এখনো সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যায় সঞ্চয়পত্র থেকে। তাই সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন একটু কড়াকড়ি করা হয়েছে। তবে নিয়ম-কানুন মেনে চলা মানুষের জন্য সঞ্চয়পত্র কেনা খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। আসুন তবে জেনে নেই সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম-কানুন—
কারা কিনতে পারেন
সঞ্চয়পত্র কারা কিনতে পারবেন? এ বিষয়ে অনেকেরই ধারণা নেই। তাই তারা আগে জেনে নেবেন—
• ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক একক বা যৌথ নামে কিনতে পারবেন।
• পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী (পুরুষ-নারী), ৬৫ বছর ও তদুর্ধ্ব বয়সের যেকোনো নাগরিক একক নামে কিনতে পারবেন।
• পেনশনার সঞ্চয়পত্র সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এলপিআরে থাকা অবস্থায় প্রাপ্ত প্রভিডেন্ট ফান্ড ও চূড়ান্ত অবসর নেওয়ার পর আনুতোষিকের টাকা দিয়ে পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। পারিবারিক পেনশনের আওতায় তাদের স্বামী, স্ত্রী বা সন্তান এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।
• কোনো প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে না। তবে কমকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পের আয়ের ১০ শতাংশ অর্থ দিয়ে শুধু ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। যেকোনো সঞ্চয়পত্র নাবালকের পক্ষে কিংবা যুগ্ম নামে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি কিনতে পারবেন।
• তিন বছর মেয়াদী ডাকঘর সঞ্চয়পত্র যে কেউ কিনতে পারবেন।
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র (প্রবর্তনঃ ২০০৪ খ্রিঃ)
মূল্যমানঃ ১,০০,০০০ টাকা; ২,০০,০০০ টাকা; ৫,০০,০০০ ও ১০,০০,০০০ টাকা।
কোথায় পাওয়া যায়ঃজাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক শাখাসমূহ বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ এবং ডাকঘর থেকে ক্রয় ও নগদায়ন করা যায়।
মেয়াদঃ ৩ (তিন) বছর।
মুনাফার হারঃ
মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়ন করলে উপরোক্ত ছকে উল্লেখিত হারে মুনাফা প্রাপ্য হবে এবং অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধিত হয়ে থাকলে তা মূল টাকা হতে কর্তন করে সমন্বয়পূর্বক অবশিষ্ট মূল টাকা পরিশোধ করা হবে।
মুনাফাঃ উৎসে করঃ ৫-বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩-মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্রে ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা পর্যন্ত সর্বমোট বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার উপর ৫% হারে এবং এর অধিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার উপর ১০% হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়।
যারা ক্রয় করতে পারবেনঃ সকল শ্রেণি ও পেশার বাংলাদেশী নাগরিক এবং অটিস্টিকদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/ অন্য যে কোন অটিস্টিক সহযোগি প্রতিষ্ঠান (যাদের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা অটিস্টিকদের সহায়তায় অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে) যা সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয় কর্তৃক প্রত্যয়নকৃত।
ক্রয়ের ঊর্ধ্বসীমাঃ একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ (ত্রিশ) লক্ষ অথবা যুগ্ম-নামে সর্বোচ্চ ৬০ (ষাট) লক্ষ টাকা।
অন্যান্য সুবিধাঃ
(ক) ত্রৈমাসিকভিত্তিতে মুনাফা প্রদেয়।
(খ) নমিনী নিয়োগ করা যায়।
(গ) সঞ্চয়পত্রের ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনী সাথে সাথেই সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করে টাকা উত্তোলন করতে পারেন অথবা পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত যথারীতি প্রতি তিন (৩)মাস অন্তর মুনাফা উত্তোলন করতে পারেন।
কীভাবে কিনবেন
বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখা অফিস, সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের অধীন সারাদেশে ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো অফিস এবং পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্র কিনতে পাওয়া যায়। নগদ টাকা ও চেকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।
নমিনি
সঞ্চয়পত্রে নমিনি বাধ্যতামূলক নয়। তবে নমিনি মনোনয়ন করা বাঞ্ছনীয়। এক বা একাধিক নমিনি রাখা যায়। নাবালকও নমিনি হতে পারে। নমিনি না থাকলে মূল মালিকের মৃত্যুর পর ৩ মাসের মধ্যে আদালত থেকে উত্তরাধিকার সনদ নিয়ে আইনানুগ উত্তরাধিকারী সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে পারবেন।
কাগজপত্র
সব সঞ্চয়পত্রেরই নির্দিষ্ট ফরম আছে। গ্রাহকদের এ ফরম পূরণ করতে হয়। সঙ্গে দিতে হয় গ্রাহক ও নমিনির ২ কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি। গ্রাহকের ছবি সত্যায়িত করতে হয় প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মচারীর মাধ্যমে। আর নমিনির ছবির সত্যায়ন করবেন গ্রাহক নিজে। গ্রাহক ও নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক। নমিনি নাবালক হলে জন্মনিবন্ধনের কপি লাগবে। আগে না লাগলেও সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে এখন লাগে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ইটিআইএন)। এ ছাড়া গ্রাহকের নিজ ব্যাংক হিসাবের চেকের কপি, যে হিসাবে গ্রাহকের মুনাফা ও আসল টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হবে। পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাড়তি কাগজ হিসেবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সনদ লাগে।
চুরি বা হারালে
সঞ্চয়পত্র চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে বা অন্য কোনোভাবে নষ্ট হলে গ্রাহকের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। যে অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা, সেই অফিসে বিষয়টি অবগত করে ডুপ্লিকেট সঞ্চয়পত্র পাওয়া যাবে।
স্থানান্তর
গ্রাহক চাইলে সঞ্চয়পত্র স্থানান্তর করে নিতে পারবেন। অর্থাৎ কোনো গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কিনে তা স্থানান্তর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য যেকোনো অফিসে নিতে পারবেন। সেখান থেকে সুবিধা নিতে পারবেন। একইভাবে অন্যান্য ব্যাংকের বেলায়ও স্থানান্তর করা যায়।