ব্লগ লিখে ঘরে বসে মাসে ২ লাখ টাকা আয় করার কিছু সহজ উপায় একদশক আগে পর্যন্তও নিজের লেখা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া ছিল বেশ কঠিন, বড় পত্রিকায় ছাপার সুযোগ পান খুবই কমসংখ্যক লেখক, নাহলে ভরসা লিটল ম্যাগাজিন, তাতেও রয়েছে বিক্রির সমস্যা। আর এই লেখা থেকে আয়? সে সুযোগ তো মেলে ভাগ্যবানদের। তবে অবস্থাটা দ্রুতই বদলেছে, ঘরে ঘরে ইন্টারনেট আসার হাত ধরেই এসেছে ব্লগিং। নিজের মতামত, লেখা, ছবি সবকিছুই মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সহজ উপায় ব্লগ। নিয়মিত লিখতে লিখতে তৈরি হয়ে যায় পাঠককূলও। আর হ্যাঁ এই ব্লগই হয়ে উঠতে পারে আপনার আয়ের উত্স।
আর্টিকেলটির শেষে আমরা একজন ব্লগারের মোবাইল নম্বর আপনাদের সাথে শেয়ার করে দেবো। ইনি আমাদের সাহায্য করেছেন ব্লগের এমন সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে।
অনেকেই বলে থাকেন, ভারতে এখনও ব্লগ থেকে যথেষ্ট আয়ের সুযোগ নেই। কিন্তু এই দেশেই এমন ব্লগাররা রয়েছেন যারা তাঁদের ব্লগ থেকেই আয় করছেন লাখ লাখ টাকা।
উপায় আছে হাতের কাছেই। জানতে হবে কয়েকটি সহজ পদ্ধতি, আর তাহলেই আপনার ব্লগটিই হবে আপনার ভবিষ্যতের আয়ের পথ।
১। বিজ্ঞাপন প্রকাশ: সবথেকে সহজ ও প্রচলিত উপায় এটি। যদি আপনি প্রথমবার আপনার ব্লগ থেকে আয়ের কথা ভাবেন তাহলে বেছে নিন এই উপায়টিই। সারা পৃথিবীতেই ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে তা থেকে আয় একটি চালু উপায়, আর আমাদের দেশেও তা সমান জনপ্রিয়।
কিভাবে কাজ করে – আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করুন, পাঠক যদি সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেন তাহলেই মিলবে কমিশন।
আপনার ব্লগে কীভাবে এটি ব্যবহার করবেন-
১) প্রথমেই বেছে নিন একটি বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক। ব্লগার এবং বিজ্ঞাপনদাতা উভয়ের মধ্যেই সবচেয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কটি হল গুগলের AdSense। রয়েছে BidVertiser, Infolinks এর মতো অন্য নেটওয়ার্কও।
২) আপনার পছন্দের নেটওয়ার্কে বিজ্ঞাপন প্রকাশক হওয়ার জন্য আবেদন করুন। অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে আপনার ব্যাঙ্ক আকাউন্ট, যেখানে কমিশনের টাকা পাঠানো হবে তার বিবরণও দিতে হবে আবেদনপত্রে, তাই সেই বিবরণ তৈরি রাখুন।
৩) আপনার আবেদন মঞ্জুর হলে বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের তরফ থেকে তা জানিয়ে আপনাকে একটি মেল করা হবে।
৪) এরপর আপনাকে পাঠানো হবে বিজ্ঞাপন কোড যা আপনি আপনার ব্লগে প্রকাশ করবেন। আপনি আপনার পছন্দ মতো জায়গায় এটি প্রকাশ করতে পারেন, যেমন আপনি এটিকে লেখার মাঝে বা লেখার পাশের বারে রাখতে পারেন।
৫) আপনি বিজ্ঞাপন কোডটি ঠিক স্থানে রাখার দু’ঘন্টার মধ্যেই বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে তা আপনার ব্লগে প্রকাশ করা হবে এবং বিজ্ঞাপনটি আপনার ব্লগে দেখাবে।
৬) আপনার কাজ শেষ। এবার আপনার পাঠকরা ওই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলেই পয়সা জমা পড়বে আপনার অ্যাকাউন্টে।
কত টাকা পেতে পারেন – প্রতি ক্লিকে ০.০১ থেকে ৫০ ইউএস ডলার [ ১ ইউএস ডলার = ভারতের ৬৮ টাকা] পর্যন্ত আয় করা যেতে পারে। আপনার ব্লগের বিষয়ের ওপরই নির্ভর করে এই আয়, কারণ ব্লগের বিষয়ের ভিত্তিতেই দেওয়া হয় বিজ্ঞাপন। আপনার আয়ের পরিমাণ নির্ভর করছে কতজন বিজ্ঞাপনটি ক্লিক করছেন তার ওপর।
বেশি আয় করবেন কীভাবে- আপনার ব্লগে কোন জায়গায় বিজ্ঞাপন দিলে সবথেকে বেশি পাঠকের চোখে পড়বে ও তাঁরা তা ক্লিক করতে উত্সাহিত হবেন, সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। ঠিক করুন বিজ্ঞাপনের ধরণও। যেমন কোনও ব্লগে ছবিসহ বিজ্ঞাপনে বেশি ক্লিক হয় আবার অন্য কোনও ব্লগে, লেখা বিজ্ঞাপনের পাঠক বেশি।
