ফ্রান্স থেকে পণ্য আসে ‘কম’, রফতানি পাঁচ গুণ ফ্রান্সের সঙ্গে বাণিজ্য বাংলাদেশের পক্ষে। দেশটি থেকে বাংলাদেশ যত টাকার পণ্য আমদানি করে রফতানি করে তার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে ১৭০ কোটি ৩৬ লাখ ডলার বা প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩২ কোটি ৪৫ লাখ ডলার বা দুই হাজার ৭২৮ কোটি টাকার পণ্য দেশে এসেছে। বাংলাদেশের পণ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাকের একটি বড় বাজার ফ্রান্স। বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি পোশাক পণ্য রফতানি হয়, তার মধ্যে ফ্রান্সের অবস্থান তৃতীয়। অন্যদিকে শিল্পের বেশ কিছু কাঁচামাল, আধুনিক যন্ত্রপাতি, বেশ কিছু খাদ্যপণ্য আর জীবন্ত পশু পাখির জন্য দেশটির দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ২৫ কোটি ডলারের জার্সি, ৩৪ কোটি ডলারের ট্রাউজার, দুই কোটি ১৫ লাখ ডলারের অন্যান্য তৈরি পোশাক, প্রায় চার কোটি ডলারের বক্ষবন্ধনী, দুই কোটি পাঁচ লাখ ডলারের চিংড়ি ও কাঁকড়া, ৩৯ লাখ ডলারের স্লিপিং ব্যাগ, ১৭ লাখ ডলারের সবজি ফ্রান্সে রফতানি হয় গত অর্থবছরে।
এছাড়া বাইসাইকেল, টাইলস, জুতা, সিন্থেটিক ফাইবারের তাবু, টাওয়েল, কম্বল, টি-শার্ট, সুগন্ধি চালসহ বেশ কিছু পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ।
ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে যেসব পণ্য আসে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে জীবন্ত পশু পাখি। ২০১৮-১৯ সালে এই খাতে ব্যয় হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ ডলার।
৪৭ লাখ ডলারের দুধ ও মাখন আমদানি হয় দেশটি থেকে।
এ ছাড়া বিট লবণ, চিনির সিরা, বেকিং পাউডার, কীটনাশক, সুতা, লোহা ও ইস্পাত, নোঙ্গর, বৈদ্যুতিক পণ্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও একই জাতীয় পণ্য, হেলিকপ্টারের যন্ত্রাংশ, আপেল, অলিভ অয়েল, মেডিকেল ফার্নিচার, ঘড়ি, টেলিফোন সেট, স্মার্টকার্ড, বিয়ারিং, ছুরি-চাকু, ইমিটেশন গয়না, বই, প্লাস্টিক পণ্যের কাঁচামাল, দামি সুগন্ধিসহ দুইশর বেশি ধরনের তৈরি পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল ফ্রান্স থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশে আসে।
এই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছে ফ্রান্স-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।
বর্তমানে এই চেম্বারের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ট্রেড সার্ভিস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদুল হক। জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান।
এই চেম্বারটি ১৯৯৬ সাল থেকে দুই দেশের পণ্যের বাজার বাড়াতে নিয়মিত প্রদর্শনীসহ নানা ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের নিট পণ্য রফতানির বড় বাজার ফ্রান্স। এই দেশটিতে আমরা আরও বেশি পণ্য রফতানি করতে চাই। বর্তমানে বাংলাদেশ ফ্রান্সে পণ্য রফতানিতে অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে।’
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন বাংলাদেশ থেকে পণ্য কেনা ফ্রান্সের জন্যও সুবিধাজনক। এ কারণে বাণিজ্য আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে।
তিনি বলেন, ‘চীন বা ভিয়েতনাম বা অন্য কোনো দেশ থেকে পোশাক আমদানি করতে হলে ফ্রান্সের খরচ অনেকগুণ বেড়ে যাবে। কেননা ওইসব দেশ, বিশেষ করে চীনে পোশাক-পণ্যের দাম বেশি, শুল্কও বেশি। বাংলাদেশ পোশাক রফতানির ওপর অনেক ধরনের শুল্কছাড় পায়। সেক্ষেত্রে পোশাক নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ফ্রান্সের খুবই ভালো একটি গন্তব্য।’
Comments (No)