কর্মক্ষেত্রে সফল হতে চান? কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার উপায় জেনে নিন

যদি কর্মক্ষেত্রে সফল হতে চান তাহলে আপনাকে হতে হবে কর্মতৎপর, সুদক্ষ, বিনয়ী, সম্পর্কের প্রতি যত্নবান, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ঝুকিঁ বিশ্লেষণে দক্ষ। এইসব গুণ অর্জনে কিছু বিষয় নিয়ে হতে হবে আত্ম বিশ্লেষণ ধর্মী। কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে যেসব গুণাবলী অর্জন করতে হবে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হল-

দক্ষতা ও কর্মতৎপরতা :

দক্ষতা ও কর্মতৎপরতা এই দুটি বিষয়ের মধ্যে সুক্ষ একটি তফাৎ আছে। কর্মক্ষেত্রের প্রেক্ষাপটে এই তফাৎ টুকু জেনে রাখা জরুরী। দক্ষতার অর্থ নিপুন ভাবে কাজ করা। আর কর্ম তৎপরতা মানে সঠিক কাজটি করে ফেলা। দুটির মধ্যে সামঞ্জস্য থাকলে তবেই যে আদর্শ পরিস্থিতি তৈরী হবে, সেটা তৎপর হওয়া বেশি শ্রেয়। একজন ব্যক্তি কেমন সেটা স্থির করে তার দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যক্তিত্ব, অনুপ্রেরণা এবং কাজ করার ক্ষমতা।

উপরন্তু কর্মস্থলের পরিবেশের মধ্যে তার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ও প্রাপ্ত সুয়োগ সুবিধার পরিমাণ অবশ্যই কাজের উপর প্রভাব ফেলবে। যখন তা গুনে এবং মানে পৌছাঁতে পারে তখনই তাকে বলা হয় দক্ষ কাজ। একমাত্র নিজেকে পরিচালনা করার মত যথেষ্ট স্বকীয়তা থাকলেই সেটা সম্ভব।

বানিজ্যিক রীতিনীতি বা প্রোটোকল :

আপনি যে পদেই থাকুন না কেন, প্রতিদিন সময় মতো অফিসে হাজির হওয়া, রুচি সম্মত পোশাক পরিধান করা, সময় মতো ক্লায়েন্টকে ফোন করা, ফোন করে প্রত্যুত্তর দেওয়া এবং সবাইকে শুভেচ্ছার মাধ্যমে আহ্বান জানানো, সোজাসুজি ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলা। এবং প্রতিশ্রুতি তখনই দেওয়া উচিত যখন আপনি জানবেন যে, আপনি তা রাখতে পারবেন। অফিস ম্যানার মেনে চলার এগুলিই অত্যন্ত সহজ উপায়।

চেষ্টা করবেন কর্মীদের নির্দিষ্ট যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার মান পৌঁছে দিতে। আর যে ব্যাপারটি আপনার আচরণে থাকতেই হবে, তা হল কর্মীকে নিন্দা করবেন আড়ালে নিয়ে গিয়ে। কিন্তু প্রশংসা করবেন জন সমক্ষে। এই সমস্ত অভ্যাস নিয়মিত বজায় রাখলে কর্ম স্থলের পরিবেশ হবে সুন্দর, সকলের মধ্যে থাকবে ঐক্য, গড়ে উঠবে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা এবং আপনি অর্জন করবেন বিপুল সম্মান।

কর্মের সাথে সু-সম্পর্ক :

আপনি ও আপনার বস কিন্তু বিভিন্ন দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যের জালে একই সাথে আবদ্ধ রয়েছেন। বস আপনার মধ্যে খুঁজবেন দক্ষতা, যোগ্যতা, উৎপাদনশীলতা এবং আনুগত্য। এবার দেখা যাক আপনার নিকট থেকে কি কি করণীয় রয়েছে। এগুলি জেনে রাখলে আপনারই সুবিধা হবে।

১) মন প্রফুল্ল রাখবেন ও কাজে আগ্রহ দেখাবেন।
২) আপনার প্রতি বসের আস্থা কখনো ভাঙ্গবেন না।
৩) বস আপনাকে ব্যক্তিগত ভাবে কিছু বললে তা জানাজানি করবেন না।
৪) বসের কর্তৃত্বকে উপেক্ষা করবেন না।
৫) সমালোচনা স্বীকার করে নিন নিজের অভিজ্ঞতা বজায় রেখে।

সবার সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা :

