যুগে যুগে বহু ক্ষনজন্ম ব্যক্তিত্ব ইসলামের সেবা করে অমর হয়ে আছেন ৷ ইসলামের বিধান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে তা অন্যান্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আজীবন আপ্রান চেষ্টা করে গেছেন ৷ তাদের মধ্যে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ছিলেন অন্যতম যার Madhhab আমরা অনুসরন করে থাকি। একাউন্ট করে নিন 100 টাকা প্রতি রেফারে 10 টাকা
কোরআন হাদিস গবেষণা তথা ইজতিহাদের ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য ৷ তাকে সমকালীন যুগে ফকিহদের সর্দার বলে গণ্য করা হতো ৷ এছাড়া তিনি ইরাকের কুফা নগরীর মুফতী হিসেবেও অত্যাধিক পরিচিত ছিলেন ৷
ইমাম আবু হানিফা হিজরীর প্রথম শতাব্দীর একজন মশহুর ইমাম ছিলেন৷ তিনি ইসলামের জ্ঞানভান্ডারে যে অবদান রেখে গেছেন কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ তার কাছে চির ঋণী হয়ে থাকবে৷ Best Online Earning Site
ইমাম আযমের পরিচিতি
ইমাম আজমকে মানুষ ইমাম আবু হানিফা নামেই বেশি চিনে এবং তিনি এ নামেই সর্ব প্রসিদ্ধ ৷
- উনার প্রকৃত নাম হল নোমান ৷
- উপনাম ইমাম আবু হানিফা ৷
- উপাধি ইমামুল আযম ৷
- পিতা সাবিত বিন জ্যোতি৷
- একমাত্র ইমাম আজম মুজতাহিদ ইমামদের মধ্যে তার জন্মই সর্বপ্রথম ৷
প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী তিনি সেপ্টেম্বর ৫, ৬৯৯/৭০০ খ্রিষ্টাব্দে, সাবান ৪, ৮০ হিজরী উমাইয়া খিলাফত কালে কুফায় জন্মগ্রহন করেন ৷ বংশ হিসেবে তিনি ইরানি ও পারস্য দেশের অধিবাসী ছিলেন ৷ তার বাবা বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর দোয়া লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন ৷
ইমাম আযমের শিক্ষা জীবন
কিশোর বয়স থেকেই ইমাম আবু হানিফা তার পিতার ব্যবসার কাজে যোগ দিয়েছিলেন ৷ পৈতৃক এই ব্যবসার সুবাদেই তিনি প্রচুর বিত্তের মালিক ছিলেন ৷
তৎকালীন বিশিষ্ট ওলামাগণের মধ্যে সম্ভবত তিনিই ছিলেন, যিনি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও বিত্তবানদের হাদিয়া প্রাপ্তির পরোয়া না করে নিজ উপার্জনের অর্থ দ্বারা জীবিকা নির্বাহ, এলেমের সেবা এবং তার নিকট সমবেত গরীব শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করার ব্যবস্থা করতেন ৷
১৬ বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন ৷ তার পিতা ছিলেন একজন প্রতিষ্টিত কাপড় ব্যবসায়ী ৷ তার মৃত্যুর পর এই ব্যবসার দায়িত্বভার নিতে হয় যুবক ইমাম আবু হানিফাকে ৷
তার অসামান্য দক্ষতা ও নিষ্ঠায় তার ব্যবসা প্রসারিত করার পাশাপাশি তিনি কাপড় তৈরির এক কারখানা স্থাপন করেন যা কিছু দিনের মধ্যেই অন্যান্য হয়ে ওঠে ৷ ব্যবসায় তার সততার পরিচয় পেয়ে দিগ্বদিক থেকে লোকেরা তার দোকানে ভিড় জমাতেন ৷ এভাবে তিনি জনমানুষের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত লাভ করলেন ৷
ইমাম শা’বী তাকে এলেমের ব্যাপারে উৎসাহিত করার আগ পর্যন্ত তিনি এই ব্যবসাকেই নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছিলেন ৷ ব্যবসায়ীক কাজে তাকে বিভিন্ন বাজার ও বাণিজ্য কেন্দ্রে যাতায়াত করতে হতো ৷
ঘটনাচক্রে একদিন ইমাম শা’বীর (রহঃ) সাথে তার সাক্ষাৎ হয় ৷ প্রথম দর্শনেই ইমাম শাবী আবু হানিফার নিষ্পাপ চেহারার মধ্যে প্রতিভার স্ফুরণ লক্ষ্য করেছিলেন ৷
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে বৎস তুমি কি করো? এ পথে তোমাকে সব সময় যাতায়াত করতে দেখি? ইমাম আযম জবাব দিলেন আমি ব্যবসা করি ব্যবসার দায়িত্ব পালনার্থেই ব্যবসায়ীদের দোকানে দোকানে আমাকে যাতায়াত করতে হয় ৷
ইমাম শাবী পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন এটা তো তোমার লেখা-পড়ার বয়স? কোনো আলমের শিক্ষাগারে কি তোমার যাতায়াত আছে? ইমাম আজম সরলভাবেই জবাব দিলেন সেরূপ সুযোগ-সুবিধা আমার খুব কমই হয় ৷
কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ইমাম আবু হানিফাকে জ্ঞানার্জনে মনোযোগী করে তুলেছিলেন৷
ইমাম আবু হানিফা বলেন ইমাম শাবীর আন্তরিকতাপূর্ণ উপদেশ বাণী গুলো আমার অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করে এরপর থেকেই আমি বিপনীকেন্দ্রগুলোতে যাতায়াতের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা কেন্দ্র যাতায়াত শুরু করলাম ৷
প্রথমে ইমাম আজম আবু হানিফা কুফা শহরেই ইলমে কালাম শিক্ষা করেন ৷ কারো মতে ১৯/২০ বছর বয়সে তিনি ইলমে দ্বীন শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করেন ৷ এর আগে ইমাম শাবি (রহঃ) তাকে ইলমের ব্যাপারে উৎসাহিত করার আগ পর্যন্ত তিনি কাপড়ের ব্যবসাকেই নিজের ক্যারিয়ার হিসাবেই নিয়েছলেন ৷
ইলমে আদব ও ইলমে কালাম শেখার পর তিনি ইলমে ফিকহ অর্জনের জন্য সমকালীন ফকিহ ইমাম হাম্মাদ (রহঃ) ছিলেন তাঁর বিশেষ ওস্তাদ ৷ তিনি ছাড়াও তাঁর গুরুজনের জনসংখ্যা ছিল প্রায় চার হাজার ৷
ইমাম যাহাবীর মতে, কেবল কুফাতেই ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ২৯ জন উস্তাদগনের কাছ থেকে শিক্ষা নেন যারা ছিলেন বড় বড় তাবীঈদের অন্তর্ভুক্ত ৷
ইমাম আযমের অবদান
ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ) তার পাঠদানের দীর্ঘ জীবনে অসংখ্য ছাত্রকে ফকিহ রূপে তৈরি করেছিলেন ৷ তদানীন্তন সময়ের বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রায় সব শহরের বিচারপতির আসনে তার ছাত্ররা অলংকৃত করেছিলেন ৷ তার প্রিয় ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ ছিলেন প্রধান বিচারপতি ৷
