এটি একটি বহুল জনপ্রিয় মাধ্যম। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে কমিশন বেজ মার্কেটিং মডিউল। একটু বিস্তারিত বললে আশা করি আপনার বুঝতে সহজ হবে।
প্রতিটি কোম্পানির নিজেদের যেই প্রডাক্ট বা সার্ভিস আছে সেগুলো বিক্রি করার জন্য তারা সেলস এক্সিকিউটিভ নিয়োগ করে থাকে, যাদের প্রতি মাসে কিছু সেলস টার্গেট দেওয়া হয় এবং তাদের মাসিক বেতনে কোম্পানিতে চাকুরী দেওয়া হয়।
আবার কিছু কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করার জন্য অ্যাফিলিয়েট অপশন দিয়ে থাকে, যেখানে যে কেউ চাইলে জয়েন করতে পারে এবং কোম্পানি এর সাথে তাদের কন্ট্রাক্ট হয় কমিশন ভিত্তিক।
ধরুন আপনি কোন কোম্পানি এর অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে জয়েন করলেন, আপনি যদি ওই কোম্পানি এর কোন প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারেন তাহলে প্রতি কপি বিক্রির জন্য কোম্পানি আপনাকে নির্দিষ্ট একটি কমিশন দেবে। এই মার্কেটিং মডিউলকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়।
এখানে কোম্পানি আপনাকে মাসিক কোন বেতন দেবে না, বিক্রি করতে পারলেই আপনি কমিশন পাবেন। এখানে প্রশ্ন চলে আসে কোম্পানি কিভাবে বুঝবে আপনি প্রোডাক্ট টা বিক্রি করলেন?
হ্যাঁ, যখন আপনি কোন কোম্পানিতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে জয়েন করবেন, তখন তারা আপনার জন্য একটা লিংক তৈরি করে দেবে। আপনাকে ওই লিংক এ কাস্টমার আনতে হবে এবং ওই লিংক থেকে কেউ যদি প্রোডাক্ট কিনে থাকে তাহলে কোম্পানি সহজেই বুঝতে পারবে আপনার মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে এবং আপনি আপনার কমিশন পেয়ে যাবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সকল মার্কেটার এর জন্য ইউনিক আলাদা আলাদা লিংক তৈরি হয় এবং ওই লিংক এর মাধ্যমে কোম্পানি সেলস ট্রাক করতে পারে এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের কমিশন দিয়ে থাকে। এখানে কাজ করার ২টি মাধ্যম আছে।
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস
- ইন্ডিভিউজিয়াল কোম্পানি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মডিউল অনেক লাভজনক একটা মার্কেটিং ম্যাথড। একারণেই বিশ্বে অনেকগুলো মার্কেটপ্লেস তৈরি হয়েছে, যারা কিনা বিভিন্ন কোম্পানি (ভেন্ডর) এর এর কাছ থেকে অফার তাদের মার্কেটপ্লেসে লিস্ট করে থাকে। এবং ওই মার্কেটপ্লেসগুলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে যাতে করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা ওই কোম্পানি বা প্রোডাক্টগুলোর মার্কেটিং করে সেল জেনারেট করতে পারে।
বিশ্বের জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস সমূহঃ
এই রকম আরও অনেক বড় বড় মার্কেটপ্লেস আছে, যেখানে আপনি জয়েন করে বিশ্বের নামকরা প্রোডাক্ট বা কোম্পানি সার্ভিস নিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে টাকা ইনকাম করতে পারেন।
ইন্ডিভিউজিয়াল কোম্পানি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম
মার্কেটপ্লেস এর বাইরেও অনেক অ্যাফিলিয়েট অফার পাওয়া যায়। মূলত অনেক কোম্পানি আছে তারা তাদের প্রোডাক্টগুলো নিজেরদের ট্র্যাকিং সিস্টেম এর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট করার সুযোগ দিচ্ছে। এই ধরনের কোম্পানি গুলো নিজেরাই একটা ট্র্যাকিং প্লাটফর্ম তৈরি করে নেয় এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের তাদের সাথে কাজ করার সুযোগ দিয়ে থাকে।
উদাহরণ সরূপ কিছু ইন্ডিভিউজিয়াল কোম্পানি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম সমূহঃ
এই কোম্পানিগুলো তাদের নিজেদের ট্র্যাকিং সিস্টেম এর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। এই রকম আরও অনেক অনেক কোম্পানি আছে এবং আপনি চাইলেই সেই কোম্পানিগুলতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে জয়েন করে কাজ করতে পারবেন।
কিভাবে আমি টাকা হাতে পাবো?