সম্পর্ক শুধু চলনসই বা গ্রহণ যোগ্যতার পর্যায়ে পৌঁছলেই চলবে না। সুচিন্তি ভাবে নিজেকে পরিচালিত করে নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা ও সেই সাথে সবার সংঙ্গে মেশা এই দুই এর মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, অধস্তন কর্মী এবং সহকর্মীদের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ার প্রতি আপনাকে অনেক বেশি মন দিতে হবে। অধস্তন কর্মীদের সাথে ভাব আদান প্রদানের কতক গুলি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে-

১) অধস্তন কর্মীকে ভাল করে জানুন।
২) তার উপস্থিতিকে স্বীকৃতি দিন।
৩) তার কথা এড়িয়ে না গিয়ে শুনুন তিনি কি বলতে চাইছেন।
৪) বিরক্তি নয়, ধৈর্য্যের পরিচয় দিন।
৫) শক্ত হয়ে চলবেন কিন্তু রেগে যাবেন না।
৬) প্রকাশ্যে প্রশংসা করুন। দোষ ক্রটি ধরিয়ে দিন একান্তে আড়াঁলে ডেকে নিয়ে।

মন দিয়ে শ্রবণ করা :

কথা বলা সহজ কিন্তু কথা শোনা যথেষ্ট কঠিন কাজ। কারো সাথে কথা বলে আপনি তাকে যতোটা খুশি করতে পারবেন, তার চেয়েও বেশি খুশি করতে পারবেন তার কথা শুনে। এটাই সবার সাথে ভাবের আদান প্রদান বাড়ানোর চাবিকাঠি। অন্যের কথা শুনে যেতে হলে আপনাকে যে সমস্ত বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সেগুলো হল-

১) কথায় বাধা দেওয়া চলবেনা।
২) মাঝ পথে থামিয়ে দিলে হবেনা।
৩) মন সংযোগ রেখে শ্রবণ করা।
৪) বিষয়টি অনুধাবন করে করার ইচ্ছা থাকা চাই।

কেন আপনি কথা গুলো শুনছেন সেটা কিন্তু আগে ভাগেই জেনে রাখতে হবে। কারণ শ্রবণ করার সময় তা বুঝে নেওয়া কিন্তু যথেষ্ট শক্ত হতে পারে।

সংযোগ দক্ষতা :

কথা বলার মধ্যে রয়েছে আদান প্রদান, ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ও সর্বোপরি প্রকাশ করা এবং অপরকে বোঝার ক্ষমতা। কথা শুধু বললেই কিন্তু সংযোগ দক্ষতা গড়ে তোলা যায়না। ঠিক মতো সংযোগ গড়ে তুলতে হলে শব্দকে উচ্চারণ করতে হবে কিছুটা আবেগের মোড়কে। সেই সাথে থাকা চাই নিষ্ঠা, সহানুভূতি, আগ্রহ ও অপরের জন্য দুঃখ বোধ ইত্যাদি।

কিভাবে আমরা কথা বলি বা কোন বার্তা জরুরী। তাই এই ব্যাপারে সচেতন থাকা চাই। একটি বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি, উষ্ণ করমর্দন অথবা সুন্দর কোনো মন্তব্য কিন্তু আদান প্রদানের ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক এগিয়ে দেয়। আবার আপনার পোশাক পরিচ্ছদ, ভাব ভঙ্গিও সংযোগ গড়ে তোলায় যথেষ্ট ভুমিকা রাখে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ :

কোনো সমস্যার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে গ্রহণ করার আগে কিন্তু সমস্যার মূল খুঁজে বের করতে হবে। সমস্যার উৎস চিহ্নিত করা হয়ে গেলে, কোন কোন বিকল্প পথে সমাধান মিলতে পারে তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবেন। প্রতিটি বিকল্পের ভাল মন্দ খতিয়ে দেখতে হবে সতর্কভাবে। কারণ এক একটি সমাধান সূত্রের মধ্যে থাকবে এক এক রকম ঝুকিঁ। আপনাকেই সেই ঝুঁকির মূল্যায়ন করতে হবে।

আবার একটি সিদ্ধান্তের সুদূর প্রসারী ফলাফল কি হতে পারে সে বিষয়ে আপনাকে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। যখন বুঝতে পারবেন যে, আপনার সিদ্ধান্ত যথেষ্ট নিরাপদ ও তার পরিনামে যা ঘটবে তা আপনি সামলাতে পারবেন। তখনই সেই সিদ্ধান্তটি নিবেন।

দৃষ্টিভঙ্গি :

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এমন একটি মনভাব তৈরী করে, যার ফলে আমাদের কাজে আগ্রহ বাড়ে। এটা ছাড়া কোনো কিছুতেই সফল হওয়া যায় না। দুর্ভাগ্য বশত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিস্থিতিকে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দিই। আমাদের যেটা করা উচিত তা হল দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে পরিস্থিতি তৈরী করে নেওয়া। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ফলও হয় ইতিবাচক।

