কিভাবে একজন প্রফেশনাল ব্লগার হবেন 1

বর্তমান সময়ে অনেকের জীবনের লক্ষ্য প্রফেশনাল ব্লগার হওয়া। শুনতে হাস্যকর কিংবা আষাঢ়ে গল্প মনে হলেও এটা চরম সত্য যে একজন ব্লগার চাইলে মাসে ৪ কোটি টাকা আয় করতে পারে। তাই একজন মানুষের প্রফেশনাল ব্লগার হওয়ার ইচ্ছাটা খুব খারাপ কিছু নয়।

ব্লগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় মূলত ১৯৯৯ সালের পর থেকে। আর বর্তমান সময়ে তো ব্লগ মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী।

যে কোন কাজে সফলতা পেতে হলে অবশ্যই বেশ কিছু নিয়ম কানুন অনুসরণ করতে হয়। যদিও প্রত্যেক কাজের জন্য পরিশ্রম পূর্ব শর্ত। কিন্তু সেই পরিশ্রম অবশ্যই সঠিক জায়গায় এবং সঠিক পদ্ধতিতে হওয়া জরুরি।

আজকের এই লেখায় আমি এমন সব উপায় এবং পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো যা আপনাকে প্রফেশনাল ব্লগার হতে সাহায্য করবে। আর যারা ভাবছেন ব্লগিং শুরু করবেন তারা নতুন ব্লগিং শুরু করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখুন। আর আমাদের মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে জেনে নেয়া যাক ব্লগ এবং ব্লগার বলতে আসলে কি বুঝায়।

ব্লগ ও ব্লগার কি?

ব্লগ কি, এই ধরণের প্রশ্ন মাথায় আসাটা স্বাভাবিক, বিশেষ করে যারা এ জগতের বাইরে আছেন তাদের কাছে। সত্যিকার অর্থে ব্লগ অর্থ অনলাইন ডায়েরি। যখন কোন ব্যক্তি তার মতামত কিংবা কোন বিষয়ে ওয়েবসাইটে লিখে, তখন তাকে ব্লগ বলা হয়। ব্লগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৭ সালে জর্ন বার্গার নামক ব্যক্তির হাত ধরে। তিনি সর্ব প্রথম weblog শব্দটির সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন। ব্লগ মূলত দুই প্রকার। যথা:

  • ব্যক্তিগত ব্লগ
  • ব্যবসায়িক ব্লগ

ব্যক্তিগত ব্লগে ব্যক্তির নিজস্ব মতামত কিংবা তার ইচ্ছাধীন বিষয় নিয়ে লেখালিখি হয়। আর ব্যবসায়িক ব্লগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা নিয়ে লেখালিখি হয়। আর ব্লগ ওয়েবসাইটে যিনি লিখেন, তাকে ব্লগার বলা হয়। ট্রাভেলিং, রেসিপি, প্রযুক্তি, বিশ্লেষণ ভিত্তিক, ধর্মীয়, স্বাস্থ্য, লাইফ স্টাইল ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্লগ হতে পারে। যাই হোক, ব্লগ ও ব্লগার সম্পর্কে আমরা মোটামুটি একটা আইডিয়া পেয়েছি, এবার আসুন ব্লগার হওয়ার জন্যে কি কি করণীয় সে সম্পর্কে জানা যাক।

প্রফেশনাল ব্লগার হওয়ার উপায়

নিয়মিত অন্যের ব্লগ পড়া

ব্লগার হওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে অন্যদের ব্লগ পড়তে হবে। জন্মের সময় কেউ ব্লগার হয়ে জন্মায় না, ব্লগার হওয়ার জন্য দরকার অনুশীলন। আর সেই অনুশীলনের জন্য দরকার জ্ঞানের।

প্রথম দিকে জ্ঞান অর্জনের জন্য আপনাকে অন্যের লেখা ব্লগ পড়তে হবে। তাদের লেখার কৌশল এবং উপস্থাপনাগুলো দেখতে হবে। এছাড়া আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সেই বিষয়ের উপর লেখা ব্লগগুলো নিয়মিত পড়তে পারেন। এতে করে একটা বিশেষ বিষয়ে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে যা আপনাকে প্রো ব্লগার হতে সাহায্য করবে।

ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি

যে ভাষায় আপনি ব্লগ লিখবেন, সে ভাষায় আপনাকে অবশ্যই দক্ষতা অর্জণ করতে হবে। দক্ষতা বলতে এমন নয় যে আপনার লেখা সাহিত্যের মত ভাষায় হতে হবে। বরং বানান ভুল এবং আঞ্চলিকতা পরিহার করাটাই ভাষা গত দক্ষতার বিষয়।

এছাড়া, চেষ্টা করতে হবে চলিত এবং সাধারণ মানুষের উপযোগী ভাষায় ব্লগ লেখার। কেননা আপনার ব্লগের প্রধান পাঠক সাধারণ মানুষ, নোবেল কমিটির বিচারকবৃন্দ নয়।

সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করুন

নিয়মিত অন্যের লেখা পড়া, কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জণ এবং নিজে নিজে লেখার চেষ্টা করার দ্বারা সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করতে হলে নিয়মিত লিখতে হবে। যে বিষয়ে লিখতে চান, সে বিষয়ে যদি সঠিক জ্ঞান না থাকে, তবে কখনোই সৃজনশীল কিছু লেখা সম্ভব নয়।

আর সাধারণত সৃজনশীল লেখার পাঠক বেশী থাকে। আপনার লেখা যত সৃজনশীল হবে আপনার পাঠক সংখ্যা তত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। মানুষ যা জানে সেটা জানার জন্য কেউ আপনার ব্লগ পড়বে না। বরং নতুন কিছু জানার জন্যই আপনার ব্লগ পড়বে। সুতরাং, নিয়মিত পড়ুন আর সেই সাথে নিত্য নতুন আইডিয়া জেনারেট করুন।

নিয়মিত লিখুন

একটা প্রবাদ আছে চলন্ত পাথরে কখনো শৈবাল জন্মে না, সত্যিকার অর্থে মানুষের মস্তিষ্কও ঐ পাথরের মত। আপনি যদি নিয়মিত না লেখেন, তবে দেখবেন আস্তে আস্তে স্থির পাথরে যেমন শৈবাল জন্মে আপনার মাঝেও অলসতা জন্ম নিবে।

তাই, কাজের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরির জন্য আপনাকে নিয়মিত লিখে যেতে হবে। সেই সাথে নিয়মিত অন্যের ব্লগও পড়তে হবে।

লেখার মাঝে ছবি যোগ করুন

লেখার থেকে ছবি মানুষের মস্তিষ্ককে ৯০% দ্রুত আকর্ষণ করতে পারে। তাই লেখার মাঝে যদি আপনি ছবি যোগ করেন, তবে আপনার লেখা ১০০% মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবে। টিউটোরিয়াল, রেসিপি এবং ট্রাভেলিং ভিত্তি লেখার ক্ষেত্রে ছবি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যথা:

  • পোস্টের মধ্যে যেন অপ্রয়োজনীয় ছবি যোগ না হয়। এতে করে মনোযোগ আকর্ষণের বদলে পাঠক বিরক্ত হবে।
  • আর খুব বেশী ছবি যেন যোগ করা না হয়, এতে ওয়েবসাইট লোড হতে সময় নিবে। ফলে পাঠক বিরক্ত হয়ে যাবে। এছাড়া ছবির কোয়ালিটি ঠিক রেখে, ছবির সাইজ কমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে।

মাঝারি আকারে লিখুন

লেখা যেন খুব ছোট না হয়, আবার খুব বড়ও যেন না হয়। খুব বেশী ছোট হলে পাঠকের লেখার মূল বিষয় বস্তু বুঝতে সমস্যা হবে। অপরদিকে খুব বেশী বড় লেখা হলে পাঠক লেখা পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

তাই, চেষ্টা করুন যাতে লেখা মাঝারি আকারের হয়। আর যদি বড় লেখা হয়ে যায়, তাহলে লেখার মাঝে যেন বিরক্ত না আসে সে জন্য লেখাগুলোকে ইন্টার‍্যাক্টিভ এবং রসাত্মক ভঙ্গিতে প্রকাশ করতে পারেন।

অন্যের মন্তব্যকে গুরুত্ব দিন

আপনার লেখার পাঠক আপনি নন, তাই অন্য পাঠককে গুরুত্ব দিন। পাঠক কি চায় তা বুঝার চেষ্টা করুন। আপনার কাছে যেটা ভাল পাঠকের কাছে হয়তোবা সেটা ভাল না।

তাই পাঠকের মন্তব্য দেখুন। তার প্রতিটি মন্তব্যের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন। পাঠকের সাথে সম্পর্ক তৈরি করুন।

ভিজিটর বৃদ্ধি করুন

আপনি ব্লগ লিখে রেখে দিলে হবে না, আপনার ব্লগে ভিজিটর আনা জরুরি। তা না হলে লেখার আগ্রহ থাকবে না এবং আপনার লেখাও বৃথা যাবে। আর ভিজিটর আনার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল এসইও তথা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। স্বাভাবিকভাবে মানুষের যখন কোন কিছু জানার ইচ্ছা জাগে, তখন গুগলে, বিং কিংবা যে কোনো সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে। এখন সার্চ করার পর যদি প্রথমে আপনার ওয়েবসাইট আসে, তাহলে তো আপনি সহজে ভিজিটর পেয়ে যাবেন।

এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেশী। এখন আপনি যদি আপনার লেখা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন তবে এসইও এর মত এখন থেকেও আপনি সহজেই আপনার ব্লগের ভিজিটর পাবেন। যা আপনার ব্লগে প্রাণের সঞ্চার ঘটাবে।

এই ছিল আজকে প্রফেশনাল ব্লগার হওয়ার কিছু কলা কৌশল। আপনার ব্লগে ভিজিটর বৃদ্ধি পলে অবশ্যই আয়ের চিন্তা করবেন। কেননা আর্থিক প্রেরণা সবচেয়ে বড় প্রেরণা আর আপনার ডোমেইন-হোস্টিং খরচ বহন করার জন্যেও অর্থের প্রয়োজন।

Leave a Reply

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