সরকার ঘোষণা দিয়েছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের। প্রতিদিন এবিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে আগামীতে আউটসোর্সিং হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস, কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় যায়গা।
তারপরও যারা একাজ করবেন তারা অনেকেই অন্ধকারে রয়ে গেছেন। অনেকেই
জানেননা ঠিক কি করবেন। কি যোগ্যতা প্রয়োজন হবে,কি কি যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হবে,কি কাজ করতে হবে, কাজ কোথায় পাওয়া যাবে, কত টাকা পাওয়া যাবে, কিভাবে পাওয়া যাবে।
এই প্রশ্নগুলির উত্তর ধারাবাহিকভাবে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে এখানে।প্রথমেই একটাকথা পরিষ্কারকরে নেয়া ভাল।
বলা হচ্ছে কাজ করে অর্থ উপার্জনের বিষয়ে। কাজেই আপনাকেকাজ করতে হবে,সে কাজ শিখতে হবে, অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে। আপনার দক্ষতাযত বেশি অর্থ উপার্জনের সুযোগ তত বেশি।
এটাই একমাত্র পথ। যদি কাজ শিখতে এবং করতে পর্যাপ্ত আগ্রহ এবং চেষ্টা না থাকে তাহলে সময় নষ্ট না করাই ভাল। সহজে অর্থ উপার্জন বলে যা বুঝানো হয় তা আসলে ততটা সহজ না।
আউটসোর্সিং কি?এটা নিশ্চয়ইপ্রথম প্রশ্ন। উত্তর হচ্ছে, বাড়িতে বসে অন্য কারো কাজ করা। উন্নত দেশগুলিতে (আমেরিকা কিংবা ইউরোপ) মজুরী অত্যন্ত বেশি। কোন কোম্পানির যদি নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম তৈরি প্রয়োজন হয়,এজন্য যদি একজন প্রোগ্রামার নিয়োগ করতে হয় তাহলে বিপুল পরিমাণটাকা গুনতে হয়। সেকাজটিই অন্য দেশের প্রোগ্রামার দিয়ে করিয়েনিলে তুলনামূলক কমটাকায় করানোযায়। বর্তমান
ইন্টারনেট ব্যবস্থায় খুব সহজে একাজ করা সম্ভব। আপনি
সেই প্রোগ্রামার, ডিজাইনার, এনিমেটর অথবাযাই হোন না কেন ইন্টারনেটের মাধ্যমেই তাদের কাজ করতে পারেন, ঘরের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।বড় কোম্পানির বদলে ছোট কোম্পানি, কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ের কাজের কথা যদি এরসাথে যোগ করা হয় তাহলে কাজের পরিধি বেড়ে যায় অনেক। ধরুন কোন ব্যক্তির একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা প্রয়োজন। তিনি
নিজে সেকাজ পারেন না। কাজেই তার প্রয়োজনএমন একজন ব্যক্তি যিনিসেকাজ করে দেবেন। আপনি যদি সেকাজে দক্ষ হন তাহলে আপনি আগ্রহী হয়ে সেখানে যোগাযোগ করলেন। সমঝোতা হল, আপনি কাজটি করে দেবেন, বিনিময়ে ১০০ডলার পাবেন।
লাভ দুজনেরই।কাজেই, আউটসোর্সিং হচ্ছে এক যায়গার কাজ অন্য জায়গা থেকে করিয়ে নেয়া। এই কাজকে সহজ করার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের ওয়ের সাইটে বিনামূল্যে সদস্য হওয়া যায় (আপনাকে বিনামূল্যে সেবা দিয়েও তারা নিজেরা লাভ করেন। সে হিসেব আলাদা)।তাদের সদস্য দুধরনের, একপক্ষ কাজ দেন, আরেকপক্ষকাজ করেন। আপনি যখন কাজ দেবেন তখন কাজের বিবরণ, সময়, অর্থের পরিমাণ ইত্যাদি তাদের জানাবেন।