সবসময় সচেতন না থাকলে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের গ্রাস করে ফেলতে চায়। তখন আমরা নিজেদের অসুবিধা গুলি নিয়েই বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ি। আমাদের সামনে যে সমস্ত সুযোগ রয়েছে সেগুলিকে কাজে লাগানোর চিন্তাই করি না। এক কথায় বলতে গেলে, কোন দিকে আমাদের প্রবণতা রয়েছে তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে পারলে আমরা পুরো জীবনটাকেই বদলে ফেলতে পারি।

অনুপ্রেরণা :

উৎসাহ এবং আগ্রহ তৈরী করে আপনি অপরকে এমন ভাবে বদলে দিতে পারেন, যখন তারা নিজেরাই নিজেদের অন্তর থেকেই এই প্রেরণা পাবে। কাজের জায়গায় কর্মতৎপর হয়ে উঠতে হলে অপরকে এই ভাবে জাগানোর কৌশলও শিখে রাখতে হবে। এই ব্যাপারে কয়েকটি কৌশল হচ্ছে-

১) পথ দেখিয়ে কাজের স্বীকৃতি দিবেন।
২) অন্যের প্রতি আপনার আস্থার কথা জানাবেন।
৩) আগ্রহ বজায় রাখবেন।

সৃজনশীলতা :

সৃজনশীলতা আসলে গভীর চিন্তার ফসল। যারই নিজের কিছু ধ্যান ধারণা আছে, তাকে সেই ধারণাকে আরো পরিণত করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নতুন কর্ম পরিকল্পনাকে পরিণত করার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতিতে এবং নতুন নতুন কাজ করার সময় সুযোগ সব সময়ই রয়েছে। তার জন্য শুধুমাত্র নতুন কিছু করে দেখানোর মতো যথেষ্ট সাহস থাকা চাই। এরাই কিন্তু শেষ অবধি কর্মতৎপর হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

ক্ষমতার সুষ্ঠু বন্টন :

একজন এক্সিকিউটিভ যদি কর্মতৎপর হয়ে উঠতে চান, তাহলে মক্ষতা ভাগ করে দেওয়াটা তার জন্য হবে বাধ্যতামূলক। আপনাকে স্থির করে ফেলতে হবে যে, কোন কাজের ভার কাকে দেওয়াটা যুক্তি সঙ্গত হবে।

তারপর কাজটি সম্পর্কে তাদের ভালোভাবে বোঝাতে হবে। কাজ যতো বাড়বে তা তদারকির প্রয়োজন হবে এবং সেই ভার আপনার কাধেই নিতে হবে। যত ভালভাবে এই ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে পারবেন ততোই আপনার পক্ষে সহজ হয়ে যাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার, একাজে দক্ষতা থাকলে যে সমস্ত সুবিধা আপনি পাবেন, তার কয়েকটি হলে-

১) আপনি কর্মীদের দিয়ে অনেক বেশি কাজ করিয়ে নিতে পারবেন।
২) আপনি আপনার কর্মীদের অনেক ভালভাবে জানতে পারবেন।
৩) অন্যদের উন্নতি ও বিকাশের সুযোগ ঘটে।
৪) নিজের জরুরী কাজের জন্য হাতে অনেক বেশি সময় পাবেন।

সময়ের সদ্ব্যবহার :

সময়ের সদ্ব্যবহারের ব্যাপারে কর্মতৎপরতা গড়ে তুলতে চাইলে, ছড়ানো ছিটানো টেবিল রেখে চলে যাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। কি করতে হবে, প্রতিদিন তার একটি তালিকা তৈরী করতে হবে। সেখানে অগ্রাধিকারও ঠিক করুন। একবারের বেশি একই কাগজ দেখা বন্ধ করুন। আপনাকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

ব্যক্তিগত আদান প্রদানে বিনয় দেখাতে হবে ও পদাধিকার বোধের সাথে যুক্ত করতে হবে। সময়ের সদ্ব্যবহার, আত্ম বিশ্লেষণ এবং প্রায়োগিক ব্যবহার একজন কর্মজীবীকে আত্মনির্ভরশীল এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় কর্মকতা হিসাবে পরিচিতি এনে দেয়। যা থেকে স্বনির্ভর প্রকল্প, সমাজ, দেশ উপকৃত হতে পারে। ব্যক্তিত্ব বিকাশে কর্ম পরিচালনায় সময়ের সদ্ব্যবহারের প্রায়োগিক ব্যবহার অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দেয়

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