বাংলাদেশ এ আমাদের মুল সমস্যা হচ্ছে পেমেন্ট গেটওয়ে। আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে কাজ করে টাকা ইনকাম করলেন, কিন্তু সেটা যদি ক্যাশ করতে না পারেন তাহলে সেটা অনেক বড় একটা ঝামেলা। বেশিরভাগ কোম্পানি পেমেন্ট করে PayPal এবং ব্যাংক এর মাধ্যমে।
এখন বাংলাদেশ এ আমরা চাইলেও পেপাল ব্যবহার করতে পারিনা। তাহলে উপায়?
হ্যাঁ, আমাদের জন্য একটা সহজ সমাধান আছে, আর তা হচ্ছে Payoneer একাউন্ট। এখানে আপনি ফ্রি একাউন্ট করতে পারবেন, তবে অবশ্যই আপনার ভোটার আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট থাকতে হবে। এবং বাংলাদেশ এর যে কোন একটা ব্যাংক এ একাউন্ট থাকতে হবে।
এখানে আপনি যখন একাউন্ট করবেন, তখন তারা আপনাকে ১টা USA ব্যাংক একাউন্ট দেবে এবং আমরা অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক গুলতে আমাদের ঐ ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে পেমেন্ট নিতে পারবো।
এখন হয়তোবা আপনি ভাবছেন টাকা কিভাবে আমি হাতে পাবো?
কোন সমস্যা নেই, নেটওয়ার্ক থেকে যখন পেমেন্ট আপনার Payoneer একাউন্ট এ আসবে, আপনার বাংলাদেশি ব্যাংক একাউন্ট আপনার Payoneer একাউন্ট এর সাথে কানেক্ট করে নিতে পারবেন। এবং Payoneer থেকে সরাসরি আপনার ব্যাংক এ টাকা পেয়ে যাবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম
আমাদের অনেকেরই মনে এই জিজ্ঞাসা আসে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে কি প্যাসিভ ইনকাম করা সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। তবে আমাদের অনেকেরই এটা জানা নেই যে ইনকাম আসলে কয় ধরনের হয়।
চলুন কাজে যাবার আগে এই জিনিস টা একটু জেনে নেই। ইনকাম মূলত ২ ধরনের হয়।
- অ্যাক্টিভ ইনকাম
- প্যাসিভ ইনকাম
অ্যাক্টিভ ইনকাম
অ্যাক্টিভ ইনকাম হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট টাইম এবং কাজের জন্য মূল্য নির্ধারণ। যেমন হতে পারে আপনার চাকুরী। আপনি সম্পূর্ণ মাস কাজ করলে অফিস আপনাকে নির্দিষ্ট একটি বেতন প্রদান করে। আপনি যদি কাজ না করেন তাহলে কিন্তু কোন বেতন পাচ্ছেন না।
এটাকে আমরা মূলত বলে থাকি অ্যাক্টিভ ইনকাম। আমি যদি অন্য একটা উদাহরণ দেই, যেমন ধরুন দিন মজুর যারা আছেন তারা যদি কাজ করে তাহলেই তারা পারিশ্রমিক পাবে, যদি কাজ না করে তাহলে কোন পারিশ্রমিক পাচ্ছে না। আমাদের বেশিরভাগ ইনকামই মূলত অ্যাক্টিভ ইনকাম।
প্যাসিভ ইনকাম
প্যাসিভ ইনকাম হচ্ছে এমন এক ধরনের ইনকাম ব্যবস্থা যেখানে আপনার ইনকাম করতে সবসময় কাজে লেগে থাকতে হবেনা। উদাহরণ দিলে সহজে বুঝতে পারবেন যেমন ধরুন, আপনি একটি বাড়ি বানালেন এবং সেই বাড়ি আপনি যদি ভাড়া দিয়ে রাখেন তাহলে প্রতি মাসেই আপনি কিন্তু ইনকাম করছেন। আপনি কস্ট করে আপনার অ্যাসেট তৈরি করেছেন ১ বার। কিন্তু আপনি সেখান থেকে ইনকাম করছেন বাড় বার এক্সট্রা কোন কাজ ছাড়াই।