ফিকহ শাস্ত্রে অবদানঃ ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ফিকহ শাস্ত্রের আবিষ্কারক ছিলেন ৷ ফিকহ ও ইসলামী আইন সংকলন ও সম্পাদনার জন্য তিনি ৪০ জন ফকিহ নিয়ে এক আইনজ্ঞ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন ।
ওই যুগে যেসব মাসয়ালা-মাসায়িল সংকলন হয়েছিল, তার সংখ্যা ১২ লাখ ৭০ হাজারের ঊর্ধ্বে । ফিকহ শাস্ত্রে তার অবদানের ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, ফিকহ শাস্ত্রের সব মানুষ ছিলেন আবু হানিফার (রহ.) পরিবারভুক্ত ।
হাদিস শাস্ত্রে অবদানঃ ফিকাহ অধ্যায়নের পর তিনি হাদিস শিক্ষার জন্য তদানিন্তন হাদিস বেত্তাদের খিদমতে হাজির হন এবং শিক্ষা লাভ করেন। তখনও কোন প্রনিধান যোগ্য হাদিস গ্রন্থ সংকলিত হয়নি ।
কোন একজন মুহাদ্দিস সকল হাদিসের হাফিজও ছিলেন না । প্রথমে তিনি কুফায় অবস্থানরত মুহাদ্দিসদের থেকে হাদিস শেখেন । এরপর তিনি বসরা যান সেখানে হযরত কাতাদাহ রহ.-এর খিদমতে হাজির হন এবং হাদিসের দরস হাসিল করেন । তারপর ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হযরত শুবা (রহ.) এর দরসে যোগ দেন ।
তাকে হাদিস শাস্ত্রে ‘আমিরুল মুমিনিন’ বলা হয় । কুফা ও বসরার পর ইমাম আবু হানিফা হারামাইন শরিফাইনের দিকে দৃষ্টিপাত করেন । প্রথমে তিনি মক্কা গেলেন এবং সেখানে তিনি হাদিসবিদ হযরত আতা ইবনে আবু রিবাহ (রহ.) এর দরবারে যান এবং দরসে শামিল হয়ে শিক্ষা অর্জন করেন ।
১১৫ হিজরিতে আতা (রহ.) ইন্তেকাল করলে তিনি মক্কায় চলে আসেন এবং হযরত ইকরামা (রহ.) এর কাছ থেকেও হাদিসের সনদ লাভ করেন । ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হাদিস শাস্ত্রে অতুলনীয় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন । তিনি চার হাজার শাইখ থেকে হাদিস সংগ্রহ করেছেন।
গবেষকদের মতে তিনি চল্লিশ হাজার হাদিস থেকে বাছাই করে কিতাবুল আসার সংকলন করেছিলেন ৷ তার সবচেয়ে বড় অবদান হলো কোরআন ও হাদিস থেকে জনসাধারণের আমল উপযোগী মাসয়ালা বের করার মূলনীতি দ্বারা করানো ৷
তার সম্পাদিত ও শাস্ত্রের নাম উসূলুল ফিকহ ৷ এ জন্যই তিনি ইমাম আযম খ্যাতি লাভ করেন ৷ তার প্রণীত ফিকহ আমাদের কাছে ফিকহে হানাফী নামে পরিচিত ৷
ইমাম বুখারির অন্যতম ওস্তাদ মক্কী বিন ইব্রাহীম (রহ.) যাঁর সনদে ইমাম বুখারি (রহ.) বেশির ভাগ ‘সুলাসিয়াত’ হাদিস বর্ণনা করেছেন । এই মক্কী বিন ইব্রাহীম ইমাম হানিফা (রহ.)-এর ছাত্র ।
তিনি ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সম্পর্কে বলেন, ‘আবু হানিফা তার সময়কালের শ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন ৷ আবিদ ইবনি সালিহ বলেন, ‘ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হাদিসের নাসিখ ও মানসুখ নির্ণয়ের ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন ।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) তার শহরে যেসব হাদিস পৌঁছেছে তার মধ্যে রাসুল (সা.)-এর তিরোধানের সময়কার সর্বশেষ আমল কী ছিল সেসব ও তার মুখস্থ ছিল।
ইয়াহিয়া ইবনে নাসর বলেন, একদিন আমি ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর ঘরে প্রবেশ করি। সেখানে তার কিতাব ভরপুর ছিল । আমি জিজ্ঞাসা করলাম এগুলো কী? তিনি বললেন, এগুলো সব হাদিসের কিতাব, যার মধ্যে আমি সামান্য কিছু বর্ণনা করেছি ৷
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) রচিত প্রসিদ্ধ ২০টি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হল-
- আল-ফিকাহুল আকবর।
- আল-ফিকাহুল আবসাত।
- কিতাব আল আলিম অয়াল মুতাআল্লিম।
- আল-অসিয়া।
- আর-রিসালা।
- মুসনাদে আবি হানিফা৷
- অসিয়া ইলা ইবনিহি হাম্মাদ।
- অসিয়া ইলা তিল মিজিহি ইউসুফ ইবনে খালিদ।
- অসিয়া ইলা তিল মিজিহি আল কাজী আবি ইউসুফ।
- রিসালা ইলা উসমান আল বাত্তি।
- আল কাসিদা আল কাফিয়া (আননুমানিয়া)।
- মুজাদালা লি আহাদিদ দাহ রিন।
- মারিফাতুল মাজাহিব।
- আল জাওয়াবিত আস সালাসা।
- রিসালা ফিল ফারাইয।
- দুআউ আবি হানিফা।
- মুখাতাবাতু আবি হানিফা মাআ জাফর ইবনে মুহাম্মদ।
- বাআজ ফতোয়া আবি হানিফা।
- কিতাবের মাক সুদ ফিস সারফ।
- কিতাবু মাখারিজ ফিল হিয়াল।
উনার নাম নোমান হওয়া সত্বেও কেন আবু হানিফা নামে প্রসিদ্ধ?
এটা নিয়ে সুন্দর একটি ঘটনা রয়েছে৷ চলুন তাহলে শুরু করা যাক ৷
একদিন একদল মহিলা এসে ইমাম আবু হানিফাকে প্রশ্ন করল ইমাম আজম আমরা একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই?
আচ্ছা একজন পুরুষ যদি একাধিক বিয়ে করতে পারে তাহলে একজন নারী কেন একাধিক পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে না?
এর কারণ কি?
তাদের প্রশ্ন শুনে ইমাম আযম আবু হানিফা বললেন ঠিক আছে তোমাদের এ প্রশ্নের উত্তর আজকে দিব না তোমরা আবার আগামীকাল এসো, কথা অনুযায়ী মহিলাগণ পরেরদিন আবারো আসলেন ৷ ইমাম আযমের আবারো একই কথা তোমরা আবার আগামীকাল এসো, কথা অনুযায়ী পরেরদিন মহিলাগন আবার আসলেন কিন্ত তখনো এই প্রশ্নের উত্তর দেন নি৷
তখন ঐদিন উনার মেয়েকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন (আসলে উনার মেয়ের নাম ছিল হানিফা) উনার মেয়ে বললেন এই প্রশ্নের উত্তর খুবই সিম্পল ৷ উনি বললেন ঠিক আছে আগামীকাল একদল মহিলা আসবে ওই মহিলাদের কে তুমি একটা সমাধান দিয়ে দিবে ৷
মেয়ে তার বাবাকে বলল ঠিকে আছে তবে একটা শর্ত আছে যদি আপনার নামের সাথে আমার নাম টি (হানিফা) অন্তর্ভুক্ত করেন তাহলে আমি এই প্রশ্নের উত্তর বলে দিতে পারি?
