ছয় বছর আগে শুরু করেছিলেন ফ্রিল্যান্সিং। একে একে গড়ে তুলেছেন ৯টি প্রতিষ্ঠান। নিজেকে করে তুলেছেন মাল্টি-মিলিয়নিয়ার। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়িয়েছে তার কাজ। আন্তজার্তিক গণমাধ্যমের ভাষায় তিনি এখন ফ্রিল্যান্সিংয়ের রোল মডেল। বলছি রাজশাহীর খায়রুল আলমের কথা।ফ্রিল্যান্সিংয়ের রোল মডেল। বলছি রাজশাহীর খায়রুল আলমের কথা।
খাইরুলের সাফল্যের কথা ওঠে এসেছে আর্ন্তজাতিক সাময়িকী ফোর্বস ম্যাগাজিনেও। ছবি: সময় সংবাদ
নিজেকে এত দূর নিয়ে যাওয়ার পথটা মসৃণ ছিল না খায়রুল আলমের। নিভৃত এক এলাকা থেকে বিশ্বজুড়ে দাপিয়ে বেড়ানোর গল্পটা বলেছেন সময় সংবাদের কাছে।
প্রথম থেকেই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম কর্মীদের প্রাধান্য দেবো। তে কর্মীরা প্রচুর সময় দেয়। সেই কারণে শুরুতেই তাদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম। বন্ধুর মতো আচরণ করতাম। ঘুরতে যেতাম, খেতে যেতাম। এতে কর্মীরা হয়ে ওঠেন প্রতিষ্ঠানবান্ধব। আর তাতে ফ্লিট বাংলাদেশ বেশি আয় করতে থাকে।ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে প্রতারিতও হয়েছেন খায়রুল আলম। তিনি জানান, শুরুর দিকে ফ্রিল্যান্সিং ডটকমে কাজের সন্ধান করছিলেন। ওই প্লাটফর্মে ফিলিপাইনের এক বায়ারের কাছ থেকে ২০০ ডলারের কাজ পান। দুই দিনে কাজ শেষ করে ফিলিপাইন বায়ারকে জমা দিলে তিনি পেমেন্ট না করেই ব্লক করে দেন।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কিছুদিন পরই বাবা মারা যাওয়ার কারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়েন খাইরুল। তবে থেমে থাকেননি। টিউশন করে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্বও নিয়েছেন। তবুও মনের সুপ্ত বাসনা জাগ্রত রেখে শুরু করেছিলেন ফ্রিল্যান্সিং। পরের গল্পটা এবার শুনে নেই খাইরুলের মুখেই। খায়রুল আলমের বলেন, ‘একটা চাকরি করতাম। অফিস থেকে ফিরেই ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়তাম। কাজ চলতো কখনও মধ্যরাত অথবা ভোররাত পর্যন্ত। সকালে অফিসে যাওয়ার পথে ঘুমাতাম। ঝোঁক আর নেশা থেকে ২০১৭ সালে চাকরি ছেড়ে ফ্লিট বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান করি নিজে। তখন আমার কাছে খুব বেশি টাকা ছিল না, কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়েই যাত্রা শুরু করি। আস্তে আস্তে কাজের অর্ডার পেতে থাকি, অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে।’ আরও পড়ুন: তরুণদের আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুযোগ নিতে হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী তিনি বলেন,
ছাত্রাবস্থায় ২০০৮ সালের নভেম্বরে ওডেক্স ডটকমে ঘণ্টাপ্রতি ২৯ সেন্টের একটা ডাটা এন্ট্রির কাজের মধ্য দিয়ে আয় শুরু হয় তার। প্রথমে ১৪ হাজার টাকা আয় করেন তিনি।
তার এমন সব সাফল্য আর ব্যর্থতার গল্প ওঠে এসেছে আর্ন্তজাতিক সাময়িকী ফোর্বস ম্যাগাজিনেও।
শুধু ইচ্ছাশক্তিতে ব্যতিক্রম পর্যায়েও দিন বদলে দেয়ার উদাহরণ এখন খায়রুল আলম। তার প্রতিষ্ঠানটি এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশের ডিজিটাল রূপান্তরের। তাদের স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মী ৫০০ জন।
খাইরুল আলম বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ে এক দিনে সফলতা আসে না। ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে, আর দক্ষতা বাড়াতে হবে। তাহলে এক দিন ঠিকই লক্ষ্য অর্জিত হবে।
আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে তিনি জানান, সামনের দিনের লক্ষ্য দেশে দক্ষ মানব সম্পদ ও চাকরির বাজার তৈরি করা।
আরও পড়ুন: ফ্রিল্যান্সিংয়ে স্বাবলম্বী লালমনিরহাটের নারীরা
ফ্লিট বাংলাদেশের তৈরি করা বিভিন্ন অ্যাপস ও সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে সারা বিশ্বে। আমাজন, ই-বে, ওয়ালমার্টসহ বিদেশে তিনশতাধিক গ্রাহক রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। সম্প্রতি ঢাকায় চালু হয়েছে প্রধান কার্যালয়। গ্রাহক সেবা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিক্রয় কেন্দ্র, ওয়ার হাউজ, জ্বালানি, আবাসনের মতো ৯টি খাতে বাণিজ্য শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
Comments (No)