১৯৬৮ সালের ২১ ডিসেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার ভেলেহু সিটিতে ফেরাডে দম্পতির লাশ খুঁজে পায় পুলিশ। ডেভিড ফেরাডের মাথায় একটি গুলি পাওয়া গেল। তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৫!
সেদিন বিকালেই সানফ্রান্সিস্কো পুলিশের কাছে এক অজ্ঞাতনামার চিঠি আসল। তাতে লেখা ছিল, “Let’s Play”
.
গল্পের শুরুটা এখান থেকেই…….
এই ঘটনার পর শহরে একাধিক খুন শুরু হয়ে গেল। প্রতিটি খুনের আগে খুনি পুলিশকে একটা চিঠি লিখত। সেই চিঠির একটা অংশে কোড মেসেজ কিংবা ধাধা থাকত। কিন্তু এগুলো এতোই জটিল ছিল যে পুলিশ এবং স্পেশালিষ্টরা কয়েকবারের চেষ্টাতেও এর অর্থ উদ্ধার করতে পারেনি।
পুলিশ বুঝতে পেরেছিল যে, এই খুনি অত্যন্ত চতুর এবং অসম্ভব প্রতিভার অধিকারী। একজন সাধারন মানুষের পক্ষে এতো কঠিন কোড এনক্রিপ্টের কাজ করা প্রায় অসম্ভব?
,
পরের বছরের ৪ জুলাই পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কাছে এক অপরিচিত ব্যাক্তি ফোন করে জানায় যে, সে ফেরাডে দম্পতিকে খুন করেছিল। এবং এবার ডার্লিন নামের এক মহিলাকে খুন করেছে। তার স্বামী পালিয়ে যাওয়ায় তাকে মারতে পারেনি।
পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে ডার্লিনের লাশ দেখতে পায়। অত্যন্ত নির্মমভাবে জীবন্ত অবস্থায় একাধিক চাকুর আঘাতে মহিলাকে মারা হয়েছিল।
,
এই খুনের পর খুনি পুলিশের কাছে চিঠি না পাঠিয়ে ৩ টি পত্রিকায় চিঠি পাঠানো শুরু করল। পত্রিকায় ছাপানো তার চিঠিগুলোর প্রতিটিতে আলাদা কোড মেসেজ থাকতো। প্রতিটি চিঠিতে পুলিশের প্রতি সে যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিত। এমন কি সে তার নাম প্রকাশ করা শুরু করল। পত্রিকায় প্রকাশিত ওই চিঠিগুলোর কল্যানে প্রথমবার পুলিশ খুনীর নাম জানতে পারল। চিঠিগুলো শুরু হত একটি লাইন দিয়ে,
“আমি জোডিয়াক বলছি……..”
,
পুলিশ যখন অন্ধকারে জোডিয়াকের সন্ধান করছে তখন এক হাইস্কুল শিক্ষক আলো হয়ে পুলিশকে দেখা দেন। তিনি পুলিশকে জানান যে, জোডিয়াকের ৩য় চিঠির অর্থ বের করতে পেরেছেন। ওই কোডেড মেসেজে জোডিয়াকের বিকৃত মানসিকতা প্রকাশ পায়। জোডিয়াক মনে করত যে প্রতিটি খুনের বদলে সে স্বর্গে একজন সেবক /সেবিকা পাবে। এবং সে অনেক সেবক/সেবিকা চায়।
,
জোডিয়াকের এই মেসেজ পেয়ে ভ্যালিহু সিটির পুলিশ নড়েচড়ে বসে। তারা জোডিয়াকের সন্ধানে হাজার হাজার আসামীকে গ্রেপ্তার করে। হঠাৎ করেই ১৯৭৪ সালের ৮ জুলাই থেকে জোডিয়াকের চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যায়। ডিপার্টমেন্ট ঘোষনা দেয় যে, জোডিয়াক কেবল ৫ টি খুন করতে পেরেছে। আর পারবেনা।
খুনের আর কোন খবর না পেয়ে জনগন ধরেই নিল যে, সানফ্রান্সিস্কো পুলিশ জোডিয়াককে মেরে ফেলেছে।
,
কিন্তু বাস্তব ছিল পুরো বিপরীত।
জোডিয়াক তার এক্টি চিঠিতে লিখেছিল, Me=37 : SFPD= 0.
এটা কোন ফুলবল খেলার স্কোরলাইন নয়। এটা জোডিয়াক আর সানফ্রানসিস্কো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট(SFPD) এর স্কোরলাইন। জোডিয়াক যেখানে ১ বছরে প্রায় ৩৭টি খুন করেছে সেখানে পুলিশ তার ছায়াকেও খুজে বের করতে পারেনি। পুলিশের কাছে জোডিয়াকের আঙুলের ছাপসহ অসংখ্য প্রমাণ ছিল। পুলিশ প্রায় ২৫০০ লোককে গ্রেপ্তারও করেছিল। কিন্তু আসল জোডিয়াক কে পুলিশ কখনোই ধরতে পারেনি।
,
প্রায় ৪ বছর পর এসব ঘটনা সবাই যখন ভুলে যেতে বসেছে তখনি ক্যার্লিফোনিয়ার নিউজ মিডিয়া কর্পোরেশন একটি চিঠি পায়। ঐ সপ্তাহেই ক্যার্লিফোনিয়ার ৫ জন মানুষ খুন হয়। সানফ্রানসিস্কো পুলিশ চিঠিটি মিডিয়া কর্পোরেশন এর কাছে থেকে তদন্তের জন্য নিয়ে নেয়। চিঠিটা পড়ে তারা হতভম্ব হয়ে যায়। সেখানে লেখা ছিল,
“তোমাদের জন্য একটা সুখবর আছে। এই সপ্তাহেই তোমরা ছাপানোর জন্য দারুন কিছু পেতে যাচ্ছ। ছাপানোর সময় অবশ্যই নিচে আমার নাম লিখে দিবে। আমার নামটা তোমরা হয়ত ভুলেই গেছ।
,
আমি জোডিয়াক বলছি……………………
Dec 19, 2017
একজন মাস্টার মাইন্ড খুনীর গল্প!!!
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.
Comments (No)