এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক:
ক্রিপ্টোর বাজার অনিশ্চিত। লাভের সম্ভাবনা যেমন প্রবল, তেমনই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ক্ষতির মুখও দেখতে হতে পারে। তাই Cryptocurrency– তে বিনিয়োগের আগে নির্দিষ্ট কতগুলি জিনিস মাথায় রাখুন। ভুলেও বিশেষজ্ঞ কিংবা সেলিব্রিটি ট্যুইটের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বিনিয়োগের রাস্তায় হাঁটবেন না। ব্যবহার করুন এই সকল টোটকা।ক্রিপ্টোকারেন্সি কুখ্যাত অস্থিতিশীল বলে ।
আর যেখানে অস্থিরতা রয়েছে সেখানে অর্থ উপার্জন এবং হারানো দুটোই বড় রকমের হয়ে যেতে পারে ৷ আপনি যদি কোন সেলিব্রিটি টুইট করছেন বা কোন স্ব-ঘোষিত বিশেষজ্ঞ আপনাকে কি করতে বলছেন তার উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করেন , তাহলে ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই এখানে আপনার জন্য ১০ টি সহজ নিয়ম দেওয়া হল ,যা থেকে ধারণা পাওয়া যাবে এবং বুঝতে সাহায্য করবে সাধারণ ভুলগুলি কেন ঘটে এবং তা কী ভাবে এড়ানো যেতে পারে ৷
১) অন্ধভাবে “ বিশেষজ্ঞ ” অনুসরণ করবেন না বরং সর্বদা আপনি নিজে গবেষণা করে তথ্য সংগ্রহ করুন ৷ আপনি ইন্টারনেটে প্রচুর ক্রিপ্টো ” বিশেষজ্ঞ ” পাবেন। আপনার বিশ্বাস করা কঠিন মনে হতে পারে কিন্তু এটাও ঘটনা যে প্রকৃত ক্রিপ্টো বিশেষজ্ঞ আদৌ নেই। ক্রিপ্টো খুব অস্থিতিশীল হওয়ায় যে কেউ তাদের মূল্য সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হবে না। সুতরাং , আপনি নিজে গবেষণায় মন দিন ৷
২) কম তারল্য ক্রিপ্টোর মধ্যে পাবেন না। সেক্ষেত্রে আপনি খারাপ ভাবে আটকে যেতে পারেন এই লগ্নিতে ৷ অর্থের তারল্য বা লিকুইডিটি হল সেই সহজতা যার সাহায্যে একটি ক্রিপ্টো কেনা এবং বিক্রি করা যায়। যদি একটি ক্রিপ্টোর তরলতা কম থাকে , তাহলে সঠিক সময় এলেও আপনি এটি সহজে বিক্রি করতে পারবেন না। আর মুনাফা করার পরিবর্তে , আপনি এর সঙ্গে আটকে যাবেন।
৩) বাজার “সময়ে” করার চেষ্টা করবেন না ৷ যখন আপনি সময়ের দিকে ফিরে তাকান তখন সব কিছুই খুব যৌক্তিক এবং সুস্পষ্ট বলে মনে হয়। আপনি হয়তো আফসোস করবেন যে কম দামে বিটকয়েন কিনতে পারলেন না অথবা তার সর্বোচ্চ দরে বিক্রি হয়নি বলে। এই আক্ষেপ থাকবেই। আপনি গবেষণা করুন এবং যদি আপনি মনে করেন যে একটি নির্দিষ্ট ক্রিপ্টো কম দামে রয়েছে, তাহলে সেটি কিনুন। অথবা যদি আপনি মনে করেন যে এটি এখন অতিরিক্ত মূল্যবান হয়ে উঠেছে , তাহলে এটি বিক্রি করুন।
৪). গুজব কিনে, সত্য বিক্রয় করুন। এই কথাটা অধিকাংশ আর্থিক বাজারে কাজ করে। ধরা যাক একটি বিশেষ ক্রিপ্টো প্রকল্প
কিছু কৌশল-পরিবর্তনকারী নতুন বৈশিষ্ট্য ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে । যখন আপনি এটা প্রথম শুনবেন , ক্রিপ্টো কিনুন। যত বেশি লোক এই সম্পর্কে শুনতে শুরু করবে , দাম বাড়তে থাকবে। আর যখন সেই বৈশিষ্ট্যগুলি বাস্তবায়ন ঘোষণা করা হবে, তখন হঠাৎ করে দাম কমে যাবে ! কেন? কারণ হল প্রথমে যারা কিনেছিলেন তারা তা বিক্রি করে তাদের মুনাফার অর্থ ঘরে তুলবেন। এক্ষেত্রে সতর্কতার বিষয় হল – নিশ্চিত করুন যে গুজবটি বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে!