আমার কাছে সরাকারী চাকুরীর পেনশন ব্যবস্থাকেও প্যাসিভ ইনকাম মনে হয়। যেমন আপনি কাজ করছেন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এবং এর পর কোন কাজ ছাড়াই মাসে মাসে পেনশন পাচ্ছেন। (অনেকের যুক্তি তর্ক থাকতে পারে)। আমি উদাহরণ দিয়েছি শুধুমাত্র আপনাকে বোঝানোর জন্য।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে কি জানতে হয়
অনেকেই মনে করেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে গেলে আমার মনে হয় অনেক সময় দিতে হবে, আবার অনেক কিছু জানা দরকার, আসলেই কি তাই? চলুন আমি আপনাকে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করছি এবং কি কি জানা দরকার তা বিস্তারিত আলোচনা করছি।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে আপনার খুব যে বেশি জানা দরকার এমন না, তবে হ্যাঁ, এটা একটা স্কিল এবং এখানে কিছু যোগ্যতা অবশ্যই আপনার থাকতে হবে। যেহেতু আপনাকে কোন পণ্য বিক্রি করতে হবে এজন্য আপনাকে অবশ্যই মার্কেটিং সম্পর্কে ভালো ধারনা থাকতে হবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে যেই বিষয়গুলো জানা থাকলে আপনার জন্য সুবিধা হবে তার কিছু তালিকা নিচে আমি দিচ্ছিঃ
- বেসিক SEO
- বেসিক ওয়ার্ডপ্রেস (WordPress)
- ইংরেজি ভাষা (বেসিক জানলেই হবে)
- ইমেইল মার্কেটিং
- সামান্য লিখালিখির অভ্যাস
- প্রতিদিন নুন্যতম ১ ঘণ্টা সময়
- ইত্যাদি…
উপড়ের যেই বিষয়গুলো বললাম তার সব কিছু যে আপনার জেনে কাজে নামতে হবে এমন না। এই বিষয়গুলো জানা থাকলে কিছুটা হলেও আপনি অন্যদের থেকে সহজে সামনে এগোতে পারবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে কি কি লাগে
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে চাচ্ছেন কিন্তু বুঝে উঠতে পারছেন না কি কি লাগবে? আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি আপনার কি কি লাগবে এবং কত টাকা হলে আপনি শুরু করতে পারেন।
অনেকেই মনে করেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে মনে হয় অনেক টাকার দরকার, কারণ অনেক জায়গাতে শুনে এসেছেন পেইড ক্যাম্পেইন করতে হয়। আসলে, আপনি যদি চান ফ্রি তেও শুরু করতে পারেন। তবে আমি অবশ্যই সেটা রিকেম্নড করিনা।
একটা বিষয় আপনাকে বুঝতে হবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটি স্বাধীন পেশা এবং নিজের ব্যবসা। যেহেতু এটা একটা ব্যবসা এবং এখানে টাকা এবং ইনকাম জড়িত। এজন্য আমি রিকেমড করি নুন্যতম একটা বাজেট নিয়ে কাজে নামতে।
আপনি চাইলে মাত্র ৫০-১০০ ডলার বাজেট নিয়েই কাজে নামতে পারেন। এবং কি কি লাগবে এবং কোথায় কত খরচ হতে পারে সেটার একটা তালিকা নিচে দেওয়া হচ্ছেঃ
- নিজের ১টা ওয়েবসাইট (২৫০০-৩০০০ টাকা প্রতি বছর)
- সাইট ডিজাইন (ফ্রি, যদি ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে বেসিক ধারনা থাকে)
- ওয়েবসাইটে আর্টিকেল (ফ্রি, যদি নিজের বেসিক ইংরেজি জানা থাকে এবং লিখালিখির অভ্যাস থাকে)
