কেউ বলেন কাজী পেয়ারা আবার কেউ বলেন কেজি পেয়ার। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে কাজী পেয়ারা। পেয়ারটির আকার ক্ষেত্র বিশেষে এক কেজির কাছাকাছি বলে । কিন্তু না এটি ‘কাজী পেয়ারা’। স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যাচ্ছে, নতুল জাতের উচ্চফলনশীল পেয়ারাটি এদেমের মাটিতে ফলানোর পেছনে এই কৃষি বিজ্ঞানীর ভূমিকা কি ছিল। অথচ কি দূর্ভাগ্য এ জাতির, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর উদ্ভাবনী চেতনার আজ আমা শস্যদানা গিলে বেঁচে আছি, তাঁদেরকেই আমরা চিনিনা। কাজী পেয়ারা চাষ করেই হওয়া যাবে লাভবান।
কাজী পেয়ারা কথা বলছিলাম। নতুন জাতের এই পেয়ারটি এ দেশের মাটিতে ফলানোর চেষ্টা শুরু হয় যদ্দুর মনে পড়ে ‘৮৩’র প্রথমভাগ থেকে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের লেবু ও সব্জি বীজ গবেষণা কেন্দের বিজ্ঞানীদের প্রজেষ্টায় কলম থেকে এর বংশ বিস্তার শুরু হয়। স্বল্প সময়ে গাছে পলন আসে, আকারে বড় এবং খেতে সুস্বাদু বলে উফসি জাতের এই পেয়ারা জনগণের মাঝে বেশ পরিচিতি লাভ করে এবং কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের নার্সারির মাধ্যমে গোটা দেশে কাজী পেয়ারার চারা বিতরণ মপ্রসারিত হয়। পাশাপাশি নার্সারিগুলোও চারা উৎপাদন ও বিতরণের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
নরসিংদী আর কিশোরগঞ্জের ন্যায় সারা দেশের অনেক জেলাতেই এখন কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে কাজী পেয়ারার চাষ করছেন। বাংলাদেশে পেয়ারার জাতের মধ্যে কাঞ্চননগর ও স্বরুপকাঠী অন্যতম। বৃহত্তর বরিশালের স্বরুপকাঠি, বাসরী পাড়ার তাকলম ও মূলঘর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে স্বরূপকাঠী জাতের পেয়ারা বাগান। পেয়ারা, আমড়া ও নানার জাতের গাছের চারা উৎপাদন এ অঞ্চলের কৃষকের অন্যতম পেশা অথবাবলা চলে এগুলো তাদের অর্থকরী ফসল। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য এখানকার পেয়ারা বাগানগুলো অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তৈরী করা হয়েছিল। দু’ধারে লম্বালম্বি নালা মাঝাখানে উঁচু ভিটা-এই ভিটায়ই পেয়ারা বাগান। এভাবে পর্যায়ক্রমে একটার পর একটা ভিটা তৈরি করা হয়েছে। এ অঞ্চলে পেয়ারার চাষের ইতিহাস কয়েক শ’ বছরের হবে।
কাজী পেয়ারার কেন এত প্রস্রার ঘটালো? এর প্রধান কারণ হচ্ছে কাজী পেয়ারা খেতে বেশ মিষ্টি, কচকচে, সুস্বাদু, আকারে বড়, দেখতে সুন্দর। পাকা পেয়ারার রং হলদে সবুজ। ভিতরের শাস সাদা। বীচির সংখ্যা কম ও নরম। সর্বোপরি খদ্যেরপযোগী অংশের পরিমাণ যে কোন জাতের পেয়ারার চাইতে বেশী। দু’বছর বয়সের গাছ বছরে গড়ে ১২৮টির ও বেশী ফল দিয়ে থাকে যার গড় ওজন ৫৩ কেজির কিছু বেশী। প্রতি ফলের গড় ওজন ৪৪৫ গ্রাম এবং বড় আকারের ফল ৯৯০ গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের তৈরী কাজী পেয়ারা চাষ নির্দেশিকা থেকে এই তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হল-
মাটি
কাজী পেয়ারা চাষের জন্য হালকা বেলে থেকে ভারি এটেল মাটি উত্তম। খেয়াল রাখতে হবে যাতে পানি দাঁড়িয়ে না তাকে, এমন জমি ভালো।
বংশ বিস্তার
বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করা সবচেয়ে সহজ। কিন্তু বীজের গাছে মাতৃগাছের গুণ বজায় থাকে না এবং পল অনেক সময় নিকৃষ্ট মানের হয়। অন্যদিকে অযৌন পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করলে সে গাছের পেয়ারা মাতৃগাছের পেয়ারা হতে পার্থক্য হয় না। তাই বীজ দিয়ে বংশ বিস্তার না করে কলমের দ্বারা বংশ বিস্তার করাই উত্তম। অযৌন পদ্ধতির মধ্যে গুটিকলম, পাশর্্ব জোড় কলম, বর্মচোখ কলম, শাখা কলম ও মুল কলম দ্বারা পেয়ারার বংশ বিস্তার করা যায়। তবে বাংলাদেশে গুটি কলমই বহুল প্রচলিত।
গুটি কলম
গুটি কলম দ্বারা বংশ বিস্তার খুব সহজ। বর্ষাকাল আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গুটি কলম করতে হয়। গুটি কলমের জন্য উন্নত জাতের সুস্থ সবল পেয়ারার গাছ বেছে নিতে হবে। গুটি বাঁধনের জন্য কাঠ পেন্সিলের মতো মোটা একটি ডাল বেছে নিয়ে ডালটির আগা হতে নিচের দিকে ৩০ হতে ৩৮ সেমি জায়গা ছেড়ে দিয়ে ৩.৮ হতে ৫.০ সে.মি. পরিমাণ স্থানের বাকল গোল করে কেটে খুব ভালো করে পরিস্কার করে তুলে ফেলতে হবে। এরপর ঐ স্থানে পচা গোবর মিশ্রিত কাদামাটি চারদিকে ১.৩ হতে ২.৫ সে.মি. পুরু কলে লাগিয়ে উলু খড় ছালার টুকরো অথবা প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে ভাল করে বেঁধে দিতে হবে। সময়মতো গুটি করলে এক হতে দেড় মাসের মধ্যে শিকড় বের হয়। শিকড় বের হবার পর যেখানে গুটি বাঁধা হয় তার নিচ দিয়ে ডালটিকে কেটে দিতে হয়। গুটির ডালটি একবারে না কেটে অন্তত তিন বারে একটু একটু করে কেটে নেয়া ভালো। গুটিটি আসল গাছ থেকে কেটে দেয়ার পর কয়েক দিনের জন্য ছায়াযুক্ত ও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় রেখে দিতে হয়। এরপর গাছ থেকে কেটে কেটে গোবর ও মাটি মিশ্রিত মাটির পাত্রে লাগিয়ে কয়েক দিনের জন্য সামান্য ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দেয়া উচিত। মাঝে মাঝে পাত্রে পানি দিলে ও যত্ন নিলে কিছু দিনের মধ্যে গুটির গাছে নতুন পাতা ও শিকড় বের হবে।
চারা বা গুটি লাগানো
এক গাছ হতে অন্যগাছ কত দূরত্বে লাগাতে হবে তা জমির উর্বরতার ওপর নির্ভর করে। এক বছর বয়সের চারা বা গুটি সাধারণত ৪/৬ মিটার দূরে দূরে লাগানো উচিত। মে থেকে জুলাই মাস পেয়ারার চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়।
গর্ভতৈরি ও সার প্রয়োগ
চারা লাগাবার জন্য ৬০ সে.মি. প্রস্থ এবং ৪৫ সে.মি. গভীর গর্ত করে প্রতি গর্তে নিন্ম লিখিত সার প্রয়োগ করা উচিত।
১। পচা গোবার অথবা আর্জনা পচা সার ১০/১২ কেজি
২। সরিষার খৈল ১ থেকে ২ কেজি
৩। ট্রিপল সুপার ফসফেট ঙ্গ থেকে ১ কেজি
উপরোলি্লখিত সার মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভর্তি করে ৮ হতে ১০ দিন রেখে দিতে হবে। চারা লাগাবার পর চারাটিরকে একটি শুক্ত খুটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে যেন বাতাসে চারার কোনো ক্ষতি না হয়।
বিষয়টি বোঝার জন্য আরো পরিস্কার ভাবে বলছি।
দুপুরে সূর্য যখন খাড়া আমাদের মাথার উপরে থাকে গাছের সেই ছায়াটি মাটির যতটুকু জায়গা জুড়ে পড়বে ততটুকু জায়গার মাটির সাথে সার মিশিয়ে দিতে হবে।
পরবর্তী পরিচর্যা
বাঁচার জন্য মানুষের যেমন খাদ্যের প্রয়োজন টিক তেমনি গাছেরও খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে। তাই প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি , জুলাই ও অক্টোবর মাসে তিন কিস্তিতে গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। সার একেবারে গাছের গোড়ায় না দিয়ে যতদূর পর্যন্ত গাছের ডালপালা বিস্তার করে সে এলাকার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। নিন্মের ছবে বিভিন্ন বয়সের গাছের সারের পরিমাণ দেখানো হল-
