হোম ডেলিভারি ব্যবসা শুরু করে লাখ টাকা উপার্জন 2022| 1

হোম ডেলিভারি ব্যবসা শুরু করে লাখ টাকা উপার্জন 2022| বর্তমান যুগে হোম ডেলিভারি ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে। ঘরে বসেই খাবার থেকে জামাকপড় এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অর্ডারের মাধ্যমে ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছে মানুষ। হোম ডেলিভারি ব্যবসা দিনদিন জনপ্রিয়তা লাভ করছে।

হোম ডেলিভারি ব্যবসা আসলে কি:

ডেলিভারি ব্যবসা এমন এক প্রকার ব্যবসা, যে ব্যবসাতে গ্রাহক অথবা ক্রেতাদের ঘর পর্যন্ত প্রডাক্ট অথবা জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজ করা হয়ে থাকে। এটি একটি স্টার্ট আপ ব্যবসাও বলতে পারেন।

আপনি আপনার নিজস্ব ফোনের মাধ্যমে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন উপভোক্তা অথবা ক্রেতা ফোনের মাধ্যমে নিজেদের জিনিসপত্র খাবার-দাবার অর্ডার দিয়ে থাকেন, যে কাজটা করে থাকে ডেলিভারি ব্যবসার কর্মরত ব্যক্তিরা এবং কর্মচারীরা।

হোম ডেলিভারি ব্যবসা শুরু করে লাখ টাকা উপার্জন 2022|

হোম ডেলিভারি ব্যবসার চাহিদা:

করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের পর এই ব্যবসার চাহিদা আরো বেশি বেড়ে গেছে। তাছাড়া করোনা ভাইরাস এর আগেও কিন্তু এই ব্যবসা পুরোদমে চলেছে।

কারণ মানুষ আজ ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে ভিড়ের মধ্যে জিনিসপত্র কেনা কাটা এবং খাবার খাওয়া পছন্দ করছেন না, সেক্ষেত্রে ঘরে বসেই ঘরেতেই সেইসব জিনিসপত্র অর্ডার করিয়ে আনিয়ে নেওয়াটাই বেশি পছন্দ করছে, সে ক্ষেত্রে হোম ডেলিভারি ব্যবসাটা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

ঘরে বসে বসেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, হোটেল থেকে খাবার, অর্ডার করা এতে যে আজকে যেন ফোনের একটা ক্লিকের মাধ্যমে মানুষ এ গুলি করতে পছন্দ করছেন। ভবিষ্যতেও এই ব্যবসা প্রচুর চাহিদা সম্পন্ন। কারণ মানুষের চাহিদা অনুসারে এই ব্যবসা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

হোম ডেলিভারি ব্যবসা:

হোম ডেলিভারি ব্যবসাতে আপনি কি প্রকারের জিনিসপত্র হোম ডেলিভারি করবেন, যদি আপনি গুনতে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি প্রচুর পরিমাণে অপশন পাবেন। হোম ডেলিভারি ব্যবসা শুরু করার জন্য তার মধ্যে কিছু জিনিস নিচে আলোচনা করা হলো।

১) মুদিখানার জিনিস পত্র ডেলিভারি:

করোনা ভাইরাসের কারণে যেখানে সকলকে সোশ্যাল ডিসটেন্ডিং মেইন্টেন করতে বলা হচ্ছে সেখানে ঘরে বসেই মুদিখানার দোকানের জিনিসপত্র হোম ডেলিভারি মাধ্যমে অর্ডার দিতে পারেন সকলেই।

সে ক্ষেত্রে কোনো ব্যাক্তি যদি হোম ডেলিভারি ব্যবসা শুরু করতে চান সে ক্ষেত্রে মুদিখানার জিনিস পত্র ডেলিভারি দেওয়ার মাধ্যমে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।

২) কুরিয়ার সার্ভিস:

কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে লোক এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পার্সেল পাঠানোর কাজ করে থাকে। এটা ই-কমার্স ক্ষেত্রের সাথে সাথে উপভোক্তা অথবা ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে বেশ ভালো একটি সার্ভিস। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে যানজটমুক্ত শপিং করার ফায়দা নিয়ে থাকে।

৩) খাবার ডেলিভারি:

ইদানিং এই ডেলিভারি ব্যবসা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, কারণ ঘরে বসেই ফোনের মাধ্যমে সুস্বাদু নিজেদের পছন্দের খাবার অর্ডার করে নিচ্ছেন ক্রেতারা।

যখন ঘরে খাবার তৈরি করার ইচ্ছা না থাকে অথবা বাইরে থেকে কোন কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে হোটেল থেকে খাবার অর্ডার দিয়ে থাকেন অনেকেই। সেক্ষেত্রে আপনি যদি খাবার ডেলিভারি ব্যবসা শুরু করেন অনেকটাই লাভজনক হবে এই ব্যবসা।

৪) গিফট বাস্কেট ডেলিভারি:

