৭ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ৭ কোটি টাকার মা‌লিক এই নারী 1
৭ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ৭ কোটি টাকার মা‌লিক এই নারী

আরও পড়ুন

৭ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ৭ কোটি টাকার মা‌লিক এই নারী সিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই অংশ নিচ্ছে বিএনপি: হানিফদায়িত্ব নিয়েই পাকিস্তানে হামলার হুমকি ভারতীয় সেনাপ্রধানেরবঙ্গবন্ধু বিপিএল খেলতে ঢাকায় হাশিম আমলাক্রিকেটে ২০১৯ এর সবচেয়ে বড় ৫ ঘটনাযেভাবে ফেসবুকের ভাষা পরিবর্তন করবেনতারিখে ২০২০ সাল লেখার আগে সাবধান!৪৩ বছর সিনেমা করেও এখন বেকার গাঙ্গুয়া২০১৯: ক্রিকেটে হতাশার বছর মিসেস সুফিয়া ইয়াসমিন।

একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। পথে পথে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে মিসেস ইয়াসমিনকে। তবে দমে যাননি। ১৯৯৭ সাল থেকে কুটির শিল্পের কাজ করে প্রায় ৭ কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছেন। আজ তার ব্যবসার পুঁজি প্রায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। নিজস্ব পরিমণ্ডলে তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। চীন থেকে গার্মেন্টস সিকিউরিটি এলার্ম টেগ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেন ইয়াসমিন।

৭ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ৭ কোটি টাকার মা‌লিক এই নারী 2

zoneid=164&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE সফল এই নারী উদ্যোক্তা সম্প্রতি মুখোমুখি হন সময় সংবাদের। শোনান তার সফলতার গল্প-

সময়: আজকে আপনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। এর শুরুর গল্পটা শুনতে চাই।

সুফিয়া ইয়াসমিন: ময়মনসিং থেকে ঢাকায় আসি ১৯৯৭ সালে। আমার স্বামী তখন বেকার, চাকরি খুঁজছিলেন। তখন আমার দুই ছেলে। সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। সন্তানদের এমনকি দুধ কেনার টাকাও থাকতো না। তখন আমি কিছু করার চিন্তা করি। নারী হয়েছি তাতে কি! আমিও কিছু করবো। আমার পরিবারের জন্য এবং নিজের জন্য হলেও কিছু কর‌বো।

তখন আড়ং কুটির শিল্পের কিছু কাজ করাতো তাদের কিছু প্রশিক্ষিত লোক দিয়ে। তখন আমি আড়ং-এর পাঠের কুটির শিল্প কিছু স্যাম্পল বানাই বাসায় বসে। আমার এই স্যাম্পলগু‌লো খুব পছন্দ করে আড়ং। তারা আমাকে কিছু কিছু কাজ দেয়। আমি এ কাজগুলো করে দিতাম। আমার কাজে খুশি হয়ে আড়ং আমা‌কে মজুরির চেয়েও কিছু টাকা বাড়িয়ে দিত। ১৯৯৭ সালের শেষ নাগাদ আমি এই কাজ ক‌রে প্রতি মাসে ২৫০০ টাকার মতো আয় করতাম। অনেকদিন এই কাজ করেছি। আমার সংসারের কিছুটা হলেও সাহায্য হ‌য়ে‌ছে সেই টাকায়। অনেকগুলো টাকাও জমি ছিল, হঠাৎ আমার মেজো ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সব টাকা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু আমি হতাশ হইনি, কারণ আমি মনে করতাম চেষ্টা করলে সফলতা আসবেই।

২০০৮ সাল তখন আমার স্বামী দেশ ছেড়ে দুবাই যায় চাকরির জন্য। তখন আমি আড়ং-এর কাজ বন্ধ করে দেই। কারণ আমার দুই ছেলে এক মেয়ে-তাদেরকে আমি সামাল দিয়ে সারারাত কাজ করে উঠতে পারছিলাম না। তখন চিন্তা করি পার্টটাইম কোনো চাকরি করবো। তখন আমি উত্তরা জসিমউদ্দিন রো‌ডের সংলগ্ন এক কোম্পানিতে জয়েন করি। কিছুদিন যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম এই ফ্ল্যাটে সেল কোম্পানি মানুষকে ধোঁকা দেয়। মানুষকে প্রচুর ঠকানো হতো, তখন আমি আর আমার অফিসের তিনজন ক‌লিগ মি‌লে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে পার্কে বসে চিন্তা করতাম কি করা যায়। হঠাৎ মাথায় প্লান আসে চিটাগাং থেকে শুটকি এনে ঢাকার দোকানে দোকানে বিক্রি করব। কিন্তু টাকার অভাবে পড়ে এই ব্যবসাটাও করা হয়ে উঠেনি।

