শেয়ার বাজারে ম্যাক্সিমাম লাভ করার উপায় এবং টিপস গুলো 2022 1

শেয়ার বাজারে লাভ করার উপায়: আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানতে চলেছি কিভাবে শেয়ার বাজারে লাভ করা যেতে পারে। আজকালকার যুগে প্রায় সব মানুষই ব্যস্ত নাগরিক জীবনে একটা স্ট্রেডি সোর্স অফ ইনকামের পাশাপাশি প্যাসিভ ইনকাম এর রাস্তা বেছে নিচ্ছে।

অনেকেই ফিক্সড ডিপোজিট, রিয়েল এস্টেট, সোনাদানা ও অন্যান্য বিনিয়োগ ব্যবস্থার পথ অবলম্বন করে ইনকামের রাস্তা খুঁজে নিচ্ছেন। তবে, বিগত কয়েক বছরের হিসেব অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২১ সালের একটা সমীক্ষা অনুযায়ী বর্তমানে শেয়ার বাজারে ভারতে প্রায় ১.২ কোটি সক্রিয় বিনিয়োগকারী রয়েছে। তবে, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে অনেকেই এখানে বিনিয়োগ করার থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত রাখেন। তবে, আপনি যদি নতুন বিনিয়োগকারী হন কিংবা শেয়ার বাজারে লগ্নি করার কথা ভেবে থাকেন, তবে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবেই আপনার জন্য।

শেয়ার বাজারে ম্যাক্সিমাম লাভ করার উপায় এবং টিপস গুলো 2022
শেয়ার বাজারে ম্যাক্সিমাম লাভ করার উপায় এবং টিপস গুলো 2022

শেয়ার বাজার কি ?
জীবন বীমা কি ?
এই লেখাটি থেকে আপনি জানতে পারবেন শেয়ার বাজারে লাভ করার সেরা উপায় গুলো সম্পর্কে।

চলুন, তাহলে চট করে জেনে নেওয়া যাক স্টক মার্কেট থেকে লাভের বেশ কিছু সহজ উপায়ের ব্যাপারে।

শেয়ার মার্কেট থেকে ম্যাক্সিমাম ইনকাম করার উপায়:

ভারতের মতো দেশে, অনেক মানুষের কাছেই অর্থ বিনিয়োগ করা হল প্রধান আয় বাড়ানোর রাস্তাগুলোর মধ্যে একটি। যেখানে তারা মনে করেন যে, ‘আজকের বিনিয়োগ হল আগামী ভবিষ্যতের লাভের চাবিকাঠি’। অতীতে স্টক মার্কেট (stock market) একটি নিষিদ্ধ বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচিত হলেও, বর্তমানে এটি একটি পূর্ণ শিল্পে রূপান্তরিত হয়েছে।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, যে শেয়ার বাজারে কিভাবে অর্থ উপার্জন সম্ভব ?

তাহলে, পরিসংখ্যানগতভাবে আমরা এই ব্যাপারটিকে বোঝার চেষ্টা করতে পারি। ভারতে অনেক মানুষই ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা বিনিয়োগ করতে পছন্দ করে। কিন্তু, বর্তমানে ভারতীয় ব্যাংকগুলো ফিক্সড ডিপোজিটের মাধ্যমে প্রতি বছরে মাত্র ৬-৮% সুদের হার দিতেই সক্ষম।

অন্যদিকে, শেয়ার বাজারে আপনি মাত্র এক বছরেই ১০০ থেকে ৩০০% বা তারও বেশি টাকার মুনাফা লাভ করতে পারেন।

তাহলে, আপনিই ভাবুন, যে কোন ধরণের বিনিয়োগটা বেশি লাভজনক ?