তখন কথা অনুযায়ী ওই একদল মহিলা আসলে তাদেরকে বললেন তোমাদের যে প্রশ্ন রয়েছে এর একটা সমাধান হবে? তার আগে একটা কাজ কর? সবার হাতে হাতে একটা করে দুধের পেয়ালা নাও সবাই কথা অনুযায়ী হাতে একটা করে দুধের পেয়ালা নিল ৷
তখন ইমাম আজমের মেয়ে বললেন এখন তোমরা একটা পাত্রের মধ্যে দুধগুলো ঢেলে দাও? ঢালার পর ইমাম আবু হানিফার মেয়ে বললেন এখন সব দুধগুলি আবার যার যার পাত্রে উঠিয়ে নাও।
তখন ওই মহিলাগণ আশ্চর্য হয়ে বলল এটা কিভাবে সম্ভব? কারণ সব দুধগুলো তো এই পাত্রে মিশ্রিত হয়ে গেছে এখন এই দুধগুলো কিভাবে তুলব তা কোনো মতেই সম্ভব না?
তখন ইমাম আবু হানিফার মেয়ে বললেন দেখো যদি একজন পুরুষ একাধিক মহিলাকে বিয়ে করে তাহলে যদি ওই মহিলাদের ঘরে সন্তান জন্ম নেয় তাহলে এদেরকে চিনতে কঠিন হবে না যে এই সন্তানগুলোর পিতা কে?
কিন্তু একজন মহিলা যদি একাধিক পুরুষকে বিয়ে করে এবং তাদের সাথে মেলামেশা করে আর ওই মহিলার ঘর থেকে যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে ঐ সন্তানকে কোনভাবেই চেনা যাবে না সন্তানের পিতা কে?
তারপর থেকেই ইমাম নোমান ইবনে সাবিত কে ইমাম আবু হানিফা নামেই সবাই চিনে এবং এই নামেই তিনি প্রসিদ্ধ ৷
আশা করি বিষয়টা ক্লিয়ার হয়ে গেছে । যেমন ইমাম আযম আবু হানিফার মেধা শক্তি ছিল তেমনি উনার মেয়ের মেধা শক্তি অনেক ছিল৷
ইমাম আযমের কাজীর পদ প্রত্যাখান
আব্বাসীয় বংশের আল-মনসুর আবু হানিফাকে রাজ্যের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দেন । কিন্তু স্বাধীনভাবে থাকার জন্য তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন ।ইমাম আবু হানিফা খলিফার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর তাকে ত্রিশটি বেত্রাঘাত করা হয় । যার ফলে তার সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে পড়ে ৷
তিনি উক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে খলিফাকে সম্বোধন করে বলেন আল্লাহর শপথ কোন ব্যাপারে আমার ফয়সালা যদি আপনার বিরুদ্ধে যায় তখন আপনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যদিও আমার মৃত্যুদণ্ড দেন, তবুও আমি আমার সিদ্ধান্তের উপর অটুট থাকবো ৷
তার পরীবর্তে তার ছাত্র আবু ইউসুফকে প্রধান বিচারপতির দ্বায়িত দেওয়া হয়। প্রস্তাব প্রত্যাখানের ব্যাপারে আবু ইউসুফ আল মনসুরকে ব্যাখা দেন তিনি নিজেকে এই পদের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না । আল-মনসুরের এই পদ প্রস্তাব দেওয়ার পেছেনে তার নিজস্ব কারণ ছিল।
আবু হানিফা প্রস্তাব প্রত্যাখান করার পর মনসুর তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করেন । এই অভিযোগের ব্যাখ্যায় আবু হানিফা বলেন, “আমি যদি মিথ্যাবাদী হই তাহলে প্রস্তাব প্রত্যাখান করার ব্যাপারে আমার মতামত সঠিক ছিল, কারণ কিভাবে আপনি রাজ্যের প্রধান বিচারপতির পদে একজন মিথ্যাবাদিকে বসাবেন?
এই ব্যাখার উত্তরে আল-মনসুর আবু হানিফাকে গ্রেফতার করেন ও তাকে নির্যাতন করে কারাগারে বন্দি করে রাখে । এমনকি বিচারকরা সিদ্ধান্ত নিতেন কে তার সাথে দেখা করতে পারবে ।
ইমাম আবু হানিফা হলিফার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর তাকে ত্রিশটি বেত্রাঘাত করা হয় যার ফলে তার সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে পড়ে ৷
তখন খলিফা মানসুরের চাচা আব্দুস সামাদ ইবনে আলী তাকে এ জন্য তিরস্কার করে বলেন তিনি শুধু ইরাকের ফকিহ নন সমগ্র প্রাচ্যবাসীর ফকিহ ৷ মানসুর এই কথা শুনে লজ্জিত হয়ে প্রত্যেক বেত্রাঘাতের বদলে এক হাজার দিরহাম ইমাম আবু হানিফার কাছে পাঠানো হয় ।
কিন্তু ইমাম উক্ত দিরহাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান যদিও তিনি এই দিরহাম গুলো নিজের কাছে রাখেন নি সবগুলো অর্থ গরীব মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেন৷ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বলেন তার কাছে কি কোন হালাল অর্থ আছে?
মানসুর এরপর আরো প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠে ৷ ইমামকে আরো চাবুক মারা হয় কারারুদ্ধ করে পানাহারে নানাভাবে কষ্ট দিয়ে নির্যাতন করা হয় ৷ তারপর একটা বাড়িতে নজর বন্দি করে রাখা হয় ৷ সেখানেই ইমাম আবু হানিফার মৃত্যু হয়৷ আবার কারো কারো মতে তাকে জোরপূর্বক বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয় ৷
নির্মম নির্যাতনের শিকার ইমাম আবু হানিফা মৃত্যুর আগে ওসিয়ত করে যান যে, খলিফা মানসুর জনগণের অর্থ অন্যায় ভাবে দখল করে বাগদাদের যেই এলাকায় শহর নির্মাণ করেছে সে এলাকায় যেন ইন্তেকালের পর তাকে দাফন করা না হয় ৷
ইমাম আবু হানিফার মর্যাদা সম্পর্কে মনীষীদের অভিমত
ইমাম শাফি-র (রহঃ) মতে, যে ব্যক্তি ফেকাহর জ্ঞান অর্জন করতে চায়, সে যেন ইমাম আবু হানিফা এবং তার ছাত্রদের সান্নিধ্য লাভ করে । কারণ ফেকাহর ব্যাপারে সকলেই আবু হানিফার মুখাপেক্ষী ।
ইমাম আবু ইউসুফ বলেন, ইমাম আবু হানিফা কেবলমাত্র কারাগারে বসেই ১২ লক্ষ ৯০ হাজারের অধিক মাসয়ালা লিপিবদ্ধ করেছেন । সুবহানাল্লাহ
ইমাম মালেক আবু হানিফা (রহ.) শান সম্পর্কে বলেন তিনি এমন এক ব্যক্তি যদি ইচ্ছা করতেন, এই স্তম্ভটিকে সোনা প্রমাণিত করবেন, তবে নিঃসন্দেহে তিনি তা করতে সক্ষম হতেন। মহান আল্লাহপাক উনাকে এমন জ্ঞান দান করেছিলেন৷
সাহাবায় কেরামদের দর্শন
প্রখ্যাত সাহাবী আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) সাথে সাক্ষাত হওয়ার কারণে ইমাম আবু হানিফাকে তাবীয়ি বলা হয়ে থাকে ৷