- ট্রাফিক জেনারেশন (ফ্রি, SEO এবং Social Media থেকে)
- ইমেইল মার্কেটিং (ফ্রি এবং পেইড ২ ধরনের ব্যবস্থা আছে)
তার মানে আপনার বছরে শুধুমাত্র ৩০০০-৫০০০ টাকা থাকলেই আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কমিশন স্ট্রাকচার
আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন ভাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করলে কোথায় কেমন কমিশন দেয়, আর ফিজিক্যাল নাকি ডিজিটাল প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করলে ভালো হয়। হ্যাঁ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ ২ ধরনের প্রডাক্ট নিয়ে কাজ করা যায়, আর তা হচ্ছেঃ
- ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট
- ডিজিটাল প্রোডাক্ট
ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট
ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট হচ্ছে সেগুলো, যেই প্রোডাক্টগুলো বাস্তবে শারীরিকভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমন ধরুন একটা টেলিভিশন। আপনি যদি কোন টেলিভিশন কোম্পানি এর অ্যাফিলিয়েট করেন তাহলে আপনার ক্রেতা ওই পণ্যটি ফিজিক্যালি ব্যবহার করবে। এবং এখানে ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট ডেলিভারি বিষয়টি জড়িত।
ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট অ্যাফিলিয়েট এর ক্ষেত্রে তাদের কমিশন স্ট্রাকচার সব সময় একটু কম হয়ে থাকে। কোম্পানি ভেদে দেখা যায় ৫% – ২০%। তার মানে আপনি যদি একটি প্রডাক্টটি বিক্রি করেন, আপনি ৫% থেকে ২০% পর্যন্ত কমিশন পাবেন।
ডিজিটাল প্রোডাক্ট
ডিজিটাল প্রোডাক্ট কি সেটা আমার মনে হয় আপনি বুঝতে পারছেন। এই ধরনের প্রোডাক্ট আপনি ডিজিটাল ভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন হতে পারে কোন সফটওয়্যার, ইবুক, ভিডিও কোর্স, কোন ডিজিটাল সার্ভিস ইত্যাদি।
ডিজিটাল প্রোডাক্ট এর কমিশন লেভেল টা অনেক ভালো হয় যেমন ৫০% – ৭৫% পর্যন্ত। আবার কখনো কখনো ১০০% পর্যন্তও কমিশন পাওয়া যায়। এর মূল কারণ এখানে প্রোডাক্ট ডেলিভারি এর ঝামেলাটা থাকেনা, অনলাইনেই ডেলিভারি দিয়ে দেওয়া হয়। তার মানে আপনি ১০০ ডলারের ১টা প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারলে, ৫০% কমিশন থাকলে ইনকাম হবে ৫০ ডলার।
আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন আপনি কোন ধরনের প্রোডাক্টকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন?
আমি মূলত ডিজিটাল প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করি, কারণ এখানে আমি কমিশন স্ত্রাকচারটা ভালো পাই এবং এই ধরনের প্রোডাক্ট এ মাসিক ভিত্তিক সাবস্ক্রিপশন এর অনেক প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। যেখানে আমি কোন কাজ ছাড়াই প্রতি মাসে একটা ইনকাম জেনারেট করতে পারি।
এই বিষয়ে আমার এই কোর্সে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করা যায়?
