ফটোগ্রাফি আসলে কি?

ফটোগ্রাফি একটি বড় আকারের শিল্প যা শুধু ক্যামেরা ক্লিক করে করে ফটো তুলে বেড়াইলে হবে না । আবার ক্যামেরা বেশি বেশি ক্লিক করে ফটো না তুললেও হবে না । এটা চর্চা ও সাধনার বিষয় ।
মানুষের মনের চোখের দেখার ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে ১টি ভাল ফটোগ্রাফিতে ।
যুগে যুগে অনেক বিপ্লব হয়েছে এই দেশে । এবার আসুন না আমরা ফটোগ্রাফির উপর একটা বিপ্লব ঘটিয়ে বাংলাদেশ কে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরি , । সোনার দেশের সোনা গুলো ফুটিয়ে তুলি ক্যামেরার ফ্রেমে ।

Photos একটি গ্রীক শব্দ – যার অর্থ হলো Light অর্থাৎ এবং Graphos – যার মানে হলো Drawing মানে আঁকা…..তাহলে Photography মানে দাড়াচ্ছে আলো দিয়ে আঁকা….এক কোথায় যেটা আমরা সবসময় শুনে থাকি “আলোকচিত্র”।

একটা ক্যামেরা কিনতে হবে প্রথমে । কিন্তু কি ক্যামেরা কিনবেন ?

ফটোগ্রাফার হতে হলে আপনাকে (DSLR)বা ডিজিটাল এস.এল.আর ক্যামেরা কেনায় ভাল । সে জন্য আপনাকে বাজারের নানা ধরনের ক্যামেরা থেকে বেছে নিতে হবে পছন্দের এবং প্রয়োজনীয় ক্যামেরা ।

ফটোগ্রাফি কত প্রকার ও কি কি?

বর্তমান সময়ে এর কোন সঠিক উত্তর নেই। প্রকারভেদ নিয়ে একেকজনের একেকরকম মতবাদ।
ফটোগ্রাফি প্রথম যখন মানব হৃদয়ে একটা কলা (শিল্প) হিসেবে স্থান পেলো তখন ফটোগ্রাফি ছিলো ২ প্রকার।

১। পোর্ট্রেট (Portrait)
২। ল্যান্ডস্কেপ (Landscape)

বিঃ দ্রঃ প্রথম দিকে এগুলো কে পোর্ট্রেট এবং ল্যান্ডস্কেপ নামেই ডাকা হতো কিনা তা নিয়ে আমার মনে সংশয় আছে।

এরপর আস্তে আস্তে প্রযুক্তি’র উন্নতি হলো এবং ছবি তোলার যন্ত্রও দিনকে দিন উন্নত হতে লাগলো। এর ফলে প্রথমদিকে যেসব ছবি তোলার কথা কল্পনাও করা যেতোনা সেসব ছবি তোলা পানির মত সহজ হয়ে গেলো। যাই হোক অল্প একটু ফটোগ্রাফির ইতিহাস কপচিয়ে ফেললাম।
বর্তমানে ফটোগ্রাফিকে ৬ টি বেসিক ক্যাটাগরি তে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলোঃ-

১। ল্যান্ডস্কেপ – Landscape
২। পোর্ট্রেট
৩। ওয়াইল্ড লাইফ
৪। একশন/স্পোর্টস
৫। ম্যাক্রো – Macro
৬। স্ট্রীট ফটোগ্রাফি – Street Photography

১। ল্যান্ডস্কেপ – Landscape

ল্যান্ডস্কেপ এর মূল উপাদান হলো প্রকৃতির বিশাল অবস্থা। যেমন পাহাড়, নদী, সমুদ্র, আকাশ ইত্যাদি এসব হলো ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির মুল সাবজেক্ট।

২। পোর্ট্রেট

পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফি’র সাবজেক্ট হলো মানুষের মুখ। পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফিতে যে শুধুমাত্র একজন মানুষই থাকবে তা কিন্ত নয়। একাধিক মানুষও থাকতে পারে একটা পোর্ট্রেট ক্লিক এ।

