কন্টেন্ট মার্কেটিং কি?

বাংলাদেশে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসাগুলো দিন দিন জনপ্রিয়টা লাভ করছে।এখন স্থানীয় ব্যবসার চাইতে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসার জনপ্রিয়তার অন্যতম কারন হচ্ছে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসার ক্ষেত্রে তেমন কোন পুজি ব্যয় করতে হয় না। যেমন দোকান ভাড়া ডেকারেশন ভাড়া ইত্যাদি ভাড়া ব্যয় করতে হয় না।আর প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ থেকে আরো সহজতর করে তুলেছে। এখন মানুষ ঘরে বসেই সবকিছুই করতে পারে। তাই এখন মানুষ অনলাইন এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে খুব সহজভাবে।অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোর মধ্যে ফেসবুক অন্যতম তাছাড়া ফেসবুক বাদেও অনেক অনলাইনভিত্তিক মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেগুলোতে কিনা খুব সহজেই বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে নেয়া সম্ভব। যেমন গুগোল, ইয়াহু এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট গুলোতে বিজ্ঞাপন দিয়ে কম খরচে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া যায়।বাংলাদেশ প্রযুক্তির বিশ্বে এখন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে।

অনলাইন মার্কেটগুলোতে অনেক কলাকৌশল অবলম্বন করতে হয় তার মধ্যে কন্টেন্ট মার্কেটিং অনেক জনপ্রিয়।কারন ব্যবসার ভাবমূর্তি ধরে রাখতে,ব্যবসা বাড়াতে, ক্রেতা ধরে রাখতে,অন্য যেকোনো পদ্ধতির চাইতে কন্টেন্ট মার্কেটিং অনেক বেশী কার্যকর। কনটেন্ট মার্কেটিং করতে ভালো কনটেন্ট প্রয়োজন হবে। পন্য কিংবা সেবাকে কেন্দ্র করে দরকারী ও গুরত্বপূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কনটেন্ট তৈরি করে তার বিভিন্ন কৌশলে পাঠকের কাছে পৌছে দেয়ার পর পাঠকে কন্টেণ্টের সাথে সম্পৃক্ত করাই কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ের উদ্দেশ্য। ভিডিও, ছবি, টুইট, ই-বুক, ইনফোগ্রাফি ইত্যাদি কন্টেন্ট এর মাধ্যমে একজন ভোক্তাকে সহজে প্রভাবিত করা যায় কন্টেন্ট মার্কেটপ্লেস।

কন্টেন্ট মার্কেটিং কি? 1

১. কন্টেন্ট মার্কেটিং কি?

কন্টেন্ট মার্কেটিং একটু অন্যরকম। এটা লংটার্ম মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। এখানে কাস্টমার আপনার কাছে পাওয়া তথ্য থেকে বুঝতে পারবে আপনার সার্ভিসের কোয়ালিটি, ফলে সে আপনার কাস্টমার হতে আগ্রহী হবে। কন্টেন্ট মার্কেটিং এর একটি জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে ইমেইল নিউজলেটার। সাইনাপের পরে রিডারদের কাস্টমারে রুপান্তর করার অনেক সুযোগ থাকে। সেই নিউজলেটারে ৮০% থাকে ফ্রি ইনফরমেশন, আর ২০% থাকে সেলফ প্রোমোশন।

এছাড়াও অনেক কন্টেন্ট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি আছে। কন্টেন্ট মার্কেটিং তাই একটি ইনডায়রেক্ট এপ্রোচ। সরাসরি কারো থেকে টাকা না চেয়ে, বরং এখানে ট্রাস্ট বিল্ডিং এর উপর মনোযোগ বেশি দেয়া হয়। ফলে, লং টার্মে সুদূরপ্রসারী ফলাফল পাওয়া যায়।

2. কনটেন্ট মার্কেটিং শুরু করার কয়েকটি ধাপ:

