জনপ্রিয় সিএমএস ওয়ার্ডপ্রেস থেকে আয় করা এখন অনেক বেশি সহজ। কমবেশি অনেকেই বিভিন্ন উপায়ে ওয়ার্ডপ্রেস থেকে আয় করে থাকে। ওয়ার্ডপ্রেসের কিছু কাজতো আছে অনেক সহজ। আর কিছু কাজ আছে কিছুটা কঠিন। তবে, পরিশ্রম করলে সব কাজ করা সম্ভব।
ওয়ার্ডপ্রেস হলো একটি ওপেন সোর্স ব্লগিং সফটওয়্যার। যা PHP ও MySQL দ্বারা তৈরি। এটি বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ব্লগ পাবলিশিং অ্যাপলিকেশন এবং একটি শক্তিশালী কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। এটি প্রথমে একটি ফ্রি ব্লগিং প্লাটফর্ম ছিল। পরবর্তীতে এটি একটি ইঞ্জিন তৈরি করে, যা বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায় এবং সব ব্লগাররা এটি ব্যবহারের সুবিধা পায়।
এই ওয়ার্ডপ্রেস দ্বারা খুব সহজেই একটি সুন্দর ও প্রোফেশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। ওয়েবসাইট তৈরির জন্য কোন রকম PHP ও MySQL বা HTML জ্ঞান ছাড়াই এখানে ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। বর্তমানে অনেক মানুষ এই ওয়ার্ডপ্রেস থেকে আয় করছে। ওয়ার্ডপ্রেস থেকে আয় করার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। আজ আমরা জানব যে, কিভাবে ওয়ার্ডপ্রেস থেকে আয় করা যায়।
১. ফ্রিল্যান্স রাইটিং:
ফ্রিল্যান্স রাইটিং করে ওয়ার্ডপ্রেস থেকে আয় করা যায়। ওয়েবসাইট চালানোর জন্য প্রচুর পরিমানে কন্টেন্ট প্রয়োজন হয়ে থাকে। গুগলে সার্চ দিলে প্রচুর পরিমানে ওয়েবসাইট পাওয়া যাবে আর এইসব ওয়েবসাইট এর জন্য প্রতিদিন প্রচুর ফ্রেশ কন্টেন্ট দরকার হয়। কন্টেন্ট লিখে ভালো আয় করা যায়।
job board sites এ প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে ওয়ার্ডপ্রেস কন্টেন্ট রাইটিং জব পাওয়া যায়। জনপ্রিয় দুটি সাইট হচ্ছে Upwork ও ProBlogger Jobs। কাজ পাওয়ার জন্য এখানে আবেদন করতে হবে। তবে, আবেদন করার আগে নিজের একটি সুন্দর অনলাইন পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে। নিজের কাজের ধরন দেখাতে হবে।
এটা এক ধরনের শর্ট সিভির মতো হবে যেখানে নিজের একটি বায়ো থাকবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি একটিভ প্রোফাইল থাকবে এবং পূর্বের কাজের লিংক যুক্ত করা থাকবে। এভাবে আপনি আপনার নিজের ওয়েবসাইট ও সাজাতে পারেন। সুন্দর ও আকর্ষণীয় ভাবে নিজের আইডি তৈরি করা থাকলে নিয়োগকর্তাগণ লেখার ধরন দেখে আকর্ষিত হবে এবং আপনার লেখাটি তাদের ব্লগে বা স্যোশাল সাইটে পাব্লিশ করবে।
আর কিছু ওয়ার্ডপ্রেস থেকে আয় করার সাইট:
২. ব্লগ তৈরি থেকে আয় করা:
অনলাইনে কাজ করতে হলে, নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে, তার থেকে আয় করা একটি সাধারন ব্যাপার। আপনি যদি অনলাইনে কাজ করে, তার থেকে ইনকাম করতে চান তাহলে, এখনি একটি ব্লগ খুলে ফেলুন। যদি এই বিষয়ে একদম নতুন হয়ে থাকেন তাহলে, ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখে নিতে পারেন বা গুগলে সার্চ দিয়ে দেখে নিতে পারেন কিভাবে ব্লগ ওপেন করা যায়।
প্রধান প্রধান কাজগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো:
- ডোমেইন ও হোস্টিং কেনা।
- ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করা।
- একটা থিম বাছাই করা।
- প্লাগইন ইনস্টল করা।
