ব্লগিং কি শুধু অর্থ উপার্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? 1

ব্লগিং কি শুধু অর্থ উপার্জনেরজন্যই?

এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আমাকে নাড়া দেয় তা হল, বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেব্লগিং নিয়ে অসংখ্য প্রতিবেদনপ্রকাশিত হয় তার বেশিরভাগইঅর্থ উপার্জন সংক্রান্ত। আমাদের প্রত্যেকের এই সীমাবদ্ধ মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

ব্লগের প্রকৃত অর্থ শুধুমাত্রঅর্থ উপার্জন নয়, ব্লগ হচ্ছে একটি সামাজিক সেতু বন্ধন যেখানে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করা যায়, যেখানে আমরা আমাদের সংস্কৃতি, সাহিত্য, বৈশিষ্ট তুলে ধরতে পারি ।

গোটা বিশ্বের কাছে আমরা নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করতে পারি।

ব্লগিং এর উদ্দেশ্য আমাদের গোটা জাতীর মূল্যবোধকে জাগ্রত করা, চলমানবিভিন্ন পরিস্থিতিনিয়ে আমাদের চাহিদা আকাঙ্খাকেস্পষ্ট করে তোলা ।

এখানে সবাই নিজের মনের কথা স্বাধীনভাবে লিখে।আমার প্রথম ব্লগিং জীবনঃপ্রথম ধাপঃআমার জীবনের সবচেয়ে বৃহৎ শখটির নাম হচ্ছে”তথ্য”।

মানুষের তথ্যের চাহিদাকে দারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে ইন্টারনেটনামক জনপ্রিয় পদ্ধতির ।

আমার ব্যাক্তিগত তথ্যের চাহিদার জন্য আমিও সকলের মতই এই পদ্ধতির সরনাপন্য হই সম্ভবত ২০০৯ সালে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে সে সময় অনলাইনে বাংলাভাষাখুবই অবহেলিত একটি ভাষা হিসেবে অবস্থান করছিল।