তারা ওয়েবসাইটে সেগুলি রেখে দেবেন যারা কাজ করতে আগ্রহী তাদেরজন্য।
আপনি যত কাজ করবেন তখন তাদের ওয়েব সাইটে গিয়ে সেই তালিকা থেকে নিজের পছন্দমত কাজের জন্য আবেদন করবেন (সাধারণত একটি লিংকে ক্লিক করাই যথেষ্ট)।
যার কাজ তিনি আবেদনগুলি যাচাই করে যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে কাজটি দেবেন। আপনি সেই ব্যক্তি হলে কাজটি করে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই তারকাছে পাঠিয়েদেবেন। সাথে সাথে আপনার একাউন্টে কাজের অর্থ জমা হবে।কাজের ধরনএকটু আগে দুধরনের কাজের কথা বলা হয়েছে, একটি কোম্পানির, অপরটি ছোট কোম্পানি কিংবা ব্যক্তির। আউটসোসিং এর কাজ মূলত এই দুধরনের। বড়কোম্পানির বড় কাজ করার জন্য বড় প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। সেখানে আপনি একজন নিয়মিতকর্মী হিসেবেনিয়োগ পেতে পারেন। আপনি ফ্রিল্যান্সার নন।
আর ছোট কাজের ক্ষেত্রে আপনি নিজেই সবকিছু। যোগাযোগ, কাজ করা, অর্থ গ্রহণ সবকিছুকরতে হবে নিজেকেই। অবশ্য কয়েকজন একসাথে শুরু করে ক্রমাম্বয়ে বড় কোম্পানিতে পরিণত হওয়া অবশ্যই সম্ভব।ধরে নেয়া হচ্ছে আপনি একা কাজ করতে আগ্রহী। এখানে সে সম্পর্কিত তথ্যই উল্লেখকরা হচ্ছে।
এক কথায়, কম্পিউটার ব্যবহার করে যাকিছু করা সম্ভব সবধরনের কাজইপাওয়া যায় এভাবে। গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েবপেজ তৈরি, ওয়েব পেজের কোন সমস্যার সমাধান থেকে শুরু করে এনিমেশন, ভিডিও এডিটিংকিংবা একেবারে সহজ ডাটা এন্ট্রিপর্যন্ত। কাজযত সহজ অর্থের পরিমাণ তত কম,কাজ যত জটিল অর্থের পরিমাণ তত বেশি এই নিয়মে।উদাহরণ হিসেবে ওয়েবসাইটের জন্য ফটোশপে একটি ব্যানার বিজ্ঞাপন তৈরি করে যে পরিমাণ অর্থ পাবেন ফ্লাশেএনিমেটেড ব্যানার তৈরিকরে পাবেন তার থেকে অনেক বেশি অর্থ। বাস্তবধারনা পাওয়ার সবচেয়ে ভাল পথ হচ্ছে এধরনের ওয়েবসাইটে গিয়ে কাজের তালিকা দেখা।কি শিখতে হবেকোন কাজ আপনার জন্য ভাল সেটা যাচাইয়ের দায়িত্ব আপনার। আগ্রহকোন বিষয়ে, দক্ষতা কোন বিষয়ে, কতদূরপর্যন্ত যেতেপারবেন এগুলিএকমাত্র আপনিই জানতে পারেন। কোন কাজে অর্থ বেশি এটা বিচার করে সেই কাজ করতে না যাওয়াই ভাল। প্রোগ্রামার হওয়ার জন্য একধরনের প্রতিভা প্রয়োজন, এনিমেটর হওয়ার জন্য আরেক ধরনের, ভাল ডিজাইনারহওয়ার জন্য আরেক ধরনের। কোন বিষয়ে আগ্রহী হলে সে বিষয়ে খোজ নিন, কিছুদিন চেষ্টা করুন, তারপর দ্রুতইসিদ্ধান্ত নিন। এবিষয়েও সত্যিকারের সাহায্য পাবেন এধরনেরজব সাইটে। প্রতিটি কাজের বর্ণনার সাথেকোন সফটওয়্যারে দক্ষতা থাকতেহবে তা উল্লেখ করা থাকে।কত আয় করা সম্ভববিষয়টি পুরোপুরি আপনার কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে। অধিকাংশ কাজের হিসেব হয় ঘণ্টা হিসেবে।