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) যদিও এদের সকলের কাছ থেকে এলেম শিক্ষা করেন নি তবুও তিনি সাত জন সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল এবং তিনজনের কাছ থেকে ইলমে হাদিসের দরস হাসিল করেছিলেন সুতরাং তিনি একজন প্রখ্যাত তাবীয়ি ছিলেন ৷
আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (রহ.) বলেন, ‘ইমাম আবু হানিফা (রহ.) নিম্নে উল্লেখিত সাহাবিদের সাক্ষাৎ লাভ করেন:
- হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) (ওফাত: ৯৩ হিজরি),
- আবদুল্লাহ ইবনে আবী আওফা (রা.) (ওফাত: ৮৭ হিজরি),
- আবু তোফায়েল (রা.) (ওফাত: ১১০ হিজরি),
- আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়দি (রা.) (ওফাত: ৯৯ হিজরি),
- জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) (ওফাত: ৯৪ হিজরি) এবং
- ওয়াসেলা ইবনুল আসকা (রা.) (ওফাত: ৮৫ হিজরি)।
- সহল ইবনে সা’আদ (রা.) (ওফাত: ৮৮ হিজরি),
Madhhab পরিচিতি
Madhhab শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পথ, মত, ধর্ম, বিশ্বাস ইত্যাদি ৷ এই শব্দগুলো আমাদের সমাজে বহু পরিচিত বিশেষ করে মাযহাব শব্দটি সর্বাধিক পরিচিত ও প্রসিদ্ধ৷
ইজতিহাদ শব্দটি আরবি এর অর্থ হলো চেষ্টা করা, লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা ৷ পৃথিবীতে যত Madhhab আছে সব কটি মাযহাবই সৃষ্টি হয়েছে কুরআন-সুন্নাহ থেকে ৷
প্রসিদ্ধ Madhhab চারটি আর এই চারটি মাযহাবই বিশুদ্ধ ৷ চারটি মাযহাবের যেকোনো একটি পুরোপুরি মানলে মাযহাব মানা হয়ে যাবে ৷ মাযহাব মানার মাঝে রয়েছে সফলতা না মানার মধ্যে রয়েছে পথভ্রষ্টতা ৷
আহলে হাদিসের একজন শায়েক বলেছেন চার Madhhab চার পথে আমরা যাব কোন পথে? তারা এভাবেই সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করছে ৷
একটা Madhhab হল আল্লাহর শরীয়ত বোঝার জন্য মানবিক প্রচেষ্টা ৷ কাদের প্রচেষ্টা? শ্রেষ্ঠ আলেম-ওলামাদের প্রচেষ্টা যেমন ইমাম আবু হানিফা(রহঃ), ইমাম মালেক(রহঃ), ইমাম আশ শাফিঈ(রহঃ), ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল(রহঃ), (আল্লাহ সবার উপর রহম করুন) তারা ছাড়াও আরো অনেকেই এই প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন একটা সময় ছিল কমপক্ষে ৪০ টি মাযহাব ছিল কিন্তু বর্তমানে বিশুদ্ধ চারটি সুন্নি মাযহাব সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় প্রচলিত ৷
ইদানিং একটা গ্রুপ বলে, আমরা শুধুমাত্র কুরআন-হাদিস মেনে চলবো কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন৷ Madhhab ইমামগন তো কোরআন-হাদিস মানছেন তারা তো কোরআন হাদিসের বাইরে গিয়ে মাযহাব তৈরি করেন নি ৷
আপনি যখন বলবেন আমি Madhhab মানবো না আমি সরাসরি কোরআন-হাদিস মানব তারমানে আপনি নিজেই আরেকটা মাযহাবের প্রবর্তন করলেন ৷
ইসলামের একটা বেসিক প্রশ্নও কিন্ত আপনি হাদিসের বই খুলে দিতে পারবেন না৷ আপনার দরকার একটা সিস্টেমেটিক ফ্রেমওয়ার্ক ৷ Madhhab মূলত এই কাজটিই করে ৷
একটু খেয়াল করুন আপনি ওযু করবেন কিভাবে সেটার পদ্ধতি আপনি পাবেন কোরআনের সূরা মায়িদায় ৷ আপনি মুখ ধৌত করবেন, হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবেন, মাথা মাসেহ করবেন সেটাও পাবেন সূরা মায়েদায় ৷ এগুলো খুব সহজে আপনি কোরআন থেকেই জানতে পারবেন ৷
কিন্তু যদি এমন হয় কোরআনে যে ধারাবাহিকভাবে ওযু করার কথা বলা হয়েছে আপনি সেই ধারাবাহিকভাবে না করে ব্যতিক্রম করলেন ধরুন, আপনি প্রথমে মুখ না ধুয়ে মাথা মাসেহ করে ফেললেন এখন কি হবে? আপনার ওযু কি ঠিক হবে? নাকি হবে না? আমি নিশ্চিত আপনি এই প্রশ্নের উত্তর কোরআন-হাদিসের কোথাও পাবেন না ৷
যদি আপনি মাযহাব অনুসরণ করেন তাহলে দুটি Madhhab বলবে “না” আপনার ওযু হয়নি কারণ, কোরান-হাদিসে যেভাবে বলা হয়েছে ঠিক সেভাবেই ওযু করতে হবে ৷
আর দুটি Madhhab বলবে “হ্যা” আপনার ওযু হয়ে যাবে৷ ওযুর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা কিন্ত ফরজ না একটি সুন্নাহ ৷ সুতরাং ওযুতে ধারাবাহিকতা রক্ষা না করলে সুন্নাহ নষ্ট হবে ওযু নষ্ট হবে না ৷
আরেকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি সহজে বুঝতে পারবেন
মনে করুন, আপনার মা আপনাকে বললেন ছাদ থেকে কাপড় গুলো নিয়ে আসো আর আমাকে এক গ্লাস পানি দাও৷ আপনি কি করলেন? আগে আপনার মাকে এক গ্লাস পানি দিলেন তারপর ছাদ থেকে কাপড় আনতে গেলেন তার মানে আপনার দুটো কাজই হল৷ কিন্ত কাজের ধারাবাহিকতা হয়নি৷
তেমনি ভাবে যদি আপনি ওযুর ধারাবাহিকতা নষ্ট করেন তাহলে আপনার ওযু হবে কি হবে না এটা নিয়ে স্পষ্ট ভাবে কোরআন হাদিসে কোন নির্দেশনা পাবেন না৷ কোরআন-হাদিস গেটে আপনাকে এই নির্দেশনা জানিয়ে দিচ্ছেন মাযহাবের ইমামগণ ৷ এই জন্যই আপনার-আমার জন্য Madhhab মানা জররী ৷
মাযহাবের ইমামগন কোরআন-হাদিস গেটে গেটে উসুল বের করেছেন ৷ Madhhab কোন ইমামই কোরআন-হাদিসের বিপক্ষে নতুন কোন মত/পথ দাড় করান নি ৷ বরং গত চৌদ্দশ বছর ধরে পুরো মুসলিম উম্মাহ এই সিস্টেমেটিক মেথহড বা উসুল ফলো করে আসছেন, যাকে আমরা “মাযহাব” বলি ৷
Madhhab গুরুত্ব বুঝাতে আপনাকে আরেকটি সহজ উদাহরণ দেই
আমি কোন ডাক্তার নই আমার অসুখ হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে ৷ ডাক্তার তার চিকিৎসা বিদ্যার আলোকে আমাকে ঔষধ দিবেন ৷ ডাক্তার যখন ওষুধ দিলেন তখন কি আমি জিজ্ঞেস করি ওই ওষুধটি আপনি কোন বইয়ের আলোকে দিয়েছেন রেফারেন্স দেন?
না আমি এমন প্রশ্ন কখনো করব না কারণ, আমি মেডিকেল সাইন্সে পড়ি নি আমি কিভাবে ডাক্তারকে এ সব প্রশ্ন করব? আর যদি আপনি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে নিজের মন মত কোনো ফার্মেসি থেকে একটা রোগের ঔষধ খেয়ে ফেলেন অথচ আপনি জানলেন না ওষুধের পাওয়ার লেভেল কত?