১। গ্রাহক এর সম্পর্কে ধারণা তৈরি করাঃ একজন গ্রাহক এর কি পছন্দ কোন ধরনের কন্টেন্ট এর উপর তারা বেশি আগ্রহী কি ধরনের কন্টেন্ট তারা মিডিয়াতে শেয়ার করে সে সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে হবে।

২।কন্টেন্ট এর ঘাটতি বের করাঃ আপনার বাংলা কন্টেন্ট লেখার কোন জায়গায় ঘাটতি রয়েছে সেগুলো বের করতে হবে। কন্টেন্ট এর যেকোন ঘাটতি বের করার জন্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে কন্টেন্ট এর ঘাটতি বের করা যাবে। যেমনঃ

-কি ধরনের কন্টেন্ট ভালো শেয়ার হয়েছে?

-কারা ভালো কন্টেন্ট তৈরি করে আর কিভাবে তারা সেই কন্টেন্টগুলো প্রচার করে?

-আপনার গ্রাহক কি ধরনের কন্টেন্ট খুজে?

৩। ভালো কনটেন্ট তৈরি করাঃ কন্টেন্ট এর ঘাটতি বের করার পরে মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো ভালোভাবে পরিকল্পনা করে সুন্দর কন্টেন্ট তৈরি করা।যদিও পরিকল্পনা করা বেশ কঠিন বিষয়।অনেক গুলো বিষয়  বিবেচনায় করেই কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। যেমনঃ

কনটেণ্টের টাইটেল কেমন হবে?

  • কে কনটেন্ট তৈরি করবে?
  • কোন ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করা হবে যেমন ভিডিও নাকি ছবি দিয়ে তৈরি হবে ইত্যাদি জিনিস মাথায় রাখতে হবে।
  • কনটেন্টে কিভাবে “কলটুএকশন” ব্যবহার হবে এবং কি ধরনের কলটুএকসন( ফরম পূরন, নিউজলেটের নিবন্ধন, ফোন কল , ক্রয় ইত্যাদি) হবে?

৪। ভালো সময় নির্ধারন করুনঃ আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী যারা আপনার সাম্ভাব্য গ্রাহকরা কখন অনলাইন এ সময় দেয়, কিভাবে ইণ্টারনেট ব্যবহার করে, কোন ধরনের ওয়েবসাইট এ তারা লগ ইন করে সে সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারনা তৈরি করতে হবে। তারপর তৈরি করা কনটেন্ট সঠিক সময়ে প্রচার করতে হবে।

৫) ধৈর্য্যে থাকতে হবেঃ আপনাকে ধৈর্য্যের সাথে কাজ করতে হবে।সহজে আশা ছেড়ে দিলে চলবে না।ধৈর্য্যের সাথে নিয়মিত কাজ চালিয়ে গেলে ধীরে ধীরে ফলাফল ভাল হতে শুরু করবে।

২.  কেন কন্টেন্ট মার্কেটিং ব্যবহার করবেন:

কন্টেন্ট মার্কেটিং একটি ইনডায়রেক্ট এপ্রোচ। তাহলে কেন আমরা এটা ব্যবহার করব। কেন এই কাজে সময় নষ্ট করতে রাজি হব? এই সেকশনে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে চেষ্টা করব।

মানুষ এডভার্টাইজ পছন্দ করে না:

মানুষ দিন দিন এড ব্লকিং সফটওয়্যার ব্যবহার বাড়িতে দিচ্ছে। যারা এড ব্লক করেও না, তারাও এডে আজকাল আর ক্লিক করে না। এগুলো ছিলো অনলাইন এডসের রিপোর্ট, কিন্তু টিভির এডের অবস্থাও বেশি ভালো না। আজকাল, মানুষ টিভির এডও দেখে না। সবাই ইউজফুল ইনফরমেশন পেতে বেশি আগ্রহী।

লয়েল ফ্যানরাই এডভার্টাইজিং এর কাজ করে:

