ইমেইল মার্কেটিং করার সহজ পদ্ধতিইমেইল মার্কেটিং করার সহজ পদ্ধতি

ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবস্থার আরেক সংস্করণ ইমেইল মার্কেটিং। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর পাশাপাশি বাংলাদেশে এই মার্কেটিং কৌশলটিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বলাই বাহুল্য যে, বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশে আরো অনেক আগে থেকেই ইমেইল মার্কেটিং খুব সফল মার্কেটিং কৌশল হিসেবে বিবেচিত।

ইমেইল মার্কেটিং করার সহজ পদ্ধতি 1

আজকের এই পোস্টে আমরা খুব সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করবো ইমেইল মার্কেটিং এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এই লেখাটি সম্পূর্ণ অনুসরণ করলে আপনিও ইমেইল মার্কেটিং এ বেশ দক্ষতা অর্জন করবেন বলে আশা রাখি।

ইমেইল মার্কেটিং কি?

বিজ্ঞাপনের জগতে সবচেয়ে সহজ, সস্তা এবং কম সময়ে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর সবথেকে কার্যকারী পদ্ধতি হল ইমেইল মার্কেটিং। আপনি কি বিক্রি করছেন বা কি সার্ভিস দিচ্ছেন, সেটা কোন বিষয় নয়। এক ক্লিকেই আপনার পণ্য বা সার্ভিসটি সম্ভাব্য হাজার হাজার গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন এই ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে।

ইমেইল মার্কেটিং ব্যবস্থায় একজন মার্কেটার সাধারণত গ্রাহকদের একটিভ ইমেইলগুলো বিভিন্ন উপায়ে সংগ্রহ করে থাকে। পরবর্তীতে তাদের টার্গেট করে নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পণ্য বা সার্ভিসের বিজ্ঞাপন তাদের কাছে পৌঁছে দেয়। এর ফলে খুব সহজে এবং অনেক কম খরচে পণ্যের বিজ্ঞাপন গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়।

কেন করবেন ইমেইল মার্কেটিং?

শুরুতেই বলেছিলাম, আধুনিক ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবস্থার অন্যতম সংযোজন হচ্ছে এই ইমেইল মার্কেটিং। একজন ব্যক্তি অফিসে থাকুক, বাসায় থাকুক অথবা ভ্রমণরত অবস্থায় থাকুক সে মেইল পড়তে পারে। সুতরাং আপনি আপনার বিজ্ঞাপনটি খুব সহজেই তার কাছে পাঠাতে পারবেন

একটি গবেষণায় দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য মার্কেটিং ব্যবস্থায় বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার থেকে ইমেইল মার্কেটিং এ প্রতিটি বিজ্ঞাপনের ওপর ক্লিকের সম্ভাবনা অনেকাংশে বেশি। কিছু পরিসংখান দেখলেই আমরা বুঝতে পারবো কেন আমরা ইমেইল মার্কেটিংকে এত গুরুত্ব দেব।

১. সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যেখানে মানুষ ০.৫৯% পণ্য কিনছে, সেখানে ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে কিনেছে ৪.২৪%।
২. ফেইসবুক বা টুইটারের চেয়ে নতুন গ্রাহকদের জন্য ইমেইল মার্কেটিং ৪০ গুণ বেশি কার্যকর বলে প্রমাণিত।
৩. ৭২% মানুষ প্রমোশনাল অফার গুলো ইমেইলে পেতে পছন্দ করে। যেখানে সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষের বিজ্ঞাপন পছন্দের হার মাত্র ১৭%। কেননা সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষ বিনোদন বা সময় কাটানোর জন্য যায়, কোন বাণিজ্যিক কারণে নয়।
৪. টুইটারে একটি ক্যাম্পেইন প্রচারের থেকে একটি ইমেইল ক্যাম্পেইনে ৬ গুণ বেশী ক্লিক পড়ে।
৫. রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট ৪১% (প্রতি ১ ডলার ব্যায়ে)।

Adestra পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ৮৫% কোম্পানি বলে ২০২১ সালের মধ্য তারা সম্পূর্ণরূপে ইমেইল মার্কেটং এর ওপর নির্ভর হয়ে যেতে পারে বলে আশা করা যায়।

৮৯% মার্কেটার মনে করেন, ব্যবসার জন্য গ্রাহক পাবার প্রাথমিক উপায় হল ইমেইল মার্কেটিং। ৭৬% কাস্টমার বলেন, তারা ইমেইলে পাওয়া তথ্য বা অফারের মাধ্যমে কেনাকাটা করেন। আর পশ্চিমা বিশ্বের ৯৭% ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহক পায় ইমেইল মার্কেটিং থেকে।

Radicatiএক রিপোর্টে বর্ণনা করে, ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তে ইমেইল ব্যাবহারকারির স্যংখা প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন, যারা প্রতিদিন প্রায় ২৬৯ বিলিয়ন মেইল সেন্ড করে। একজন মার্কেটার মাত্রই জানেন এটা কত বড় একটি মার্কেট।
তাই আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান এবং এর মাধ্যমে আপনার সেল আগের তুলনায় আগের থেকে আরো বেশি বাড়াতে চান, তাহলে আপনার জন্য ইমেইল মার্কেটিং শেখাটা হবে অত্যন্ত বুদ্ধিমানের কাজ।

কিভাবে করবেন ইমেইল মার্কেটিং?