অনেকেই মনে করেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করাটা অনেক কঠিন, আবার অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না কোথা থেকে শুরু করবো। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে হলে শুধু ৩ টি স্টেপ ফলো করেই আপনি কাজ শুরু করতে পারেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সহজ ৩ টি স্টেপ হচ্ছেঃ
- সিলেক্ট প্রোডাক্ট
- সেলস ফানেল তৈরি
- ট্রাফিক জেনারেশন
সিলেক্ট প্রোডাক্ট
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে চাইলে প্রথমে আপনাকে ভালো একটি প্রোডাক্ট সিলেক্ট করে নিতে হবে। তবে তার আগে একটা কাজ হচ্ছে নিশ সিলেকশন। হ্যাঁ, নিশ বলতে বোঝানো হয় প্রোডাক্ট ক্যাটাগরি। আপনি মূলত কোন ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন।
যেমন ধরুন আপনি ওয়েট লস প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করবেন, তাহলে এটা মূলত হেলথ নিশ এর একটা প্রোডাক্ট। নিশ সিলেকশন এ কুইক টিপস হচ্ছে, আপনি যেই বিষয়টি নিয়ে ভালো বোঝেন সেটা নিয়ে কাজ করবেন। যেমন ধরে নিলাম আপনি ফুটবল খুব পছন্দ করেন, তাহলে আপনি স্পোর্টস নিশ নিয়ে কাজ করুন।
এতে করে আপনি আপনার অডিয়েন্সকে ভালো বুঝবেন এবং অফার সম্পর্কে খুব সহজে বোঝাতে পারবেন। তবে সব সময় যে আপনার পছন্দ করা নিশ ভালো হবে এমন কিন্তু না, এজন্য আপনার দেখে নিতে হবে ওই নিশ এর প্রোডাক্ট কেমন সেল হয়।
বিশ্বে জনপ্রিয় নিশ সমূহের মধ্যে এই ৩ টি নিশ বেশি পপুলারঃ
- হেলথ (স্বাস্থ্য বিষয়ক)
- ওয়েলথ (টাকা পয়সা বিষয়ক)
- রিলেশনশিপ (রিলেশন, প্রেম, ডেটিং, বিয়ে ইত্যাদি)
নিশ সিলেক্ট করে আপনি যে কোন মার্কেটপ্লেস থেকে ভালো একটি প্রোডাক্ট নেবেন এবং আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক তৈরি করে নেবেন। আপনি চাইলে যে কোন ইন্ডিভিউজিয়াল কোম্পানির অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামেও জয়েন করতে পারেন।
সেলস ফানেল তৈরি
অ্যাফিলিয়েট লিংক পাবার পর আমরা অনেকেই মনে করি ওই লিংক এ ভিজিটর পাঠালেই সেল পাবো। এখানেই ৮০% মার্কেটার ভুল করে এবং অ্যাফিলিয়েট লিংক পাবার পর সেটা বিভিন্ন ভাবে শেয়ার করতে শুরু করে দেয়। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় কোন সেল জেনারেট হয়না এবং অনেক সময় অ্যাফিলিয়েট একাউন্ট সাসপেন্ড করে।
আপনাকে বুঝতে হবে অডিয়েন্স কখনওই ১ দেখাতে প্রোডাক্ট কিনে নেয় না। আপনি নিজের কথাই চিন্তা করুন, আপনি ফেসবুকে কোন পোষ্ট দেখলেন কোন প্রোডাক্ট নিয়ে। ধরে নিলাম সেটা আপনার ভালো লেগেছে। আপনি কি সাথে সাথেই প্রোডাক্টটি কিনে ফেলেন?
অবশ্যই কিন্তু না।
আপনি ওই প্রোডাক্ট নিয়ে রিসার্চ করেন, ২-১ জনকে জিজ্ঞাসা করেন, এর পর প্রোডাক্ট টি কিনে থাকেন। ঠিক তেমনি আপনার অডিয়েন্স ও আপনার লিংক থেকে ১ দেখাতে প্রডাক্টটি কিনবেনা। এজন্য আপনাকে সেলস ফানেল তৈরি করতে হবে।
ট্রাফিক জেনারেশন
অনলাইন বিজনেস এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ট্রাফিক জেনারেশন। আমি সব সময় বলি লক্ষ্য টাকা খরচ করে ওয়েবসাইট বা সেলস ফানেল তৈরি করে কোন লাভ যদি সাইটে ট্রাফিক না আনতে পারেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ট্রাফিক কিভাবে আমার সেলস ফানেল এ জেনারেট করতে পারি?
