কর্মজীবনকে সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য গতানুগতিক ডিগ্রির পাশাপাশি উন্নত ওউচ্চপর্যায়ে বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন৷ বেসরকারিকয়েকটি ব্যাংক সহজ শর্তে ছাত্রদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিয়ে থাকে৷ আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিতে যে ঋণ দেওয়া হয়। শিক্ষা ঋন যে ব্যাংকের মাধ্যমে নিবেন
তাই স্টুডেন্ট লোননামে পরিচিত৷ আপনাদের সুবিধার্থে কিছু ঋণদানকারীপ্রতিষ্ঠানের ঋণদানেরশর্তসমূহ, সুদের হার, ঋণ নেয়ার জন্য যোগাযোগ করার ঠিকানা বিস্তারিত দেয়াহল
ঋণ দিচ্ছে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান :
দেশের অর্থনৈতিক মন্দা এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণদানেরখাতসমূহকে সন্কুচিত করে দিলেও বিশেষ সেবা প্রদান কর্মসূচির আওতায় দেশেরবেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠান ছাত্রঋণ দিয়ে থাকে৷ এর প্রধানউদ্দেশ্য, উচ্চবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও যেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণেরসুযোগ পায়৷ কিছু কিছু ব্যাংক একে ক্যারিয়ার লোন বলে আবার কিছু ব্যাংক একেসরাসরি স্টুডেন্ট লোন বা শিক্ষা ঋণ নামে অভিহিত করে৷ সাধারণত অভিভাবক অথবাসরাসরি শিক্ষার্থীদেরও এ ধরনের ঋণ দেওয়া হয়৷ তবে এ ক্ষেত্রে অভিভাবকঅথবা শিক্ষার্থীদের ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কিছু শর্ত মেনে ঋণ নিতেহয়৷
ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের নাম
• এইচএসবিসি ব্যাংক
• ব্র্যাক ব্যাংক
• প্রাইম ব্যাংক
• ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
• উত্তরা ব্যাংক
• গ্রামীন ব্যাংক
ঋণ উঠানোর যোগ্যতা
ঋণ পরিশোধে সক্ষম বিবেচিত যে কেউ এই ব্যাংকগুলো থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে ঋণনিতে পারে৷ সাধারণত সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতকর্মকর্তা-কর্মচারীকে যাদের বেতন ১২-১৮ হাজার টাকা তারাই এ লোনের সুবিধাপেয়ে থাকেন৷ ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে আয়ের প্রমাণ সাপেক্ষে মাসিক আয়অবশ্যই ৫০ হাজার টাকা হতে হবে৷ ২৫ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সের যে কেউ যোগ্যতাঅনুসারে ঋণ নিতে পারবেন৷
ঋণ নেওয়ার পদ্ধতি
অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা নিতে আগ্রহী হন, তবে যেসবব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে সেগুলোর যেকোনো শাখায় গিয়ে মার্কেটিং/ক্রেডিটবিভাগে যোগাযোগ করতে হবে৷ সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাই আপনাকেবিস্তারিত জানিয়ে দেবেন৷ তবে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ও ডকুমেন্টযেমন-
আয়ের প্রমাণপত্র, কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সনদ ও ছাত্রছাত্রীরসম্মতিপত্র জমা দিতে হবে৷ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেনূন্যতম সময়ে আপনার কাw•ক্ষত ঋণ দিয়ে দেবে৷
এইচএসবিসি ছাত্র ঋণ
এইচএসবিসি থেকে ছাত্রঋণ নেয়ার শর্ত :
• কোনো প্রকার ব্যক্তিগত গ্যারান্টি বা নগদ জামানত দিতে হয় না