ইমেইল মার্কেটিং করার জন্য প্রথমেই আপনার লাগবে মেইল লিস্ট। তো কাজটি আপনি করতে পারেন গ্রাহকদের মেইল কিনে। অথবা নিজেই আপনার সার্ভিস নিতে আগ্রহী এমন গ্রাহকের মেইল সংগ্রহ করতে পারেন। নিচের ধারাবাহিক পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনিও পারেন ইমেইল মার্কেটিং করতে।

আপনার লক্ষ্য ঠিক করুন:প্রথমেই ঠিক করুন আপনি কি করতে চান? আপনি কি আপনার পণ্যের বিক্রি বাড়াতে চান? আপনার ব্রান্ড সম্পর্কে মানুষকে জানাতে চান? নাকি আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর আনতে চান?

ইমেইল মার্কেটিং প্রোভাইডার নির্বাচন করুন:আপনি কোন ইমেইল ক্লায়েন্ট থেকে হাজার হাজার মেইল পাঠাতে পারবেন না। তাই আপনাকে কোন ইমেইল মার্কেটিং প্রোভাইডারের সাহায্য নিতে হবে। সেক্ষেত্রেMailchimp,AWeber অথবাGetresponseএগুলোর সাহায্য নিতে পারেন।

শুরু করুন লিস্ট বিল্ডিং:ইমেইল মার্কেটিং করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে লিস্ট বিল্ড আপ করা। লিস্ট বিল্ডের সময় নিচের বিষয় গুলো খেয়াল রাখুন

গ্রাহককে জানান, মেইলটি দিলে সে কি সুবিধা পাবে।

  • আপনি তাকে স্প্যাম করবেন না।
  • আপনি কতবার তাকে মেইল পাঠাবেন।
  • আপনি তার গোপনীয় তথ্য প্রকাশ করবেন না।
  • আপনি তাকে কি কি ডিস্কাউন্ট দিবেন।
  • তার মেইলটি আপনার কাছে নিরাপদ।

ইমেইল সাবজেক্ট এবং টেম্পলেট:গ্রহককে ইমেইল পাঠানোর আগে অবশ্যই আর্কষণীয় একটিসাবজেক্ট দিন। প্রয়োজন হলে অন্তত ২০ মিনিট সময় নিন সাবজেক্ট লিখতে। কারণ, আপনার সাবজেক্ট যত আকর্ষণীয় এবং লোভনীয় হবে, আপনার ইমেইলের ওপর ক্লিক করার সম্ভাবনা তত বেরে যাবে।

এরপর রিসার্চ করুন গ্রাহক আসলেই কি ধরনের অফার নিতে চায়। কারণ, গ্রাহক দুই সেকেন্ডেই সিদ্ধান্ত নিবে সে আপনার মেইলটি খুলবে কি খুলবে না। একটি ভাল টেম্পলেট বাছাই করুন এবং সেখানে আপনার অফার সম্পর্কে কিছু তথ্য দিন।

মেইল সংখ্যা নির্ধারণ করুন:আপনি আপনার গ্রাহককে কতবার মেইল পাঠাতে চান তা নির্বাচন করুন। আপনি কি প্রতিদিন, সাপ্তাহিক নাকি মাসে একবার মেইল পাঠাতে চান তা ঠিক করে নিন।

পর্যবেক্ষণ করুন:এই ধাপেই আপনার আসল কাজগুলো সম্পাদন করতে হবে। এখানে দেখতে হবে আপনার মেইলের সাবজেক্ট ঠিক আছে কিনা, মেইল পাঠানোর টাইমিং, ছবি অথবা ছবি ছাড়া মেইল, মেইল কি ইনবক্সে প্রবেশ করছে নাকি স্প্যামে যাচ্ছে।

এখান থেকেই বুঝতে পারবেন আপনার গ্রাহকরা মেইল কি ফ্রিকোয়েন্সিতে পেতে চাচ্ছে। প্রথম মেইলে যে ভুলগুলো হয়েছে, পরবর্তী মেইলগুলোতে সেগুলো সংশোধন করুন।

মেইল কালেকশন চালু রাখুন:মার্কেটিং একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই আপনাকে পুরাতন গ্রাহকের সাথে সাথে নতুন গ্রাহকের দিকেও মনযোগ দিতে হবে। তাই ল্যান্ডিং পেজ, সার্ভে টুল, পপ আপ প্লাগিন, ফেসবুক ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করে মেইল সংগ্রহ করুন।

Leave a Reply

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