তিন গোয়েন্দার ৩৪ নাম্বার ভলিউমটা খুজছিলাম। প্রায় ৪৫ মিনিট খুঁজে একটা কাটিং ছাড়া কিছুই পেলাম না। পুরোনো পেপারের একটা হেডলাইন কাটিং। হেডলাইনের জায়গাটাই কেটে রাখা হয়েছে। বাকি অংশ গায়েব!!
হেডলাইন হলো “দা মার্ডার অভ এলিসা লাম”
,
২০১৩ সালে এলিসা লামের মৃত্যুর আগেও সিসিল হোটেলের পুরোনো ইতিহাসটা কারো জানা ছিল না। এলিসা লামের রহস্যজনক মৃত্যু ওই হোটেলের এমন কিছু ইতিহাস খুলে দিয়েছে যেটা রীতিমত অকল্পনীয়!
কিছুটা চমকে দেয়ার মতোও………
,
২০১৩ সালের ৩১ মার্চ খবর আসে ভেঙ্কুভারের পর্যটক এলিসা লাম কানাডার সিসিল হোটেল থেকে নিখোজ হয়ে গেছেন। তার খোজে গোয়েন্দা লাগানো হয়। হোটেলে থাকা মানুষদের অভিযোগ ছিল কয়েকদিন ধরে পানির রং আর স্বাদ বদলে গেছে। আর সেটা পরীক্ষা করার জন্য হোটেল কর্মী ছাদে পানির ট্যাংক পরিস্কার করতে গেলেন। এলিসা লামের মৃতদেহ সেই ট্যাংকেই পরে ছিল!
বলা বাহুল্য সেই ট্যাংকের পানি টানা ১৯ দিন ব্যাবহার করেছে হোটেলের বাসিন্দারা!!
,
১৯ এপ্রিল উদ্ধার হওয়া এলিসা লামের লাশের পোস্ট মর্টেম করার পর মৃত্যুর কারণ দেখানো হয়েছিল দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু। অর্থাৎ পানিতে ডুবে মারা গেছেন এলিসা লাম।
এতটুকু পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল।
কিন্তু একটা অটোপ্সি রিপোর্ট আর একটা ভিডিও ফুটেজ পুরো ঘটনাটাই ঘুরিয়ে দিল!
,
এলিসা লামের অটোপ্সি রিপোর্ট এ পুলিশ জানতে পারল তার শরীরে কোন নেশা জাতীয় জিনিশ ছিল না। কিন্তু পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বলে তিনি মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে গিয়েছিলেন। মৃত্যুর আগেও তার মস্তিষ্ক ঠিকমত কাজ করছিলনা। অর্থাৎ তিনি অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন ছিলেন!
আজীব নয় কি?
,
পুলিশকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিল ওই হোটেলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ।
সেখানে দেখা যায়, ভীতু এলিসা লাম দৌড়ে এসে লিফটের সুইচ উল্টাপাল্টা টিপছেন। তিনি লিফটের ভেতর ঢুকে এক কোনায় লুকিয়ে থাকছেন। ইশারায় হাত নাড়ছেন! লিফটের দরজা বন্ধ না হওয়াতে অদ্ভুত আচরণ করছেন!
দেখে মনে হবে তিনি কারো কাছ থেকে পালাতে চেয়েছিলেন।
ঠিক ১মিনিট ৫৭ সেকেন্ড পর তার হাতের নাড়াচাড়া পালটে গেল। তিনি কারো সাথে কথা বলছেন। তারপর তিনি যখন বের হয়ে গেলেন তখন লিফট বন্ধ হয়ে গেল।
অবাক করার বিষয়, পুরো ভিডিওতে শুধু এলিসা লামকেই দেখা গেছে!
তাহলে তিনি কার সাথে কথা বলছিলেন?
,
সিসিল হোটেলে এমন ঘটনা এই প্রথম নয়! ১৯২০ সালে তৈরী হওয়া সিসিল হোটেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল এর অবিশ্বাস্য সস্তা দাম। একটা দামী শহরে এত সস্থা দামে হোটেল পেয়ে মানুষ দলে দলে ভিড় জমাতে লাগলো! তখন থেকেই সিসিল তার ইতিহাস লিখতে শুরু করল। একটার পর একটা আত্বহত্যার ঘটনা আর সিরিয়াল কিলারদের বসবাস করার ঘটনা সিসিল হোটেলকে অনিরাপদ বানিয়ে দিল!
