মার্কেটিং এর বিভিন্ন উপায় রয়েছে। তবে অনলাইন মার্কেটিং এর জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী পথ হল ইমেইল মার্কেটিং। ইমেইল মার্কেটিং অনলাইন মার্কেটিং এর একটি কার্যকরী এবং গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক। এর মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে আপনি অনেক অনেক গ্রাহকের কাছে আপনার পণ্য প্রচার করতে পারবেন।
একটি চিরাচরিত কথা আমরা সকলেই জানি, যে প্রচারেই প্রসার। আপনি যে প্রোডাক্ট যত বেশি মানুষের কাছে তুলে ধরবেন, তা ততবেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। আর এ পৌঁছানোর উপায় হল মার্কেটিং।
ইমেইল মার্কেটিং কি?
কোন কিছু প্রচার বা প্রসার এর উপায় হচ্ছে মার্কেটিং।
আর ইমেইলের মাধ্যমে কোন প্রোডাক্ট বা সেবা গ্রাহকের কাছে প্রচারের উপায় কে email-marketing বলা হয়।
ইমেইল মার্কেটিং কেন করবেন?
ইমেইল মার্কেটিং করার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এই ডিজিটাল যুগে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ইমেইল মার্কেটিংয়ের কোন বিকল্প নেই।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ইমেইল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করে। ইমেইল মার্কেটিং যেসব কারণে করা যেতে পারে:
- পণ্যের বিক্রি বাড়াতে
- গ্রাহকের সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরী করতে
- গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে
- গ্রাহককে সর্বক্ষণ আপডেট দিয়ে গ্রাহককে ধরে রাখতে
- গ্রাহককে তৎক্ষণাৎসার্ভিস দেওয়ার মাধ্যমে গ্রাহকের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে
ইমেইল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?
- ইমেইলের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছান সম্ভব।
- স্পাম ফিল্টার আগের চেয়ে উন্নত হওয়ায় স্পাম ইমেইল এর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ফলে ইমেইল মার্কেটিংয়ের বিশ্বস্ততা অনেক বেড়ে গেছে।
- অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার যেমন ওয়েবসাইট বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া। এসব মাধ্যমে প্রচার করলে সব গ্রাহক সেগুলো নাও দেখতে পারে কিন্তু ইমেইলের মাধ্যমে একদম গ্রাহকের ইনবক্সে আপনার প্রডাক্ট বা সেবাটি পৌঁছে যাবে।
- ইমেইল মার্কেটিং ছোট-বড় যে কোন ব্যবসার জন্য উপযুক্ত।
- অন্যান্য মার্কেটিং এর তুলনায় email-marketing অনেক সহজ এবং সস্তা।
- এখানে রেগুলারিটি মেনটেন করা খুবই সহজ এবং অনেক বিষয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায়।
- ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অল্প সময়ে বেশি প্রচার করা যায়। ফলে বিক্রির পরিমাণ অনেক বেড়ে যেতে পারে।
ইমেইল মার্কেটিং থেকে আয়:
ইমেইল মার্কেটিং থেকে আয় করার পদ্ধতি গুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি গুলো হলো:
- এইচটিএমএল টেম্পলেট তৈরি
- এইচটিএমএল ও সিএসএস দিয়ে ইমেইল টেমপ্লেট তৈরি
- পিএসডি থেকে এইচটিএমএল এ কনভার্ট করে ইমেইল টেমপ্লেট তৈরি এবং
- ইমেইল কনটেন্ট লিখে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে তা বিক্রি করা।
তবে ইমেইল মার্কেটিং দিয়ে আয় শুরু করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে কোন একটি প্রতিষ্ঠান বা বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম কিংবা ইউটিউব থেকে এ বিষয়ে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
তাই আমরা উপরের বিষয়গুলো বাদ রেখে আজ দুটি সহজ ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে আলোচনা করব।
এই দুটি উপায় কি আয় করার জন্য আপনাকে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হবে না। এগুলো হলো: ইমেইল লিস্ট তৈরি করে আয় এবং অ্যাফিলিয়েশনের মাধ্যমে আয়।
ইমেইল লিস্ট করে আয়:
ইমেইল লিস্ট তৈরি করে আই এর ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট থাকলে ভালো হয়।