বিভিন্ন বয়সের গাছের প্রতি বছর সারের পরিমাণ (গ্রাম)
সারের নাম | ১-২ বছর বয়সের গাছ | ৩-৫ বছর বয়সের গাছ |
পঁচা গোবার | ১০-২০ কেজি | ২৫-৪০ কেজি |
ইউরিয়া | ১৫০-২০০ গ্রাম | ২৫০-০০০ গ্রাম |
টিএসপি | ১৫০-২০০ গ্রাম | ২৫০-৪০০ গ্রাম |
মিউরেট অব পটাশ | ১৫০-২০০ গ্রাম | ২৫০-৪০০ গ্রাম |
৬ বা ততোধিক বছর বয়সের গাছ
পঁচা গোবার | ৬০ কেজি |
ইউরিয়া | ৫০০ গ্রাম |
টিএসপি | ৫০০ গ্রাম |
মিউরেট অব পটাশ | ৫০০ গ্রাম |
গাছের গোড়া থেকে মাঝে মাঝে আগাছা পরিস্কার করা এবং গোড়ার মাটি ভেঙ্গে দেয়া দরকার। খরার সময় পানির ব্যবস্থা এবং খড় বা কচুরিপানা দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি ঢেকে দেয়া উচিত, যেন মাটিতে রস বেশী দিন পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে এবং আগাছা জন্মাতে না পারে।
গাছটি সুন্দরভাবে জন্মাতে হলে ছোট অবস্থাতেই দৈহিক গঠন ও পরে অঙ্গ ছাঁটাই অত্যাবশ্যক। দৈহিক গঠন মজবুত করতে প্রথমে গাছটিকে সোজা বাড়তে দিতে হবে এবং মাটি থেকে ৬০ সে.মি. উঁচুতে কেটে একটি শক্ত কাঠামো দাঁড় করাতে হবে। তারপর সেই কাটা অংশ থেকে নতুন শাখা বের হলে মাত্র তিনটি শাখা তিনদিকে বাছাই করা উচিত। পরের বছর আবার সেই তিনটি শাখা ৪৫ সে.মি দূরে কেটে দুটি প্রশাখাকে বাড়তে দিতে হবে। এভাবে প্রথম কয়েক বছর গাছটিকে কেটেছেঁটে সুন্দর আকার ধারণ করাতে হবে যাতে গাছ খুব সহজেই তার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। অন্যদিকে অঙ্গ ছাটাই বলতে মরা, রোগাক্রান্ত ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাঁটাই করা বুঝায়। সাধারণত বয়স্ক গাছের ফল সংগ্রহের পর জুলাই/ আগষ্ট মাসে অঙ্গ ছাঁটাই করা হয়।
রোগবালাই ও পোকামাকড়
কাজী পেয়ারার রোগবালাই নেই বললেই চলে। পোকামাকড়ের মধ্যে ফল ও কাণ্ড খননকারী পোকাই প্রধান। এ পোকা প্রতি ১ লিটার পানিতে ১ সিস ম্যালাথিয়ন মিশিয়ে গাছে ছিটিয়ে দমন করা যায়। এছাড়া পাখি ও বাদুর পেয়ারার যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে। গাছে টিন পিটিয়ে এর উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
ফল সংগ্রহ
কাজী পেয়ারা বছরে তিনবার ফল দিয়ে থাকে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে যথাক্রমে মার্চ, আগষ্ট ও অক্টোবর মাসে ফুল আসে এবং জুলাই, ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারী/ মার্চ মাসে সেই ফল থাকে। প্রথম ও তৃতীয় বারের তুলনায় দ্বিতীয় বারের ফলের সংখ্যা খুবই কম। প্রথম ও তৃতীয় বারে ফল বেশী আসে এবং ফলের আকার ছোট হয়ে যায় বিধায় ফঠ ছোট থাকা অবস্থাতেই কেটে পাতলা করে দেয়া উচিত। প্রতি থোকায় একটার বেশী ফল রাখা কোনোক্রমেই উচিত নয়। কলমের চারা ১/২ বছর পর থেকেই ফল দিতে শুরু করে। পেয়ারা পাকার সময় হলে সবুজ রং বদলে গিয়ে আস্তে আস্তে হলদে বেশী পাকতে দেয়া উচিত নয়। কারণ বেশী পাকা পেয়ারা খেতে মোটেই সুস্বাদু নয় এবং বাজারজাতকরণে কৃষক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
পেয়ারার ডাল বাঁকালেই ফলন দশগুণ