সবসময় মনে রাখবেন, শেয়ার মার্কেট খুবই ফ্লেক্সিবল, অর্থাৎ, আপনি ১০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী বিনিয়োগ করতে পারবেন। আর, আপনার বিনিয়োগ মূল্যের পরিমাণ অনুযায়ী আপনি আপনার লভ্যাংশ পেতে পারবেন। এই মার্কেটে বিনিয়োগের মাত্রার যেমন কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই, ঠিক তেমনই এখানে লাভের পরিমাণেরও কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।

আপনি যেমন খুশি লাভ করতে পারেন।

টাকা জমানোর উপায় ও কৌশল
শেয়ার বাজারে লাভ করার উপায় এবং টিপস
আসুন, তাহলে এইবার জেনে নিই, শেয়ার বজায় থেকে লাভ করার সেরা টিপস ও ট্রিক্সগুলোর সম্পর্কে –

১. সবার আগে, শেয়ার বাজার শিখুন:
‘জ্ঞানসম্মতভাবে বিনিয়োগ হল সর্বোত্তম সুদ লাভ করার অন্যতম সেরা মাধ্যম’। অর্থাৎ, শেয়ার বাজারে প্রবেশ যে কেউ করতে পারে, কিন্তু তার থেকে মুনাফা তোলা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। তার প্রধান কারণ হল শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে অজ্ঞতা কিংবা না জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করার ফলাফল। অতএব, বহু পরিমাণ টাকা স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করার আগে আপনার প্রয়োজন শেয়ার বাজার সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরী করা।

এবার আপনার মনে হতে পারে, যে আপনি কিভাবে শেয়ার বাজার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারবেন? এর উত্তর হল স্টক মার্কেটে ব্যবহৃত বিভিন্ন টার্মগুলো ও পরিভাষা সম্পর্কে পড়ুন বা জানুন। এছাড়াও ব্যবসার খবর, ভিডিও, আর্টিকেলস, এবং বাজার সম্পর্কে একটু নিয়মিত খবর রাখুন ও আপনার চারপাশের সবকিছুর উপর নজর রাখুন। আর, নিজের ধারণা ও ক্ষমতা অনুযায়ী বিনিয়োগ করুন।

পড়াশোনা করে, জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করলে লাভ করার সুযোগও বৃদ্ধি পায়।

২. আপনি কোন ধরণের ট্রেডার সেটা ঠিক করুন:
যেকোনো শেয়ার মার্কেটে নানা ধরণের ট্রেডিং স্টাইল রয়েছে।

তাই সবার আগে, আপনি নিজে ঠিক করুন, যে আপনি কি একজন ট্রেডার হবেন নাকি একজন ইনভেস্টর হবেন ?

যেখানে একজন ইনভেস্টর বা বিনিয়োগকারী হলেন তিনি, যিনি স্টক মার্কেটে দীর্ঘ-সময় বা লং-টার্মে বিনিয়োগ করে থাকেন। অন্যদিকে, একজন ট্রেডার অল্প সময়ের জন্যে বিনিয়োগ করে যতটা বেশি সম্ভব মুনাফা লাভ করার দিকে নজর রাখেন। যদি আপনি নিজেকে একটি নির্দিষ্ট ধরণের ট্রেডার হিসেবে একবার চিহ্নিত করে নিতে পারেন, তবে আপনি আপনার বিনিয়োগের লক্ষ্যগুলো ঠিকমতো বেছে নিতে পারবেন। তাছাড়াও, এই সিদ্ধান্তটি আপনাকে আপনার গবেষণা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্র নির্বাচনেও যথেষ্ট সাহায্য করবে।

৩. আপনার লক্ষ্যগুলো স্থির করুন:
আপনি লং-টার্ম (দীর্ঘমেয়াদী) অথবা শর্ট-টার্ম (স্বল্পমেয়াদী) বিনিয়োগের লক্ষ্যতে শেয়ার মার্কেটে প্রবেশ করছেন কিনা, সেটা ঠিক করে নিন। আপনি যদি ছোট-খাটো মুনাফার দিকে বেশি আগ্রহী থাকেন, তবে আপনার শর্ট-টার্ম ইনভেস্টমেন্টে লাভ রয়েছে। অন্যদিকে, আপনি যদি অনেক পুঁজি একসাথে লাভ করতে চান, তবে সেক্ষেত্রে লং-টার্ম ইনভেস্টমেন্ট আপনার পক্ষে লাভজনক। তাই, প্রথম থেকেই আপনার লক্ষ্য স্থির করে নিলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেটা আপনাকে অনেকটাই লাভ দেবে।