তবে ওয়েবসাইট না থাকলেও ভয়ের কোন কারণ নেই। দুই ভাবেই আপনি ইমেইল মার্কেটিং করতে পারবেন।
ওয়েবসাইটের জন্য:
- ওয়েবসাইটে পপ আপ ফর্ম থাকতে হবে। টপ অফ ফর্ম এর ক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারীরা lightbox pop-up plugin ব্যবহার করতে পারেন।
- ওয়েবসাইটে সাবস্ক্রাইবার ফর্ম থাকতে হবে। সাবস্ক্রাইবার ফরমের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস Mail Chimp ব্যবহার করতে পারেন।
ওয়েবসাইট না থাকলে:
যাদের ওয়েবসাইট নেই তারা বিভিন্ন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন পোস্টে কমেন্টের মাধ্যমে কিংবা বিভিন্ন ফোরামে ফোরাম পোস্ট করে এবং ল্যান্ডিং পেজ এর মাধ্যমে এফিলিয়েট প্রচারের সময় ইমেইল সাবমিট ফর্ম রাখতে হবে। ল্যান্ডিং পেজ এর ক্ষেত্রে Dreamweaver ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইমেইল মার্কেটিংয়ে যত সময় যাবে আপনার ইমেইল লিস্ট তত বড় হতে থাকবে। তখন ইমেইল গুলো দিয়ে এমন এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন তাছাড়াও বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম যেমন, freelancer, upwork, fiverr ইত্যাদির মত বড় বড় মার্কেটপ্লেসে তা বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন।
ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে এফিলিয়েশনঃ
ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে এফিলিয়েশন শুরু করার আগে আপনাকে প্রথমে ঠিক করে নিতে হবে আপনি কোন ধরনের বা কোন বিষয়গুলোর উপর ইমেইল সেন্ড করবেন।সে ক্ষেত্রে আপনাকে কয়েকটি বিষয়ের উপর নজর রাখতে হবে।
- নতুন সেবা: ব্যবসায় কোন নতুন পণ্য বা সেবাা যুক্ত হলে সাথে সাথে তা ইমেইলের মাধ্যমে গ্রাহকদের জানিয়ে দিতে হবে।
- আপডেট বা পরিবর্তন: ব্যবসার কোন নীতিমালা বা সেবা আপডেট বা পরিবর্তন করলে সাথে সাথে তা গ্রাহকদের জানিয়ে দিতে হবে।
- ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট: বিশেষ দিন বা বিশেষ উপলক্ষ গুলোতে বিভিন্ন ছাড় বা অফার থাকলে গ্রাহকদের তা জানিয়ে দিতে হবে।
- কনফার্মেশন: গ্রাহক কোন বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে বা কোন অফারে অংশ নিলে বা বা কোন কিছু পরিবর্তন বা পরিমার্জন করলে সাথে কনফার্মেশন মেসেজ এর মাধ্যমে গ্রাহককে জানিয়ে দিতে হবে।
- কো-মার্কেটিং: আপনি যদি কোনো মার্কেটার কোম্পানির সাথে যৌথভাবে কোনো সেবা চালু করেন তা ইমেইলে জানিয়ে দিতে হবে।
- বাতিল হওয়া কার্ট: ক্রেতা কোন সেবা বা পণ্য কিনতে আগ্রহী ছিল, কিন্তু কোন কারণে ক্রয় সম্পূর্ণ করে নি। সেই কার্টের সম্পর্কে ক্রেতাকে মেইলে জানিয়ে দিতে হবে।
- ভিডিও বা টিউটোরিয়াল: পণ্যের ভিডিও বা অনলাইনে টিউটোরিয়াল লিখলে তা গ্রাহকদের জানিয়ে দিন।
ইমেইল মার্কেটিং এ যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন:
ইমেইল মার্কেটিং করার জন্য কিছু কিছু বিষয় খুব ভালো করে মাথায় রাখতে হবে। যাকে তাকে ইমেইল দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। নির্দিষ্ট গ্রাহকদের টার্গেট করুন। প্রতিবার প্রচারের সময় লক্ষ্য অর্জনের উপর দৃষ্টি রাখতে হবে।
একটি কথা সব সময় মাথায় রাখবেন কোন ধরনের স্পামিং করবেন না। অপ্রয়োজনে কাউকে মেইল পাঠাবেন না। যেসব গ্রাহক আপনার প্রোডাক্ট বা সেবা প্রতি আগ্রহী তাদের ইমেইল সংগ্রহ করতে থাকুন। ইমেইল যত আকর্ষণীয় করে ডিজাইন করবেন গ্রাহক তত বেশি আকৃষ্ট হবে।
মার্কেটিং এর জন্য আপনি যদি ইমেইল মার্কেটিং করবেন বলে ভেবে থাকেন তবে আপনার কাস্টমারদের নিয়মিত ইমেইল পাঠাতে থাকুন। নিয়মিত আপডেট এবং পণ্য সম্পর্কে গ্রাহকদের অবহিত করলে আশা করা যায় ইমেইল মার্কেটিং আপনার ব্যবসাকে বাড়িয়ে দিবে।
ইমেইল মার্কেটিং শুধু আয় ব্যয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি গ্রাহকদের সাথে দীর্ঘ মেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন।
আমাদের শেষকথা:
আজ এই পর্যন্তই। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
Comments (No)