ওয়েব ডিজাইন কি?
ওয়েব ডিজাইন বলতে মূলত একটি ওয়েবসাইট এর বাহ্যিক গঠন বা টেমপ্লেট তৈরী করাকে বুঝায়। ওয়েব ডিজাইন মানে হচ্ছে একটা ওয়েবসাইট দেখতে কেমন হবে বা এর সাধারন রূপ কেমন হবে তা নির্ধারণ করা।
ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে আপনার কাজ হবে একটা পূর্ণাঙ্গ ওয়েব সাইটের টেম্পলেট বানানো।
যেমন ধরুন এটার লেয়াউট কেমন হবে। হেডারে কোথায় মেনু থাকবে, সাইডবার হবে কিনা, ইমেজগুলো কিভাবে প্রদর্শন করবে ইত্যাদি। ভিন্ন ভাবে বলতে গেলে ওয়েবসাইটের তথ্য কি হবে এবং কোথায় জমা থাকবে এগুলো চিন্তা না করে, তথ্যগুলো কিভাবে দেখানো হবে সেটা নির্ধারণ করাই হচ্ছে ওয়েব ডিজাইনার এর কাজ। আর এই ডিজাইন নির্ধারণ করতে ব্যাবহার করতে হবে কিছু প্রোগ্রামিং, স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ এবং মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ।
কি কি শিখতে হবে?
এইচটিএমএল:
এইচটিএমএল এর পূর্ণ অর্থ হল- হাইপারটেক্সট মার্কআপ ল্যাংগুয়েজ (Hyper Text Markup Language). এটি একটি মার্ক আপ ল্যাংগুয়েজ, প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ নয়। অন্য যেকোন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এর তুলনায় এইচটিএমএল শেখা অনেক সহজ। এটা এতটাই সহজ যে যেকোন সাধারন মানুষ কোন প্রকার প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এর জ্ঞান ছাড়াই HTML শিখতে পারবে। এইচটিএমএল কে একটি ওয়েব পেইজ এর কংকালও বলা হয়। এটা একটি ওয়েব পেইজ এর গঠন তৈরি করে।
সিএসএস:
সিএসএস এর পূর্ণ অর্থ হল- ক্যাসকেডিং স্টাইল শিট (Cascading Style Sheets) এটিও একটি মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ। CSS নির্ধারণ করে দেয় ব্রাউজারে যে ডকুমেন্ট গুলো HTML দ্বারা প্রদর্শিত হবে সেটি দেখতে কেমন হবে। অর্থাৎ বেকগ্রাউন্ড কি হবে, লেখাটার ফন্ট কত বড় হবে, এটির রঙ কি হবে, পাশে কতটুকু জায়গা খালি থাকবে, একটা লেখা থেকে আরেকটা লেখার দূরত্ব কতটুকু হবে, এমনকি সর্বশেষ CSS3 দিয়ে কন্টেন্টে এনিমেশন ও যুক্ত করা যায়। এইচটিএমএল হচ্ছে একটি ওয়েব পেজের এর কংকাল আর সিএসএস হচ্ছে তার উপরে মাংস, চামড়া, আকার, আকৃতি ইত্যাদি। একটি ওয়েব পেজকে সুন্দর রুপ দিতে আপনাকে অবশ্যই সিএসএস আর ব্যবহার জানতে হবে।
ওয়েব পেইজ:
ওয়েব পেইজ হল কতগুলো মার্কআপ ল্যাংগুয়েজের সমন্বয়ে লিখিত টেক্সট ফাইল, অডিও, ভিডিও, ছবি, ডকুমেন্ট ইত্যাদি। একটি ওয়েব পেইজ এক বা একাধিক পৃষ্ঠার হতে পারে। প্রথমে যে পেজটি দেখা যায় তাকে হোম পেজ বলা হয়। যেটা ওয়েব ব্রাউজার পড়তে পারে।