হঠাৎ একদিন আমার এক কলিগ গার্মেন্টসের একটি প্রোডাক্ট নিয়ে আসে এবং আমাদের দেখায়। কিন্তু আমরা তখন বুঝতাম না যে এটা কি আইটেম। কিন্তু এটুকু নিশ্চিত হতে পেরেছিলাম যে গার্মেন্টসের আইটেম। তখন হঠাৎ আচমকা ফ্ল্যাট কেনার জন্য একজন লোক আমাকে কল দেয়। ওনার ফ্ল্যাট লাগবে, তখন আমি উনাকে সত্য বলে দেই যে দেখেন আমি এই অফিস এখন আর কাজ ক‌রি না। কিন্তু আপনাকে একটা কথা বলি, ওনাদের কোন ফ্ল্যাট নেই। আপনার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আপনাকে ঘুরাবে। তখন অনেক খুশি হয়ে আমাকে বলে যে কোনো দরকারে যেন ওনাকে জানাই, উনি আমাকে হেল্প করবে।

তারপর আমি গার্মেন্টসের এই প্রোডাক্ট সম্পর্কে ওনাকে বলি উনি আমাকে দক্ষিনখান নিপা গার্মেন্টসের ঠিকানা দিয়ে একজন লোকের কথা বলেন। তিনি বলেন, উনার কাছে নিয়ে গেলে আপনি জানতে পারবেন তখন সেখানে ছুটে যাই। তিনি প্রোডাক্ট দেখে বলতেছে বায়াররা আমাদের এই প্রোডাক্ট এনে দেয় আমি আসলে জানি না এগুলো কোথা থেকে আনে। তখন উনি আমাকে টঙ্গী টিএনটি মার্কেটের যোগাযোগ করার কথা বলেন।

তখন আমি ট‌ঙ্গি বাজারে যাই, তখন বাজারের এক ব্যবসায়ী বলে এটা গার্মেন্টসের এলার্ম টেগ। এই প্রোডাক্ট আপনি গুলিস্তান, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী কিছু দোকানে পেতে পারেন। তখন আমি আর আমার পার্টনার এই প্রোডাক্ট খুঁজতে থাকি। কিন্তু কোথাও পাচ্ছিলাম না।

আমাদের দু’জনের তখন পুঁজি ছিল মাত্র সাত হাজার টাকা। এরিমধ্যে কয়েক জায়গায় ঘুরে আমাদের ১০০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু প্রোডাক্ট আর পাই না। সবশেষ আমরা দু’জন সিদ্ধান্ত নিলাম। লাস্ট মিরপুর যাবো, না পেলে আমরা এই ব্যবসা বাদ দিবো। তখন মিরপুরে এই প্রডাক্টগুলো পেয়ে যাই তখন প্রোডাক্টগুলো কেনার কথা বললে, দোকানদাররা আমাদের কাছে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে।

আমরা পাঁচ হাজার টাকার প্রোডাক্ট কিনি। তারপর আমরা শুরু করি বায়িং হাউজ খোঁজা- যাদের কাছে এই প্রডাক্টগুলো বিক্রি করা যাবে। হঠাৎ একটি বায়া‌রের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের এই প্রডাক্টগুলো কিনবে বলে জানায়। তখন প্রতি পিস ৮ টাকা করে কিনবে বললে আমি আর আমার ব্যবসায়ী আরেক পার্টনার সবগু‌লো প্রোডাক্ট বিক্রি করে দেই। এই শুরু হল আমাদের এলার্ম টেক সংগ্রহ ও বিক্রি করে প্রতিমাসে আমরা এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা লাভ করতাম।