৩। ওয়াইল্ড লাইফ

ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি সম্পর্কে নতুন ফটোগ্রাফাররা অনেকেই একটা ভুল ধারনা করে এমনকি আমি নিজেও করেছিলাম। অনেকেই ভাবে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি মানে জন্তু জানোয়ার এর ছবি তোলা, ব্যস এটুকুই। আসলেই কি তাই??? মোটেও না।
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি মানে কোন এক প্রজাতি বন্য প্রাণীর উপর একটা ডকুমেন্টারি তৈরী করা যেমন তাদের আচরণ, খাদ্যাভাস, জীবন ব্যাবস্থা ইত্যাদি। একজন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার এর শুধু ফটোগ্রাফি জানলেই হয় না, তাদের বন্য পরিবেশ এ টিকে থাকাও শিখতে হয়।

৪। একশন/স্পোর্টস

একশন/স্পোর্টস ফটোগ্রাফির মুল সাবজেক্ট হলো গতিময় বস্তু। একশন/স্পোর্টস ফটোগ্রাফিতে ফাস্ট সাটার ব্যাবহার করা হয়।
(আসলে এই ক্যটাগরি নিয়ে বলার তেমন কিছুই নেই, নামেই পরিচয় 🙂 ।)

। ম্যাক্রো – Macro

ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি হলো খুব কাছ থেকে ডিটেইল এর ছবি নেয়া। এখানে যেই ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিটা দিয়েছি সেটি ভালো করে লক্ষ করুন। যে পাতাটা দেখছেন এটা হলো একদম চিকন ঘাস। এর মধ্যের শিশিরবিন্দু গুলো ক্যামেরা দিয়ে দেখার আগে আলাদা করে বুঝি নাই।

৬। স্ট্রীট ফটোগ্রাফি – Street Photography

স্ট্রীট ফটোগ্রাফির মূল সাবজেক্ট হলো নগর পরিবেশ (Urban environment)।
তাদের সামনে প্রায়শই হঠাত মানব সমাজের বিভিন্ন ঘটনা ঘটে এবং সেইসব দৈনন্দিন পথে ঘাটে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোই স্ট্রীট ফটোগ্রাফির ফ্রেম।

অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে যে এগুলো ছাড়াও তো আরো অনেক রকম ফটোগ্রাফি আছে!!!
জ্বী আরো অসংখ্য রকমের ফটোগ্রাফি আছে, সেগুলোর বেশীরভাগই এই ৬ টা ক্যাটাগরির সাব ক্যাটাগরি। অবশ্য এর বাইরেও কিছু আছে। সেগুলো নিয়ে অন্য কোনদিন আলোচনা করবো।

এখন আপনি যদি আলোকচিত্র ধারণ করতে চান – মানে ফটোগ্রাফি করতে চান তাহলে সবার আগে আপনার মাথায় থাকা লাগবে – “আমি কেন ফটোগ্রাফি করব?”…”আমি কি ধরনের ফটোগ্রাফি করব?”….এইটা না যে “আমি কোন ক্যামেরা দিয়ে ফটোগ্রাফি করব…?”
যখন প্রথম ফটোগ্রাফি শুরু হয় তখন একটা কালো বাক্সের মধ্যে একটি পিন দিয়ে ফুটো করে সেটার মধ্যে দিয়ে যা আলো আসত সেই আলোটাকে একটা আলোক সংবেদনশীল কাগজের উপরে আলোর বিক্রিয়া ঘটিয়ে সাদা কালো ফটো তুলা হত – সেই প্রাচীন ক্যামেরার নাম ছিল “PINHOLE (পিনহোল)” ক্যামেরা…সেই সময় থেকেই সবার মধ্যে ঢুকলো একটা জিনিস – “CAPTURE THE MOMENTS” – তখন না ছিল ক্যানন…না ছিল নিকন….না ছিল এখনকার এসব ফিচার….মেগাপিক্সেল এর বাগাড়ম্বর – অথবা সেরকম ভালো সেন্সরের কাহিনী…..

মনে রাখবেন ক্যামেরা একটা মাধ্যম মাত্র…..আপনি ফটো তুলবেন আপনার চোখ দিয়ে দেখে….আপনার মনন শক্তি ব্যবহার করে – ক্যামেরা আপনার হয়ে ফটো তুলে দিবে না – ক্লিক আপনিই করছেন…..ক্যামেরার লেন্সটা এখানে আপনার চোখের সামনে একটা মাধ্যম – যার মধ্যে দিয়ে লাইট এসে ক্যামেরা’র সেন্সরে পড়বে – একটা রাসায়নিক বিক্রিয়া হবে – অথবা ইলেক্ট্রিকাল এলগরিদম হবে (ডিজিটাল ক্যামেরার ক্ষেত্রে) – তারপরে হয়ত সেটা ফিল্ম এ জমা পড়বে – নাহলে মেমরি কার্ডে…. – কিন্তু এই প্রসেস তার আগেই – আপনি কিন্তু নিজের চোখে – নিজের মনে এঁকে ফেলেছেন সেই ফটো – যেটা আপনি তুলতে চাচ্ছেন….এটাই হলো ফটোগ্রাফি!!!!