৪. আপনার ঝুঁকির নেওয়ার ক্ষমতাটা বুঝে নিন:
শেয়ার মার্কেটে অবশ্যই ঝুঁকি রয়েছে, এখানে মুনাফা লাভ করার পাশাপাশি মার্কেটের অর্থনীতির ওঠা-নামার জন্যে ক্ষতির সম্মুখীনও হতে হয়। তাই, আপনার লাভ-ক্ষতির পরিমাণ সেক্ষেত্রে সবটাই নির্ভর করছে, আপনার বিনিয়োগ করার অর্থের পরিমাণের উপর।

সুতরাং, লাভের ক্ষেত্রে টাকার অঙ্ক যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনই ক্ষতির ক্ষেত্রেও কিন্তু একই নিয়মে টাকার পরিমাণ কমবে। তাই, বুঝে-শুনে আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা বুঝে বিনিয়োগ করা উচিত। যাতে, বিনিয়োগে আপনার ক্ষতি হলেও আপনার পেশা ও ব্যক্তিগত জীবনে তার প্রভাব না পড়ে।

৫. আপনার বিনিয়োগের বিকল্পগুলো জানুন:
স্টক বাজারে প্রবেশ করার সময় আপনার কাছে বিভিন্ন বিনিয়োগের বিকল্প দেওয়া হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি জনপ্রিয় বিকল্প হল SIP, ইক্যুইটি, মিউচুয়াল ফান্ড, ও অন্যান্য। এই বিকল্পগুলো ছাড়াও আপনার উচিত ঠান্ডা মাথায়, আবেগে না ভেসে সঠিকভাবে আপনার বিনিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে, অনুসন্ধান করে, মূল্যায়ন করে নিয়ে এই মার্কেটে বিনিয়োগ করা।

যাতে, আপনার ক্ষতির থেকে লাভের পরিমাণটা সবসময় বেশি থাকে।

Mutual Fund কি ?
৬. একটি বৈচিত্রপূর্ণ পোর্টফোলিও নির্মাণ করুন:
বিভিন্ন ধরণের স্টকে আপনার মূলধন বিনিয়োগ করা শুরু করুন। একটি স্টকে অনেক মূলধন বিনিয়োগ করার চেয়ে একাধিক স্টকে মূলধন বিনিয়োগ করলে লাভ ও ক্ষতির পরিমাণের মধ্যে একটা সামঞ্জস্যতা থাকে। যেকোনো একটি স্টকে ইনভেস্ট করলে সেখানে যদি আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হন, তবে আপনার পুরো মূলধনটাই লস হবে।

অন্যদিকে, একাধিক স্টকে ইনভেস্ট করলে, একটি বা দুটি স্টক আপনার লসে চললেও, বাকি স্টকগুলো থেকে আপনি বেশি করে মুনাফা লাভ করে, লাভ-ক্ষতির মধ্যে একটা সমতা রেখে চলতে পারবেন এবং এতে আপনার শেয়ার মার্কেট থেকে লাভ হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।

সবথেকে ভালো উপায়গুলোর মধ্যে একটি হল, আপনার ৮০% মূলধন লার্জ ক্যাপিটাল স্টকে ও বাকি ২০% মূলধন মাঝারি ও ছোট ক্যাপিটাল স্টকে লাগাতে পারেন। এতে, আপনার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ, উভয়ের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা কার্যকরী হবে। যদি, আপনি স্টক মার্কেটে নতুন হয়ে থাকেন তবে, লার্জ-ক্যাপ স্টকে ইনভেস্ট করলে ঝুঁকির সম্ভাবনা কিছুটা কম থাকে।