ট্রাফিক জেনারেট করার জন্য ২ ধরনের পদ্ধতি আছেঃ
- ফ্রি ট্রাফিক
- পেইড ট্রাফিক
ফ্রি ট্রাফিক কি?
যেই ট্রাফিক পাঠাতে আপনার টাকা খরচ করতে হবেনা তাকেই মূলত বলা হয় ফ্রি ট্রাফিক জেনারেশন ম্যাথড। আপনি বিভিন্ন ভাবে ফ্রি ট্রাফিক পাঠাতে পারেন, এর ভেতর জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে SEO বা অরগানিক সার্চ ট্রাফিক। আপনি আপনার সেলস ফানেল বা ওয়েবসাইটের SEO করে ট্রাফিক পাঠাতে পারেন।
এছাড়া আপনি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ট্রাফিক জেনারেট করতে পারেন, যেমন facebook, twitter, instagram ইত্যাদি।
আরও একটি সহজ এবং জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ভিডিও মার্কেটিং। আপনি ইউটিউব -এ একটা চ্যানেল তৈরি করে সেখানে ভিডিও পাবলিশ করে, ওই ভিডিও এর ডেসক্রিপশনে আপনার ফানেল লিংক দিতে পারেন। এবং এখান থেকে আপনি অনেক ফ্রি ট্রাফিক পেতে পারেন।
আপনি চাইলে প্রশ্ন উত্তর সাইট গুলো থেকে ট্রাফিক জেনারেট করতে পারেন। এই বিষয়ে আমার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কোর্স এ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে Facebook, Instagram, YouTube, Quora ইত্যাদি সাইট থেকে ফ্রি ট্রাফিক জেনারেট করতে পারেন।
পেইড ট্রাফিক কি?
আপনি যখন ট্রাফিক জেনারেট করার জন্য টাকা খরচ করবেন তখন তাকে বলা হবে পেইড ট্রাফিক জেনারেশন। আপনি বিভিন্ন সোর্স থেকে পেইড ট্রাফিক জেনারেট করতে পারেন, যেমন Google Ads, Facebook Ads, YouTube Video Ads ইত্যাদি।
একটা বিষয় মাথায় রাখবেন পেইড ক্যাম্পেইন মানেই যে ইনকাম এমন কিন্তু না। আপনি যখন পেইড ক্যাম্পেইন করবেন তখন অবশ্যই আপনার টারগেটিং টা ভালো বুঝতে হবে। আপনি যদি না জেনেই পেইড ক্যাম্পেইন শুরু করে দেন তাহলে এখানে লস হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে। প্রো টিপসঃ আপনি যদি পেইড ট্রাফিক জেনারেট করতে চান তাহলে কখনওই একসাথে অনেক জায়গাতে ক্যাম্পেইন করবেন না, যেমন গুগল, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম। ১টা ট্রাফিক সোর্স দিয়ে শুরু করবেন এবং সেটা খুব ভালোভাবে আগে শিখে পরে অন্য সোর্স ট্রাই করবেন।
ধব্যবাদ সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ার জন্য, আশা করি আপনি বুজতে পেরেছেন কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সিস্টেম কাজ করে এবং কিভাবে আপনি শুরু করতে পারেন।
FAQ
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে কত টাকা ইনকাম করা যায়?
গত ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী শুধুমাত্র USA তে প্রতি বছর অ্যাফিলিয়েট কমিশিন জেনারেট হয় 6.7 বিলিয়ন ডলার। অনেক মার্কেটার আছেন যারা শুধুমাত্র অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে প্রতি মাসে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ্য ডলার ইনকাম করছেন।
তবে তাদের কথা একটু ভিন্ন, আমি যদি অ্যাভারেজ হিসেব ধরি তাহলে প্রতি মাসে ৫০০০ থেকে ১০,০০০ ডলার ইনকাম করা সম্ভব। আপনি যদি এইরকম ইনকাম করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ওই লেভেলে কাজ করতে হবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে কত সময় দিতে হয়?