একজন আর্টিস্ট আজ থেকে লক্ষ্ বছর আগে মাটির সাথে পানি আর শিকার করা পশুর রক্ত মিশিয়ে অন্ধকার গুহায় মশালের আগুনের আলোতে গুহাচিত্র একেছিল – সেও এক অর্থে একজন ফটোগ্রাফার…পার্থক্য – সে শিকারের কাহিনীটা লেন্স আর সেন্সরের সাহায্য নিয়ে একটা ফ্রেমে বন্দী করে রাখতে পারে নি – তার কাছে কোনো ফিল্ম ছিল না – ছিল না কোনো মেমরি কার্ড – কিন্তু সে কিন্তু ঠিক পেরেছে – সেই স্মৃতি – সেই মোমেন্ট তা গুহার দেয়ালে ইতিহাসের পাতায় কালকের সাক্ষী করে রাখতে…..

এখন একবার ভাবুন তো – ফটোগ্রাফি শুরু করবেন – কিংবা হয়ত অনেকদিন হলো করছেন ফটোগ্রাফি….অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন – একজিবিশন জিতেছেন – কিন্তু আপনি পেরেছেন কি এমন একটা ফটো তুলতে – যেটা কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে?…আজকে থেকে এক হাজার বছর পরে সেই ফটো দেখে ভবিষ্যতের মানুষ আজকের পৃথিবীকে কল্পনা করবে?

এইজন্য বলছি – ক্যামেরার ব্র্যান্ড নিয়ে মাথা ঘামাবেন না….যদি শুরু করতে চান – তাহলে মোটামুটি ভালো রেঞ্জের মধ্যে একটা ক্যামেরা কিনি শুরু করে দিন….৪০-৪৫ হাজার টাকার মধ্যে আপনি Canon 550D, 600D অথবা Nikon D3200, D5100 এইসব ক্যামেরা পেয়ে যাবেন….যথেষ্ট ভালো ক্যামেরা এগুলো – অন্তত দুই বছর তো হেসেখেলে এসব ক্যামেরা দিয়ে ফটো তুলতে পারবেন…..তার পরে নাহয় নিজেকে আবিষ্কার করে যখন বুঝবেন – যে নাহ – এইটা আমার ফটোগ্রাফি’র ধরন….তাই আমার এই ধরনের লেন্স অথবা এক ধরনের ক্যামেরা লাগবে – তখন দেখে শুনে ভালো করে একটা ক্যামেরা আপগ্রেড করুন

আর ছোট্ট একটা কথা বলে শেষ করছি – শুরুতেই ডিসিশন নিবেন না যে আপনি কি ধরনের ফটোগ্রাফি করবেন….মনে রাখবেন – ফটোগ্রাফারের স্টাইল তৈরী হতে ৫/৬ বছর এমনেই চলে যায় – আর তার পছন্দের ধরন অথবা Genre ধরতে ও ভালো সময় কেটে যায় – আপনি পোর্ট্রেট তুলবেন নাকি ল্যান্ডস্কেপ….স্ট্রিট ফটোগ্রাফি করবেন নাকি মডেল ফটোগ্রাফি….ফটো জার্নালিজম এর হাল ধরবেন নাকি কমার্শিয়াল ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করবেন? – দয়া করে ক্যামেরা কিনার আগে (মানে সোজা কোথায় ফটোগ্রাফি শুরু করার আগে আরকি) এই চিন্তা করে ফেলবেন না – আগে শুরু করুন – তুলতে থাকুন যা ভাল লাগে তাই…….বাসায় টেবিল এর উপরে পড়ে থাকা কলার ছিলকে থেকে শুরু করে রাস্তায় বসে থাকা একাকী কুকুর….বন্ধুর হাস্যকর পোজ দেয়া থেকে শুরু করে একজন কৃষকের….ঠাটা পড়া রোদে জ্বল জ্বল করা পথ ঘাট থেকে শুরু করে বৃষ্টিস্নাত স্নিগ্ধ বিকেলে হাতিরঝিলের ফটো…..জাস্ট তুলতে থাকুন…..আর তার পরে?