How Salma became an entrepreneur along with teaching
শিক্ষকতার পাশাপাশি যেভাবে উদ্যোক্তা হন সালমা/How Salma became an entrepreneur al0ng with teaching সালমা আক্তার। পেশায় একজন কলেজ শিক্ষক। জন্মস্থান চাঁদপুর হলেও বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা সবই চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
সালমা বর্তমানে চট্টগ্রামের এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের প্রভাষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। উচ্চতর ডিগ্রির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি খুব অল্প সময়ে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি ‘নাগরদোলা’ নামে হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী। এই প্রতিষ্ঠানের মূল সিগনেচার পণ্য হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ি।
এছাড়াও হ্যান্ড পেইন্টের কামিজ, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, হিজাব, ইয়োক, গৃহসজ্জার জন্য হ্যান্ড পেইন্ট কুশন কভার, বেডশিট ও ওয়াল পেইন্টিং, সরা পেইন্টিং ও গহনার মধ্যে সিগনেচার গহনা হ্যান্ডমেইড ক্লে’র তৈরি গহনা, বিভিন্ন মিডিয়ার উপর হ্যান্ড পেইন্ট এর কাজ করা গহনা ও মেটালের গহনা নিয়ে কাজ করছেন। তার উদ্যোক্তা জীবনের শুরুর দিনগুলো ও সফলতার গল্প বলেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) জনসংযোগ কর্মকর্তা রাশেদ পারভেজের কাছে।
রাশেদ পারভেজ: আপনার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা কবে থেকে?
সালমা আক্তার: আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘নাগরদোলা’। এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর। শুরু করার জন্য একটি বিশেষ দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। এই বিশেষ দিনটি হলো হুমায়ূন আহমেদ স্যারের জন্মদিন।
রাশেদ পারভেজ: ‘নাগরদোলা’ নামকরণের কারণ জানতে চাই।
সালমা আক্তার: নাগরদোলা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির একটি অংশ। এটি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। যেহেতু আমার কাজ দেশীয় পণ্য ও সংস্কৃতির উপকরণ নিয়ে, তাই নাগরদোলা নামকরণ করা হয়েছে।
রাশেদ পারভেজ: কীভাবে এই কাজ করার চিন্তা আসলো?
সালমা আক্তার: ছবি আঁকার প্রতি আমার ভালো লাগা ছোটবেলা থেকেই। ২০০৩ সাল থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শেখা শুরু করি। সেই থেকে এখন অব্দি নানা প্রতিকূলতার মাঝেও প্রতিনিয়ত শিখে যাচ্ছি। পরিবার চেয়েছিল আমি বিসিএস ক্যাডার হব, আর আমার ইচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা।
এসএসসি এবং এইচএসসিতে জিপিএ-৫, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ডিপার্টমেন্টের সর্বোচ্চ রেজাল্ট করে তাই পরবর্তী সময়ে এমফিলে ভর্তি হই। কিন্তু এই ইচ্ছার পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন আমার সবসময়ই ছিল। সেই লক্ষ্যে ২০০৬ সালে শুরু করি আমার আর্ট স্কুল (রঙ-তুলি আর্ট স্কুল চট্টগ্রাম) দিয়ে। এটি বর্তমানে একটি স্বনামধন্য স্কুলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বলা যায়, সেই থেকে শুরু। কিন্তু এর সঙ্গে আরেকটি উদ্যোগ শুরু করার ইচ্ছে কাজ করতে থাকে সবসময়। আমার শিল্প জ্ঞান ও দেশীয় পণ্যের সংমিশ্রণে নতুন আরেকটি উদ্যোগের চিন্তা শুরু করলাম। নিজের কাজের দক্ষতা বাড়াতে তাই ভর্তি হই জেলা শিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রামে।
তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য সেখান থেকে নানা বেসরকারি কোর্সে অংশগ্রহণ করি।
রাশেদ পারভেজ: আপনি মূলত কী ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?
সালমা আক্তার: আমরা মূলত হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করছি। আমাদের মূল সিগনেচার পণ্য হ্যান্ড পেইন্টের শাড়ি। এছাড়াও হ্যান্ড পেইন্টের কামিজ, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, হিজাব, ইয়োকসহ আরও কিছু মাধ্যমে কাজ করা হয়। নাগরদোলায় গৃহসজ্জার মধ্যে হ্যান্ড পেইন্ট কুশন কভার,
হ্যান্ড পেইন্ট বেডশিট ও ওয়াল পেইন্টিং, সরা পেইন্টিং রয়েছে। আর গহনার মধ্যে আমাদের সিগনেচার গহনা হ্যান্ডমেইড ক্লে’র তৈরি গহনা, বিভিন্ন মিডিয়ার উপর হ্যান্ড পেইন্টের কাজ করা গহনা, আছে মেটালের গহনাও।
রাশেদ পারভেজ: শুরু থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?
