২ হাজার কোটি টাকার মসলার বাজার ৪০ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে 1
২ হাজার কোটি টাকার মসলার বাজার ৪০ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে দুই হাজার কোটি টাকার মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে ৪০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দেশে মসলা আমদানিকারকের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক হলেও দর ওঠা-নামায় বড় ভূমিকা রাখছে এসব প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম কাস্টমসে ঘোষিত আমদানি মূল্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়– আদা, রসুন, জিরাসহ বিভিন্ন মসলায় একশ’ থেকে দেড়শ’ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করছেন কিছু ব্যবসায়ী। অনুসন্ধানে দেখা গেছে– ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বগুড়া ও বরিশালের কয়েকজন ব্যবসায়ী ঈদ সামনে রেখে হঠাৎ করে বাড়াতে শুরু করেছেন মসলার দাম। এরা সবাই মসলা জাতীয় একাধিক পণ্যের শীর্ষ আমদানিকারক। সরকারের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে সিন্ডিকেট করার পরও এরা আছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

চিটাগাং চেম্বার ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে পর্যাপ্ত মসলা আমদানি হয়েছে। প্রতিবছর ঈদের আগে চোরাই পথে কিছু মসলা আসায় বাজার কিছুটা অস্থির থাকে। খুচরা বাজারে সারাবছর যথাযথ মনিটরিং করা গেলে বাজার অস্থির করার সুযোগ কমে যেত।’

প্রসঙ্গত, শুধু চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সর্বশেষ অর্থবছরে দুই হাজার ৭৫ কোটি টাকার দুই লাখ ২২ হাজার টন মসলা এসেছে দেশে।

ADVERTISEMENT

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী আমদানি মূল্যের সঙ্গে ৫ শতাংশ শুল্ক, ১০ শতাংশ পরিবহন খরচ ও ২ শতাংশ মুনাফা যোগ করলেও ভারত থেকে আসা এক কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে ১৭ টাকা ৬৫ পয়সা। কিন্তু চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন খোলাবাজারে এখন সেই ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ব্যবসায়ীরা লাভ গুনছেন প্রায় ১৫০ শতাংশ! অভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে অন্যান্য মসলার ক্ষেত্রেও। ট্যারিফ কমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খাতুনগঞ্জে আমদানি করা প্রতি কেজি চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে একই মানের আদা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টিতে পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া ও পণ্য পরিবহন খরচ বাড়ায় দাম বাড়ছে মসলার।

সর্বশেষ অর্থবছরে ৪০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে রসুন আমদানি করেছেন আড়াই শতাধিক ব্যবসায়ী। কিন্তু এক হাজার টনের ওপরে রসুন এনে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ঢাকার মেসার্স আদর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, ঘোড়ামারার পুল মোহাম্মদ ট্রেডার্স, চট্টগ্রামের ম্যাপ ইন্টারন্যাশনাল, বগুড়ার সুইটি এন্টারপ্রাইজ, বানিয়াপট্টির মেসার্স রতন কুমার পাল, জামাল অ্যান্ড ব্রাদার্স, ঢাকার মেসার্স ভাই ভাই বাণিজ্যালয়, দৌলতপুরের সুস্মিতা ইন্টারন্যাশনাল, রাজশাহীর হক এন্টারপ্রাইজ ও চট্টগ্রামের কফিল অ্যান্ড ব্রাদার্স।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সর্বশেষ অর্থবছরে ৩০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে ২০ জন আমদানিকারক গোলমরিচ আমদানি করে। কিন্তু ৬০ শতাংশ গোলমরিচ এককভাবে এনে এর বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে চট্টগ্রামের এম কে এন্টারপ্রাইজ, বি আর ট্রেডিং, জাভেদ করপোরেশন ও ঢাকার হেদায়েত অ্যান্ড ব্রাদার্স। আবার ৭৫ কোটি টাকায় ৫০ আমদানিকারক আট হাজার টনেরও বেশি দারুচিনি আনলেও এর বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আছে ম্যাপ ইন্টারন্যাশনাল, মিলন অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স মোহাম্মদ তৈয়বুর রহমান, এম কে এন্টারপ্রাইজ ও হোসাইন ট্রেড সিন্ডিকেট। Online Income Tunes

২ হাজার কোটি টাকার মসলার বাজার ৪০ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে

৩০ কোটি টাকায় ২৫ আমদানিকারক ৩০০ টনেরও বেশি লবঙ্গ আমদানি করলেও এর বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো– চট্টগ্রামের বি আর ট্রেডিং, ঢাকার হেদায়েত অ্যান্ড ব্রাদার্স এবং চট্টগ্রামের মিতা স্টোর। সর্বশেষ অর্থবছরে ৬৫১ কোটি টাকায় আমদানি হয় ২৬ হাজার ৭৫৫ টন জিরা। ৭০ আমদানিকারক এসব জিরা আনলেও প্রায় ৫০ শতাংশ জিরার আমদানিকারক চারটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আছে– চট্টগ্রামের সেই বি আর ট্রেডিং, ঢাকার মেসার্স এম রহমান, মিনহাজ এন্টারপ্রাইজ ও হারুন স্টোর।

আবার সর্বশেষ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চার হাজার ৩৯৬ টন এলাচ আমদানি হয়। এলাচের আমদানিকারক ৬০ প্রতিষ্ঠান হলেও ৫০ শতাংশ এলাচ আনা শীর্ষ চার আমদানিকারক হচ্ছে– চট্টগ্রামের বি আর ট্রেডিং, হাজি এয়াকুব অ্যান্ড সন্স, গুলিস্তান ফিড এজেন্সি ও এবি ট্রেডার্স। ৪০০ কোটি টাকার আদার বাজারে দুই শতাধিক আমদানিকারক থাকলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ঘোড়ামারার পুল মোহাম্মদ ট্রেডার্স, দৌলতপুরের সুস্মিতা ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকার আদর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স নিউ ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ভাই ভাই বাণিজ্যালয়, মেসার্স তাসপিয়া এন্টারপ্রাইজ, রাজশাহীর হক এন্টারপ্রাইজ, সিলেটের মেসার্স আবুল কালাম, চট্টগ্রামের ম্যাপ ইন্টারন্যাশনাল ও ঢাকার মেসার্স রাফিক ট্রেডার্স।

মসলার বাজারে শীর্ষ আমদানিকারক ৪০ প্রতিষ্ঠান থাকলেও আট প্রতিষ্ঠান একাধিক মসলার অন্যতম আমদানিকারক। একাধিক পণ্যের আমদানিকারক হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে বাজারও নিয়ন্ত্রণ করে তারা। যেমন- চট্টগ্রামের বি আর ট্রেডিং শীর্ষস্থানে থেকে আমদানি করছে এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গ ও জিরা। এখানকার আরেক প্রতিষ্ঠান এম কে এন্টারপ্রাইজের ভূমিকা আছে গোলমরিচ ও দারুচিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে। ঢাকার আদর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স ভাই ভাই বাণিজ্যালয়, ঘোড়ামারার পুল মোহাম্মদ ট্রেডার্স, রাজশাহীর হক এন্টারপ্রাইজ এবং দৌলতপুরের সুস্মিতা ইন্টারন্যাশনাল প্রভাব বিস্তার করছে আদা ও রসুনের বাজারে। চট্টগ্রামের ম্যাপ ইন্টারন্যাশনাল আদা, রসুন ও দারুচিনির বাজার এবং ঢাকার হেদায়েত অ্যান্ড ব্রাদার্স নিয়ন্ত্রণ করছে গোলমরিচ ও লবঙ্গের বাজার।

Leave a Reply

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