ইন্ডিকেটর কি? indicators

আমরা যারা ফরেক্স করি, তাদের বেশিরভাগই জানি না আসলে ইন্ডিকেটর জিনিসটা কি । আমরা ভাবি ইন্ডিকেটর মানে বাই আর সেলের সিগন্যাল । আর যখনই এই সিগন্যাল কাজ করে না, তখন হয়ে যায় ইন্ডিকেটর খারাপ । আর তখন আমরা বলি প্রাইস অ্যাকশানের ওপরে কিছু নাই । এর কারণ হলো প্রাইস অ্যাকশান জিনিসটা আমরা বেশিরভাগ মানুষ খুব একটা বুঝি না । তাই আমরা ভাবি নিশ্চয়ই প্রাইস অ্যাকশান হোলি গ্রেইল । অবশ্যই প্রাইস অ্যাকশান ট্রেডিং ভাল, কিন্তু ভালভাবে ইন্ডিকেটর ব্যবহার করতে পারলে ইন্ডিকেটরও ভাল ফলাফল দিবে আপনাকে ।

ইন্ডিকেটর কি? indicators 1

ইন্ডিকেটর কি ?

ইন্ডিকেটর অর্থ হলো সোজা বাংলায় নির্দেশক । ফরেক্সের ভাষায় যা মার্কেটের অবস্থা নির্দেশ করে । এটা আপনাকে নির্দেশ করে মার্কেটের বর্তমান অবস্থা । একটি ইন্ডিকেটর তার হিসাব অনুসারে আপনাকে কি কি তথ্য দিতে পারে তা নিচে দেয়া হলো –

 মার্কেটের বর্তমান ট্রেন্ড,

 ট্রেন্ডটি কতটুকু শক্তিশালী বা দুর্বল,

 ট্রেন্ডটি শেষের দিকে কিনা,

 মার্কেটের ভোলাটিলিটি,

 মার্কেটের ট্রেডের ভলিউম (কেমন ট্রেডার মার্কেটে অংশগ্রহণ করছে),

 মার্কেটে বিভিন্ন ট্রেন্ড প্যাটার্নের পুনরাবৃত্তি ।

সুতরাং দেখুন, ইন্ডিকেটর কি কোথাও বলেছে যে, সে সরাসরি বাই-সেল সিগন্যাল দেয় ? এটা শুধু আপনাকে মার্কেটের অবস্থা জানায় । আর আমরা এটা দিয়ে বিভিন্ন স্ট্রাটেজি তৈরি করে ট্রেড করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি । সুতরাং, এটা সরাসরি কিন্তু সিগন্যাল দিচ্ছে না, আমরাই ধরে নিচ্ছি এটা বাই বা সেল করতে বলছে ।

ইন্ডিকেটরের ধরনঃ

ইন্ডিকেটর আমাদের যেই তথ্যগুলো প্রদান করে, সেগুলো ব্যবহার করেও কিন্তু চমৎকারভাবে ট্রেড করা সম্ভব । আগে দেখে নেই ইন্ডিকেটর কয় ধরনের হয়ে থাকে –

১.  ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর

২.   ভোলাটিলিটি ইন্ডিকেটর

৩.   মোমেনটাম ইন্ডিকেটর

৪.   ভলিউম ইন্ডিকেটর

৫.   সাইকেল ইন্ডিকেটর

৬.   বিল উইলিয়ামস ইন্ডিকেটর

১. ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর : ট্রেন্ড ইন্ডিকেটরগুলো মার্কেটে বিভিন্ন ট্রেন্ডের উপস্থিতি নির্দেশ করে । মার্কেট এখন কোন ট্রেন্ডে আছে – আপট্রেন্ড, ডাউনট্রেন্ড না সাইডওয়ে ট্রেন্ডে সে সম্পর্কে আপনি ধারনা পাবেন ট্রেন্ড ইন্ডিকেটরগুলোর মাধ্যমে । এছাড়াও ট্রেন্ডটি কতটুকু শক্তিশালী বা দুর্বল অথবা ট্রেন্ডটি শেষের দিকে কিনা তা জানতে পারবেন এসব ইন্ডিকেটর থেকে । কিছু জনপ্রিয় ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর হলো –

 Moving Average

– MACD

– Heiken Ashi

– Parabolic SAR

– Forecast Oscillator

– Linear Regression

– ADL (Advance Decline Line)