সালমা আক্তার: হাতের কাজের কদর সবসময়ই থাকে এটা আসলে বলতেই হয়। কিন্তু আমার এই উদ্যোগ শুরু করার আগে আমি আসলে অনেকটা সময় নিয়ে মার্কেট রিসার্চ করি। ফলে, উদ্যোগের শুরু থেকেই খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। কেননা, ভিন্নধর্মী কাজের সংমিশ্রণ ঘটানোর চেষ্টা ছিল আমার।
রাশেদ পারভেজ: আপনার পণ্যের প্রধান ক্রেতা কারা?
সালমা আক্তার: আমার উদ্যোগের প্রধান ক্লায়েন্ট মূলত নারীরা। বিশেষ করে ২৫-৪৫ বছর বয়সী নারীরাই আমাদের মূল ক্রেতা। যদিও আমরা চেষ্টা করছি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই হ্যান্ড পেইন্টের বিভিন্ন মাধ্যমের উপর কাজের সংমিশ্রণ ঘটাতে।
রাশেদ পারভেজ: বর্তমানে কেমন ক্রেতা পাচ্ছেন ও ব্যবসার অবস্থা কী?
সালমা আক্তার: বর্তমানে আমাদের ক্লায়েন্টের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। শুরুতে যেখানে শুধু পরিচিত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন কিংবা সহকর্মীরা ক্রেতা হিসেবে থাকলেও বর্তমানে এর বাইরে ক্রেতার সংখ্যাই আমাদের বেশি। আর ভালো লাগার বিষয় এটি যে, আমাদের রিপিট ক্লায়েন্টের সংখ্যা অনেক বেশি।
রাশেদ পারভেজ: ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য আপনার কৌশল কী?
সালমা আক্তার: ক্রেতাদের সন্তুষ্ট রাখতে আমরা মূলত পণ্যের ও কাজের মান ধরে রেখেছি। যেকোনো পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাকে আমরা পরিষ্কার ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করি। এছাড়া ছবির সঙ্গে যাতে কাজের মিল থাকে, সেদিকে আমাদের যথেষ্ট নজর রয়েছে। ক্রেতারা ঘরে বসেই যাতে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে পণ্য পেয়ে যান, তাই হোম ডেলিভারি দেওয়া হয়। এছাড়া অন্য ডেলিভারির পর সেটি ঠিকমতো বুঝে পেয়েছেন কি না এ বিষয়টিও আমরা জানার চেষ্টা করি।
রাশেদ পারভেজ: আর্থিকভাবে কেমন লাভবান হয়েছেন?
সালমা আক্তার: বর্তমানে অফ-সিজনে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আর অন সিজনে ৫০-৬০ হাজার টাকার মতো সেল হয়। আমাদের হাতের কাজের দরুন আমরা চাইলেও অতিরিক্ত অর্ডার নিতে পারি না। তবে বড় পরিসরে আমাদের উদ্যোগ পরিচালনার কাজ চলছে। কেননা এই কাজের চাহিদা দিন দিন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাশেদ পারভেজ: শিক্ষকতার পাশাপাশি এসব করে আপনার কী উপকার হচ্ছে?
সালমা আক্তার: শিক্ষকতার পাশাপাশি কাজটি করে অবশ্যই আমি আর্থিকভাবে অনেক বড় একটি সাপোর্ট পাচ্ছি। দেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেরই নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশের জন্য কিছু করণীয় রয়েছে। তাই দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করে দেশীয় পণ্যের শিল্পকে সামনে এগিয়ে নিতে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারছি বলে আমি মনে করি।
এছাড়া স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি ও বর্তমানে কিছু সংখ্যক শিল্পী আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। ভবিষ্যতে আরও অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবো বলে আশা রাখি।
রাশেদ পারভেজ: এই কাজে পরিবারের মনোভাব কেমন?
সালমা আক্তার: আমার এই কাজে পরিবারের মনোভাব খুবই ইতিবাচক। সবার সাহায্য, সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যেতে পারছি।
রাশেদ পারভেজ: অনলাইনে প্রতারণা এড়াতে আপনার বিশ্বাসযোগ্য অর্জনে কী ভাবছেন?