আপনার কন্টেন্ট যদি অন্যরা ইউজফুল মনে করে, তারাই সেটা অন্যদের মাঝে শেয়ার করে বিলিয়ে দেয়। এটা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর চেয়ে বেশি কার্যকর।

যদি আপনার কন্টেন্ট কমও শেয়ার হয়, সেটা নিয়ে নতুন কাস্টমার পেতে সুবিধা হয়। কেন? কারণ মানুষ আপনার কন্টেন্ট শেয়ার করছে এর মানে হচ্ছে আপনার ব্যবসার উপর তাদের ট্রাস্ট আছে। এর ফলে তারা আপনারকে নতুন কাস্টমার খুঁজে পেতে সহায়তা করছে।

কন্টেন্ট মার্কেটিং সাশ্রয়ী:

কন্টেন্ট মার্কেটিং এর জন্য অনেক কম বিনিয়োগ করতে হয়। বেশিরভাগ সোশ্যাল মিডিয়া ফ্রি তে ব্যবহার করেই এই কাজ করা যায়। 

প্রোফাইল বিল্ডিং:

অনেক মানুষ যারা আপনার পোস্ট বা ভিডিও দেখবে, তারা আপনার থেকে কিছু কিনবে না। কিন্তু, এই শ্রম ফেলনা যাবে না। আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে মানুষ জানবে। আর এত মানুষ আপনার সাইটে ভিজিট করায় আপনার সার্চ ইঞ্জিন র‍্যাংকিংও বাড়বে।

লং টার্ম সাস্টেইনেবিলিটি:

যখন এড কেনেন, তখন অনেক মানুষ আপনার সাইটে আসে, কাস্টমার কিছু কেনে। কিন্তু যখন আর এড শো করবেন না, তখন এরা কেউ আর সাইটে ভিজিট করবেনা। আবার টাকা দিয়ে এড কিনতে হবে, আবার সব শুরু থেকে স্টার্ট হবে।

একটা পপুলার পোস্ট বছরের পর বছর মানুষের কাছে জনপ্রিয় থাকতে পারে। এমনকি ৫ বছর পরেও সেটার জন্য আপনার সাইটে হাজার হাজার নতুন মানুষ ভিজিট করবে। কন্টেন্ট যত ভালো হবে, ট্রাফিকও তত বেশি পাবেন। আর এতে খরচ মাত্র একবারই হচ্ছে।

৩. কন্টেন্ট মার্কেটিং এর প্রতিবন্ধকতা:

কন্টেন্ট মার্কেটিং এর অনেক সুবিধা। কিন্তু এর কিছু অসুবিধাও আছে।

কন্টেন্ট মার্কেটিং বেঞ্চমার্ক জরিপ অনুসারে ৮৬% বিজনেস কন্টেন্ট মার্কেটিং করে। এর মানে হচ্ছে মার্কেটে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি।

আপনার ইন্ডাস্ট্রি যেটাই হোকনা কেন, দেখা যাবে আপনার হাজারো কম্পিটিটর আগে থেকি কন্টেন্ট মার্কেটিং শুরু করে দিয়েছে। আধুনিক সময় এটাকে বলা হয় ইনফরমেশন ওভারলোড। এই কারণে ঠিকমত অডিয়েন্স পেতে সমস্যা হয়। তাই অডিয়েন্স পেতে ভোগান্তি হয়।

৪. কন্টেন্ট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি:

কন্টেন্ট মার্কেটিং কি, এবং এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো।

কোন স্ট্র্যাটেজি ফলো করলে কন্টেন্ট মার্কেটিং এ সাকসেসফুল হবেন?