ফলশ্রুতিতে আপনার ভালোর চাইতে খারাপই হবে৷ তেমনি ভাবে আপনি যদি বলেন আমি Madhhab মানবো না কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক আমল করব তাহলে অসুস্থ ব্যক্তি না জেনে যেভাবে ওষুধ খেয়ে বিপদে পড়েছে ঠিক তেমনি ভাবে আপনিও মাযহাব না মেনে আমল করলে ঐ রকম বিপদে পড়তে হবে ৷
আপনি কি চার Madhhab মানতে চান?
কেউ যদি বলে আমি চারো Madhhab মানবো সে অনুযায়ী আমল করব তাহলে একটা উদাহরণ এর দিকে লক্ষ্য করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে ৷
যেমন হানাফী Madhhab এক ব্যক্তি প্রচন্ড শীতের সময় ঠান্ডা পানি দিয়ে অজু করে আসলো ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ৷ নামাজ আদায়ের আগেই হঠাৎ তার শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে গড়িয়ে পরলো ৷
এমন অবস্থায় আমাদের Madhhab তথা ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) মতে তার ওযু নষ্ট হয়ে যাবে পুনরায় ওযু করে এসে নামাজ পড়তে হবে ৷ তখন সে ব্যক্তি বলল আমি এখন ইমাম শাফিয়ী (রহঃ) মাযহাব অনুসরণ করব আর ওযু করতে হবে না ৷
কিছুক্ষণ পর ব্যক্তিটি আবেগে কোন মহিলার শরীরে স্পর্শ করলো তাকে বলা হলো এবার তো শাফিয়ী মাযহাব অনুযায়ী আপনার ওযু ভেঙ্গে গেছে? তখন সে ব্যক্তি জবাব দিল এখন আমি আবার হানাফী Madhhab অনুসরণ করবো এখন আমার নতুন করে ওযু করার প্রয়োজন নেই ৷
এই ধরনের সুবিধাবাদী লোকদের দিক বিবেচনা করেই ফুক্বাহায়ে কেরাম যে কোন একটি Madhhab অনুসরণ করা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন ৷
অনেকে বলেন Madhhab মানার কোন দলিল নাই ৷ বরং এটা ভিত্তিহীন, বানানো, বিদাআত, আসলে কি তাই? কোরান পাকে মাযহাব মানার ব্যাপারে কোনো দলিল আছে?
জ্বি ভাই প্রমান আছে, কোরান শরীফে Madhhab মানার ব্যাপারে যদিও সরাসরি ভাবে কিছু বলা হইনি তবুও ব্যাখ্যা বিশ্লেষনে ইঙ্গিত পাওয়া যায়৷
আমাদেরকে প্রথমে একটা বিষয়ে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার করে নিতে হবে? তা হলো Madhhab মানার অর্থ কি? একটা অর্থ হতে পারে কুরআন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে কোন ব্যক্তির কথা মানা/অনুসরন করা৷
আরেকটা অর্থ হতে পারে, ধর্মীয় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কোন বিজ্ঞ ব্যক্তির ফয়সালা মেনে নেওয়া/তার মতামতকে নিদ্ধিধায় মেনে নেয়া৷ যা তিনি কোরআন-সুন্নাহ কে সামনে রেখে সমস্যার সমাধান প্রদান করেছেন ৷
তার থেকে বর্ণিত প্রতিটি মাসালায় তিনি কোরআন-হাদিস কেই প্রাধান্য দিয়েছেন ৷ সুতরাং এদের কথা মানার অর্থই হলো কোরআন-হাদিস মানা ৷ মূলত এদেরকে মানা উদ্দ্যশ্য নয় এবং মানাও হয়না বরং তাদের দেখানো মূলনীতি অনুযায়ী কুরআন-সুন্নাহর ওপর আমল করাই উদ্দেশ্য এবং তাই করা হয় ৷
এমন নয় যে তারা এক একটা নতুন নিয়ম কানুন দাঁড় করিয়েছেন আর আমরা এগুলোকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে আসছি ৷
এখানে একটা প্রশ্ন হতে পারে হাদীস শরীফে মূলত পাওয়া যায় কুরআন-সুন্নাহ মানার কথা তাহলে Madhhab মানার কি দরকার? হ্যাঁ হাদিসের কথা অবশ্যই ঠিক ।
কিন্তু কোরান সুন্নাহ শরীফের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সুস্পষ্ট অস্পষ্ট জটিল আয়াতের যথাযথ সমাধান বের করে তা আমল করে মূল লক্ষে যাওয়া সকলের পক্ষে সম্ভবপর নয় বরং এসকল বিষয়ে পূর্ণ পারদর্শী ব্যক্তিবর্গের দেওয়া সমাধান মেনে চলে মূল লক্ষে যাওয়া সম্ভব ৷
সারকথা, দ্বীন মানার জন্য তাদের মতামত গুলোকে সহায়ক হিসেবে নেওয়া হয় মাত্র ৷
কোরানের আলোকে Madhhab প্রমাণিত
কোরআনের তিনটি আয়াতকে দলিল হিসেবে তুলে ধরছি আল্লাহপাক ইরশাদ করেন
فا سألوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون
অর্থঃ তোমাদের কোন বিষয়ে জানা না থাকলে আহলে ইলমদের নিকট জিজ্ঞাসা করো ৷
এই আয়াত যদিও বিশেষ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত কিন্তু কোরআনের একটি মূলনীতি হল যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা নাযিল হয়েছে তা কিন্তু এতেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং শব্দের ব্যাপক অর্থে ব্যবহার হবে ৷
দেখুন আয়াতটির হুকুম রহিত হয়নি বলা হচ্ছে অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকদের অনুসরণ করার জন্য ৷ এখন আমরা যদি বলি না তাদের অনুসরণ করা যাবেনা তাহলে এটা কি কোরআনের বিরোধিতা করা হল না?
খতীবে বাগদাদী (রহঃ) বলেন কোরআন শরীফের যে সকল বিষয়ে সাধারণ লোক সরাসরি শরীয়তের বিধান আহরণে অক্ষম তাদের জন্য কোন বিজ্ঞ আলেমের অনুসরন করা বা Madhhab মানা আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক জায়েজ ৷
কোরআন শরীফের অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন
اطيع الله واطيع الرسول وأولى ألامر من كم
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো আর আনুগত্য করো তোমাদের মধ্যে যারা “উলিল আমর” তাদের ৷
দেখুন এ আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পাশাপাশি উলিল আমরের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে ৷
আসুন দেখি এ ব্যাপারে মুফাসসিরগন কি বলেন৷
তাফসীরগ্রন্থে উলিল আমরের দুইটি তাফসীর পাওয়া যায়
প্রথমত কোরআন-সুন্নাহর ইলমের অধিকারী ফকিহ মুজাহিদগণ ৷
দ্বিতীয়তঃ মুসলিম শাসক বর্গ ৷
কেননা, এর পক্ষে মতামত দিয়েছেন, হযরত জাবের, এবনে আব্বাস, মুজাহিদ, আতা বিন আবি রাবাহ, আতা বিন সাইব, হাসান বাসরি ও আলিয়াহ (রাহ) এর মত সেরা মুফাসসিরগন । মাত্র দু একজন ২য় মত টি ব্যক্ত করেছেন ।
লক্ষ করুন কোরানের আরেকটি আয়াতে
والتبع سبيل من أناب الي
অর্থঃ যে আমার অভিমুখী হয়েছে, তুমি তার পথ অনুসরণ কর ।
এ আয়াতে মূলত আবু বাকার (রা) মতান্তরে সা”দ ইবনে ওয়াককাসের ব্যাপারে মন্তব্য করা হলেও কোন কোন তাফসীর কারক বলেছেন, এখানে উদ্দেশ্য হল,ধর্মানুরাগী মুসলমান ।
আল্লামা জমখসরি লিখেন,আল্লাহ অভিমুখী বলতে মুমিনদের পথ বুঝানো হয়েছে। কাজেই আয়াতের অর্থ হল, তুমি দ্বীন ধর্মের ক্ষেত্রে মুমিনগণের পথ অনুসরণ কর।
সাহাবাদের যুগে Madhhab /তাকলিদ
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল Madhhab/তাকলীদ করার অর্থ হলো কোনো ধর্মীয় অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকের কথা মানা৷ এ অর্থে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) গনের যুগে এর প্রচলন ছিল৷
যেহেতু আমাদের চার ইমামের আগমন সাহাবা যুগের পর তাই সাহাবারা আমাদের ইমামদের অনুসরণ করেছেন কিনা? এমন প্রশ্ন করা খুবই হাস্যকর ৷ তবে হ্যাঁ প্রশ্ন হতে পারে এর প্রচলন কি সাহাবাদের যুগে ছিল কি না?
