যেন
আগে না আসে। কিন্তু
সে নিজে ধীরে ধীরে সেই
চোরাবালির মধ্যে ডুবে যেতে থাকল।তার বন্ধু ফ্রেড তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করল, কিন্তু সবই বৃথা গেল। চোরাবালির রহস্যজ্যাক কিছুক্ষণের মধ্যে চোরাবালির
ভেতরে লীন হয়ে গেল।
এটি একটি সত্য ঘটনা । অবাক হলেও
সত্য হলো—চোরাবালিরমধ্যে ফেঁসে গেছে শুধু মানুষই নয়, জন্তু-জানোয়ার, কার, ট্রাক
এমনকি আস্ত রেলের বগি পর্যন্ত
গায়েব হয়ে গেছে। ১৮৭৫ সালের
দিকে কলোরাডোর একটি ট্রেনলাইনচ্যুত
হয়ে চোরাবালিতে নিমজ্জিত হয়েছিল এবং ট্রেনটি ৫০ ফুট
গভীরে চলে গিয়েছিল
বলে জানা যায়। চোরাবালি কতটা বিপজ্জনক?
চোরাবালি পানি ও তরল
কাদা মিশ্রিত এমনই একটি গর্ত, এর
ফাঁদে একবার পা দিলে মানুষের আরনিস্তার নেই।
আস্তে আস্তে ডুবে যেতে হয় বালির ভেতর! সাধারণত
নদী বা সমুদ্রতীরে কাদা মিশ্রিত
বালির ভেতর এ গর্ত লুকানো অবস্থায়
থাকে। কোনো মানুষ যদি সেই গর্তের
ধারেকাছে যায়, তা হলে শরীরের
চাপে ওই বালি ক্রমে সরে যেতে থাকে।
ফলে মানুষ শত চেষ্টা করেও আর
ওপরে উঠতে পারে না। সময়মত কেউ
এগিয়ে না এলে ওই মানুষ নিশ্চিত
মৃত্যুকোলে ঢলে পড়ে। তবে অধিকাংশ
চোরাবালি সাধারণত মারাত্মক নয়। কিন্তু এটি প্রকৃতির একটি অদ্ভুতবিস্ময়। এই অদ্ভুত
জিনিসটাকে ভালোভাবে বোঝা দরকার। বালি এবং প্রবাহমান পানিই
হলো চোরাবালি
সাধারণত যখন বালি,
কাদা বা নুড়ি গর্ভস্থ পানির
প্রবাহের সান্নিধ্যে আসে, সেই
বালি বা নুড়ির দানাগুলোর মধ্যে যে ঘর্ষণ শক্তি থাকে তা কম
হয়ে যায়, আর সেই
বালি বা মাটি ভার সহ্য
করতে পারে না। এ ধরনের ব্যাপার
আমরা সমুদ্র সৈকতে দেখতে পাই।সমুদ্র ধারের বালিতে যদি কেউ দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে খানিকক্ষণ পর
দেখা যাবে যে ধীরে ধীরে তার
পা বালির ভেতর বসে যাচ্ছে। এটাও
এক ধরনের ছোটখাটো চোরাবালি।
তবে এ ধরনের চোরাবালির
গভীরতা মাত্র কয়েক ইঞ্চি হয়। তাই শুধু আমাদের পায়ের পাতা ডুবে। চোরাবালি কীভাবে হয়?সাধারণত মাটি বা বালির ভার সহ্য
করার ক্ষমতা থাকে না। প্রবাহমান
পানির কারণে বালি বা মাটির
দানাগুলোর মধ্যে ঘর্ষণ একদম
কমে যায়। পুরো জায়গা বেশ গভীর স্তর পর্যন্ত একরকম তরল অবস্থায়
চলে যায়। এ ধরনের চোরাবালির
গভীরতা যদি কয়েক মিটার
বা বেশি হয় তাহলে তা বিপজ্জনক।ধরনের
চোরাবালিতে ফেঁসে গেলে বেরিয়ে আসা খুব মুশকিল। হাত-
পা বালিতে আটকে যেতে পারে।
নিজে থেকে বেরিয়ে আসাটা প্রায়
অসম্ভব হয়ে যায়।
পুরোপুরি ডুবে যেতে পারে। অনেক সময়
এ ধরনের চোরাবালির গভীরতা বেশি না হলে মানুষ
পুরো ডুবে না গিয়ে অর্ধেক
ডুবে আটকে যেতে পারে। এ ধরনের
পরিস্থিতিও কিন্তু কম বিপজ্জনক নয়।পুরো না ডুবলেও ঠাণ্ডা, ভয়
বা ক্ষুধাজনিত কারণেও অনেক সময় মৃত্যু হতে পারে।
চোরাবালিতে আটকে গিয়ে বেরুতে না পেরে জানোয়ার
দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অনেক লোকের
মৃত্যু হয়েছে এমন ঘটনাও কিন্তু
ঘটেছে।
তাই যেসব জায়গায় চোরাবালি থাকার সম্ভাবনা আছে,
সেসব জায়গায়
একা একা বেড়াতে যাওয়া উচিত নয়।যেসব জায়গায় পানি বেশি, সেসব
জায়গায় চোরাবালি থাকার
সম্ভাবনাও বেশি। যেমন জলা, নদী, খাড়ি, সমুদ্রতীর এবং জলাভূমি—এসব
জায়গায় চোরাবালি থাকার
সম্ভাবনা বেশি। যেসব জায়গায়
ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহ থাকে,
সেখানে চোরাবালি থাকতেই পারে।
তবে মরুভূমিতে কখনও চোরাবালি থাকে না।
মরুভূমিতে অনেক বালি, কিন্তু
পানি নেই বলে চোরাবালি হয় না।চোরাবালি আমাদের ভূবিদ্যায় অনেক
কাজে লেগেছে। কিন্তু কেমন ভাবে?
আসলে প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই পৃথিবীতে চোরাবালি আছে। সেই
সময়কার যেসব জীব-
জন্তুরা চোরাবালিতে আটকে মারা গিয়েছিল
তাদের অবশেষ
মাটিতে থেকে ফসিলে পরিণত
হয়েছে। অনেকেই হয়তো ‘জুরাসিক পার্ক’
সিনেমাটি দেখেছেন। সেখানে অনেক
ডাইনোসরদের দেখানো হয়েছে। এসব
ডাইনোসর বা অন্য জন্তু-জানোয়ারদের
কথা আমরা জানতে পেরেছি তাদের
ফসিল/জীবাশ্ম থেকে। আর এসব জীবাশ্ম আমরা পেয়েছি সেই সময়কারপাথর থেকে।
আসলে চোরাবালিতে আটকে গিয়ে এসব
জীব-জন্তু মাটির তলায় তলিয়ে যায়।
মাটির ভেতরে আটকে যাওয়ার দরুন,
তাদের অবশেষ আবহাওয়ার ক্ষতি বা অন্য জানোয়ারের হাত
থেকে রক্ষা পেয়ে যায়। এই
চোরাবালি কয়েক লক্ষ বছর
পরে ধীরে ধীরে পাথরে পরিণত হয়।আজ আমরা যখন সেসব পাথর খুঁড়ে ফসিল
বের করি, তখন ডাইনোসরদের কথা জানতে পারি। চোরাবালিতে এভাবেই আটকে যায়


