সফল মানুষরা দিন শেষে যে ১৪ কাজ করেন 1

সফল মানুষ হতে হলে কী করতে হবে, এর জন্য হাজারো পরামর্শ দেওয়ার মানুষ আছে চারপাশে। এ সংক্রান্ত অসংখ্য ফিচার তো অন্তর্জালেই ছড়ানো রয়েছে। প্রয়োজন শুধু গুগলে একটু খোঁজাখুঁজির। এসব দেখে সফল মানুষ হওয়ার পথে আপনি হাঁটতে তো শুরু করলেন, কিন্তু জানেন কি, একজন সফল মানুষ কীভাবে তাঁর প্রতিটি দিন শেষ করেন? আন্তর্জাতিক ব্যবসাবিষয়ক বক্তা ও ‘ইউ ক্যান্ট বি সিরিয়াস! পুটিং হিউমার টু ওয়ার্ক’ বইয়ের লেখক মাইকেল কের-এর মতে, প্রতিটি কর্মব্যস্ত দিন আপনি কীভাবে শেষ করলেন সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, একজন সফল মানুষ দিনশেষের ১০ মিনিটে ১৪টি কাজ করেন।

ইন্ডিয়া টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী চলুন জেনে নিই সেই কাজগুলো কী কী :

পরবর্তী দিনের কর্মতালিকা তৈরি :

একজন সফল পেশাদার মানুষ সবসময় তার পরবর্তী দিনের কর্মতালিকা প্রস্তুত রাখেন। দিন শেষ করার আগে আরো একবার চোখ বুলিয়ে নেন তালিকায়। দেখে নেন তিনি কিছু ভুলে যাচ্ছেন কি না। হঠাৎ করে কোনো কিছু মনে পড়লে সেটাও যুক্ত করে নেন পরবর্তী দিনের কাজের তালিকায়।

নিজের ডেস্ক আর কম্পিউটার গুছিয়ে যাওয়া :

আপনি যদি গোছানো না হন তাহলে যেকোনো কাজ শেষ হতে বাড়তি সময় লেগে যেতে পারে। বলা হয়, কাজের ডেস্ক বা কম্পিউটারে যদি প্রয়োজনীয় সব কিছু গোছানো থাকে তাহলে স্পষ্ট চিন্তা করে সুষ্ঠুভাবে কাজ শেষ করা সম্ভব। এতে কাজের সময় হঠাৎ করে কোনো কিছু প্রয়োজন হলে তা সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। একজন সফল মানুষ কাজ শেষে প্রয়োজনীয় সব কাগজ ও নথি গুছিয়ে রেখে যান। যাতে পরবর্তী দিন সেগুলো সহজেই খুঁজে পাওয়া এবং কাজে লাগানো যায়।

সারা দিনের কাজ পর্যালোচনা করেন :

কর্মক্ষেত্র বিশেষজ্ঞ ল্যান টায়লর বলেন, সামনে কী করবেন তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো কী কী করে এসেছেন। এ বিষয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেন কের। তিনি বলেন, এক মিনিটের জন্য হলেও ভাবুন যে সারা দিনে কী কী অর্জন করলেন। এই ভাবনা আপনার ভেতরে পূর্ণতার জন্ম দেবে। ভীষণ ব্যস্ত একটা দিনের পর আপনি যখন কী কী করলেন তা নিয়ে একটু ভাববেন, তখন দেখবেন প্রত্যাশার চাইতেও বেশি কাজ হয়তো সেদিন আপনি করে ফেলেছেন। আর এতেই নিজের ভেতরে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি অনুভব করবেন আপনি। আর এতে আপনার সামগ্রিক জীবনেও সুখের ছোঁয়া লাগবে।

সফল মানুষ কিছু সময়ের জন্য পেছনে ফিরে তাকান :

একজন সফল মানুষ শুধু তাঁর নিজের প্রতিদিনকার কাজ পর্যালোচনা করেন না। তাঁরা এটাও দেখে থাকেন যে, যা ঘটছে তা কেন ঘটছে। ভালো কেন হচ্ছে আর মন্দ কেন হচ্ছে- সেটাও খেয়াল করেন তাঁরা। সত্যিকারের পেশাদার ব্যক্তিরা জানেন যে, সামনে এগোতে হলে শিখতে হবে। শেখার কোনো বিকল্প নেই।

জরুরি যোগাযোগ রক্ষা করা :

আপনি যত ব্যস্তই থাকুন না কেনো যোগাযোগের ধারাবাহিকতা তো রক্ষা করতেই হয়। হয়তো কখনো কখনো কাজের চাপে সব মেইল বা টেলিফোনের উত্তর দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তবে একজন সফল মানুষ জানেন, দিনশেষে ঠিক কোন মেইল বা বার্তার উত্তর দিতে হবে।

সফল মানুষেরা মনোযোগী হন :

কর্মব্যস্ত দিন পার করার পর শেষ সময়টাতে মন কিছুটা বিক্ষিপ্ত হয়ে যেতে পারে। দিনের শুরু মতো চাঙ্গা আপনি দিন শেষে নাও নাকতে পারেন। তবে সফল মানুষরা নিজেকে বিভ্রান্ত হতে দেন না। ফলে দিন শেষেও কাজের বাইরের কোনো দুশ্চিন্তা এসে তাদের দ্বিধাগ্রস্ত করতে পারে না।

