আমাদের মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, সার্ভার এমনকি সুপার কম্পিউটারেও রয়েছে লিনাক্স এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই কারনে আমাদের অবশ্যই লিনাক্স সম্পর্কে জানা উচিৎ। লিনাক্স নিয়ে জানার আগে আমাদের অবশ্যই কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে বেসিক ধারনা থাকা প্রয়োজন। আমরা কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা কখনোই ভেবে দেখিনা যে কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে। আমরা শুধু মাত্র কম্পিউটারকে কাজ দিয়ে যাই এবং এর বদলে কম্পিউটার আমাদের কাজ সম্পূর্ণ করে দেয়। কিন্তু আমাদের কমান্ড দেওয়া প্রত্যেকটি কাজ করার জন্য কম্পিউটারকে অনেকগুলো প্রসেস সম্পূর্ণ করতে হয়। যে প্রোগ্রাম গুলোর সাহায্যে আমরা কম্পিউটারে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করি, যেমনঃ মিউজিক ভিডিও প্লে, ডকুমেন্ট তৈরি, ইমেইল ইত্যাদি এগুলোকে মূলত অ্যাপ্লিকেশন বলা হয়। আর এই সব অ্যাপ্লিকেশন গুলো যেখানে রান হয় বা যার উপর দিয়ে চলে তাকেই অপারেটিং সিস্টেম বলা হয়।
মূলত অপারেটিং সিস্টেমই কম্পিউটারের সকল বেসিক কাজ গুলো সম্পন্ন করে। যেমন আমরা কম্পিউটারকে কোন কমান্ড দেওয়ার সাথে সাথে কম্পিউটার আমাদের কাজ করে দেয়। এছাড়া ও কম্পিউটারের প্রসেসর বিভিন্ন সময় গরম হয়ে গেলে অটোমেটিক কুলিং ফ্যান চালু হয়ে যায়, আর এই সব কাজগুলো মূলত অপারেটিং সিস্টেমই সম্পাদন করে। অ্যাপ্লিকেশন মূলত আমাদের দেয়া কমান্ড গুলো অনুসরণ করে কাজ করে এবং অপারেটিং সিস্টেমের উপর কাজ চাপিয়ে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যারের সাথে সংযোগ তৈরি করে।
লিনাক্স কি? লিনাক্স কেন ব্যবহার করবেন?
লিনাক্স কি এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন। আজকের দিনে সবচাইতে জনপ্রিয় কম্পিউটিং অপারেটিং সিস্টেম হলো উইন্ডোজ। আর হ্যা, উইন্ডোজ অবশ্যই তার নিজের ক্ষেত্রে থেকে অনেক ভালো জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। কিন্তু উইন্ডোজ বা ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম গুলো ইউজার এবং ডেভেলপারদের কাছে যা ইচ্ছা তা করার অনুমতি প্রদান করে না। আপনি উইন্ডোজ মেশিনের অ্যাডমিন হয়েও অনেক ফাইল মডিফাই করতে পারবেন না। আপনি যদি একজন সাধারন কম্পিউটার ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তবে উইন্ডোজ আপনার কাছে উত্তম একটি অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু আপনি যদি ডেভেলপার হন, তবে উইন্ডোজে আপনি সর্বাধিক স্বাধীনতা পাওয়ার সুযোগ হারাবেন। কারন এটি একটি ক্লোজড অপারেটিং সিস্টেম।