বর্ষাকালের অন্যতম জনপ্রিয় ফল পেয়ারা। আমাদের দেশে ফলটির চাহিদা অনেক। দীর্ঘ ২৭ মাস গবেষণার পর সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে তথ্য দিলেন বাউকুল উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এম.এ. রহিম। পেয়ারা ডাল বাঁকালেই ফলন হবে দশগুণ। তাছাড়া একই প্রযুক্তিতে বছরের বার মাসই ফল ধরানো সম্ভব। ফলের মৌসুমে গাছের ফুল ছিড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরো প্রভাবিত করা যায়, যার ফলে সারা বছরই ফলের মৌসুমের তুলনায় কমপক্ষে আট থেকে দশগুণ ফল ধরবে গাছে।
উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে ড. রহিম জানান, সাধারণত বর্ষা ও শীত ঋতুতে গাছে পেয়ারা হয়। তবে শীত অপেক্ষা বর্ষাকালে ফলন একটু বেশি হয়। বর্ষাকালে জলীয়ভাব বেশি থাকায় ফলের মিষ্টতা ও অন্যান্য গুণাগুণ শীতকালের ফলের থেকে অনেকাংশেই কম থাকে। তাছাড়া জলীয়ভাব বেশি থাকায় পাকা ফল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে দাম থাকে কম। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে সকল জাতের পেয়ারার গুণাগুণ শীতকালে বেড়ে যায়, রোগ ও পোকার আক্রমণও কম থাকে। ফলের আকৃতি এবং রঙ সবদিক থেকেই সুন্দর হওয়ায় এই সময়ে পেয়ারার দামও থাকে বেশি। এসব দিক বিবেচনায় রেখেই বর্ষাকাল বাদে কীভাবে অন্যান্য ঋতুতে অত্যাধিক হারে উৎপাদন বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে গবেষণা শুরু হয়। এ লক্ষ্যে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গবেষণার মাধ্যমে ‘গাছের ডাল বাঁকানো’ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম প্লাজম সেন্টারে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রতিটি গাছ থেকে সাধারণ গাছের তুলনায় কমপক্ষে আট থেকে দশগুণ বেশি পেয়ারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।
এছাড়াও পেয়ারার মৌসুমে গাছের ফুল ও ফল ছিড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরো প্রভাবিত করা যায় বলে জানান তিনি।
এ সম্পর্কে বাকৃবির জার্ম প্লাজম সেন্টারের প্রধান গবেষণা সহযোগী কৃষিবিদ শামসুল আলম মিঠু বলেন, বছরে দু’বার অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে এবং হেমন্তকালে শাখা-প্রশাখার নিয়ন্ত্রিত বিন্যাসের মাধ্যমে সারা বছর পেয়ারার ফুল ও ফল ধারণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গাছের বয়স দেড় থেকে দু’বছর হলেই এই পদ্ধতি শুরু করা যাবে এবং পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে ফলন বাড়ানো সম্ভব। ডাল বাঁকানোর ১০ থেকে ১৫ দিন আগে গাছের গোড়ায় সার ও পানি দেওয়া হয়।
ডাল বাঁকানোর সময় প্রতিটি শাখার অগ্রভাগের প্রায় এক থেকে দেড় ফুট অঞ্চলের পাতা ও ফুল-ফল রেখে বাকি অংশ ছেটে দেওয়া হয়। এরপর ডালগুলোকে সুতা দিয়ে বেঁধে তা বাঁকিয়ে মাটির কাছাকাছি কান্ডের সাথে অথবা খুঁটির মাধ্যমে মাটিতে বেঁধে দেওয়া হয়। গ্রীষ্মকালে মাত্র দশ থেকে বার দিন পরেই নতুন ডাল গজানো শুরু হয়। নতুন ডাল ১ সে.মি. লম্বা হলে বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। আর হেমন্তকালে নতুন ডাল গজাতে বিশ থেকে পঁচিশ দিন সময় লাগে।
ডাল বাঁকানোর ৪৫ থেকে ৬০ দিন পরে ফুল ধরা শুরু হয়। এভাবে গজানো প্রায় প্রতি পাতার কোলেই ফুল আসে। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া ফলের মিষ্টতা বেশি এবং রঙ আকৃতি সুন্দর হওয়ায় পেয়ারার বাজার দরও বেশি পাওয়া যায়।
Comments (No)