৭. কখনওই শেয়ার মার্কেটকে অগাধ সময় দেবেন না:
মার্কেট সর্বদা পরিবর্তশীল, তা সত্ত্বেও, কম দামে স্টক কেনা ও চড়া দামে বিক্রি করা প্রতিটা বিনিয়োগকারীরই স্বপ্ন। তবে, যাইহোক না কেন, স্টক মার্কেটের স্টক মূল্য বৃদ্ধি ও কমে যাওয়ার সময়ের উপর নির্ভর করার চাইতে, শেয়ার বাজারে মিনিমাম স্টকের মূল্য পড়লেই কিনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। স্টক মূল্য কমার জন্য অপেক্ষা করলেও, সবসময় আপনার পছন্দের মূল্যে স্টকের দাম নামবে, তা কিন্তু মোটেও নয়।

অনেক সময়ই দাম কমার অপেক্ষা করতে করতে অনেক বিনিয়োগকারীরা সঠিক সময়ে সেই স্টকে ইনভেস্টই করতে পারেন না। তাই, আপনার উচিত সঠিক সময় থাকতে থাকতে বিভিন্ন মূল্যের স্টকে বিনিয়োগ করে রাখা।

৮. সঠিক স্টক নির্বাচন একান্ত প্রয়োজনীয়:
স্টক মার্কেটের বিনিয়োগে ঝুঁকি কমাতে চাইলে ও ভালো লাভ পেতে চাইলে সঠিক স্টক বাছাই করা অত্যন্ত জরুরী। সঠিক স্টক নির্বাচন করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি আপনার মূলধনকে বহুগুণে বৃদ্ধি করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে, আপনার উচিত সেই সব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা যাদের সম্পর্কে আপনার স্পষ্ট জ্ঞান ও ধারণা রয়েছে।

এছাড়াও, আপনি যে সমস্ত স্টক কিনবেন বা কিনছেন সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা চালিয়ে যান। আপনার বিনিয়োগ করা কোম্পানির সমস্ত কারেন্ট আপডেট, আর্থিক প্রতিবেদন এবং কোম্পানির আশেপাশে ঘটতে পারে, এমন কোনও নতুন ঘটনার উপরও নজর রাখুন।

কারণ, এই বিষয়গুলো সরাসরি আপনার স্টকের দামকেও প্রভাবিত করে। কোম্পানির সহকর্মীদের খবর রাখুন এবং এটির কোনো প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা আছে কিনা, তা খুঁজে বের করুন। আপনি নিজের জন্য স্টক বাছাই করার আগে অবশ্যই সেই কোম্পানির প্রতিটা বিষয়ে বিস্তারিত খবরাখবর নিন। তবে, আপনার স্টক পছন্দ করা অবশ্যই নির্ভর করে আপনার লক্ষ্য এবং ট্রেডিং করার কৌশলের উপর।

৯. অনুসন্ধান করা অতি গুরুত্বপূর্ণ:
আপনি যখন একটি স্টক নির্বাচন করছেন তখন আপনাকে সঠিক অনুসন্ধান করেই তবে সেটাতে বিনিয়োগ করতে হবে। সবসময় মনে রাখবেন, আপনি আপনার কষ্ট করে রোজগার করা টাকা বিনা কারণে নষ্ট করতে আসেননি। তাই, যেকোনো স্টকে সেই কষ্টের টাকা বিনিয়োগ করার আগে যথাযথ গবেষণা করাই হল বুদ্ধিমানের কাজ।

আপনি যদি স্টক মার্কেটের থেকে লাভ করতে চান, তবে আপনাকে মার্কেট গবেষণার উপর নজর দিতেই হবে। মার্কেট সম্পর্কে গবেষণা করে যে নতুন জ্ঞান আপনি পাবেন তা আপনার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ থেকে পাওয়া লাভের মাত্রাকেও বাড়াতে সাহায্য করবে।

মূলত, এই গবেষণাটি অনেক কারণের উপর ভিত্তি করে করা হলেও, আপনার ট্রেডিং করার ধরণের উপর এটি একান্তভাবে নির্ভরশীল। আপনি আপনার ট্রেডিং লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে গবেষণা চালাতে পারেন। আপনি যদি লং-টার্ম লক্ষ্যের জন্য বিনিয়োগ ও পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনাকে কোম্পানির একটি মৌলিক বিশ্লেষণ (fundamental analysis) করতে হবে।

