জীবন গড়ুন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে

জীবন গড়ুন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বর্তমান সময়ে ক্যারিয়ার গড়তে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। যে ক্যারিয়ারে পরিকল্পনা নেই তা অনেকটাই অনিশ্চিত। চরম প্রতিযোগিতার এই যুগে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই বললেই চলে। কর্মমুখী শিক্ষা আপনাকে অনেকটাই নিশ্চিত জীবন উপহার দিতে পারে।

ক্যারিয়ার গঠনে এমন একটি কর্মমুখী বিষয় হলো অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। বর্তমানে বিকাশমান অটোমোবাইল শিল্পের বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে অনেক দক্ষ অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। আপনিও ইচ্ছা করলে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করে একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

জীবন গড়ুন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে 1

অটোমোবাইল শিল্পে কাজের ক্ষেত্র এখন বেশ বিস্তৃত। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেভাবে ইঞ্জিনের ব্যবহার বাড়ছে, সে ক্ষেত্রে দক্ষ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় ২৫টিরও বেশি গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

যারা প্রতিনিয়ত বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানি করছে এবং এই শিল্পকে সমৃদ্ধ হতে সাহায্য করছে। এর ফলে আমাদের দেশে গাড়ি উৎপাদনের বিরাট সুযোগের সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের দেশে কার সার্ভিস সেন্টারের তুলনায় অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা বেশ কম।

তাই এ সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি।
অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য বসে থাকতে হয় না। পরিবহন প্রতিষ্ঠান কিংবা যারা ট্রাকের ব্যবসা করেন, তাদের অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। এ ছাড়া বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালনের জন্য অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করে থাকেন।তা ছাড়া এ বিষয়ে লেখাপড়া করে বিদেশে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগও আছে।

বিদেশে গাড়ির কারখানা থেকে শুরু করে গাড়ি মেরামতের গ্যারেজে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা প্রচুর।বর্তমানে সারা দেশে মোটরগাড়ি রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। এই লাখ লাখ গাড়ির তুলনায় অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা অনেক কম। এ রকম পরিস্থিতিতে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় এসে আপনিও নিজের ক্যারিয়ারকে উজ্জ্বল করতে পারেন।

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার একটি গাড়ির পুরো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। গাড়ির কোথায় কী সমস্যা, কোন সমস্যা কীভাবে কাটাতে হবে, কোথায় কোন যন্ত্রাংশ পাল্টাতে হবে বা মেরামত করতে হবে, কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাড়ি সচল করা হবে, কোন পদ্ধতি ব্যবহার করলে সহজেই সফলতা মিলবে ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়াররা সমস্যার সমাধান করেন।

তাদের নির্দেশ অনুসরণ করে মেকানিকরা গাড়ি মেরামত করেন। অনেক সময় অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারকেও ইঞ্জিন মেরামতে হাত লাগাতে হয়।

কাজের ক্ষেত্র

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করলে চাকরির জন্য চিন্তা করতে হয় না। গাড়ি মেরামতের গ্যারেজে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের পদ আছে। পাস করে খুব সহজেই এখানে চাকরি করতে পারেন।

অভিজ্ঞতার সঙ্গে বাড়বে বেতনও 
সদ্য পাস করা অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষানবিশ ইঞ্জিনিয়ারের পদে যোগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানভেদে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন।

অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেতনও বাড়তে থাকবে। কেউ যদি নিজেই গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ প্রতিষ্ঠা করেন, তাহলে সব খরচ মিটিয়ে মাসে ৫০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।

এসব গ্যারেজে গাড়ির পার্টসও বিক্রি হয়। সেখান থেকেও একটা বাড়তি আয় চলে আসে। দেশের বাইরে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের কদর বেশি। গাড়ি তৈরির কারখানা থেকে শুরু করে গাড়ি মেরামতের দোকানে বড় অঙ্কের বেতনে চাকরি করা সম্ভব।

দিতে পারেন সার্ভিস সেন্টার
অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়াররা যেহেতু গাড়ির খুঁটিনাটি সব বিষয় সম্পর্কে জানেন, তাই চাইলে তারা নিজেরাই প্রতিষ্ঠা করতে পারেন একটি কার সার্ভিস সেন্টার।

এ ক্ষেত্রে প্রথম যে দুটি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তা হচ্ছে সার্ভিস সেন্টারের জায়গা এবং প্রাথমিক পুঁজি।গাড়ি মেরামতের গ্যারেজের জন্য মূল রাস্তার পাশে বড় জায়গা প্রয়োজন। ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে জায়গার খুব অভাব। তবে খুঁজলে এমন জায়গা মেলা অসম্ভব নয়।

ইদানীং অনেকে রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে মেরামতের কাজ করেন। এ ধরনের কাজ আইনত নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই এ ধরনের গ্যারেজ বা সার্ভিস সেন্টার করা থেকে বিরত থাকুন।

সার্ভিস সেন্টার নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ পুঁজি সংগ্রহ করতে পারবেন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে। প্রয়োজনীয় শর্তাবলি পূরণ করতে পারলে এ খাতে দেশের প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ দেয়।