এর উত্তরে বলতে চাই জ্বি ভাই Madhhab/তাকলীদের প্রচলন সাহাবাদের যুগে ও ছিল ৷
প্রথম প্রমাণঃ হযরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ বর্ণনা করেন মুয়াজ ইবনে জাবাল গভর্নর হিসেবে ইয়ামানে আগমন করলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করি এক ব্যক্তি তার এক কন্যা ও এক বোন রেখে মারা গেছে ৷ এখন তাদের মাঝে সম্পদ বন্টনের পদ্ধতি কি হবে?
তখন তিনি বলেন প্রত্যেকের অংশ অর্ধেক অর্ধেক হবে৷
একটা বিষয় লক্ষ্য করুন মুয়াজ একজন নির্ধারিত ব্যক্তি মাত্র ৷ ইয়ামান বাসী তার অনুসরণ করা ওয়াজিব ৷
অন্যথায় তাঁকে প্রেরণ করা অনর্থক ও অহেতুক বলে গণ্য হবে ৷ যা নবী করীম (সাঃ) উনার শানের খেলাফ ৷
রাসূল (সাঃ) দুনিয়ায় থাকাকালীন সময়ে যাবতীয় বিষয়ে মুয়াজ (রাঃ) অভিমত দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য ছিল ৷
সুতরাং প্রমাণ হয়ে গেল Madhhab/তাকলীদ করা রাসূলের যুগেই সূচনা হয়েছিল ৷
দ্বিতীয় প্রমাণঃ এক মহিলা সাহাবী রাসূল (সাঃ) কাছে আরজ করলেন ইয়া রাসুল (সাঃ) আমার স্বামী জিহাদে গেছেন তিনি থাকা অবস্থায় আমি তার নামাজ অন্যান্য আমল অনুসরণ করতাম ৷
তার আসার আগ পর্যন্ত আমাকে এমন কিছু আমল বাতলিয়ে দেন, যে আমল করলে তার সমপর্যায়ের সওয়াব হবে ৷
এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যনীয়ঃ হাদিসে মহিলা সাহাবী তার স্বামীর যাবতীয় আমল অনুসরণ করত অথচ তার স্বামীর অনুপস্হিতিতে নতুন কিছু আমল করার জন্য রাসুলের (সাঃ) কাছে জানতে চাইলে রাসুল এত কিছুই বললেন না৷
এতে তাকলিদ জায়েজ হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায় ৷
তৃতীয় প্রমাণঃ রাসূল (সাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর ব্যাপারে বলেন আমি তোমাদের জন্য তাই পছন্দ করি যা ইবনে মাসউদ তোমাদের জন্য পছন্দ করেন ৷
এখানে একটা বিষয় ভালোভাবে লক্ষ্য করুন- হাদিস ইবনে মাসউদের পছন্দই রাসূলের পছন্দ বলে মত ব্যক্ত করা হয়েছে ৷ তার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী অন্যরা আমল করলেই রাসূলের (সাঃ) নিকট তা গৃহীত হবে৷
তাহলে কি এর মাধ্যমে তাকলিদ/Madhhab প্রমাণিত হয়না?
সুতরাং যারা বলে সাহাবায়ে কেরাম তারা কারো অনুসরণ করেননি আসলে এই কথার কোন ভিত্তি নেই, এগুলো সব মনগড়া কথা ৷
তাছাড়া নবী করীম (সাঃ) পৃথিবী থেকে বিদায় কালিন সময় সাহাবাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪৪০০০ লক্ষ সাহাবা ৷ এর মধ্যে ছিলেন ১্৪্৯ জন মুজতাহিদ সাহাবী ৷ আর বাকিরা ছিলেন সাধারণ তবকার সাহাবী৷ যাদের মধ্যে ঐরকম ইজতেহাদ করার ক্ষমতা ছিল না ৷
মুজতাহিদ সাহাবীদের মধ্যে ০৭ জন ছিলেন প্রথম তবকার
২০ জন ছিলেন দ্বিতীয় তবকার ৷
আর ২২ জন ছিলেন তৃতীয় তবকার ৷
মোট এই ১৪৯ জন মুজতাহিদ সাহাবীদের তাকলিদ করেছিলেন প্রায় লক্ষাধিক সাহাবায়ে কেরাম ৷
সুতরাং প্রমাণ হয়ে গেল সাহাবীদের যুগেই মূলত Madhhab/তাকলিদের সূচনা হয়েছিল ৷
বাংলাদেশে যত Madhhab তত পীর, যেন তার কোনো অন্ত নেই ৷
বাংলাদেশের Madhhab অন্ত পীরের শেষ নেই মানে কি? পীর যদি আল্লাহ ওয়ালা হয় মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, তাহলে অন্তত একটা মানুষ গুমরাহী পথ থেকে সঠিক পথে আসার দিশা পাবে জান্নাত লাভের আশা করতে পারবে৷ আর এটাই তো একজন মুমিন বান্দার মুখ্য উদ্দেশ্য ৷
তবে ভন্ড পীরের সাথে কোন কথা নেই ৷ যারা ভন্ড তারা সবসময়ই ভন্ড৷ কিন্তু যারা আল্লাহর খাছ প্রিয় বান্দা/ওলী আমি মনে করি এমন পীর বাংলার ঘরে ঘরে হোক শয়তানি বদমাশি কিছুটা হলেও কমবে ৷
চারজন ইমাম তারা কোন Madhhab মানতেন?
চারজন ইমাম তারা কোন Madhhab মানতেন এমন প্রশ্ন করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না ৷
Madhhab কোন ব্যক্তির নাম না বা কোন প্রতিষ্ঠানের নাম না ৷ মাজহব হল সমষ্টিগত ফতোয়ার নাম ৷ বলতে পারেন একটা রাস্তা, দিকনির্দেশনা যে পথ অনুসরণ করলে একজন সাধারন মানুষ সঠিকভাবে আমল করতে পারবে তারা যে ফতোয়া দিয়েছেন তারা কি এইসবের উপর আমল করতেন না/মানতেন না?
যাদের নামে মাজহাব সৃষ্টি হয়েছে তারা কি এই Madhhab গুলি বানিয়ে নিতে বলেছেন?