সালমা আক্তার: অনলাইনে যেহেতু ক্রেতা পণ্য হাতে ধরে দেখার সুযোগ পান না, আবার ছবি দেখেও ম্যাটরিয়াল সম্পর্কে বুঝতে পারেন না। তাই অনেকেই এ সুযোগে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। এক্ষেত্রে আমরা ক্রেতাকে পণ্য, পণ্যের কোয়ালিটি ও ম্যাটেরিয়ালসসহ সব তথ্য বিস্তারিতভাবে দিয়ে থাকি। ছবি অতিরিক্ত এডিট না করাই ভালো। অবশ্যই প্রতারণা এড়াতে পেজের এক্টিভিটিস পর্যবেক্ষণ করে অর্ডার দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। মূল্যছাড় কিংবা কম মূল্যে পণ্য দিচ্ছে দেখে পণ্য ক্রয় উচিত নয়।
রাশেদ পারভেজ: নতুন যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
সালমা আক্তার: নতুন উদ্যোক্তা যারা হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী বা নতুন শুরু করেছেন, তাদের জন্য বলবো, হ্যান্ড পেইন্টের কাজের কদর বেশি থাকার মূল কারণ, এ কাজ অন্য সব কাজ থেকে ভিন্ন। এখানে ক্রেতা তার পছন্দ অনুযায়ী পোশাক, গহনা বা গৃহসজ্জার কাজ করিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকায় ক্রেতারা এই পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী। আর তাই এই কাজ শুরু করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে ছবি আঁকার উপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
অনেককেই দেখা যায়, ভালো লাগা থেকে এই কাজ শুরু করেন। সেক্ষেত্রে কপি করে আঁকার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে আঁকা, রঙ ও কম্পোজিশন সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায় কপিও করতে পারেন না। নতুন নতুন ডিজাইন আনতে সক্ষম হন না। এছাড়া ক্রেতার রুচি অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে ওনারা প্রথমে কম দামে পণ্য দিয়ে বাজার ধরার চেষ্টা করলেও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে একটা পর্যায়ে গিয়ে কাজ করা ছেড়ে দেন।
এতে তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হন। আবার দেখা যায়, আপনি যখন কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়া এ কাজে হুট করে উদ্যোগ নেন, তখন কাজের মান ভালো না হলে ক্রেতারা হ্যান্ড পেইন্টের কাজ নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করবেন। এতে কাজটির বাজার নষ্ট হবে। তাই প্রথমে কাজটি ভালোভাবে শিখুন, সময় দিন, কাজটিকে ভালোবাসুন, এরপর শুরু করুন। শুধু লাভের উদ্দেশ্যেই নয়, একে একটি শিল্পে রূপান্তর করতে কাজ করুন।
রাশেদ পারভেজ: অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
সালমা আক্তার: অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া অবশ্যই ইতিবাচক। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হয়। একজন বিক্রেতা/উদ্যোক্তার, যার হয়তো একটি শপ ভাড়া নিয়ে কাজ করার সামর্থ্য নেই বা তিনি হয়তো এই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না, সেক্ষেত্রে অনলাইন বিজনেস শুরু করা তার জন্য অনেক সহজ। এতে তিনি ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারলেও ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না।
অনলাইন ব্যবসার ফলে নারী-পুরুষ উভয়েই স্বাবলম্বী হচ্ছে। এতে চাকরির বাজারে চাকরি প্রত্যাশীদের চাপ কমছে। কিছু দিন পূর্বেও আমাদের শপিংমলগুলো বিদেশি পণ্যে সয়লাব ছিল। সেখানে এখন দেশীয় পণ্যের বাজার ব্যাপক বিস্তৃত হচ্ছে অনলাইন বিজনেসের মাধ্যমে। এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
রাশেদ পারভেজ: ভবিষ্যতে এই উদ্যোগকে কত দূর নিয়ে যেতে চান ও এই নিয়ে পরিকল্পনা?
সালমা আক্তার: আমি মূলত শখের বশে এ ব্যবসা শুরু করিনি। দীর্ঘ পরিকল্পনার পর এটি শুরু করেছি। আমার মূল স্বপ্ন হ্যান্ড পেইন্টের কাজকে একটি শিল্পে রূপান্তর করা। হ্যান্ড পেইন্ট ও হ্যান্ড মেইড ভিন্নধর্মী ও রুচিশীল কাজের বিস্তার ঘটানো। এটি আমাদের দেশীয় পণ্যের বাজারকেও সম্প্রসারিত করবে।