আর, আপনি স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ করতে চাইলে একটি প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণই (technical analysis) কিন্তু যথেষ্ট। আসুন, বিস্তারিতভাবে জেনে নিই, মৌলিক ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ সম্পর্কে –

মৌলিক বিশ্লেষণ
বিনিয়োগকারীদের জন্য মৌলিক বিশ্লেষণ হল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।

আপনি যদি স্টক মার্কেটে আপনার মূলধন বিনিয়োগ করতে চান, তবে আপনার মৌলিক গবেষণা করা একান্তই প্রয়োজনীয়। এই মৌলিক বিশ্লেষণ পুরোনো তথ্য ও অন্যান্য বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীদের স্টকের ন্যায্য মূল্য ও অন্তর্নিহিত মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখায়।

আর এই বিশ্লেষণের সাহায্যেই বিনিয়োগকারীরা সমস্ত পরিমাণগত (quantitative) এবং গুণগত (qualitative) দিকগুলো মিলিয়ে দেখতে পারেন।

এই মৌলিক বিশ্লেষণ কিভাবে করবেন ?
১. সবার আগে আপনি কোম্পানি ও সেটির উদ্দেশ্যগুলো বুঝে নিন। একজন সফল বিনিয়োগকারী হতে গেলে আপনি নিজেকে কোম্পানির একজন মালিক হিসেবে বিবেচনা করে দেখবেন। bআর, সেই বিবেচনা অনুসারে আপনি ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার চিন্তা-ভাবনা করবেন।

২. কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন মন দিয়ে পড়ুন আর কোম্পানির সমস্ত লাভ-ক্ষতির বিবরণ, ক্যাশ ফ্লোওয়ের বিবৃতির হিসেবে রাখুন।

৩. সেই কোম্পানির ঋণ সম্পর্কে খবর রাখুন।

৪. কোম্পানিকে তার সমসাময়িক অন্যান্য কোম্পানিগুলোর সাথে তুলনা করুন ও তার বিভিন্ন সেক্টরগুলোরও তুলনা করুন। আর, এই সঠিক মৌলিক গবেষণা কিন্তু বড় বিনিয়োগের সুযোগ তৈরী করতে পারে।

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ
আপনি যদি ট্রেডার হয়ে থাকেন আর স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ করতে চাইছেন, তবে আপনি স্টকের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ করতে পারেন। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ ট্রেডারদের সঠিক এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্টের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক স্টক বাছাই করতেও সাহায্য করে।

শেয়ার মার্কেটে প্রবেশ করতে চাইলে, সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে, আপনি বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সূচক, চার্ট প্যাটার্ন, ও চার্টের ধরণ ব্যবহার করে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে আপনি বাজারের গতিবিধির সঠিক খবর রাখতে পারেন, যাতে আপনি সঠিকভাবে স্টকে বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্টক মার্কেটে আপনি স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যগুলো পূরণ করে অর্থ লাভ করতে পারবেন।

১০. ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশের মাধ্যমে লাভ:
আপনি শেয়ার মার্কেটে অর্থ রোজগার করতে পারেন লভ্যাংশের দ্বারা। আপনি আপনার মূলধনের সমস্ত লাভ থেকে উপকৃত তো হনই বরং কোম্পানি তার শেয়ারহোল্ডারদেরও লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। কোম্পানি তাদের নিজস্ব মুনাফা রাখার পরে তারা বিনিয়োগকারীদের করা বিনিয়োগে উপর নির্ভর করে সেই লভ্যাংশ ভাগ করে দেয়।

অর্থাৎ, যদি ওই কোম্পানির লভ্যাংশ প্রতি শেয়ারে ১০ টাকা হয় আর আপনার কাছে যদি ওই কোম্পানির ১০০০টা শেয়ার থাকে, তবে আপনি আপনার মূলধন লাভের পাশাপাশি ১০০০০ টাকার লভ্যাংশ পাবেন।