গ্রাফিক ডিজাইনকে উদাহরণ হিসেবে ধরলে মাসে অনায়াসে হাজার ডলার আয় করা সম্ভব। প্রোগ্রামার হলে অনেক বেশি।কি যন্ত্রপাতি প্রয়োজনএধরনের কাজে আপনার মুল অস্ত্র হচ্ছেমেধা।
কাজেই দামী যন্ত্রপাতি নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন হয়না, বিশেষ কাজছাড়া।
কাজেরধরন অনুযায়ীঅবশ্যই আপনারস্ক্যানার, গ্রাফিক ট্যাবলেট, দামী ক্যামেরা ইত্যাদি প্রয়োজন হতেপারে।
এধরনেরবিশেষ যন্ত্রবাদ দিলে আপনার প্রয়োজন একটি মোটামুটি পর্যায়ের কম্পিউটার এবং ভাল ইন্টারনেট সংযোগ।বর্তমানে যথেষ্ট কম টাকায় ভাল কম্পিউটার পাওয়া যায়।
আর ইন্টারনেটসংযোগের বিষয়ে বলা আসলে অর্থহীন। তারা আশা করে আপনি টাকা দেবেন, বদলে কি পাবেন তাতে তাদের কিছু যায়-আসে না। আর সরকার কিংবা প্রশাসন যত বক্তৃতা-বিবৃতি দিক না কেন, ব্যবসায়ীদেরকাছে সবসময় মাথা নিচু করে থাকে।মুল কথায় ফেরা যাক। ইন্টারনেটে কাজ করে অর্থ উপার্জনের এটা প্রাথমিকতথ্য। শুরুতেই আপনিযা করতে পারেন তা হচ্ছে এধরনেরওয়েবসাইটে গিয়ে বিস্তারিত পড়া, বোঝার চেষ্টা করা। সত্যি কাজের তথ্য তাদের কাছেই পাওয়াসম্ভব, অকারণেঅন্য যায়গায় সময় নষ্ট করবেন না।
odesk, freelancer এধরনের জনপ্রিয় ওয়েব সাইটেরউদাহরণ। সার্চ করলে এধরনের আরো বহু সাইট পাবেন। ভালভাবে বোঝার জন্য কয়েকদিন নিয়মিত এই সাইটগুলিতে সময় কাটান।কাজ শুরু করুন, সেইসাথেআরো জানার চেষ্টা করুন।দ্রুত ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার ভাল-মন্দঅনেকেই এখানেআসতে চান কিন্তু কিভাবে আসবেনবা দ্রুত না ধীরে শুরু করবেন এমন নানান ব্যাপার রয়েছে। তাই তাদের জন্য আমার কিছু পরামর্শ দিলাম এখানে।ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিককালে যত আলোচনা হয়েছে অন্য কোন পদ্ধতি নিয়ে ততটা সম্ভবত হয়নি। অনেকের মতে কর্মসংস্থান, কাজের ধরন সবকিছুই পাল্টে দিচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। এখনও বলা হচ্ছে, এই পদ্ধতি চলছে।অন্যান্য পদ্ধতির মত পুরোপুরি স্বীকৃতি পায়নি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন থাকতে পারে এখনই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা উচিত কি-না। ফ্রিল্যান্সিং একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। প্রস্তুতির জন্য বহু সময় ব্যয় করতে হয়, নানাধরনের পদ্ধতি শিখতেহয়। অন্যকথায় অভ্যস্ত হতে হয়। যেহেতু এটি চলমান প্রক্রিয়া সেহেতু হ্যাঁবা না উত্তর যথেষ্ট না। এখনই শুরু করার ভাল এবং মন্দ দুদিকই রয়েছে। জেনেনেয়া যাক ভাল দিকগুলি কি, মন্দ দিকইবা কি।দ্রুত শুরু করার সুবিধে
* নিজেকে অভিজ্ঞ হিসেবে তৈরি করার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়।একটি উদাহরণ বিবেচনায় আনতে পারেন, যারা উইন্ডোজের আগেই ডস ব্যবহার করে কম্পিউটারে কাজ শুরু করেছেন তারা কম্পিউটারের ভেতরের অনেক বিষয় সহজে বোঝেন যা বর্তমানের উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা বোঝেন না। প্রতিদিন ফ্রিল্যান্সিং কাজের পদ্ধতির যে পরিবর্তনগুলিহচ্ছে তারসাথে মিল রেখে নিজেকে এগিয়ে রাখা সম্ভব দ্রুত শুরু করলে।