- পোস্ট ও পেইজ সংযুক্ত করা।
অনলাইনে একটি সহজ ও সুবিধাজনক ইনকামের উপায় হলো ব্লগ তৈরি করে আয়। ব্লগের সাহায্যে বিভিন্ন ভাবে আয় করা যায় যেমন এফিলিয়েট মার্কেটিং, এডসেন্স থেকে আয়, স্পনসরদের মাধ্যমে আয় ইত্যাদি। এর জন্য কোন প্রকার অতিরিক্ত কষ্ট করতে হয়না। শুধুমাত্র নিজের ওয়েবসাইট ও ব্লগের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে এই আয় করা যায়।
৩. ই কমার্স ও ড্রপশিপিং:
ই কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য একটি অন্যতম আকর্ষণীয় প্ল্যাটফর্ম হলো ওয়ার্ডপ্রেস। বর্তমানে কম বেশি প্রায় সবাই ই অনলাইনে কেনাকাটায় অভ্যস্ত। আর ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই একটি অনলাইন স্টোর খুলে সেখান থেকে বিক্রি করতে পারেন।
পাশাপাশি ওয়ার্ডপ্রেস ড্রপশিপিং এর কাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে ড্রপশিপিং কাজ করতে হলে ওয়েবসাইট টি জনপ্রিয় হতে হবে। আপনি প্রস্তুতকারক থেকে প্রোডাক্ট কিনে এনে নিজের জনপ্রিয় ওয়েবসাইটে বিক্রি করতে পারেন বা অন্য কোন একটি পপুলার ই কমার্স সাইটে বিক্রি করতে পারেন। ওয়ার্ডপ্রেস এ ড্রপশিপিং বিজনেস কিভাবে শুরু করবেন সেটি আগে জেনে নিতে হবে।
৪.ব্লগ সেট আপ সার্ভিস:
অনেকেই তাদের ব্লগের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু জানে না কিভাবে তা ব্যবহার করতে হয়। এই বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তাই, তাদের জন্য ব্লগ সেট আপ সার্ভিস তৈরি করা যায়।
সেখানে তাদের বলে দিতে হবে, কিভাবে তারা ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করবে, ওয়ার্ডপ্রেস এ থিম আপলোড করব সেখানে বিভিন্ন প্লাগইন ইন্সটল করবে ইত্যাদি। কাস্টমার আকৃষ্ট করার জন্য, শুরুতে একটি সাধারন ব্লগ সেট আপ সার্ভিস পেইজ শুরু করতে হবে ওয়েবসাইটে।
আপনি আপনার সেট আপ সার্ভিস পেইজটি বিভিন্ন ভাবে সাজাতে পারেন। শুরুতে একদম সাধারন কিছু বিষয় শেখার জন্য এক ধরনের চার্জ ধরা যেতে পারে। তারপর আস্তে আস্তে ডিটেইলস বিষয় জানানোর জন্য আরেকটু বেশি চার্জ ধরা যেতে পারে।
যেমন, বেসিক ব্লগ সেট আপ সার্ভিস এর জন্য যদি ২০০ টাকা ধরি, এতে শেখানো হবে কিভাবে ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করতে হবে কিভাবে থিম এড করতে হবে ইত্যাদি।
৫. ওয়ার্ডপ্রেস সাইট পরিচালনা করে আয়:
ওয়েবসাইট পরিচালনার মাধ্যমেও আয় করা যায়। অনেকেই আছে যাদের একটা সুন্দর ওয়েবসাইট আছে। কিন্তু, জানে না কিভাবে তা পরিচালনা করতে হয়। কোন কোন কাজ গুলো করলে ওয়েবসাইট রানিং থাকে। তারা তখন কাজ জানা এমন লোক খুঁজে বেড়ায়।
এই মেইনটেনেন্স এর মধ্যে থাকে ওয়ার্ডপ্রেস আপডেট, নিরাপত্তা মনিটরিং, থিম ও প্লাগইন আপডেট করা, হোস্টিং, সিডিএন সেটআপ ইত্যাদি। এইসব কাজগুলো আপনি আপনার নিজের ওয়েবসাইটের জন্য করে থাকেন। পাশাপাশি আরেকজনের জন্য কাজ করে নিজের কিছু বাড়তি ইনকাম হবে।
তবে, একসাথে এতগুলো কাজ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্লাগইন ম্যানেজমেন্ট সাইট ব্যবহার করতে হবে। এই সাইট এক সাথে অনেকগুলো মেইনটেনেন্স এর কাজ করে দিবে যাতে করে আলাদা আলাদা করে আর সব সাইট মনিটর করতে হবেনা।
৬.এসইও এবং মার্কেটিং করে ওয়ার্ডপ্রেস থেকে আয়:
আপনি যদি আপনার নিজস্ব সাইটটি সুন্দর করে সাজাতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই এসইও সম্পর্কে জানতে হবে। একটি পরিপূর্ণ ওয়েবসাইট তৈরিতে এসইও খুব বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানে কন্টেন্ট অপটিমাইজেশন, লিংক বিল্ডিং, সাইটের স্পিড ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের জন্য ওয়েবসাইটের মালিকরা লোক নিয়োগ দিয়ে থাকে।
মার্কেটিং সার্ভিস টাও এসইও এর সাথে সম্পর্কিত। একটি ভালো মার্কেটিং এর মধ্যে থাকে গুগল এডস, নিউজলেটার, স্যোশাল মিডিয়া ইত্যাদি। এইসব বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকলে আপনি যেমন আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইটটি আকর্ষণীয় করে তুলতে পারবেন, এর পাশাপাশি অন্যের ওয়েবসাইটের জন্য কাজ করেও ভালো আয় করতে পারবেন।
৭. ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগইন ডেভেলপমেন্ট:
ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে ভালো ধারনা থাকলে অবশ্যই জানা উচিত যে, একটি ব্লগ সুন্দর ভাবে পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন প্লাগইন প্রয়োজন হয়ে থাকে। প্লাগইন ছাড়া ব্লগ চালনা করা যায় না। ব্লগ সুন্দর ও সঠিক ভাবে পরিচালনা করার জন্য সবাইকেই প্লাগইন ব্যবহার করতে হয়।
অনলাইনে প্রচুর পরিমানে প্লাগইন রয়েছে। এর কিছু কিছু ফ্রি আবার কিছু কিছু টাকা দিয়ে কিনতে হয়। আপনি যদি প্লাগইন তৈরি করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই এর থেকে ইনকাম করতে পারেন। প্লাগইন বিক্রি করে আপনার আয় হবে।
প্লাগিন বিক্রি করে ওয়ার্ডপ্রেস থেকে আয় করার কিছু ওয়েবসাইট:
৮. ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপমেন্ট:
আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনার হয়ে থাকেন বা ওয়েব ডেভেলপার হয়ে থাকেন তাহলে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে খুব সহজেই আয় করতে পারবেন। এর জন্য খুব উচ্চমানের ওয়েব ডিজাইনার বা ডেভেলপার হতে হবেনা শুধুমাত্র ওয়ার্ডপ্রেস থিমটা এমনভাবে সেট করতে হবে যেন সেটা সঠিক কাস্টমার এর কাছে পৌঁছায়।
অনেক কোম্পানি আছে যারা একটা সুন্দর থিম সেট করে বছরের পর বছর ধরে অনায়াসেই আয় করছে। তবে এই থিম নিয়ে কাজ করার জন্য নিজে একা একা না করে একটা টিমের সাথে কাজ করা উচিত।
থিম বিক্রি করে ওয়ার্ডপ্রেস থেকে আয় করার কিছু ওয়েবসাইট:
৯. থিম কাস্টমাইজেশন:
ওয়েব ডেভেলপিং নিয়ে কাজ করার সময় যদি সময় থাকে তাহলে থিম কাস্টমাইজেশন নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। ওয়ার্ডপ্রেস এ বিভিন্ন ধরনের কাস্টমাইজেশন সার্ভিস আছে সেখান থেকে আপনার পছন্দ মত কাজটি বেছে নিতে পারেন।
অনেক সময় দেখা যায় থিম সেট করতে পারলে সেটা সময়মত পরিবর্তন করতে পারেনা তাই তখন সেই কাজ করার জন্য তাদের লোক দরকার হয়। কাস্টমাইজেশন এর মধ্যে পড়ে পেইজ লে আউট পরিবর্তন, পোস্ট টাইপ পরিবর্তন, লোগো তৈরি, স্যোশাল মিডিয়ায় পরিচিতি, নিউজলেটার সেটআপ, ই কমার্স স্টোর সেটআপ, প্লাগইন কনফিগারেশন ইত্যাদি।
যে সাইট গুলিতে থিম কাস্টমাইজেশন এর কাজ পাওয়া যাবে।
আমাদের শেষ কথা :
ওয়ার্ডপ্রেসকে কাজে লাগিয়ে আপনি ঘরে বসেই ওয়ার্ডপ্রেস থেকে আয় করতে পারবেন। উপরের যেকোন একটি উপায় কিংবা একাধিক উপায় অবলম্বন করতে পারেন।
Comments (No)