– ADX (Average Directional Index) ইত্যাদি ।

২. ভোলাটিলিটি ইন্ডিকেটর : ভোলাটিলিটি ইন্ডিকেটরগুলো মার্কেটে প্রাইসের উঠা-নামার পরিমান নির্দেশ করে । মার্কেটে কি পরিমান ট্রেড হচ্ছে এবং ভোলাটিলিটি কম না বেশি সে সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় এই সকল ইন্ডিকেটর থেকে । কিছু জনপ্রিয় ভোলাটিলিটি ইন্ডিকেটর হলো –

– Bollinger Bands

– Projection Oscillator

– Trading Bands (Envelope)

– Volatility Chaikin’s

– ATR (Average True Range) ইত্যাদি ।

. মোমেনটাম ইন্ডিকেটর : মোমেনটাম ইন্ডিকেটরগুলো ট্রেন্ড কি শক্তিশালী না দুর্বল, Over-bought না Over-sold ইত্যাদি তথ্য নির্দেশ করে । কিছু জনপ্রিয় মোমেনটাম ইন্ডিকেটর হলো –

– RSI (Relative Strength Index)

– Commodity Channel Index (CCI)

– Chande’s Momentum Oscillator (CMO)

– Stochastic Oscillator ইত্যাদি ।

৪. ভলিউম ইন্ডিকেটর : ভলিউম ইন্ডিকেটরগুলো মার্কেটে কি পরিমান ট্রেডার অংশগ্রহণ করছে তা নির্দেশ করে । কিছু জনপ্রিয় ভলিউম ইন্ডিকেটর হলো –

– Acceleration Bands

– On Balance Volume (OBV)

– Volume Rate of Change (ROC)

– Demand Index

– Ease of Movement

– Chaikin Money Flow (CMF)

– Money Flow Index (MFI) ইত্যাদি ।

৫. সাইকেল ইন্ডিকেটর : সাইকেল ইন্ডিকেটরগুলো মার্কেটে বিভিন্ন প্যাটার্নের পুনরাবৃত্তি নির্দেশ করে । কিছু জনপ্রিয় সাইকেল ইন্ডিকেটর হলো –

– Elliott Waves

– Fibonacci Time Zones

– Cycle Lines ইত্যাদি ।

৬. বিল ইউলিয়ামস ইন্ডিকেটর : বিল ইউলিয়ামস নামের এক ব্যক্তি বিশ্বাস করতেন যে, বিভিন্ন ধরনের অ্যানালাইসিসের (টেকনিক্যাল এবং ফান্ডামেন্টাল) ওপর দৃঢ় বিশ্বাসের কারনেই ট্রেডাররা লস করে । তাই তিনি মার্কেটের গঠনের ওপর ভিত্তি করে কিছু ইন্ডিকেটর প্রকাশ করেন । ইন্ডিকেটরগুলো হলো –

– Fractal (Space)

– The driving force (Power)

– Acceleration / deceleration (Power)

– Zones (Strength and Power)

– Balance Line (Balance)

এছাড়াও আরও কিছু ইন্ডিকেটর আছে যেগুলো আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিবে । যেমন – ব্যালেন্স, ইকুইটি, লট সাইজ, লিভারেজ, ক্যানডেল শেষ হবার সময়, স্প্রেড ইত্যাদি ।

একটা ব্যাপার মনে রাখা জরুরি । তা হলো, ইন্ডিকেটর কখনও আপনাকে সরাসরি বাই-সেল এর নির্দেশ দিবে না । আপনি ইন্ডিকেটর দিয়ে মার্কেটের বিভিন্ন অবস্থা জানতে পারবেন । আর তার ভিত্তিতেই আপনার ট্রেডিংকে আরও উন্নত করতে পারবেন

আমাদের শেষ কথা:

টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস হলো শেয়ার বাজার বুঝতে পারার একটি ভাষা যার বর্ণমালা হলো বিভিন্ন প্রকার ক্যান্ডেলষ্টিক, এক বা একাধিক ক্যান্ডেলষ্টিক দিয়ে গঠিত প্যাটার্ণ হলো শব্দ গঠনের মতো এবং ইন্ডিকেটরগুলো হলো এই ভাষার ব্যাকরণ । তাই ইন্ডিকেটরগুলো আমরা একটু মনোযোগ দিয়ে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করব ।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