ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে প্রতারণা 2

ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে প্রতারণা শুরু থেকেই ছিল, আজও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এর ভিতর দিয়েই আপনাকে নিজের বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে ভাল-মন্দ বুঝে নিতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে প্রতারণা 3

ফ্রিল্যান্সিং খুব কঠিন কিছু নয়। আবার পানির মতো সহজ কিছুও নয়। মনে রাখবেন শর্টকাটে প্রতারক হওয়া যায়, কিন্তু ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায় না। অনলাইন ফ্রিল্যান্সার হতে হলে আপনাকে যথেষ্ট সময় কাজ শেখার পিছনে ব্যয় করতে হবে এবং কাজ শিখে যোগ্য হতে হবে। একদিনে কেন? এক মাসেও ফ্রিল্যান্সার হওয়া অসম্ভব। কিন্তু প্রতারক মাত্রই আপনাকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারে যে, এক বা দুই হাজার টাকার বিনিময়ে একদিনেই আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং করার উপযোগী কাজ শিখিয়ে টাকা আয়ের ব্যবস্থা করে দিবে! এ ধরনের ভুরিভুরি উদাহরণ আপনি ফেসবুকে পাবেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর প্রতারণার ধরণঃ ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে প্রতারণাকারীদের মধ্যে কয়েক শ্রেণীর বা ধরণের প্রতারক আছে। চলুন তাদের সম্পর্কে কিছুটা জেনে নিই।

প্রথম শ্রেণীর প্রতারকঃ
ফ্রিল্যান্সিং এর সবচাইতে বড় প্রতারণা হলো টাকার বিনিময়ে দু’এক দিনের ওয়ার্কশপ। সাধারণত, একশ্রেণীর প্রতারক ফ্রিল্যান্সিং ওয়ার্কশপ এর নাম করে রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ কিছু টাকা নেয়। হতে পারে সেটা ৫০০, ১০০০ বা ২০০০ টাকা! তারপর আপনাকে কয়েক ঘন্টা বসিয়ে কিছু বয়ান দিবে, যা আপনি ইন্টারনেটে প্রতিনিয়ত দেখে থাকেন। আবার আপনাদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা থেকেই কিছু টাকা খরচ করে নাস্তা বা লাঞ্চের ব্যবস্থা করবে! এই প্রতারণা ইদানিং সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এদের কাছ থেকে খুব সাবধান। কারন এরা মিষ্টি মধুর কথা বলে ভবিষ্যতে আরও কিছু টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে।

দ্বিতীয় শ্রেনীর প্রতারকঃ
এই শ্রেনীর প্রতারকরা আপনাকে বলবে, ওমুক সাইট তমুক সাইট-এ ক্লিক করলে, প্রতি ক্লিকে পাবেন ৫০সেন্ট বা ১ ডলার। প্রতিদিন ১০/১৫টি ক্লিক করতে হবে। তাহলে আপনার একদিনের ইনকাম হবে ৫ বা ১০ ডলার! ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার দেখা যাবে ক্লিক করলে সেই ওয়েবসাইটের একাউন্টে ডলার জমা হচ্ছেও ঠিকই। কিন্তু ডলার তুলতে গেলে আপনাকে কিছু টাকাও খরচ করতে হবে! এরপর দেখা যাবে ৫০০ ডলার তুলতে গেলে আপনার কাছে চাইবে পাঁচ বা দশ হাজার টাকা। আপনি টাকা দিবেন ঠিকই, কিন্তু সেই ডলার আর আপনার হাতে আসবে না। বরং সেই প্রতারক আপনার ধরা ছোয়ার নাগালের বাইরে চলে যাবে! এভাবে নতুনদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে প্রতারক চক্র। যাদেরকে বলা হতো, ক্লিক পার্টি!

তৃতীয় শ্রেনীর প্রতারকঃ
রাস্তার পাশে দেয়ালে দেয়ালে দেখা যাবে, ঘরে বসে আয় করুন, প্রতিমাসে বিশ/ত্রিশ হাজার টাকা! কোর্স ফি মাত্র ১০/১৫ হাজার টাকা মাত্র। রাস্তায় পাশে চটকদার টিউনারের লেখা বা অফার এমন যে, মাত্র ১০/১৫ হাজার টাকা খরচ করলেই ব্যাস কাজ শেষ! প্রতিমাসে ঘরে বসে বিশ/ত্রিশ হাজার টাকা কেউ আপনার হাতে দিয়ে যাবে! আর আমরাও তেমন! আসল বিষয় না বুঝে ঝুঁকে পড়ি সেই লোভনীয় অফারের দিকে। সুতরাং চটকদার টিউনারের লোভনীয় অফারের বিজ্ঞাপন থেকে সাবধান।

ফলাফলঃ
ফলাফল হিসেবে দেখা যায়, এইসব প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে আমরা অনেকেই এমন অনুভুতি প্রকাশ করি যে, ধুররর.. ভাই সব বাটপারী। সব ভূয়া। ফ্রিল্যান্সিং-ট্রিল্যান্সিং এসব কিছুই না! মানুষকে ধোঁকা দিয়ে টাকা কামানো আরকি!

আসল বিষয় কি?
আসল বিষয় হলো, ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্মানজনক পেশা। যা আপনি স্বাধীনভাবে করতে পারেন। আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী আপনি সম্মানজনক আয় করতে পারবেন। কঠোর পরিশ্রম করলে ও হাই কোয়ালিফাইড হতে পারলে আপনি অনেক বেশি পরিমানও আয় করতে পারবেন। যা চাকুরী করেও সম্ভব হয়না!

তাহলে কিভাবে এই প্রতারণার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে ফ্রিল্যান্সিং শিখবেন ও ফ্রিল্যান্সিং-এ নিজের ক্যারিয়ার গড়বেন?
উত্তরঃ

১) নিজের ভিতর থেকে শর্টকাটে আয়ের চিন্তা দুর করুন।
২) কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ শিখুন।
৩) যেসব কাজ শিখতে পারেনঃ এডমিন সার্পোট, এসইও(সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন), প্রোডাক্ট লিষ্টিং, ওয়েব রিসার্চ, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, এপস/এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ইমেইল মার্কেটিং ইত্যাদি ইত্যাদি
৪) কোন চটকদার বিজ্ঞাপনের লোভনীয় অফার দেখলে চোখ ঘুরিয়ে ফেলুন। দ্বিতীয়বার দেখার চেষ্টা করবেন না।
৫) ইন্টারনেট ঘাটুন, বিভিন্ন বাংলা ব্লগ ও ইংরেজী ব্লগের লেখা পড়ুন ও জানার চেষ্টা করুন।
৬) যেকোন বিষয় ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে শেখার আগে ইউটিউবে বা গুগলে সার্চ করে নিজে নিজে শেখার চেষ্টা করুন। ইউটিউব বা গুগল থেকে কিছু জ্ঞান অর্জন করে তারপর ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে শিখুন ও প্রশ্ন করুন। যা ইউটিউব থেকে বুঝতে পারবেন না, সেটা নিয়ে ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর বের করে নিন।
৭) যারা অভিজ্ঞ ও সত্যিকারের ফ্রিল্যান্সার তাদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করুন।

সতর্ক থাকুন। প্রতারকদের হাত থেকে নিজে বাঁচুন, অপরকে বাঁচান।

Leave a Reply

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