জীবন গড়ুন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে 2

পেশার আগে পড়াশোনা
আমাদের দেশে বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।

চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার খরচ কম হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। 

যেসব প্রতিষ্ঠানে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করা যায়-

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
বাংলাদেশে-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।


শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউ।
মটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি।
মিরপুর পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট।
চিটাগাং টেকনিক্যাল কলেজ।


সাকিনা আজহার টেকনিক্যাল কলেজ।
বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (বিকেটিটিসি)।
অন্যদিকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর বিএসসি ডিগ্রি নেওয়ার ব্যবস্থা আছে।

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের ক্যারিয়ার 
অভিজ্ঞতা ও কাজ জানার উপর ক্যারিয়ার নির্ভর করে। এন্ট্রি লেভেলে সাধারণত অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ শুরু করতে পারবেন।

ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বা সার্ভিসিং বিভাগের প্রধান হিসাবে নিয়োগ পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া ভালো কাজ জানলে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ভাল আয়ের কাজ পাওয়া সম্ভব।

৬ মাসের কোর্স
অটোমোবাইলের উপর হালকা ট্রেনিং নিয়ে গ্যারেজে কাজ করার জন্য তৈরি হতে ন্যূনতম ৬ মাসের একটি কোর্স করতে পারেন। বয়সের কোন মাপকাঠি এই কোর্সের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। এই কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য অষ্টম শ্রেণী পাস হলে ভালো হয়।

জীবন গড়ুন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে 3

তাছাড়া কর্মজীবী পুরুষ, কিংবা ড্রপআউটরাও ভর্তি হতে পারবেন। কোর্স শেষ করার পর সেমি স্কিল টেকনিশিয়ান হিসেবে অটোমোবাইল গ্যারেজে চাকরি করতে পারবেন। অভিজ্ঞতার ফলে ধীরে ধীরে লেভেল পরিবর্তন করে ৬ লেভেলের অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানও হতে পারবেন।
১ বছরের কোর্স
অটোমোবাইলে আরেকটু ভালো করতে চাইলে ১ বছরের কোর্সে ভর্তি হতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা এসএসসি পাস বাধ্যতামূলক এবং বয়স সর্বোচ্চ ১৮-এর মধ্যে হতে হবে। কোর্স শেষে জুনিয়র টেকনিশিয়ান হিসেবে যেকোন কারখানায় বা ওয়ার্কশপে যোগদান করতে পারেন।

২ বছরের কোর্স
সবচেয়ে লম্বা কোর্স হলো ২ বছরের। যারা এই কোর্সে ভর্তি হবেন তারা যেকোন স্বীকৃতধারী প্রতিষ্ঠান থেকে জেএসসি বা জেডিসি পাস করে ভর্তি হতে হবে। অন্যান্য কোর্স থেকে এই কোর্সের সুবিধা হলো ২ বছর পর কোর্স সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে একটি জেনারেল সার্টিফিকেট পাবে এবং উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় চাকরির একটি সুযোগ তৈরি হবে। এখান থেকেও উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ আছে।

কেমন চাহিদা অটোমোবাইল টেকনিশিয়ানদের?
২ বছর মেয়াদি টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বর্তমান দেশ-বিদেশের চাকরির বাজারে। বিভিন্ন গ্যারেজ, নাভানা, র‌্যাংন্স, ইউনিলিভারে প্রতিবছর প্রচুর টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া হয়। তাছাড় ৬ মাস ও ১ বছর মেয়াদি যারা তারা চাকরি পেতে তেমন একটা কষ্ট করতে হয় না।


টাঙ্গাইলের জান্নাতুল নাঈম পড়ছেন ২ বছর মেয়াদি অটোমোবাইল কোর্সে, পাশাপাশি চাকরি করছেন একটি এনজিওতে। বিকেটিটিসিতে ভর্তি হওয়ার কারণ একটাই সেটি হলো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো খুঁজে সে যেটা দেখতে পেয়েছে তা হলো প্রচুর যন্ত্রপাতির সরবরাহ আর ভালো শিক্ষক রয়েছেন এখানে।


চট্টগ্রামের ইমরুল কায়েস বললেন, সাধারণ শিক্ষায় চাকরি না মিললেও কারিগরি শিক্ষায় চাকরি ও সনদ দুটোই পাওয়া যায়। বেকার থাকার চেয়ে কর্মের পাশাপাশি একটি সনদও পাচ্ছি আমরা।


বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান মির্জা খালেদ হোসেন অটোমোবাইলে ক্যারিয়ার নিয়ে ক্যারিয়ার প্রতিবেদককে বলেন, পেশাদারিত্ব অর্জন করতে হলে কোন ওয়ার্কশপ নয়, বরং শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।

তাই লক্ষ্য যদি হয় অটোমোবাইলে ক্যারিয়ার তাহলে একটু কষ্ট হলেও একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়া উচিত। তার মতে, শিক্ষার্থীদের জন্য আদর্শ অটোমোবাইল প্রশিক্ষণের জন্য যেটি দরকার তা হলো প্রচুর যন্ত্রপাতি ও ভালো মানের শিক্ষক। বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে দুটোই পর্যাপ্ত।


সময়ের সাথে পাল্টে যাচ্ছে গাড়ির ইঞ্জিন। নতুন নতুন ইঞ্জিন সংগ্রহ করে সেগুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দানে পিছিয়ে নেই বিকেটিটিসি। তাই ভালো মানের প্রতিষ্ঠানে যেন আপনার অটোমোবাইল ক্যারিয়ার যাত্রা শুরু হয় সেজন্য খোঁজ নিতে পারেন অটোমোবাইলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ভবিষ্যৎ কিরকম হতে পারে?

একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার গাড়ির ডিজাইন, যন্ত্রাংশ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ করে থাকেন। আমাদের দেশে এ খাতে কাজের সুযোগ দিন দিন বাড়ছে। অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের ক্যারিয়ার অভিজ্ঞতা ও কাজ জানার ওপর নির্ভর করে।

এন্ট্রি লেভেলে সাধারণত অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করতে পারবেন। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বা সার্ভিসিং বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সম্ভব। ভালো কাজ জানলে দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও ভালো কাজের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া নিজেই সার্ভিস সেন্টার দিয়ে ভালো উপার্জন করতে পারবেন।

একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার মূলত গাড়ি আমদানিকারক ও গাড়ি উৎপাদনকারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন। এছাড়াও কার সার্ভিস সেন্টার ও পরিবহন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ রয়েছে।

জীবন গড়ুন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে 4

কাজের ধরন

গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের ডিজাইন তৈরি করা। গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও কাঁচামাল নির্ধারণ করা। গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণের সম্ভাব্য খরচের হিসাব তৈরি করা। গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণের ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে ও তার সমাধান কীভাবে করা যায়, তার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা। নির্মাণের জন্য দরকারি যন্ত্রপাতি স্থাপন করা ও সেগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করা।

গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণের যাবতীয় কারিগরি কাজ তদারকি করা। নির্মিত গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশে সমস্যা আছে কি না, তা পরীক্ষা করেন। গাড়ির সেলস ও সার্ভিসিং বিভাগেও বহু অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার কাজ করে থাকেন। এক্ষেত্রে মূলত গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকেন।

কেমন যোগ্যতা থাকতে হয়

একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। তবে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর বিদেশে উচ্চতর পড়াশুনারও সুযোগ রয়েছে। বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর হতে হয়। তবে প্রতিষ্ঠান ভেদে বয়স কমবেশি হতে পারে। এ পেশায় অভিজ্ঞদের প্রাধান্য বেশি। তেমনি উপার্জনও অভিজ্ঞতার ওপরে নির্ভর করে। ন্যূনতম ১ থেকে ২ বছরের অভিজ্ঞতা দরকার হবেই।

এছাড়া গাড়ির ইঞ্জিন ও অন্যান্য কারিগরি দিক সম্পর্কিত জ্ঞান থাকতে হবে। গাড়ির ডিজাইন সম্পর্কে ধারণা থাকা। গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণ ও মেরামতের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের দক্ষতা ও গাণিতিক দক্ষতারও প্রযোজন হয়।

এছাড়া সৃজনশীল ও যৌক্তিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের দক্ষতার প্রয়োজন হয়। বিশ্লেষণী ক্ষমতা, যা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণে সাহায্য করতে পারে। অন্যদের সঙ্গে কাজ করার মানসিকতা থাকা। বিভিন্ন ধরনের কাজ একসঙ্গে করার দক্ষতা দরকার। বড় কারখানায় ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করার জন্য শারীরিক ফিটনেস থাকা।  সেলস বিভাগে কাজ করতে চাইলে কোম্পানির সেলস পলিসি নিয়ে ধারণা থাকা এবং গ্রাহককে মোটিভেট করার মানসিকতা থাকা।

কোথায় পড়বেন

আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা কোর্সের ক্ষেত্র রয়েছে। দেশজুড়ে ৪৯টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশে-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউ,

মটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, মিরপুর পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, চিটাগাং টেকনিক্যাল কলেজ, বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (বিকেটিটিসি) অন্যদিকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর বিএসসি ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

ডিপ্লোমা অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটির মান এইচএসসি সার্টিফিকেটের তুলনায় বেশি, তবে একই বিষয়ের বিএসসি ডিগ্রির তুলনায় কম। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং হলো বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রবেশিকা স্তর।

জীবন গড়ুন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে 5

উপার্জন

সদ্য পাস করা একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী শুরুতে পনের হাজার থেকে পঁচিশ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

হাতে-কলমে ৩ থেকে ৪ বছর কাজ শেখার পর বেতন সাধারণত ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বা তারও বেশি হতে পারে। এটা মূলত কাজের দক্ষতা ও কর্মরত প্রতিষ্ঠানের নিয়মের ওপর নির্ভর করে।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