৫). ডেরিভেটিভের সঙ্গে খেলবেন না যদি না আপনি একজন পেশাদার হন । ডেরিভেটিভস হল এমন আর্থিক যন্ত্র যা কিছু সম্পদ থেকে তাদের মূল্য অর্জন করে যেমন সুদের হার, ক্রিপ্টোর মূল্য, ইত্যাদি । ফিউচার এবং অপশন সাধারণ ধরনের ডেরিভেটিভ যা ঝুঁকি কমাতে এবং অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে হেজ করার জন্য কাজে লাগান হয়ে থাকে। কিন্তু ভুল হাতে পড়লে ডেরিভেটিভ আর্থিক বিপর্যয়ের ঘটিয়ে দিতে পারে। সুতরাং ডেরিভেটিভের সঙ্গে খেলবেন না যদি না আপনি সত্যিই জানেন যে আপনি কী করছেন।
৬). নন-ফাঞ্জিবল টোকেন ( এনএফটি ) কিনবেন না যদি না তারা আপনাকে একচেটিয়া অধিকার দেয় ৷ নন-ফাঞ্জিবল টোকেন এর পিছনে লোক ছুটছে। আমরা অনেক সময় শুনি পিক্সেলেটেড গ্রাফিক্স লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । এমন প্রচার শুনে মেতে উঠবেন না। যদি না একটি এনএফটি আপনাকে কিছু একচেটিয়া অধিকার দেয় , তাহলে এটি একেবারে মূল্যহীন।
৭). শর্ট সেলিং কখনও করবেন না। শর্ট সেলিং হল যখন আপনি কোনও কিছু হাতে না থাকলেও ক্রিপ্টো বেচছেন এই আশা করে ক্রিপ্টোর দাম কমে যাবে ৷ কখনও বিট কয়েন শর্ট সেল করবেন না ৷ ক্রিপ্টো বাস্তবে একটি বিনিয়োগকারীকে দেউলিয়া করে তাকে শর্ট সেলিং এর দিকে ঠেলে দিয়ে ৷লর্ড অ্যাশড্রেক ছিলেন একজন রোমানিয়ান বিটকয়েন ব্যবসায়ী , যিনি বিটকয়েন প্রচুর শর্ট সেল করে অর্থ উপার্জন করেছিলেন। এরপর তিনি একবার ৩০০ ডলারে শর্ট সেল করলেন এবং দেখা গেল কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিটকয়েন ৬০০ ডলারে পৌঁছে গেল ৷ যার জেরে তিনি দেউলিয়া হয়ে গেলেন৷
৮). একটি এক্সচেঞ্জে আপনার ক্রিপ্টো ছেড়ে যাবেন না ৷ ক্রিপ্টো জগতে একটি কথা চালু আছে – ” আপনার চাবি না থাকলে, আপনার কয়েন নেই “। যখন আপনি আপনার ক্রিপ্টোকে সেন্ট্রালাইজ এক্সচেঞ্জে রাখেন, তখন আপনার বাস্তবে আর এর উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যদি এক্সচেঞ্জ হ্যাক হয়ে যায় বা অথবা মালিকরা অদৃশ্য হয়ে যায়, তাহলে আপনি আপনার সমস্ত ক্রিপ্টো হারাবেন ! তাই আপনার ক্রিপ্টো সর্বদা আপনার নিজের ওয়ালেটে সংরক্ষণ করুন – কাগজ, হার্ডওয়্যার বা সফ্টওয়্যারে।
৯) ওয়ালেট ব্যবহার করতে শিখুন – তা কাগজ এবং এইচডি হতে পারে ৷ আপনি যদি দুর্ঘটনাক্রমে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপটি মুছে দেন, তাহলে আপনি কি আপনার টাকা হারাবেন? না। আপনি সহজেই অ্যাপটি পুনরায় ইনস্টল করতে পারেন কারণ আপনার টাকা ব্যাংকের কাছে আছে। সেদিক দিয়ে ক্রিপ্টো একেবারে আলাদা। যদি আপনি আপনার ক্রিপ্টো ওয়ালেটটি ব্যাক আপ না রেখে মুছে ফেলেন, তাহলে আপনি আপনার সমস্ত ক্রিপ্টো হারাবেন! সুতরাং, ক্রিপ্টো-ওয়ালেটগুলি কীভাবে ব্যবহার করবেন তা শিখুন-কাগজ, হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার।
১০) বিনিয়োগ শুরু করার আগে ফিউচার মানি প্লেবুক পড়ুন। ক্রিপ্টো বিনিয়োগ সহজ নয়। অনেকগুলি প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সমস্যা রয়েছে যা আপনাকে প্রথমে শিখে নিতে হবে। নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য ফিউচার মানি প্লেবুক বিশেষত দরকার। এটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়।
Comments (No)