চ্যানেল সিলেক্ট করুন

যেমন আগেই বলেছি, কন্টেন্ট মার্কেটিং করার উপায় অনেক। নিচে কয়েকটি উপায়ের লিস্ট দেয়া হলঃ

  • ব্লগিং
  • অডিও পডকাস্ট
  • ইউটিউবে ভিডিও
  • সোশ্যাল মিডিয়া ফলোয়ার
  • ইনফোগ্রাফিক
  • অন্যান্য পপুলার ব্লগে গেস্ট পোস্ট
  • বই বা হোয়াইট পেপার লেখা
  • ওয়েবিনার করা

এই লিস্ট থেকে দুই একটি চ্যানেল সিলেক্ট করুন। এরপর সেখানে নিয়মিত প্রেজেন্স রাখুন।

নিজের স্কিলের উপর ভিত্তি করে চ্যানেল সিলেক্ট করুন। আপনি ভালো ভিডিও বানাতে পারেন? তাহলে ইউটিউব। ভালো ব্লগ লিখতে পারেন? তাহলে ব্লগিং করুন।

কন্টেন্ট তৈরির সময় আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের কথা মাথা রাখুন।

কন্টেন্ট যেন বোরিং না হয়:

কর্পোরেট ব্লগিং এর কথা মনে আছে? আগের দিনে এর চেয়ে বোরিং পৃথিবীতে কিছু ছিলো না।

ক্ষুদ্র ব্যবসাও অনেক সময় এই ভুল করে।

নিজেদের ক্রেডিবল দেখানোর আশায়, তারা কর্পোরেট ব্লগের মত বোরিং কন্টেন্ট জেনারেট করে। এই ভুল করবেন না। আপনাকে কেউ বিড়ালের ভিডিও পোস্ট করতে বলছে না। কিন্তু আপনার কন্টেন্ট যেন অডিয়েন্সের কাছে ইন্টারেস্টিং মনে হয়। তাহলেই তারা সেটা শেয়ার করবে।

সস্তায় সেটেল করতে যাবেন না:

নিম্নমানের কন্টেন্ট কেউ পছন্দ করেনা। কন্টেন্ট টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে ভ্যালুয়েবল হতে হবে।

বেশি কন্টেন্ট জেনারেট করতে গিয়ে নিম্নমানের ডেলিভারি দিলে বিজনেস রেপুটেশন নষ্ট হবে। এর চেয়ে কোয়ালিটি মেইনটেইন করুন।

কন্টেন আপনার রেপুটেশনের সাথে যুক্ত। কন্টেট ইনভেস্টমেন্ট হিসাবে গন্য করুন।

কনভার্শন প্ল্যান তৈরি করুন:

আপনার কন্টেন্টের ফ্যান আছে। এখন তাদের কাস্টমারে রুপান্তর করবেন কিভাবে?

সোশ্যাল মিডিয়ায় কন্টেন্ট মার্কেটিং করলে, অডিয়েন্স কে কিভাবে আপনার সাইটে ভিজিট করানো যায় ভাবুন। তাদের জন্য ডেডিকেটেড ল্যান্ডিং পেজ রাখুন। 

ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং:

ম্যাগাজিন, নিউজপেপারে এড, সার্চ ইঞ্জিনে এড ইত্যাদি। একটা বেসিক আইডিয়া পেয়েছেন। ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং হচ্ছে কাস্টমারকে ব্যবসার পরিচয় দিয়ে তাদের ক্লায়েন্ট হতে কনভিন্স করা। এটা ডায়রেক্ট, ও এতে ইমিডিয়েট সেলস বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এটা বেশিদিন কার্যকর থাকে না।

আমাদের শেষকথা-

আশা করি এই আর্টিকেল কন্টেন্ট মার্কেটিং সম্পর্কে আপনাকে পরিষ্কার ধারনা দিয়েছে। এর পাশাপাশি আমরা কন্টেন্ট মার্কেটিং এর সুবিধা অসুবিধা গুলাও দেখলাম।

এটা অনেক বড় পরিসরের টপিক। ভবিষ্যতে এই ব্যাপারে আরো আর্টিকেল লেখা হবে। পরবর্তী আর্টিকেলে আমরা দেখবো ব্যবসার জন্য কন্টেন্ট মার্কেটিং ব্লগিং কিভাবে করতে হয়।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