Fauzia of Noakhali earns 60 thousand taka per month by making breakfast
নাশতা বানিয়ে মাসে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন নোয়াখালীর ফৌজিয়া/Fauzia 0f Noakhali earns 60 thousand taka per month by making breakfast অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। কাজটাও সহজ ছিল না। মানুষকে তৃপ্ত করা কঠিন বিষয়। বিশেষ করে, প্রত্যেকের স্বাদের অনুভূতি আলাদা। কিন্তু ফৌজিয়া প্রথমবারেই দারুণ সফল হলেন। খাবার খেয়ে প্রত্যেকেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
ফৌজিয়া নাজনীনের তৈরি খাবার
ভালো রান্নার হাত আছে ফৌজিয়া নাজনীনের। নিজের এই গুণ কেবল পরিবারের সদস্যদের তৃপ্ত করার কাজেই ব্যবহার করেননি তিনি। বরং একে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা।
তাঁর তৈরি সমুচা, পাকোড়া, রোল, নানা ধরনের পিঠা, রুটিসহ হরেক রকমের নাশতা এখন বিভিন্ন অফিস ও বাড়িতে যাচ্ছে।
পাশাপাশি দুপুরের খাবারও সরবরাহ করেন তিনি। রাজধানী ঢাকা বা চট্টগ্রামে এমন অনেক উদ্যোক্তা গড়ে উঠলেও নোয়াখালী শহরে ফৌজিয়ার পক্ষে এমন উদ্যোগের কথা ভাবা রীতিমতো দুঃসাহস ছিল। সব বাধা পেরিয়ে খাবারের ব্যবসা অর্থাৎ ক্যাটারিং করেই তিনি এখন মাসে ৬০ হাজার টাকার মতো আয় করছেন। পাশাপাশি করছেন চাকরিও।
নিজের তৈরি খাবার সরবরাহের জন্য প্যাকেটজাত করছেন ফৌজিয়া নাজনীন
ফৌজিয়া নোয়াখালী শহরের উজ্জ্বলপুর এলাকার বাসিন্দা। ক্যাটারিং ব্যবসার জন্য ‘মিডিয়া পয়েন্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছেন তিনি। নিজের বাসাতেই তৈরি করেন খাবার। তাঁর প্রতিষ্ঠানটিতে খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহের জন্য কাজ করছেন চার নারীসহ পাঁচজন ব্যক্তি।
কীভাবে মাথায় এল এমন ব্যবসার ভাবনা, জানতে চাইলে প্রথম আলোকে ফৌজিয়া বলেন, চাকরির সূত্রে বিভিন্ন কর্মশালা বা সভায় যেতে হতো ফৌজিয়া নাজনীনকে। সেখানে অংশগ্রহণকারী হিসেবে নাশতাসহ যেসব খাবার পেতেন, তার স্বাদ ও মান নিয়ে বেশির ভাগ সময় আক্ষেপ করতেন লোকজন।
ফৌজিয়া তখন নিজের রান্নার সঙ্গে তুলনা করতে করতে ভাবলেন, একই দামে তিনি অনেক মানসম্পন্ন খাবার সরবরাহ করতে পারেন। তিনি নিজে যদি ঘরে তৈরি করা খাবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরবরাহ করতে পারতেন, তবে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা তা খেয়ে তৃপ্ত হতেন এবং নিজেরও কিছু বাড়তি আয় হতো।
ফৌজিয়া নাজনীনের তৈরি খাবারের সুনাম আছে শহরজুড়ে
যেই ভাবনা, সেই কাজ। ২০১৯ সালে ইউনিয়ন পরিষদের ৩০ জন সচিবের একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় খাবার সরবরাহের কাজ চেয়ে নেন ফৌজিয়া। দুই দিনের কর্মশালায় দিনে দুই বেলা খাবার ও সকাল-বিকেলের নাশতা সরবরাহ করতে বলা হয় তাঁকে।
অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। কাজটাও সহজ ছিল না। মানুষকে তৃপ্ত করা কঠিন বিষয়। বিশেষ করে, প্রত্যেকের স্বাদের অনুভূতি আলাদা। কিন্তু ফৌজিয়া প্রথমবারেই দারুণ সফল হলেন। খাবার খেয়ে প্রত্যেকেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
এর পর থেকে নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য খাবার সরবরাহের কাজ পেতে শুরু করেন ফৌজিয়া। এখন চাকরির বেতনের বাইরে কেবল ক্যাটারিং ব্যবসা থেকেই সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকার মতো আয় হয় তাঁর।
ফৌজিয়া যখন ক্যাটারিং ব্যবসা শুরু করেন তখন তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর জয়াগ গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টে চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের অধীন চাকরি করেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি নিজের ব্যবসা পরিচালনা করেন। তবে ব্যবসা পরিচালনায় তাঁকে স্কুলপড়ুয়া মেয়ে ও স্বামী সহযোগিতা করে আসছেন।
ফৌজিয়ার মিডিয়া পয়েন্ট থেকে নারকেল পুলি, পাটিসাপটা, সবজি রোল, চিকেন রোল, ডিমের পিঠা, তালের পিঠা, কলার পিঠা, দুধচিতই, ভাপা পিঠা, ডিমচিতই, ফুলঝুরি, সবজি অন্থন, চিকেন অন্থন, সবজি সমুচা, সবজি পাকোড়া, শিঙাড়া, মুগ ফুলি, মুগ পাকন, সুজির পিঠা, সবজির পুলি, ডালের পুলিসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা সরবরাহ করা হয়।
রয়েছে হাঁসের মাংস ও রুটি। এ ছাড়া দুপুর ও রাতের খাবার হিসেবে কাচ্চি ছাড়া সব ধরনের বিরিয়ানি ও চিকেন পোলাও নিয়মিত সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিক্রি হয় বিভিন্ন ধরনের আচার।
জানতে চাইলে ফৌজিয়া নাজনীন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি যখন ব্যবসা শুরু করেন তখন তাঁর হাতে মূলধন ছিল ২০ হাজার টাকা। এখন সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আসে ব্যবসা থেকে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের কাছে খাবার সরবরাহ করেন।
নাশতা বানিয়ে মাসে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন নোয়াখালীর ফৌজিয়া/Fauzia 0f Noakhali earns 60 thousand taka per month by making breakfast
ফৌজিয়া বলেন, তাঁর ইচ্ছা অন্য নারীরাও ঘর সামলে এ ধরনের ব্যবসায়ে উদ্বুদ্ধ হোক। মানুষকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পৌঁছে দেওয়াই মূল লক্ষ্য তাঁর।