২। মার্কেটিং অ্যাফিলিয়েট : বেশ ভালরকমের আয় হতে পারে এই উপায়। ব্লগে লেখার মাধ্যমে কোনও একটি পণ্য বা পরিষেবার প্রচার করতে হবে আপনাকে। পণ্য বা পরিষেবাটি বাছার বিষয় সতর্ক হোন। আপনার পাঠকরা কী কিনতে চাইতে পারে সেটি বুঝে নিতে হবে আপনাকে। এরজন্য প্রয়োজন গবেষণা ও বিশ্লেষণ। প্রচার করার সময়ও হতে হবে সাবধানী, পাঠক আপনার লেখা পড়তে আপনার ব্লগে আসেন, সারাক্ষণ পণ্য বা পরিষেবার প্রচার দেখলে তিনি বিরক্ত হতে পারেন।
কীভাবে কাজ করে- লেখার সঙ্গে পণ্য বা পরিষেবাটির লিঙ্ক আপনার ব্লগে প্রকাশ করতে হবে। যখন পাঠক সেই লিঙ্কে ক্লিক করবেন বা কিনবেন আপনি কমিশন পাবেন।
আপনার ব্লগে কীভাবে এটি ব্যবহার করবেন-
১) প্রথমেই বেছে নিন কোন পণ্য বা পরিষেবার মার্কেটিং করতে চান। কয়েকটি প্রচলিত অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক হল Clickbank, OMG India, Trootrac media। এছাড়াও ফ্লিপকার্ট বা আমাজনের মতো কোম্পানিতে মার্কেটিং অ্যাফিলিয়েট হিসেবে সরাসরি যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
২) পছন্দের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন পত্র পূরণ করুন। আপনি মার্কেটিং-এর জন্য কী কী কৌশল ও পদ্ধতি ঠিক করেছেন, তা জানাতে হতে পারে আবেদনের সময়।
৩) বেশিরভাগ ওয়েবসাইটই ২৪-৭২ ঘন্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় আপনার আবেদন গৃহীত হল কি না।
৪) আবেদন গৃহীত হলে আপনার অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্টটিতে লগ-ইন করে বেছে নিতে পারেন আপনার ব্লগের জন্য উপযুক্ত লিঙ্কটি।
৫) উপযুক্ত লিঙ্ক বা বিজ্ঞাপনটি আপনার ব্লগে যোগ করার পর দেখে নিন তা ঠিক মতো কাজ করছে কি না।
৬) অ্যাফিলিয়েট হিসেবে আয় করার জন্য আপনি এবার প্রস্তুত। এরপর যখনই কেউ ওই লিঙ্কে ক্লিক করবে অথবা পণ্য বা পরিষেবাটি কিনবে আপনি তা থেকে কমিশন পাবেন।
কত টাকা পেতে পারেন- বিক্রয়মূল্যের ২.৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ অবধি পেতে পারেন আপনি। কমিশনের মূল্য নির্ভর করে পণ্য বা ওয়েবসাইটের ওপর। যেমন আপনি যদি ফ্লিপকার্টের বিজ্ঞাপন দেন, তাহলে কোনও ক্রেতা মোবাইল ফোন কিনলে আপনি যে কমিশন পাবেন, তার থেকে অনেক বেশি কমিশন পাবেন কেউ জামাকাপড় কিনলে।
বেশি আয় করবেন কীভাবে- আপনার পাঠকের কথা মাথায় রেখে পণ্য বা পরিষেবা নির্বাচন করুন। যে জিনিসের বিক্রি বেশি তার কমিশন কম, তাই পণ্য বা পরিষেবা নির্বাচনের সময় এমন জিনিস বাছুন যা তুলনামূলকভাবে কম বিক্রি হয় কিন্তু আপনার পাঠক তা কিনতে উতত্সাহী।
এই গুলি হল ব্লগ থেকে আয়ের সবথেকে প্রচলিত উপায়। এছাড়া নিজের পণ্য বিক্রয়, কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের বিজ্ঞাপন ব্লগে দেওয়া, থেকে রোজগার করা যেমন কোনও রকেট সায়েন্স নয় তেমনই ছেলেখেলাও নয়। পণ্য বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এবং ব্লগের নিয়মিত পাঠক তৈরি করার জন্য পরিশ্রম করতে হবে, যত বেশি সংখ্যক নিয়মিত পাঠক তৈরি করতে পারবেন আয় ততই বাড়বে। প্রয়োজন ব্লগের প্রচার করাও। অনেক ব্লগারই খুব ভাল প্রবন্ধ লেখেন কিন্তু প্রচার করেন না, তাই তা তাদের ব্যক্তিগত ডায়েরির মতই রয়ে যায়। প্রচারের মাধ্যমেই একমাত্র সম্ভাব্য পাঠকের কাছে পৌঁছনো সম্ভব। তাই ব্লগের প্রচার করুন, যেকোনও একটি উপায় বেছে নিন আর আয় করুন ব্লগ থেকে।
তবে মাথায় রাখতে হবে আপনার ব্লগ ওয়েবসাইট-টি কিন্তু এই ব্যাপারে আপনাকে সফলতা হাশিলে সাহায্য করবে। তাই একটি ভালো উন্নত মানের কম্পানি-কেই এই কাজের দায়িত্ব দিন। একটি ভালো কম্পানি আছে এনারা খুব ভালো ভাবে আপনাদের সাহায্য করতে পারবেন। আপনার ওয়েবসাইটের জন্য এনাদের