একপর্যায়ে সিদ্ধান্তনিলাম বাংলাভাষার তথ্যশালা তৈরি করবো।

পুরোদমে প্রায় ৬-৭ মাস ধরে দৈনিক ৮-১০ ঘন্টা শ্রম দিয়ে ওয়েবের সুন্দর একটি স্ক্রিপ্টতৈরি করলাম অতঃপর তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে বাংলা ফন্টের ঝামেলায় পড়লাম । ওয়েবসাইটেবংলা ফন্ট সমর্থন করছেনা । বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দারস্থ হলাম বাংলাফন্টকিভাবে তৈরি করা যায় । সবচেয়ে আশ্চর্যেরবিষয়টি আমি জানতে পারলাম তা হল “বাংলা”নামক একটি ভাষা রয়েছে তাই তারা জানেনা এমনকি দেশের পরিচয় দিয়েও তারা বুঝতে পারলনা । অবশেষে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম প্রায় কিছুদিন অবসর সময় কাটালাম একপর্যায়েসিদ্ধান্তনিলাম ওয়েবে সমর্থন করে এমন বাংলা ফন্ট তৈরি করবো কিন্তু কিভাবে করবো তা জানিনা। শুরু করলাম পড়াশুনা উইকিপিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাইটের তথ্য নিয়ে গবেষণা করতে লাগলাম কিভাবে বংলা ইউনিকোড ফন্ট তৈরি করা যায়। এভাবে প্রায় কেটে গেল আর কয়েকটি মাস একপর্যায়েআবার ক্লান্ত হয়ে পড়লাম এবং হাল ছেড়ে দিলাম শুরু করলাম ছবিতে লিখা লিখি করে প্রকাশনা কিন্তু বাধ সাধল ইন্টারনেটের ধীর গতিএমনিতেই দেশের শেষ প্রান্তে বাস করি যেখানে প্রযুক্তিসেবা সবার পরে পাই তার অর্থ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কিরকম ব্র্যান্ডউইথ পাই। একটা পেজ খুলতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় নেয় এবং এরজন্য দৈনিক গড়ে গুনতে হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা ।এভাবেই চলতে থাকলো একসময় বাংলাদেশেবাংলা ইউনিকোড পদ্ধতি শুরু হল ব্যাস আমি মনে মনে লাখো ধন্যবাদ দিলাম তারপর পুরো অনিয়মে ক্লান্তিহীন ( দৈনিক১৪-১৫ ঘন্টা ) তথ্যশালা তৈরিতে মনোযোগ দিলাম । মোটামুটি একটা ফ্রেম তৈরির পরে বুঝতে পারলাম জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনগুলো বাংলা সমর্থন করছে না অর্থাৎ জ্ঞানপিয়াসু পাঠক বাংলা অনুসন্ধানকরে তথ্য খুঁজে পাবেনা তাই নিজের পুরো প্লাটফর্মটাকে পরিবর্তন করে সাজানো গোছান ভাবে তৈরি করার উদ্যেগ নিলাম এবং পুনরায় কাজ শুরু করলাম তৈরি করলাম উপজেলা ভিত্তিক অনলাইন তথ্যসেবা কেন্দ্র, ব্লগ, রেডিও স্টেশন, বাংলা দিনপুঞ্জিকা, কমিউনিটি সহ অসংখ্য বৈশিষ্ট সম্বলিত তালিকা। একটি বিষয় উপস্থাপন করা প্রয়োজন তা হল”বাংলাহিলি.কম” বাংলাদেশেপ্রথম বাংলা ই-কমার্স যুগের সুচনা করে । প্রায় ৩ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমেরফসল হিসেবে নিজের কর্মপদ্ধতিতে সন্তুষ্ট হলাম ।দ্বিতীয় ধাপঃমোটামুটি রকমের ব্র্যান্ডউইথ নিয়ে তথ্যশালা পরিপূর্ণ করার উদ্যোগ গ্রহন করি । বন্ধুবান্ধবের কাছে তথ্য সম্ব্রিদ্ধ করনের জন্য সাহায্য চাই সাড়া না পাওয়ায় কম্পিউটারট্রেনিং এর আয়োজন করি নামমাত্র মুল্য অথবা ফ্রিতে কিন্তু এই প্রত্যন্তঅঞ্চলে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাএবং আসার বানী যেন মরুভুমিতেএকপশলা বৃষ্টির মতই দেখায়। আমার ছাত্রছাত্রীদের কারোমাঝেইসেধরনের প্রবনতা দেখলামনা ফলশ্রুতিতে কম্পিউটারকোচিং বন্ধ করে নিজেই পুরো দমে কাজ শুরু করলাম । রাজু নামের এক বন্ধু আমাকে প্রায় ৩ মাস সহায়তা করলো । একপর্যায়েধীরে ধীরে সাইটটি বৃহৎ আকার ধারন করে যার ব্যায়ভার বহন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠে অতঃপর চিন্তা করি এর ব্যায়ভার কিভাবে উত্তোলন করা যায় । বেশ কিছু পরিকল্পনাতৈরিতে মনোযোগ দেই অবশেষে বিকল্প মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ব্লগ, ফ্রিল্যান্সিং, সফটওয়ার ডেভ্লপ, স্ক্রিপ্ট, ওয়েব ডিজাইন সহ বেশ কিছু সেক্টরে নিজেকে পার্ট টাইম নিয়োজিত করি । পরিকল্পনামাফিক