গান শুনতে ভালো লাগে না, এরকম মানুষ পৃথিবীতে হয়তো নেই। এই ভালো লাগার কাজটি থেকেই যদি আয়ও করা যায়, তাহলে তো কথাই নেই! হ্যাঁ, অনলাইনে এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে, যেগুলো আপনাকে গান শোনার জন্য অর্থ প্রদান করবে! আপনার কাজ হলো ঘরে বসে একমনে গান শুনবেন আর সে গান সম্পর্কে কিছু কথা লিখে দেবেন, ব্যস!
অনলাইনে আয়ের নানা উপায়গুলোর মধ্যে এটিই সম্ভবত সবচেয়ে সহজ এবং মজার। যার সারাদিন গান শুনে কাটিয়ে দিতে চান, তাদের জন্য এটি কোনো চাকরি নয়, মুফতে আয় করার সুযোগ! আপনাকে কেবল নিজের একটি প্রোফাইল বানাতে হবে, সেখানে নিজের পছন্দের গানের শ্রেণি সম্পর্কে লিখতে হবে, আপনি কীরকম গান শোনেন তা লিখতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান আপনার প্রোফাইল অ্যাপ্রুভ করলেই আপনার কাজ শুরু।
তাহলে আর দেরী কেন? চলুন জেনে নিই এমন কিছু ওয়েবসাইটের কথা যেখানে গান শুনে এবং তার রিভিউ লিখে অর্থ আয় করা যাচ্ছে।
হিটপ্রেডিক্টরও রিসার্চএফএমের মতো একটি গানের রিভিউ নেয়া প্রতিষ্ঠান। তবে এটি একটি ভিন্ন। এখানে সার্ভে আকারে নয়, বরং ৫০-১০০ শব্দের ছোট রিভিউ নেয়া হয়। হিটপ্রেডিক্টরও অভিজ্ঞদের জন্য। এখানে নতুনদের কোনো সুযোগ নেই। আবেদনের প্রেক্ষিতে যদি আপনাকে তারা গ্রহণ করে, তাহলে নিজের ইচ্ছামতো নিজের পছন্দের জনরা থেকে গান শুনতে পারবেন এবং রিভিউ লিখতে পারবেন।
হিটপ্রেডিক্টরে পয়েন্ট দেয়া হয় রিভিউয়ের জন্য। প্রতিটি গান রিভিউয়ের জন্য ৩ পয়েন্ট এবং একজন গায়কের একাধিক গান শুনে তাকে রিভিউয়ের জন্য ১০ পয়েন্ট দেয়া হয়। এ পয়েন্টের বিনিময়ে অ্যামাজন গিফট কার্ডও নেয়া যায়। প্রতি ৩ পয়েন্টে রিভিউকারী ১ ডলার আয় করেন। অ্যাকাউন্টে ন্যুনতম ২০ ডলার জমা হলে পেপালের মাধ্যমে পরিশোধ করে দেয় হিটপ্রেডিক্টর।
নতুন গায়ক, গীতিকার কিংবা শ্রোতা যারা গান শুনে অর্থ আয় করতে চান, সকলের জন্যই মিউজিক এক্সরে একটি চমৎকার প্লাটফরম। এখানে নতুন গায়ক কিংবা গীতিকাররা নিজেদের গান সাবমিট করেন রিভিউয়ের জন্য। এক্ষেত্রে গায়ক বা গীতিকার নিজে শ্রোতাদের অর্থ প্রদান করতে পারেন তার গানের রিভিউয়ের জন্য কিংবা তার গানটি প্রচারণার জন্য।
এছাড়াও এই প্লাটফরমের সাথে বিভিন্ন ট্যালেন্ট হান্টারদের যোগাযোগ থাকে যারা অধিক ফলোয়ার বিশিষ্ট গায়কদের আরো ভালো স্টেজে গান গাইবার সুযোগ করে দেয়। সেক্ষেত্রে অনেক নতুন গায়ক কেবল তাদের ফ্যান হবার জন্যও আপনাকে অর্থ প্রদান করবে। সাধারণ ৩০ সেকেন্ডের গান থাকে এই ওয়েবসাইটে, প্রতিটির জন্য ১০ সেন্ট প্রদান করা হয়। অ্যাকাউন্টে ২০ ডলার জমা হলেই পেপালের মাধ্যমে তা পরিশোধ করা হয়।
উইলোকালাইজ মূলত একটি ট্রান্সক্রাইবিং প্ল্যাটফরম। এখানে গানের রিভিউ লিখতে হয় না, লিখতে হয় গানের লিরিক্স। এই প্ল্যাটফরমে প্রতিদিনই অনেকগুলো কাজ করতে পারবেন। আপনার শ্রবণ ও লেখার দক্ষতা ভালো হলে এই প্ল্যাটফরমটি আপনার জন্য।
প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪টি গানে কাজ করতে পারবেন আপনি। প্রতিটি গান ট্রান্সক্রাইব করে দেয়ার জন্য, অর্থাৎ গানের কথাগুলো লিখে দেয়ার জন্য আপনি পাবেন ৪ ডলার, যা অন্যান্য প্ল্যাটফরমের তুলনায় বেশ ভালো। অয়্যার ট্রান্সফার কিংবা এসিএইচের মাধ্যমে পাওনা পরিশোধ করে উলোকালাইজ।
গান শুনে আয় করার সবচেয়ে পেশাদারী প্ল্যাটফরমটি হলো প্লেলিস্ট পুশ। গান রিভিউয়ে কেউ যদি সত্যিই নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তাহলে এটিই সর্বোত্তম ওয়েবসাইট। এখানে তুমুল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নিজের প্রোফাইল তৈরি করতে হয়। তবে একবার প্রোফাইল তৈরি হয়ে গেলে অর্থ আয় অনেক সহজ হয়ে যায়। কারণ, প্লেলিস্ট পুশ আপনার ফলোয়ারের উপর ভিত্তি করে একটি গান রিভিউয়ের জন্য ১ ডলার থেকে শুরু করে ১২ ডলার পর্যন্তও অর্থ প্রদান করবে!
প্লেলিস্ট পুশে কাজ করতে হলে প্রথমে আপনাকে সেখানে ইউজার হিসেবে সাবসক্রাইব করতে হবে। সাবসক্রাইব করার পর ভালো ভালো গান শুনে বিভিন্ন রুচির মানুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্লেলিস্ট তৈরি করতে হবে। আপনার প্লেলিস্ট পছন্দ হলে অনেকে আপনাকে ফলো করবে, অর্থাৎ আপনার ফলোয়ার বাড়বে। ৪০০ ফলোয়ার তৈরি হওয়া পর্যন্ত আপনি কোনো অর্থ আয় করতে পারবেন না। আপনার অনুসারী সংখ্যা ৪০০ হয়ে গেলে আপনাকে একজন প্লেলিস্ট কিউরেটর বানিয়ে দেবে প্লেলিস্ট পুশ। তখন আপনার প্লেলিস্টে নিজেদের গান রাখবার জন্য আপনাকে অর্থ প্রদান করবে অনেক নতুন গায়ক কিংবা গীতিকার। আপনার ফলোয়ার যত বাড়বে, আপনার আয়ও তাই তত বৃদ্ধি পাবে।
Comments (No)