কিন্তু অপর দিকে লিনাক্স সম্পূর্ণ ফ্রী একটি কার্নেল। যেখানে অনেকগুলো ডিস্ট্রো রয়েছে এই কার্নেলের সাথে কাজ করার জন্য। এবং এর সাথে আপনি যা ইচ্ছা তা করতে পারবেন। প্রায় সকল কম্পিউটিং সিস্টেমের জন্যই আলদা ডিস্ট্রো রয়েছে। যেমন ডেক্সটপ কম্পিউটিং এর জন্য উবুন্তু বা মিন্ট রয়েছে, মোবাইলের জন্য রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড এমনকি লিনাক্স ভার্সন সুপার কম্পিউটারেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
লিনাক্স সর্বদা লক্ষ্য রাখে নিরাপত্তা এবং শক্তিশালী হওয়ার উপর। অপরদিকে উইন্ডোজ সব সময় লক্ষ্য রাখে কিভাবে ব্যাবহারের ক্ষেত্রে সুবিধা বাড়ানো যায়। এই জন্য অধিকাংশ সার্ভারের নিরাপত্তা ব্যাবস্থায় সর্বদা লিনাক্সকে কাজে নেওয়া হয় এবং এটি জটিল কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য এটি খুবই জনপ্রিয়। তাই বলা যায় কম্পিউটিং এর জন্য লিনাক্স হচ্ছে উইন্ডোজ এর সর্বোৎকৃষ্ট বিকল্প সিস্টেম। গত কয়েক বছরে লিনাক্স এর ডেস্কটপ ডিস্ট্রোতে অনেক পরিবর্তন করে সহজ ইউজার ইন্টারফেস আনা হয়েছে। ফলে আপনি যদি উইন্ডোজ কিংবা ম্যাক ব্যাবহারে ও অভ্যস্ত হন তবুও লিনাক্স আপনার কাছে কঠিন মনে হবে না।
লিনাক্স এর সুবিধা!
লিনাক্সের অনেকগুলো সুবিধা থাকলে ও এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি খুবই নিরাপদ। মানে এটি ব্যাবহারের মাধ্যমে আপনি ভাইরাস, ট্রোজান ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাবেন। তাছাড়া লিনাক্স ডিস্ট্রো গুলো সম্পূর্ণ ফ্রী ব্যবহার করতে পারবেন। যেখানে উইন্ডোজ ব্যবহার করতে আমাদের কয়েকশো ডলার খরচ করতে হয়। বেশিরভাগ সময় লিনাক্সের ডিস্ট্রোর সাথে সকল প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন প্রি-ইন্সটল থাকে এবং আপনার প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন প্যাকেজ আপনি ফ্রী ইন্সটলও করতে পারবেন। উইন্ডোজের তুলনায় দেখতে গেলে এটি অনেক বড় সুবিধা।
এছাড়া ওয়াইন ব্যবহার করে আপনি লিনাক্সে উইন্ডোজ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে পারবেন। তাই এটিও একটি বড় সুবিধা। নতুন লিনাক্স কার্নেল নির্ভর স্টিম অপারেটিং সিস্টেমে রয়েছে প্রায় ১ হাজারের উপর গেমস। লিনাক্সে রয়েছে লাইভ সিডি/ডিভিডি এবং ইউএসবি সুবিধা। আপনি আপনার কম্পিউটারে লিনাক্স রান করার জন্য এটি ইন্সটল করতে হবে না। শুধু মাত্র লিনাক্স ইউএসবি আপনার মেশিনে প্লাগ করুন এবং প্লে করলেই ব্যবহার করতে পারবেন। লিনাক্সে অসংখ্য ডিস্ট্রো থাকায় আপনি নিজের পছন্দ মতো ডিস্ট্রো সিলেক্ট করতে পারবেন। কিন্তু উইন্ডোজ আপনি এ এই ধরনের সুবিধা কখনোই পাবেন না।
উইন্ডোজে কোন সমস্যা হলে উইন্ডোজ আবার নতুন করে সেটআপ দিতে হয়, কিন্তু লিনাক্সের যেকোনো সমস্যা এমনিতেই সমাধান করা সম্ভব, এতে একদমই আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম রি-ইন্সটল করতে হবে না। তাছাড়া লিনাক্সে রয়েছে মাল্টি ডেক্সটপ ব্যাবহারের সুবিধা। যা উইন্ডোজের -উইন্ডোজ ১০ এ যুক্ত করা হয়েছে।