আগামী দিনের প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা :

সফল মানুষদের কাছে সবসময়ই তাঁদের পরবর্তী দিনের জন্য কাজ প্রস্তুত থাকে। তাঁরা স্পষ্টভাবে জানেন যে, কোন কাজ দিয়ে তাঁরা আগামী দিনটি শুরু করতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে টায়লর বলেন, আপনার হয়তো পরবর্তী দিনের কাজের মধ্যে দুই-তিনটি এমন কাজ রয়েছে যেগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো একটা কাগজে লিখে রাখুন। এগুলো দিয়েই আপনি আগামী দিন শুরু করতে পারেন। কাগজে লিখে রাখলে বিষয়টি মনেও ভালোভাবে গেঁথে যায়। ফলে পরিষ্কার মন নিয়ে নতুন দিনে নতুন উদ্যমে আপনি কাজ শুরু করতে পারেন।

দিনের শুরু ও শেষের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে সহকর্মীদের জানানো :

একজন সফল মানুষ জানেন দিনের শুরু ও শেষের মধ্যে কী পার্থক্য থাকে। তাঁরা জানেন এই সময়ের পার্থক্য সহকর্মীদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করতে হবে। কখন কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে বা কার সাথে কোন বিষয়ে কথা বলতে হবে- সে বিষয়েও দারুণ পারদর্শী হন তাঁরা।

পরের দিনের সময়সূচি পর্যালোচনা করেন :

কোনো দিন সকালে অফিসে পৌঁছেই আপনি জানলেন যে পাঁচ মিনিটের মধ্যে একটি মিটিং আছে। এর চেয়ে খারাপ ভাবে আর দিন শুরু হতে পারে না, তাই না? তবে সফল মানুষেরা আগের দিনই পরের দিনের সময়সূচি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে রাখেন। ফলে এ ধরনের বিড়ম্বনায় তাঁদের পড়তে হয় না। তাঁরা হন আত্মবিশ্বাসী।

মানুষকে অপেক্ষমান না রাখা :

ধরুন কোনো একজন সহকর্মীকে বলেছেন যে তাঁকে একটি ফাইল পাঠাবেন আপনি। কিন্তু কাজের চাপে ভুলে গেছেন। আর সেই সহকর্মী সারা রাত আপনার পাঠানো ফাইলের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে যখন আপনার মনে পড়েছে তখন দিন গড়িয়ে গেছে। এ রকম হওয়াটা খুবই বিড়ম্বনার। তাই সফল মানুষরা পরিকল্পনা ছাড়া কিছুই করেন না। প্রতিটি ইমেইলের জবাব দেন তাঁরা। কাউকে কোনো কাজ দিলেও তা যথাসময়ে দেন। কোনো দিন কোনো অপারগতা থাকলে সেটিও জানিয়ে দেন সময়মতো।

তাঁরা ধন্যবাদ জানাতে ভোলেন না :

পারস্পরিক সহযোগিতা আর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর কর্মক্ষেত্র গড়ে ওঠে। সারা দিনের কাজ শেষে সহকর্মীকে ধন্যবাদ দিলে নিজে যেমন আনন্দ পাওয়া যায় তেমনি সহকর্মীর কাজের গতিও তরান্বিত হয়।

তাঁরা বিদায় বলতে জানেন :

বন্ধুসুলভভাবে বিদায় জানিয়ে দিনশেষে কর্মস্থল থেকে বেরিয়ে আসা যায়। এতে খুব সামান্য পরিশ্রম হয় কিন্তু সহকর্মীরা খুশি হন। এটা আপনার সহকর্মীদের মনে করিয়ে দেয় যে আপনিও মানুষ, শুধু একজন সহকর্মী নন। এতে সবার মনে এটাও চলে আসে যে আরো একটি কর্মব্যস্ত দিন শেষ হলো।

ইতিবাচক মনোভাব রাখা :

দিনশেষ করার আগে চমৎকার একটা হাসি দিয়ে নিজের মনকে চাঙ্গা করুন। এতে আপনার সঙ্গে সারা দিন ধরে কাজ করা মানুষগুলোর মধ্যেও আশার আলো ছড়াবে। সফল নেতারা দিন শেষে চমৎকার অনুভূতি রেখে আসেন সহকর্মীদের মাঝে। যা পরবর্তী দিনের সকাল পর্যন্ত দারুণ একটা অনুভূতি বজায় রাখে।

সত্যিকার অর্থে অফিস ত্যাগ করেন :

সফল মানুষরা গড়িমসি করেন না। তাঁরা জানেন কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখাটা কতটা জরুরি। তাই তাঁরা সঠিক সময়ে কর্মক্ষেত্র ত্যাগ করেন। কোনো ভালো কারণ ছাড়া অফিসে সময় কাটানো আপনার পরবর্তী দিনের জন্য সঞ্চিত শক্তিকে কমিয়ে দেয়। তাই সবসময় সময়মতো অফিস ত্যাগ করা উচিত।

Leave a Reply

You missed

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