আপনি যদি ফ্রি ট্রাফিক এর উপর ডিপেন্ড করেন তাহলে আমার মতে প্রতিদিন ৩/৪ ঘণ্টা সময় দিলেই আপনার জন্য যথেষ্ট। আর যদি পেইড ট্রাফিক সোর্স নিয়ে কাজ করেন, তাহলে প্রতিদিন আপনাকে ১ ঘণ্টা সময় দিলেই আশা করা যায় আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বিজনেস আপনি শুরু করতে পারবেন।
কত টাকা ইনভেস্ট লাগে?
আমি আগেও বলেছি আপনার যদি টাইট বাজেট থাকে তাহলে মাত্র ৫০ ডলার দিয়েই আপনি আপনার বিজনেস শুরু করতে পারেন। তবে আমাকে যদি স্ট্যান্ডার্ড বাজেট জিজ্ঞাসা করেন তাহলে আমি বলবো ৫০০ ডলার বাজেট হলে আপনি সাছ্যন্দে বিজনেস শুরু করতে পারবেন।
কত দিন পর ইনকাম করতে পারবো?
একেক জনের মেধা একেক ধরনের, এজন্য এই প্রশ্নের জবাব আসলে দেওয়া খুব মুশকিল। তবে হ্যাঁ, আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি যদি বলি নুন্যতম ৬ মাস সময় যদি আপনি দেন তাহলে এখান থেকে ভালো কিছু করা সম্ভব। তবে অবশ্যই লেগে থাকতে হবে আর কাজ করে যেতে হবে, হতাশ হওয়া যাবেনা।
কুকিস পলিসি কি?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সব থেকে মজার বিষয় হচ্ছে কুকিজ পলিসি। আপনি যখন আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক এ কোন ভিজিটরকে পাঠান, তখন ওই ভিজিটরের ওয়েব ব্রাউজারে কিছু কোড জমা হয় (যেটা কিনা আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক)।
ওই ভিজিটর যদি ওই সময় প্রডাক্ট না কিনে অন্য কোন সময় ঐ ওয়েবসাইট থেকে প্রোডাক্টটি কিনে নেয় তাহলে ওই সেল টা আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক এর মাধ্যমে হিসেব করা হবে। (তবে অবশ্যই যদি কুকিজ ফাইল তার ব্রাউজারে জমা থাকে)
আমার দেখা মতে বেশিরভাগ অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে ৩০ দিন থেকে ১ বছর পর্যন্ত কুকিস অ্যাক্টিভ থাকে। তবে যদি ভিজিটর তার ব্রাউজারের হিস্ট্রি ফাইল এবং কুকিজ ফাইল রিমুভ করে দেয় তাহলে আপনি কমিশন পাবেন না।
পেইড ক্যাম্পেইন করলে কি লাভ হয়?
অনেকেই মনে করেন পেইড ক্যাম্পেইন মানেই ইনকাম। আসলে বিষয়টা এমন না এবং আপনি যদি সটিকভাবে অডিয়েন্স টার্গেট করতে না পারেন তাহলে আপনার লসে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। একটা বিষয় স্পষ্ট ভাবে বলি আর তা হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কোন ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম না।
এর আর্থ হচ্ছে, আপনি এখানে ইনভেস্ট করলেন আর টাকা দ্বিগুণ হয়ে যাবে, বিষয়টা এমন না।
এখানে আপনি পেইড ক্যাম্পেইন করে কোন পণ্যের বিজ্ঞাপন করছেন। এই বিজ্ঞাপন দেখে কেউ যদি প্রোডাক্ট কেনে তাহলে আপনি কমিশন পাবেন। আপনি নিজে কিন্তু অনেক বিজ্ঞাপন দেখেন, সব প্রোডাক্ট কি আপনি কেনেন? অবশ্যই কিন্তু না।
এজন্য টার্গেটিং ঠিক থাকলে সেল পাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।
ধন্যবাদ, আমার আর্টিকেলটি যদি আপনার ভাল লাগে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে আমাকে জানাবেন এবং আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে লিখে দেবেন। আমি অবশ্যই আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবো ইনশাআল্লাহ্।
Comments (No)