আমার অন্য বেশকিছু ব্লগের মধ্যে উল্লেখযোগ্যwww.earningfair.comএ নিয়মিত ব্লগিং শুরু করি পাশাপাশি মার্কেটপ্লেস ও বিভিন্ন বৈশিষ্ট যুক্ত করি একপর্যায়েএটি বিশ্বের জনপ্রিয় মার্কেটিংব্লগের মাঝে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নেয়। অতঃপর শুরু হয় এডসেন্স নিয়ে পথ চলা । তৃতীয় পক্ষ হিসেবে গুগল এডসেন্স থেকে আমি প্রচুর অর্থ উপার্জন করছি কিন্তু ভবিষ্যতে গুগল এডসেন্স নিয়ে কাজ করার আগ্রহ নেই কারন আপনি যদি বিজ্ঞাপন দাতাদের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন নিতে পারেন তাহলে আপনার আয় বহুগুন বেড়ে যাবে । মোটকথা পরনির্ভরশীলতা থাকছেনা, থাকছেনা কাউকে কমিশন দেওয়া অথবা একাউট বাতিলের ভয় । আপন যদি ব্লগিং করেন তবে এই বিষয়টি সবসময় মনে রাখবেন বিষয়টি কষ্টকর তবে খুব কঠিন নয়।তৃতীয় ধাপঃঅনেক কষ্টের পরে বর্তমান এই অবস্থানে পৌঁছেছি এখন আমি পছন্দ মত এফিলিয়েট মার্কেটিং, রেফারেল, ব্যানার এডস, ইমেইলমার্কেটিংসহ অসংখ্য পদ্ধতিতে অর্থ উপার্জন করছি কিন্তু প্রতিনিয়তযেসমস্যাটি আমার কাজকে বাধাগ্রস্ত করছে তা হল বাংলাদেশেপেপাল না থাকা কারন গত বছর ২০১২ তে আমি সরাসরি বিজ্ঞাপন দাতাদের কাছ থেকে প্রায় ১৮ টি ইউনিটের উপরে চার হাজার ডলারের মত বিজ্ঞাপন হারিয়েছি । ৯৯ ভাগ অনলাইন বিজ্ঞাপন দাতারা সরাসরি প্রকাশককেপেপালের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে থাকে ।প্রতিনিয়তবিজ্ঞাপন দাতাদের ফিরিয়ে দিতে আমার অসম্ভব খারাপ লাগে। এছাড়াও একটি ইষ্টোর তৈরি করেছি যেখানে অধিকাংশ ইউরোপীয় নিবন্ধনকারী রয়েছেন যারা পেজা বা স্ক্রিল পেমেন্ট এর মাধ্যমে সাচ্ছন্দ বোধ করেননা । তারা প্রতিনিয়তপেপল চালুর ব্যাপারে আমাকে খুদ্র বার্তা পাঠায়।আর একটি বৃহৎ সমস্যা তা হল আমি আমার উপার্জিত অর্থ খুব সহজেই উত্তোলন করতে পারি কিন্তু সার্ভার ফি, প্রোজেক্টনিয়ন্ত্রনফি ইত্যাদির জন্য কিছু অল্প পরিমান অর্থ চাইলেও বিদেশে পাঠাতে পারিনা যা এই প্রযুক্তিখাতকে বাঁধাগ্রস্ত করছে । সরকারের এই বিষয়টির উপরে গুরুত্বারোপ করা উচিৎ কারন যারা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন তাদের আয়ের প্রয়জনেই অনেকসময় ব্যয় করার প্রয়োজন হয় তাই ঝামেলা এড়াতে উপার্জিত অর্থ রিজার্ভ এর মত পেমেন্ট সিস্টেমে সংরক্ষিত রাখতে হয় ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর অনেক বৈদেশিক মুদ্রার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।একটি দুঃখজনক ঘটনাঃগতবছর ফ্রিল্যান্সার ডট কমএসইও প্রতিযোগিতার আয়োজন করে উক্ত প্রতিযোগিতায় আমিও অংশগ্রহন করি । আমারব্লগেরএই পাতাটভাল সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনের ফলে তৃতীয় অবস্থানে আসে কিন্তু অতিরিক্ত ট্রাফিকেরকারনে বাংলাদেশীএকটি হোস্টিং কোম্পানি আমার ব্লগটিকে সাসপেন্ড করে শেষ পর্যায়ে । সার্ভার পরিবর্তনের জটিলতায় শেষ পর্যায়ে থেকে ছিটকে পরি তবে ভাল লাগছে এই ভেবে যে বাংলাদেশের ডেভসটিম নামের একটি প্রতিষ্ঠান এতে বিজয়ী হয়।আমার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পুরটাই ব্যয় করছি বিভিন্ন প্রোজেক্টতৈরিতে। বর্তমানে আমি বাংলাভাষীক্রিত্তিমবুদ্ধিমানরোবট তৈরি সহ ৩২ টি গুরুত্বপূর্ণ প্রোজেক্টনিয়ে গবেষণা ও কাজ করছি। লিখালিখি আমার একটি প্রিয় শখ। তাই এখানেই সমাপ্তি টানছি নইলে আপনারা আমার নিবন্ধ পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পরবেন ভাল থাকবেন আর হাঁ আমার স্বপ্নের বাংলা প্রোজেক্ট”বাংলাহিলি.কম” এ আপনাদের সকলকে স্বাগতম।পরিশেষে, প্রিয় ডট কম পরিবারের সকলকে ধন্যবাদ জানাই এধরনের সুন্দর একটি আয়োজনের জন্য ।

Leave a Reply

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