নিচে লভ্যাংশের ফলন গণনা করার সূত্র দেওয়া হল:
ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড = (ডিভিডেন্ড % × ফেস ভ্যালু) ÷ (মার্কেট মূল্য × ১০০)

অর্থাৎ, যদি মার্কেট মূল্য ২০ টাকা হয়, আর কোম্পনিটির ফেস ভ্যালু ১৫ টাকা হয় এবং কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয় ১০% প্রতি শেয়ার, তবে লভ্যাংশের ফলন বা ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড হবে ৭.৫%। অর্থাৎ, বছরে আপনি আপনার বিনিয়োগ করা টাকার উপর ৭.৫% হারে সুদ পাবেন।

১১. শেয়ার বাজারে মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে লাভ করুন:
যখন শেয়ারের দাম বেড়ে যায়, তখন বিনিয়োগ করে মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে উপার্জনের আশা করা যেতে পারে।

শেয়ার থেকে লাভ বা মুনাফা ১০০ শতাংশ বা তারও বেশি হতে পারে। তবে মূলধন বৃদ্ধির কোন নিশ্চয়তা নেই। মার্কেট মূল্য সর্বদাই ক্রয় মূল্যের চেয়ে কম থাকার সম্ভাবনা থাকে।

১২. স্টক বিক্রির সঠিক সময় নির্ধারণ করুন:
অনেক সময় স্টক মার্কেটগুলো বহুদিন ধরে একই রকম অবস্থায় পড়ে থাকতে পারে। সেই সময়ে আপনার স্টক একেবারেই বিক্রি করে দেবেন না। বরং, অপেক্ষা করবেন; কারণ স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করলে আপনাকে ধৈর্য ধরে স্টক কেনা-বেচা করতে হবে।

শর্ট-টার্মের ক্ষেত্রে আপনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেও আপনার বিক্রি করার মেয়াদ কিন্তু লং-টার্মের ক্ষেত্রে অনেকটা বেশি হওয়া দরকার। ধৈর্যের অভাবে চট করে স্টক বিক্রি করলে অনেক সময়েই মূলধন হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। তাই, আপনার উচিত বাজারের গতিবিধির উপর নির্ভর না করে আপনার স্টক নির্বাচনের উপর ভিত্তি করে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া।

যদি আপনার স্টকগুলোর আর্থিক এবং ব্যবসাগুলোতে কোনও মৌলিক পরিবর্তন না হয়, তবে সেই স্টকটিকে ধরে রাখুন। আর, স্টকে বিনিয়োগ করার সময় ঝুঁকি হল একটা সহজাত ব্যাপার। তাই, শেয়ারের দাম কম দেখেই তবে কেনার ঝুঁকি নেওয়া উচিত। এছাড়াও, আপনার হাতে কিছু পরিমাণ মূলধন অবশ্যই রাখবেন, বাজারে লগ্নির নতুন সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্যে।

পরিশেষে:
অবশ্যই চেষ্টা করবেন মাথা ঠান্ডা রেখে, অন্যের পরামর্শে না চলে, আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ও নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী বিনিয়োগ করতে। আর, শেয়ার মার্কেটে কখনওই রাতারাতি কোটিপতি হওয়া যায় না, ধৈর্য ধরে যদি বিনিয়োগ করা যায়, তবে এই মার্কেট থেকে যথেষ্ট পরিমাণে টাকা রোজগার করা মোটেও কঠিন কাজ নয়।

এই বিনিয়োগের খেলায় ভুলেও কোনোদিন ধার করে অর্থ বিনিয়োগ করবেন না, যেটা আপনাকে লাভের বদলে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিতে পারে। শেয়ার বাজারে লাভ করার উপায় বা কিভাবে শেয়ার বাজারে লাভ করা যাবে, সেই নিয়ে লিখা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।

আমাদের আজকের লেখাটির সম্পর্কে আপনাদের মতামত অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাবেন জানাবেন।

Leave a Reply

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