,
কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার জ্যাক উইন্টার রেগার একসময় ক্রাইম রিপোর্টার ছিলেন। তার সিরিয়াল কিলিং শুরু হয় তিনজন পতিতাকে খুন করে। এবং ঘটনা গুলো ঘটে এই সিসিলেই!
রিচার্ণ রামিরেজ সিসিলের সবচেয়ে উপরের ফ্লোরে থাকতেন! তার বিরুদ্ধে ১৩ জন নারীকে ধর্ষন ও খুনের অভিযোগ ছিল। সেটাও এই সিসিলেই!!
দুজনেই রহস্যজনক ভাবে মারা যান!
,
এই হোটেলেই ১৯৬৪ সালে ৪ জুন এক টেলিফোন অপারেটর কে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হয়। তাকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। ধর্ষন করা হয়েছিল। শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল।
,
১৯৫০ থেকে ৬০ সালের দিকে সিসিল আলোচনায় আসে অদ্ভুত সব আত্বহত্যার ঘটনায়! এখানকার অতিথিরা জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে আত্বহত্যা করতেন! ১৯৫৪ সালে ২২অক্টোবর সিসিলের ৭তলা থেকে গার্ণি নামের এক মধ্যবয়সী মহিলা আত্বহত্যা করেন। ৮ বছর পর ১১ফেব্রুয়ারিতে জুলিয়ান নামের আরেকজন নারী ৮তলা থেকে ঝাপ দেন। পাওলি নামের একজন নারী তার স্বামীর সাথে ঝগড়া করে ৯তালা থেকে ঝাপ দিয়েছিলেন। ৯০ ফুট থেকে ঝাপ দিয়ে তিনি এক বয়স্ক লোকের উপর পড়েছিলেন। ঘটনা স্থলেই দুইজন মারা যান।
,
এসব ঘটনার কোনটাই সমাধানের মুখ দেখেনি।
বলা যায় এলিসা লামের এই ঘটনা সিসিলের অমিমাংসিত রহস্যের ইতিহাসকে আরো একটু বড় করল।
,
এলিসা লামের ঘটনাও অমিমাংসিত ছিল। ২০১৩ সালেই ঘটনার তদারকীতে থাকা লস এঞ্জেলস কতৃপক্ষ এলিসা লামের মৃত্যুকে দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু বলে ঘোষনা দেয়। বলা হয় তিনি নিজেই ওই ট্যাংকিতে উঠেছিলেন এবং ভুলবশত পড়ে গেছেন!
,
তবুও গোঁজামিল থাকছেই। মানসিক ভাবে দুর্বল এবং নিয়ন্ত্রীন হওয়া সত্ত্বেও এলিসা প্রায় ১০তলা সিড়ি ভেঙে বিনা লিফটে ছাদে গেলেন কি করে?
ঘটনা কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকরা বলেছিলেন, পানির ট্যাংকি পর্যন্ত পৌছাতে অনেকগুলো এলার্ম সিস্টেম টপকাতে হয়। সামান্য ভুলেই এলার্ম বেজে উঠে।
আর সেখানে এলিসা বিনা বাধায় ছাদে গেলেন, পানির ট্যাংকি খুললেন, সেখানে ঝাপ দিলেন। তারপর ভেতর থেকে পানির ট্যাংকির মুখ বন্ধ করে দিলেন, যা এক কথায় অসম্ভব!
,
আজো ওই সিসিল হোটেলে মানুষ আশ্রয় খুজতে যায়।
কেউ সখের বশে, কেউ বাধ্যবাধকতায়!
,
হয়তো সিসিল অপেক্ষায় আছে আরো একটি অমিমাংসিত অধ্যায়ের জন্ম দিতে!
রহস্য আর সিসিলের সম্পর্কটা যে বেশ পুরোনো……
Comments (No)