* নিজের অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব। বিশেষকরে সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগইত্যাদির মাধ্যমে পরিচয় তৈরি করতে হলে যত দ্রুত শুরু করা যায় তত এগিয়ে থাকা সম্ভব।
* কাজের পরিধি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয় দ্রুত শুরু করলে। হয়ত এই মুহূর্তে যে কাজে আপনি আগ্রহী নন তেমন কোন কাজ আপনার পছন্দের তালিকায় যোগহতে পারে এবং একসময় সেটাইমুল কাজ হতে পারে।
* বাংলায় বলে পুরনো চাল ভাতে বাড়ে, ইংরেজিতে বলেওল্ড ইজ গোল্ড। মুল বক্তব্য একটাই, অনেক কোম্পানি অভিজ্ঞতা বিচার করে সুবিধে দেয়।দ্রুত শুরু করে এই সুবিধে পেতে পারেন।দ্রুত শুরু করার কিছু সমস্যাও রয়েছে। সেগুলি একবারজেনে নেয়া যাক;
* ফ্রিল্যান্সার হতে সময় লাগে একথা ভুলে যাবেন না। আপনি কাজ শুরু করে কয়েক মাসে সফল ফ্রিল্যান্সার হবেন একথা ঠিক না। এমন পরিস্থিতিতে যদি আয়ের জন্য অন্য পেশার ওপর নির্ভর করতে হয় তাহলে সেদিকে ক্ষতিহতে পারে। অন্তত এখন পর্যন্ত যখন ফ্রিল্যান্সিংকে সাধারণ পেশার পর্যায়ে বিবেচনা করা হয় না।
* আপনি সফল নাও হতে পারেন। আবারও,কারণ একই। ফ্রিল্যান্সিং এখনও প্রক্রিয়াধীন। আপনি যে সেবা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে আগামীতে সেই সেবার প্রয়োজন নাওথাকতে পারে। বর্তমানে মানুষকে করতেহয় এমন অনেক কাজ হয়ত আগামীতে প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হবে।* আপনার খরচ বাড়তে পারে।যদি স্মার্টফোনেরসফটওয়্যার তৈরিকে কাজ হিসেবে বিবেচনা করেন,আপনাকে নানা ধরনের ডিভাইসকিনতে হবে। অন্যান্য কাজের জন্য বিশেষ কিছু কেনা প্রয়োজন হতেপারে।* প্রযুক্তিরদীর্ঘ স্থায়িত্ব না থাকাও একটি মাথাব্যথার কারণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। যে সফটওয়্যার আপনি ব্যবহারকরছেন আগামীতে তার বদলে অন্যকিছু ব্যবহৃত হতে পারে। বিশেষ করে অপারেটিংসিস্টেমে যখনঘনঘন পরিবর্তন হচ্ছে, তারসাথে মিল রেখে নতুন ডিভাইস তৈরি হচ্ছে সেখানেএই বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন বললে বেশি বলা হয় না। ট্যাবলেট, এন্ড্রয়েড ইত্যাদি এখনওপ্রাথমিক পর্যায়ে। স্থায়ী চেহারা না নেয়া পর্যন্ত সকলের পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।আপনি দ্রুত শুরু করবেন কি-না এ প্রশ্ন যদি করেন তাহলে উত্তর হতে পারে, সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়াই মঙ্গল। এমন কোন বিষয় বেছে নিন যা স্থায়ী, আপনার আওতার মধ্যে এবং বর্তমান অন্যকাজের ক্ষতি না করেই করা যায। বিস্তারিত এখানে দেখুন।
https://www.mypayingads.com/index.php?ref=105092