নার্সারি ব্যবসা অল্প পুজি নিয়ে করবেন কীভাবে

পরিশ্রম আর আগ্রহের সমন্বয় ঘটাতে পারলে অবশ্যই মিলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। নার্সারি ব্যবসা থেকেও আস্তে পারে তেমন সাফল্য। বছরজুড়ে নার্সারি ব্যবসা চালান যায়। এমন কি বাড়ির ছাদেও হতে পারে নার্সারি। বর্ষাকাল নার্সারি করার উপযুক্ত সময়। ফুল, ফল, কাঠ, ঔষধি ও শোভাবর্ধনকারী-সব ধরনের গাছই নার্সারিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ছোট চারা কিংবা উদ্ভিদের কলম উৎপাদন করা হয়, রোপণের আগে যত্নসহকারে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।

নার্সারি খাত শুধু অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সহায়তা করে না, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ রোধসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, খাদ্য ও পুষ্টি সমস্যা সমাধানে বহুমাত্রিক অবদান রাখে। দিন দিন নার্সারির চারার চাহিদা বাড়ছে। নার্সারি খাতের মাধ্যমে দেশের বেকার জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে অল্পপুঁজির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।

নার্সারি কি?
নানা ধরনের গাছগাছড়ার চারা উৎপাদন, বিতরণ বা বিক্রয়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত বিশেষ কেন্দ্র বা স্থান। একসময় নার্সারি বলতে মূল্যবান বনবৃক্ষ এবং ফলগাছের চারা উৎপাদনকারী বিশেষ প্রতিষ্ঠানকেই বোঝানো হতো। বাগানের গাছপালার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাবার কারণে নার্সারির ধারণা এবং সেসঙ্গে তার কর্মকান্ড অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। উদ্ভিদ প্রজনন ও নতুন জাতের গাছপালা-বৃক্ষাদি ও ফল-ফুল উদ্ভাবনের কর্মসূচিও এখন নার্সারির আওতাভুক্ত। আধুনিক নার্সারি সাধারণত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্যানতত্ত্বের বিশেষজ্ঞরা দেখাশুনা করেন।

বিভিন্ন রকমের নার্সারিঃ
ফল, ফুল, বনজ, সবজি, মসলা, অর্কিড, ক্যাকটাস ও ফার্নের নার্সারিতে বিভিন্ন চারা উৎপাদন করা হয়।

নার্সারি ব্যবসার সম্ভাবনাঃ
মানুষের আয়, নগরায়ণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে রুচি ও সৌন্দর্যবোধের পরিবর্তন ঘটছে। বাড়ছে বসতবাড়ির সংখ্যা। ছায়া, বাতাস, জ্বালানি, আসবাবপত্র, ঘরবাড়ি তৈরি, পুষ্টি ও খাদ্যের প্রয়োজন মানুষ বসতবাড়ির আশেপাশে রোপণ করছে প্রচুর ফলদ, বনজ ও ভেষজ বৃক্ষের চারা। বাড়ির আশেপাশে অর্থকরী গাছপালা লাগানো পুরানো প্রথা হলেও নার্সারিতে চারাগাছ উৎপাদন বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনা।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি শুধু বনায়নের জন্য বনবিভাগ প্রথম নার্সারির প্রবর্তন করে। তারপর সরকারি তত্ত্বাবধানে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফলগাছের চারা উৎপাদনের জন্য নার্সারির প্রসার ঘটে। মধ্য-বিশ শতকে কেবল বাগানের গাছপালা উৎপাদনের লক্ষ্যে কয়েকটি বেসরকারি নার্সারি প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ দেশের বিভিন্ন স্থানে নার্সারি প্রতিষ্ঠা করে। বিগত শতকের আশির দশকে গাছপালার চাহিদা ও অর্থকরী বৃক্ষাদি রোপণের ব্যাপক আগ্রহের জন্য নার্সারি ব্যবসা বহুগুণে বেড়ে যায়।

নার্সারি ব্যবসার সুবিধাঃ
নার্সারি ব্যবসার মৌসুম হলো বৈশাখ থেকে আশ্বিন। মূলত আষাঢ়, শ্রাবণ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ভালো বিক্রি হয়।
• তুলনামূলক কম মূলধন লাগে।
• রোপণের জটিলতা, নিড়ানি ও চাষকালীন পরিচর্যায় ঝামেলা কম।
• লাভ বেশি।
• অল্প জায়গা ও ছোট পাত্রে রোপণ করা যায়।

নার্সারির জন্য স্থান নির্বাচনঃ
যেকোনো ব্যক্তি নিজের কর্মসংস্থানের জন্য নার্সারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। নার্সারীর অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নার্সারীটি যেন সহজেই সকলের দৃষ্টিগোচর হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। তাই এটি অবশ্যই কোন মহাসড়ক, শহর বা বাজারের পাশে অবস্থিত হতে হবে যেন নার্সারীটি খুজে বের করতে ক্রেতাদের কোন অসুবিধা না হয়। শুধু তাই নয়, সহজে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে এমন স্থানেই নার্সারী প্রতিষ্ঠা করা উচিত। নার্সারীর অবস্থান যেন কোন ঘোপের মধ্যে না হয় যেখানে সব সময় অতিরিক্ত আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া থাকে।

নার্সারি ব্যবসা জন্য নির্বাচিত স্থান অবশ্যই উঁচু হতে হবে, যাতে বন্যা কিংবা বৃষ্টির পানি না জমে এবং জমির দামও তুলনামূলকভাবে কম অথচ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল এমন স্থানে বাণিজ্যিক নার্সারী স্থাপন করলে লাভবান হওয়ার নিশ্চয়তা বেশি থাকে। অনেক জায়গায় বেশি দামেও সুবিধামত বা উপযুক্ত জমি পাওয়া যায় না। তাই নার্সারি স্থাপনের জন্য নির্বাচিত এলাকায় জমির সহজলভ্যতা এমনকি জমির দামও বিবেচনায় আনতে হবে। নার্সারীর সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে। নার্সারীতে সব সময় পানির প্রয়োজন বিধায় পানির উৎস থেকে নার্সারীর দূরত্ব বা সেচ-সুবিধা আছে কিনা তা বিবেচনায় আনতে হবে।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