লকডাউন এর পরিস্থিতিতে আমরা যতই ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে থাকিনা কেন বা যেখানে সেখানে ইচ্ছামত কাজের ব্যস্ততার জন্য যেতে পারিনা কেন, যখন কারো জন্মদিন, অ্যানিভার্সারি এবং ছোটখাটো অনুষ্ঠানে গিফট পাঠিয়ে দেওয়া হয় অথবা উপর উপহার পাঠিয়ে দেওয়া জন্য হোম ডেলিভারি বেস্ট অপশন।

সেক্ষেত্রে জনসাধারণের সুবিধা হওয়ার পাশাপাশি হোম ডেলিভারি ব্যবসা করে আপনি লাভ দায়ক হতে পারবেন।

৫) নিউজপেপার ডেলিভারি:

বর্তমানে নিউজপেপার নেওয়ার জন্য কাউকে বাইরে যেতে হয় না। সে ক্ষেত্রে এই ডেলিভারি ব্যবসা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

৬) পিজ্জা ডেলিভারি:

যদি আপনি খাবার বানাতে বেশ পছন্দ করেন, এবং সেই খাবারটা ভীষণ সুস্বাদু বানতে পারেন এক্ষেত্রে আপনি পিজ্জা বানিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে ডেলিভারির ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

৭) লন্ড্রী ডেলিভারি:

বর্তমানে ব্যস্ততা ভরা জীবন যাপনে ঘরের জামাকাপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নেওয়ার সময় টুকু হয়ে ওঠে না। সে ক্ষেত্রে বাইরে দিতে হয়, সেই সবগুলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নেওয়ার জন্য।

তাই জামা কাপড় পরিষ্কার করে শুকিয়ে ডেলিভারি দেওয়ার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। মানুষের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর পাশাপাশি আপনার উপার্জনের রাস্তা প্রশস্ত হবে।

৮) স্কুল বাস পরিষেবা:

স্কুল বাস পরিষেবা টাও কিন্তু হোম ডেলিভারি ব্যবসার আওতায় পড়ে। আপনি এই ব্যবসাটি খুব সহজেই শুরু করতে পারেন।

যদি কোন ব্যক্তি বাস চালাতে পারেন ভালোভাবে, তাহলে স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্কুলের বাচ্চাদের ঘর থেকে নিয়ে যাওয়া স্কুল পর্যন্ত এবং স্কুল থেকে ঘর পর্যন্ত তাদেরকে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে ভালোমতো উপার্জন করতে পারেন।

৯) ওষুধের হোম ডেলিভারি:

এমন মানুষের দেখা মেলে যারা রোগের কারণে বাইরে বেরোতে পারেন না এবং সেই রোগের জন্য যে ওষুধ কিনে আনবেন সে ক্ষমতাটুকু তাদের মধ্যে নেই।

এমন পরিস্থিতিতে তাদেরকে ঘর পর্যন্ত ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে তাদের সুবিধা করে দেওয়ার পাশাপাশি নিজের উপার্জনের জোগাড় টাও করে নিতে পারবেন।

হোম ডেলিভারি ব্যবসার জন্য যানবাহনের প্রয়োজনীয়তা:

এই ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন রকমের যানবাহনের প্রয়োজনীয়তা পড়তে পারে যেমন ধরুন:-

ট্রাক অথবা ভ্যান:

আপনি যদি বড় কোন জিনিসের হোম ডেলিভারি করে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার ট্রাক অথবা ফ্যান এর প্রয়োজনীয়তা পরতে পারে।

বিভিন্ন উপকরণ:

জিনিসপত্র কে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ট্রাক অথবা ভ্যান থেকে নামানো ওঠানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপকরণের প্রয়োজনীয়তা হতে পারে।

এই ব্যবসা শুরু করার সময় আপনাকে এই উপকরণ গুলি কিনে নিতে হবে যেগুলি এ ব্যবসার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজনীয়।

হোম ডেলিভারি ব্যবসার নামকরণ অথবা ব্রান্ডিং:

আপনি যদি খুব বড় আকারে এই হোম ডেলিভারি ব্যবসা শুরু করে থাকেন তাহলে সেই ব্যবসাটিকে একটি ইউনিক নামকরণ করুন, যার ফলে আপনার ব্যবসার জনপ্রিয়তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি ব্র্যান্ডের অনুসারে আপনাকে কাজ করতে হবে।

যাতে আপনি বাজারে আপনার একটি পরিচয় বানিয়ে নিতে পারেন। এই জন্য আপনার ব্যবসার জন্য একটি এমন নাম নির্বাচন করতে হবে যে নামটি খুবই আকর্ষণীয় এবং খুব সহজে উচ্চারণ করা যায়।

হোম ডেলিভারি কোম্পানি করার ক্ষেত্রে লাইসেন্স এর জন্য রেজিস্ট্রেশন:

যে ব্যবসাই করুন না কেন তার জন্য আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করাতেই হবে সে ক্ষেত্রে হোম ডেলিভারি ব্যবসা শুরু করতে গেলেও আপনার এই ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্স এর জন্য রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে।

এর জন্য আপনি যে রাজ্যে বসবাস করেন এবং যে রাজ্যে আপনি এই ব্যবসাটি শুরু করতে চান সেই রাজ্য দপ্তরে গিয়ে আপনার ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন অবশ্যই করিয়ে নিন।

রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাওয়ার পর আপনার এই কোম্পানি খুব সহজেই রেজিস্টার হয়ে যাবে। যার কারণে ভবিষ্যতে আপনি এ ব্যবসার জন্য সম্পূর্ণরূপে তৈরি থাকতে পারবেন। না তো আপনাকে বিভিন্ন রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হতে পারে।

তার সাথে সাথে লাইসেন্স হয়ে যাওয়ার পর কোনরকম বেআইনি পরিস্থিতিতে আপনি জড়াতে পারবেন না, এবং তার সাথে সাথে আপনি আপনার সমস্ত রকমের কাজ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে সমস্ত রকমের কাজ খুব সহজভাবেই আইনিভাবে করতে পারবেন।

হোম ডেলিভারি ব্যবসার অ্যাপ:

উপভোক্তা দ্বারা হোম ডেলিভারি ব্যবসায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইনে অর্ডার দেওয়া হয়ে থাকে, যদি আপনি এর জন্য অ্যাপ বানিয়ে নেন তার মাধ্যমে ডেলিভারির জন্য অর্ডার নিতে পারবেন। এই অ্যাপে আপনার দোকানের সাথে সাথে কাস্টমার কেও রেজিস্টার করার জন্য বিকল্প দিতে হবে।

যার ফলে দোকানদারের বিভিন্ন রকমের প্রোডাক্ট উপভোক্তা অথবা ক্রেতা দেখতে পায় এবং তাদের পছন্দ অনুসারে সেই জিনিসের অর্ডার দিতে পারে। এই কারণে এই ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি অ্যাপ বানানো অবশ্যই প্রয়োজন।

হোম ডেলিভারি ব্যবসার জন্য জায়গা নির্বাচন:

এই ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে এমন লোকেশন নির্বাচন করতে হবে, যেখানে আপনার যানবাহন খুব সহজেই যাওয়া-আসা করতে পারবে। তার সাথে সাথে ডেলিভারি করা জিনিসপত্র স্টোর কোরে রাখা যেতে পারে এমন গুদামঘর আপনার থাকাটা অবশ্যই জরুরি।

সেখানে আপনি আপনার ব্যবসার জিনিসপত্র অনায়াসেই রাখতে পারবেন এবং উপভোক্তার ঘর পর্যন্ত সেই জিনিসপত্র পৌঁছানো পর্যন্ত জিনিসগুলোকে সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।

আপনার ব্যবসার লোকেশন এমন হওয়া প্রয়োজন যা মার্কেটের কাছাকাছি হতে হবে এবং জনবহুল জায়গা থেকেও আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে খুব কাছাকাছি হয়ে থাকে।

হোম ডেলিভারি ব্যবসায় মার্কেটিং:

এই ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে খুব বেশি খরচা করার প্রয়োজনীয়তা পড়বে না, কিন্তু যদি সবকিছু আপনাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতে হয় সে ক্ষেত্রে কিছু টাকা আপনাকে খরচ করতে হবে। আপনি কেমন ভাবে এবং কত বড় আকারে এই ব্যবসা শুরু করছেন তার ওপর নির্ভর করবে আপনার খরচ।

আপনি ট্রাক কিনতে চান সেক্ষেত্রেও আপনার কিছু টাকা খরচ হতে পারে, তার সাথে সাথে ড্রাইভারও রাখাটা প্রয়োজন। অথবা এমন কোন ট্রাক ড্রাইভার কে রাখুন যার নিজস্ব ট্রাক আছে, তাকে মাসিক বেতন দিয়ে রাখতে পারেন এই কাজে।

আর যদি আপনি একটি ট্রাক কিনতে চান সে ক্ষেত্রে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আপনাকে খরচ করতে হতে পারে। তার পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের উপকরণ, যে জিনিসের হোম ডেলিভারি ব্যবসা করবেন সেই জিনিসপত্র কেনার ক্ষেত্রে আপনার বেশ কিছু টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে আপনার কম করে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করতে হবে এই ব্যবসাতে।

এই ব্যবসায় লাভ:

তাছাড়া হোম ডেলিভারি ব্যবসা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় এবং লাভ দায়ক একটি ব্যবসা। আপনাকে হয়তো একটু বেশি টাকা ইনভেস্ট করে এই ব্যবসা শুরু করতে হবে, তবে তা সত্বেও আপনি যদি বড় আকারে এই ব্যবসা শুরু করেন সেক্ষেত্রে মাসে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন। তাছাড়া ছোট করে ব্যবসা শুরু করলে আপনার ইনভেস্ট এর তুলনায় লাভের অংশটা অনেকটাই বেশি।

আপনি যদি অনেক আগে থেকেই ব্যবসা করার আইডিয়া খুঁজতে থাকেন এবং আপনার কাছে যথেষ্ট পরিমাণে পুঁজি থেকে থাকে, তাহলে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন, বর্তমানের সাথে সাথে ভবিষ্যতে এই ব্যবসার চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো।

Leave a Reply

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