আপনি যদি নতুন লিনাক্স ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তবে আপনি সরাসরি লিনাক্স ইন্সটল না করে লাইভ সিডি দিয়ে লিনাক্স বুট করুন। আপনার পছন্দের ডিস্ট্রোটির আইএসও ডাউনলোড করুন এবং ফ্ল্যাশ ভাবে ব্যবহার করা শুরু করতে পারেন। ডেস্কটপের জন্য সর্বাধিক জনপ্রিয় ডিস্ট্রো হলো লিনাক্স মিন্ট এবং উবুন্তু। আপনি আপনার পছন্দ মতো যে কোন একটি ব্যবহার করুন……
ইন্টারফেস:
কমান্ড লাইন ইন্টারফেস:
বেশিরভাগ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনেই ডিফল্টভাবে গ্রাফিক্যাল ডেস্কটপ পরিবেশ ব্যবহৃত হয় যেখানে কমান্ড-লাইন ইন্টারফেস একটি টার্মিনাল ইমুলেটর বা আলাদা ভার্চুয়াল কনসোল দ্বারা বাস্তবায়িত করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ নিম্নধাপের লিনাক্স উপকরণসমূহ, যেমন গ্নু ইউজারল্যান্ড, ব্যাপকভাবে কমান্ড-লাইন ইন্টারফেস ব্যবহার করে। কমান্ড লাইন ইন্টারফেস সাধারণত পূনরাবৃত্তিমূলক বা কালক্ষেপণমূলক কাজ সমূহের স্বয়ংক্রিকরণের কাজে বহুল ব্যবহৃত হয় এবং আন্তঃপ্রক্রিয়া যোগাযোগ প্রদান করে। একটি গ্রাফিক্যাল টার্মিনাল ইমুলেটর প্রোগ্রাম লিনাক্স ডেস্কটপ থেকে কমান্ড লাইন ইন্টারফেসে প্রবেশের কাজে ব্যবহৃত হয়। একটি লিনাক্স সিস্টেমে কমান্ড লাইন ইন্টারফেস সাধারণত শেল দ্বারা বাস্তবায়িত হয়, যেটি ইউনিক্স সিস্টেমের সাথে মিথস্ক্রিয়ারও একটি প্রথাগত উপায়। সার্ভারের জন্য উন্নয়নকৃত একটি লিনাক্স সিস্টেমে সাধারণত কমান্ড লাইন ইন্টারফেসই একমাত্র ইন্টারফেস হিসাবে ব্যবহার হতে পারে।
ডেস্কটপ পরিবেশ:
বর্তমান সময়ে ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটারে লিনাক্সের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বেশিরভাগ লিনাক্স ডিস্ট্রোই গ্রাফিক্যাল ডেস্কটপ পরিবেশ ব্যবহার করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্নোম ও কেডিই প্লাজমা ডেস্কটপ।
এর পাশাপাশি এলএক্সডিই, এক্সএফসিই ইত্যাদি তুলনামূলক হালকা ডেস্কটপ পরিবেশও রয়েছে যেগুলো মূলত নিম্ন-কনফিগারেশনের কম্পিউটার সিস্টেমকে উদ্দেশ্য করে উন্নয়ন করা হয়েছে।
ডেস্কটপে লিনাক্সের পারফরমেন্স সবসময়ই একটি বিতর্কিত ইশু, উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, ২০০৭ সালে কন কলিভাস শুধুমাত্র সার্ভারে লিনাক্সের পারফরমেন্সের দিকে নজর দেওয়ার জন্যে লিনাক্স সম্প্রদায়কে দায়ী করেন। তিনি ডেস্কটপের প্রতি এরুপ ঔদাসীন্য দেখে হতাশ হয়ে লিনাক্স কার্নেল উন্নয়ন থেকে সরে আসেন এবং পরবর্তীতে এই বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকারও প্রদান করেন। তখন থেকেই ডেস্কটপে লিনাক্সের পারফরমেন্স উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কাজ শুরু হয়েছে।আপস্টার্ট এধরনেরই একটি প্রকল্প যেটির মূল লক্ষ্য হলো লিনাক্স বুটের সময় ত্বরান্বিত করা।
Comments (No)