আরে ভাই এখানে তাদের বলার কি আছে? আমি আবু হানিফার ফতোয়া মানি তাই আমি নিজেকে বলতেই পারে আবু হানিফার ফতোয়া মানে সংক্ষেপে হানাফি ৷ কেউ শাফিঈ Madhhab উপর আমল করলে সে তাকে শাফিঈ বলতেই পারে স্বাভাবিক ৷ এটা নিয়ে এত মাথা ব্যাথার কি আছে? আসুন আমরা সকলে সঠিক তথ্য বুঝার এর উপর আমল করার চেষ্টা করি?
চার Madhhab চার মতে, আমি যাব কোন পথে?
এই কথাটি আহলে হাদিসের একজন শাইখের কথা ৷
তারা এভাবেই সাধারণ মানুষের সামনে Madhhab নিয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছে ৷
তারা তাদের মূখে যা বলছে, সাধারণ মানুষ সেটাকে সত্য বলে মেনে নিচ্ছে ৷
Madhhab ইমামগণ কুরআন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে একটা কথাও মনগড়া বলেন নি ৷ কুরান-সুন্নাহকে সামনে রেখেই বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়েছেন ৷
যেখানে গত চৌদ্দশ বছর ধরে মুসলিম উম্মাহ Madhhab মেনে আসছে সে অনুযায়ী আমল করছে তাহলে এখন এসব বিভ্রান্ত কিসের?
এসব গুমরাহী পথের লোক নবীর যুগেও ছিল, এখনো আছে, কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে এত বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কিছু নেই ৷ সঠিক তথ্য জানুন সহিহ ভাবে আমল করুন ৷
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) শিক্ষাদানের পদ্ধতি
তখনকার জামানায় দরসের সময় ওস্তাদ একটি উচ্চ আসনে বসে তাকরির করতেন ৷ তখনছাত্রগণ চারদিকে হাঁটু গেড়ে বসে নিস্তব্ধ নিবিষ্টতার সাথে তাকরির শ্রাবণ করতেন৷ অনেকেই তাকরির শুনে তা আয়ত্ত করার পাশাপাশি লিপিবদ্ধ করে রাখতেন ৷
ইমাম আবু হানিফার শিক্ষাদান কার্যক্রম এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো৷ কোন কোন মাসআলায় তর্ক শুরু হয়ে যেত৷ সেই তর্ক প্রায় কয়েকদিন পর্যন্ত চলত৷ শেষ পর্যন্ত কোরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে যা সাব্যস্ত হত সেটাই লিপিবদ্ধ হতো ৷
প্রতিটি দরসের শেষে তিনি বলতেন যতটুকু তাকরির হয়েছে তা আমার অভিমত৷ যতটুকু সম্ভব হয়েছে তা বলার চেষ্টা করেছি৷ কেউ যদি আমার চাইতেও মজবুত দলিল ও যুক্তির অবতারণা করতে পারেন তবে তাই অধিকতর গ্রহণযোগ্য হবে ৷
ইমাম আবু হানিফা যখন প্রথম শিক্ষাদান শুরু করেন তখন শুধুমাত্র ইমাম হাম্মাদের সাগরেদরাই দরসের শরীক হতেন কিন্তু ধীরে ধীরে তাতে শরীক হতে লাগলেন সর্বস্তরের মানুষ বিশিষ্ট জ্ঞানীগুণী৷ এমনকি ইমাম সাহেবের উস্তাদদের কেউ কেউ এসে দরসে শরীক হতেন ৷
দরস দেওয়ার সময় অনেকে আপত্তিকর মন্তব্য করতেন কিন্তু তিনি কারো প্রতি বিরক্তি প্রকাশ না করে চরম ধৈর্যের সাথে জবাব দিতেন ৷
চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শনের কালও তার কখনো ধৈর্যচ্যুতি ঘটত না ৷ প্রায়ই তিনি একটা কবিতার একটা অংশ পাঠ করতেন যার অর্থ ছিল ইয়া আল্লাহ যাদের অন্তর আমার দিক থেকে সংকুচিত হয়ে আছে দয়া করে আমার অন্তর তাদের প্রতি প্রশস্ত করে দাও ৷
একমাত্র স্পেন ব্যতীত তখনকার মুসলিম বিশ্বের এমন কোন অঞ্চল বাদ ছিলনা যেখানকার শিক্ষার্থীগণ ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) দরসে সমবেত হন নি ৷ প্রত্যেকটা অঞ্চল থেকেই শিক্ষার্থীগণ ইমাম সাহেবের দরসে শরিক হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন ৷
ইমাম সাহেবের সরাসরি সাগরেদ গনের মধ্যে ২৮ জন ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে কাজী এবং শতাধিক ব্যক্তি মুফতির দায়িত্ব পালন করেছেন ৷ ইসলামের ইতিহাসে এক ব্যক্তির প্রচেষ্টায় এত বিশাল সংখ্যক ব্যক্তির আবির্ভাব আর কোথাও দেখা যায় না ৷
ইমাম সাহেবের দরগা সপ্তাহে দুই দিন শুক্রবার ও শনিবার ছুটি থাকত৷ শনিবার দিনটি তিনি ব্যবসায়িক কাজকর্ম এবং পারিবারিক ব্যস্ততার জন্য নির্দিষ্ট করে রাখতেন ৷ শুক্রবার দিন জুমার প্রস্তুতি এবং জুমাবার বাসস্থানে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সমবেত হতেন এদিন বিশেষ যত্নের সাথে অপেক্ষাকৃত উন্নত মানের খানা প্রস্তুতি হত ৷ ইমাম সাহেব সমবেত সবাইকে নিয়ে খানা খেতেন ৷
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) জীবন চিত্র
ইমাম সাহেব প্রত্যেক ফজরের নামাজের পর দীর্ঘক্ষন কোরআন তেলাওয়াত ও নির্ধারিত অজিফা আদায় করতেন ৷
তারপর আগন্তকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতেন৷ জোহরের নামাজের পরে বাসায় যেতেন ৷ দুপুরের আহারের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতেন৷
আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত লোকজনদের সাথে দেখা সাক্ষাত করতেন ও ব্যবসা সংক্রান্ত তদারকি করতেন ৷ মাগরিবের পর থেকে এশা পর্যন্ত দরস দিতেন ৷
এশার পর প্রায় সময় মসজিদে থাকতেন এবং ফজর পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ ও অন্যান্য অজিফা আদায় করতেন ৷
তিনি ছিলেন অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের মানুষ৷ কারো দুঃখ বেদনায় তিনি ব্যাকুল হয়ে পড়তেন৷ তিনি সবসময় মানুষের সাহায্য করতেন ৷
বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করতেন ৷ তেলাওয়াত কালে তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যেত৷ নামাজের বাইরেও যখন আজাবের অথবা ধমকের কোন আয়াত তেলাওয়াত করতেন সাথে সাথে দুই চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতো ৷
আল্লাহ তাআলা ইমাম আবু হানিফাকে অতুলনীয় জ্ঞান দান করেছিলেন ৷ তিনি প্রচুর পরিমাণে এবাদত-বন্দেগিতে সময় পার করতেন ৷ তিনি প্রায় ৫৫ বার হজ পালন করেন ৷ আদায় করেন অসংখ্য ওমরা ৷ প্রতি রমজান মাসে অসংখ্যবার কোরআন শরীফ খতম করতেন ৷ কথিত আছে তিনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর এশার নামাজের ওযু দিয়ে ফজরের নামাজ পড়েছিলেন ৷
উনাকে বেশি সময় চুপ থাকতে দেখা যেত৷ কেউ প্রশ্ন করলে জবাব দিতেন৷ নতুবা চুপ থাকতেন ৷ দেখলে মনে হত যেন তিনি খুব গভীর চিন্তায় মগ্ন রয়েছেন ৷
ব্যবসায়িক কোন লেনদেনের ব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহ দেখা দিলে সে লেন-দেনের সম্পূর্ণ অর্থ অসহায়দের মাঝে দান করে দিতেন ৷ সততা ও নৈতিক ছিল তার ব্যবসার মূল ভিত্তি উপার্জিত সম্পদের বৃহৎ একটি অংশ জনসেবায় খরচ করতেন ৷
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) উনার ইলমে কালাম, ইলমে হাদিস, ইলমে ফেকাহ, উনি কেমন ছিলেন এই সম্পর্কে ইতিপূর্বে বেশ কিছু আলোচনা করা হয়েছে ৷
নাস্তিকদের সাথে আবু হানিফা (রহঃ) উনার বাহাস
মহান আল্লাহ উনাকে এমন জ্ঞানের অধিকারী বানিয়েছিলেন যার কাছে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পাওয়ার জন্য উনার ওস্তাদগনও আসতেন ৷
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রত্যেকটা মাসালা উনার কিতাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন ৷ এইজন্য মানুষ এখনো ইমামুল আযম বলেই উনাকে চিনে ৷
কুফা নগরীতে এক নাস্তিক ছিল উল্লাপাঠা নামে৷৷ যে আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে বিশ্বাস করত না ৷
He would say, There is no God. I don’t believe what I see.