ওয়েব সাইট:
একাধিক ওয়েব পেজের সমন্বয়ে একটি ওয়েব সাইট গঠিত হয়। ওয়েবসাইট হচ্ছে কত গুলো ওয়েব পেইজের সমষ্টি যে গুলোকে একত্রে একটি ওয়েবসাইট বলা হয়। একটি ওয়েব সাইটের ঠিকানা বলতে সাধারনত হোম পেজের ঠিকানাটিকেই বুঝায়। এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভাল একটি ওয়েব সাইটে ওয়েব পেইজ সংখ্যা এক বা একাধিক হতে পারে।
ওয়েব ব্রাউজার:
ওয়েব ব্রাউজার হচ্ছে একটি সফট্ওয়্যার যা কোন ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে ইন্সটল করা হয় এবং ব্রাউজারে কোন ওয়েব পেইজ বা ওয়েব সাইটের নিদিষ্ট কোন ঠিকানা লিখে Keyboard এর Enter Key চাপ দিলে কম্পিউটারের পর্দায় ফলাফল প্রদর্শন করতে পারে। অর্থাৎ কোন ওয়েব পেইজকে দেখতে হলে একটি ওয়েব ব্রাউজারের প্রয়োজন যা ঐ ওয়েব পেইজকে প্রদর্শন করবে। উদাহরণ সরূপ কিছু ওয়েব ব্রাউজারের নাম দেওয়া হল। যেমন- ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার (Internet Explorer), মজিলা ফায়ারফক্স (Mozilla Firefox), অপেরা মিনি (Opera Mini), গুগল ক্রোম (Google Chrome) ইত্যাদি।
ফটোশপ:
ওয়েব ডিজাইন এর জন্য ফটোশপ এর বেসিক ধারণা থাকলেই চলবে। এখানে ফটোশপের যে মূল কাজটি শিখতে হবে, তাহল পিএসডি থেকে এইচটিএমএল (PSD to HTML) টেমপ্লেট বানানো। এছাড়া ছবি সাইজ করা, লোগো, ব্যানার, বাটন ইত্যাদি তৈরী করা জানতে হবে।
কোথায় কাজ করবেন?
ফ্রিলান্স মার্কেটপ্লেসে ওয়েব ডিজাইন এবং ফ্রন্ট-ইন্ড-ওয়েব ডেভেলপমেন্টের হাজারো কাজ পাওয়া যায় এবং এই ধরনের কাজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুলনামূলক কম তবে চাহিদা বেশি। তাই সহজে কাজ পাবেন এবং এধরনের কাজের দামও বেশি। একজন সাধারনমানের ফ্রিলান্সারের ঘণ্টাপ্রতি কাজ করার রেট হয় ২ ডলার, কিন্তু একজন ওয়েব ডিজাইনার এর ঘণ্টাপ্রতি রেট শুরুতেই ১০ বা ১২ ডলার হয়ে থাকে। তবে অনেকের ধারনা ওয়েব ডিজাইন বা ডেভেলপমেন্ট শিখলে শুধু ফ্রিলান্স করতে হবে এবং না করলে আয় বন্ধ, তাদের জন্য বলছি, themeforest.net এবং এধরনের অনেক মার্কেট আছে যেখানে ওয়েব টেম্পলেট এবং ওয়েব ইলিমেন্ট খুবই ভালো দামে বিক্রি করা যায়। এক্ষেত্রে আপনি আপনার একটি ডিজাইন করা টেম্পলেট বহুবার বিক্রি করতে পারবেন এবং এবং কোয়ালিটি ভালো হলে প্রতিমাসে একেকটা টেম্পলেট এর আয় দিয়েই আপনি রাজার হালে চলতে পারবেন।
সারসংক্ষেপ যা বলা উচিত তা হচ্ছে, ওয়েব ডিজাইনার বা ডেভেলপার হতে হলে যেমন আপনার প্রচুর ধৈর্য আর সময়ের দরকার তেমনি আবার শিখে নিলে এটাই হচ্ছে উচ্চ আয়ের এবং সম্মানজনক পেশা।