হঠাৎ এই মালের ক্রাইসিস তৈরি হয় বাংলাদেশ। আর প্রোডাক্ট পাচ্ছি না কোথাও। তারপর একদিন সুমন নামে এক লোকের সাথে যোগাযোগ করি। তি‌নি এইসব প্রোডাক্ট বিক্রি করত। উনাকে যখন বলি আপনি কোথা থেকে এই প্রডাক্টগুলো আনেন। তিনি চায়না এবং তাইওয়ানের কথা বলে। তখন উনার সাথে ব্যবসা শুরু করি। আমরা এই প্রডাক্টগুলো উনার সাথে আনতাম।

দিন দিন আমার ব্যবসা বড় হচ্ছে, তখন আমি চিন্তা করলাম আমিও যাব চায়না। সব কাগজ করলাম। খুব শিক্ষিত ছিলাম না, এক জনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছ থেকে জেনে সবকিছু ঠিক করে আমি চীন যাই। ওখানে গিয়ে অনেক ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ করি। এরপর চায়না ও তাইওয়ান থেকে প্রোডাক্ট আনা শুরু করি। এভাবেই সকল বাধা পেরিয়ে টাকা আয় করা শুরু করি। এখনো এই গার্মেন্টসের এলার্ম এর পাশাপাশি আরো অনেক আইটেম আমরা চায়না থেকে ইমপোর্ট করি।

সময়: আপনার ব্যবসার পরিধি বর্তমানে কেমন বেড়েছে?

সুফিয়া ইয়াসমিন: বর্তমানে আমার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার নাম জি টেক সলিউশন। আমি চিন্তা করলাম আরো কি ব্যবসা শুরু করা যায়। তখন শুরু করি লাইটের বিজনেস পাশাপাশি গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এবং ওয়ালপেপারসহ আরও বিভিন্ন ধরনের পণ্য। আমার ব্যবসার পরিধি যেমন বাড়ছে এই পর্যন্ত আমি সাত কোটি টাকারও বেশি আয় করেছি। এখনো আমার অর্ধকোটি টাকার মতো পুঁজি রয়েছে।

সময়: একজন নারী হয়েও এই পর্যায়ে আসতে কতটা বেগ পেতে হয়েছে?

সুফিয়া ইয়াসমিন: আমি কাজকে সব সময় পছন্দ করতাম। আমার কাজ খুব ভালো লাগতো আর ছোট থেকেই ভাবতাম আমি নিজে কিছু করব। আমার প্রতিষ্ঠানে থাকবে। আমার লক্ষ্য অটুট ছিল, আমি শত বাধা অতিক্রম করে আমার স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে গেছি। আমি এখন সফল। পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই এখন পরিশ্রম করছি বাকিটা জীবন পরিশ্রম করব।

সময়: নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ?

সুফিয়া ইয়াসমিন: আমার প্রতিটি নারীর জন্য একটাই কথা থাকবে, আমরা নারী হয়েছি বলে কি হয়েছে! আমরাও মানুষ। যাদের লক্ষ্য অটুট থাকে এবং যদি পরিশ্রম করতে পারি, আমার মনে হয় নারী বা পুরুষ নয়, প্রতিটি মানুষই সফল হবে। এছাড়া আমরা আগে ওই রকম কোনো সুযোগ পায়নি, কিন্তু বর্তমান সরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের অনেক সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই এই সুযোগগুলো ব্যবহার করে নারীদের পুরুষদের মতো এগিয়ে যেতে হবে।

সময়: নারী হিসেবে ব্যবসা করতে এসে কোন কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?

সুফিয়া ইয়াসমিন: অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে। অনেকে অনেক কথা বলতো তারপরও আমি হতাশ হয়নি। কারণ আমি ভাবতাম, যে যা বলে বলুক আমি তো জানি আমি কি রকম। সফলতায় পৌঁছাতে বাধা আসবেই। আমার ছোট ছোট ছেলে মেয়ে ছিল। তাদেরকে রেখে আমি আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করছি। আমার স্বামীকেও অনেকে অনেক কিছু বলেছে, তারপরও আমি আমার স্বপ্ন থেকে একটুও পিছিয়ে যায়নি তাই আমি আজ সফল।

By ইনকাম নিউজ

আমি একজন ফ্রিল্যান্সার। নিজে আয় করার পাশাপাশি নতুনদের সহযোগীতা করতে ভালবাসি।

Leave a Reply

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