যা চোখে দেখি না তা বিশ্বাস করি না যেহেতু আল্লাহকে ধরা যায়না দেখা যায় না আল্লাহর আকার আকৃতি নেই সেজন্য আল্লাহ বলে কোন কিছু নেই ৷
যখন ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) কাছে এই কথা পৌছল তখন আবু হানিফা ঐ নাস্তিকদের সাথে বাহাসের জন্য একটা দিন তারিখ নির্দিষ্ট করেন ৷
উভয়ের সমঝোতায় একটা দিন তারিক নির্দিষ্ট হলো তখন ঐ দিন নাস্তিকদের পক্ষে হাজার হাজার মানুষ মঞ্চে উপস্হিত ৷
এদিকে নাস্তিকেরা ঘন্টার পর ঘন্টা ইমাম আবু হানিফার (রহঃ) জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো অথচ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ )তখনো কোনো দেখা মেলেনি ৷
হঠাৎ করে দেখা গেল ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বাহাসের জন্য মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসছেন ৷
এদিকে নাস্তিকদের লিডার উল্লাপাঠা রেগে মেগে আগুন ৷ আবু হানিফাকে দেখে বলে যে, টাইমের গুরত্ব জানেনা যে ওয়াদা ঠিক রাখতে পারে না তার সাথে আবার কিসের বাহাস?
না তোমার সাথে কোন বাহাস করা যাবে না ৷
আবু হানিফা বললেন, দেখুন এখানে রাগ করার কিছু নেই আমি কিসের জন্য দেরি করেছি এই বিষয়ে যদি না জানেন তাহলে এটা সুস্থ মস্তিষ্কের চিন্তাধারা নয় ৷
আগে আমার লেট হওয়ার কারণ গুলো শুনুন তারপর যদি চলে যেতে চান তাহলে চলে যাবেন ৷
নাস্তিকেরা বলল ঠিক আছে আপনার লেট হওয়ার কারণ বলুন ৷
ইমাম আবু হানিফা বলেন
আমার বাড়ি থেকে আসতে একটা নদী পার হতে হয় ৷
কিন্তু আসার পথে দেখলাম সেখানে একটাও নৌকার নেই আমি চিন্তা করতে লাগলাম কিভাবে আমি যাই অথচ আজকে আমার একটা বাহাস ৷
চিন্তা করতে করতে হঠাৎ করে দেখলাম একটা বিশাল বড় গাছ মাটিতে ধপাস করে পড়ে নিজে নিজেই গাছটি কেটে তক্তা হয়ে গেল ৷
আবার নিজে নিজেই একটা কিস্তিতে পরিণত হয়ে পানিতে চলে আসলো তারপর আসতে যা লেট হয়েছে?
এই কথা শুনে নাস্তিক উল্লাপাঠা আগে যে রাগ করছিল তার চাইতে এখন আরো দ্বিগুন রেগে মেগে আগুন ৷
সে বলল এটা কি আদৌ সম্ভব? তোমার কি মাথা ঠিক আছে?
আমি মনে করেছিলাম কুফা নগরীতে একজন জ্ঞানি মানুষ আছে আর সে তুমি অথচ, এখন আমার মনে হচ্ছে কুফা নগরীতে যদি কেউ বোকা থাকে তাহলে সে তুমি?
তোমার কি মাথার সবকটি স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে?
তখন ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) হেসে বললেন এইতো আসল বিষয়টা বুঝতে পারছেন ৷
যদি একটি গাছ মাটিতে পড়ে নিজে নিজে কেটে তক্তা হয়ে নৌকা না হতে পারে তাহলে এই সুন্দর আসমান জমিন কিভাবে একজন স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে?
তখন এই কথাগুলো শুনে নাস্তিকের মাথায় এক ধরনের আন্দোলন শুরু হয়ে গেল ঠিকই তো এটা কিভাবে সম্ভব?
তখন কিছু কিছু নাস্তিক তার এই কথাগুলো শুনে বাহাসের মঞ্চ ছেড়ে চলে যায়৷ আর বাকি সব ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) কাছে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায়৷
এই হল ইমামুল আযম আবু হানিফা (রহঃ) জ্ঞানের পরিচয়৷ অন্যান্য Madhhab ইমাম গনোও ইমাম আবু হানিফার জ্ঞানের প্রশংসা করেছেন ৷
ইমাম আবু হানিফার (রহঃ) মৃত্যু
খলিফা মনসুর তাকে প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন ৷ কিন্তু তিনি জালেম শাসকের সমর্থনের দায় এড়ানোর জন্য এ পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান ৷ এতে শাসক অপমানে ক্ষুব্ধ হয়ে খলিফা ইমাম আবু হানিফাকে কারাগারে বন্দি করে ৷ একজন বিশ্ব বিখ্যাত ইমাম হয়েও বিনাদোষে কারাগারে বন্দি হতে হয় ৷ অসহনীয় কষ্ট আর নির্যাতন সহ্য করতে হয় ৷ প্রতিদিন তাকে কারাগার থেকে বের করে প্রকাশ্যে চাবুক মারা হতো চাবুকের আঘাতে তার শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে কুফার মাটি রঞ্জিত হত ৷
পানাহারের কষ্টসহ বিভিন্নভাবে ৭০ বছর বয়সের বৃদ্ধ ইমামকে নির্যাতন করা হত ৷ অবশেষে জোর করে বিষ পান করানো হয় ৭৬৭ সালের ১৪ জুন মোতাবেক ১৫০ হিজরীতে তিনি ইন্তেকাল করেন ৷ এখানে ক্লিক করে আর জানতে পারেন ।
মহান আল্লাহ পাকের কাছে ফরিয়াদ তিনি যেন আমাদের সকলকে তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শের উপর অটুট রেখে সহিহ আমল করার তৌফিক দান করেন (আমিন)
আপনি কি এমন একটি এ্যাপ খোজছেন যেটার মাধ্যমে মূখে বলবেন অটোমেটিক্যালি আপনার কথাগুলো স্ক্রিনে লেখা হয়ে যাবে ৷ যদি তাই হয় তাহলে এখানে ক্লিক করে আর্টিকেল টি পড়ে আসতে পারেন ৷
Comments (No)