মানুষ
চোরাবালি কোথায়
আছে সেটা জানতে পারা খুব মুশকিল।
অনেক সময় চোরাবালির ওপর
শুকনো পাতা, ডালপালা পড়ে ঢেকে থাকে। অনেক
সময় চোরাবালির ওপর শুকনো বালির
স্তর পড়ে যায়, যাতে বোঝা যায়
না যে তার তলায় চোরাবালি আছে।চোরাবালি অনেক সময় পানির
তলাতেও হতে পারে। নদী পার হওয়ার সময় চোরাবালিতে আটকে গিয়ে মৃত্যুও
হতে পারে। চোরাবালিতে আটকে গেলে যা করতে হবে
—প্রথমত একদম অধৈর্য
হওয়া যাবে না। অধৈর্য হয়ে হাত-
পা বেশি নাড়লে আরও
বেশি আটকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
সবার মনে রাখা উচিত, চোরাবালি কিন্তু পানির চেয়ে অনেক
বেশি ঘন। তাই
চোরাবালিতে ভেসে থাকা বেশি সহজ।
—যদি কারও সঙ্গে কোনো ভারি বস্তু
থাকে, যেমন ধরুন—একটা ব্যাকপ্যাক,


তাহলে তা ছেড়ে দেয়া উচিত। কারণ এই ভারি বস্তুটি আরও বেশি দ্রুতনিচে টেনে ফেলতে পারে।
—বেশিরভাগ চোরাবালির
গভীরতা কম হয়। খানিকটা ডোবার পর
হয়তো পা তলায় আটকে যেতে পারে।
যদি তা না হয়, মানে যদি চোরাবালি খুব গভীর হয়
তাহলে পুরোপুরি ডুবে যাওয়ার
সম্ভাবনা থাকতে পারে।
সেক্ষেত্রে যেমন
পানিতে আমরা যেভাবে সাঁতার কাটি,
ঠিক সেভাবে নিজের শরীরকে যতটা সম্ভব অনুভূমিক
করে ফেলতে হবে। তারপর খুব
ধীরে ধীরে সাঁতরে চোরাবালির
বাইরে আসার চেষ্টা করতে হবে।

Online Income bd

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