• ঋণ নিতে হলে অবশ্যই পরিবারের কোন সদস্যকে আয় করতে হবে এবং তার মাসিক আয় ১৮ হাজার থেকে ২২ হাজার হতে হবে ৷
• এইচএসবিসি ৫০ হাজার টাকা থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা অথবা ঋণ গ্রহণকারীর মাসিক আয়ের ৪ গুণ পরিমাণ ঢাকা ঋণ দিয়ে থাকে৷
• ঋণের সুদের হার ১৮%
• তুলনামূলক কম সুদে এই ঋণ পরিশোধ করতে হয় ১২, ২৪, ৩৬, ৪৮ ও ৬০ মাসের মধ্যে৷
• স্টুডেন্ট ফাইল খোলার সুবিধা আছে৷
• যদি কোনো আউটপুট অথবা সিইপিএস গ্রাহক ছাত্রঋণ নিতে চায়, তবে তাকে ৬ ও ১০গুণ হিসেবেও ঋণ দেওয়া হয়৷ তবে তা সর্বোচ্চ ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশিনয়৷
ব্র্যাক ব্যাংকে সরাসরি এডুকেশন লোন স্কিম না থাকলেও পার্সোনাল লোন স্কিমের মাধ্যমে লোন দেয়৷
ব্র্যাক ব্যাংক শিক্ষাঋণের শর্তসমূহ
• দেশের বাইরে পড়াশুনার জন্য ঋণ প্রদান করে থাকে৷
• কোন জামানত ছাড়া১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করা যায়৷
• সবোর্চ্চ ঋণ দেয়ার পরিমান ৩০ লাখ টাকা
• ঋণ পরিশোধ করার জন্য সময় পাওয়া যায় ১-৪ বছর৷
• ঋণ পরিশোধের হার ১৫%
• ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে ৷
• বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে ৷
প্রাইম ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার শর্তসমূহ :
• শিক্ষা ঋণ ছাত্র বা ছাত্রীর অভিভাবককে দেয়া হবে ৷ অভিভাবকের আয় অনুযায়ী ঋণের পরিমাণ নিধাᐂরন করা হয় ৷
• এ লোন স্কিম থেকে আগ্রহীরা ১-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারেন৷
• পরিশোধের সর্বোচ্চ সময়সীমা ২ বছর৷
• এ জন্য প্রাইম ব্যাংকে শতকরা ১৫ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করতে হয়৷
• শিক্ষাথী©কে তার প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দিতে হবে ৷ এবং খরচেরপরিমাণের ভিত্তিতে
• লোন দেয়া হয়ে থাকে ৷
ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড থেকে শিক্ষাঋণের শর্তসমূহ:
ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ের ক্ষেত্রে এইচডিএসনামের স্কিমের আওতায় পণ্যসামগ্রীর মূল্যের এক-চতুর্থাংশ ডাউন পেমেন্টনিয়ে লোন দেয়৷
এ জন্য অবশ্য প্রতি বছর ১২.৫০ শতাংশ এবং সুপারভিশন চার্জহিসেবে ২ শতাংশ হারে শোধ করতে হয়৷
এখানে মাসিক কিস্তিতে সর্বোচ্চ ২ বছরের মধ্যে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করেত হয়৷
বেতনভুক্ত চাকুরীজীবিদের ব্যক্তিগত ঋণ প্রকল্প
বাংলাদেশের চাকুরীজীবিরা সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠী৷ অনেকেই তাদের নিজস্ব সঞ্চয়বা সীমিত আয়থেকে নিজের বা পোষ্যদের বিবাহ, চিকিত্সা, সন্তানদের শিক্ষা ওঅন্যান্য জরুরি ব্যয় বহনে অসমর্থ৷ এই জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তা দানেরউদ্দেশ্যে উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড বেতনভুক্ত চাকুরীজীবিদের ব্যক্তিগত ঋণপ্রকল্প (Personal Loan Scheme for Salaried Officers) চালু করেছে৷
(ক) প্রকল্পের উদ্দেশ্য:
সীমিত আয়ের বেতনভুক্ত চাকুরীজীবিদের সুস্বস্থ্য, সন্তানদের শিক্ষা ও সুখী জীবন উন্নয়নই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য৷
(খ) যে সব ক্ষেত্রে এই প্রকল্পের আওতায় ঋণ দেওয়া যাবে:
চাকুরীজীবির নিজের বা পোষ্যের বিয়ের জরুরি ব্যয়৷
চাকুরীজীবির জরুরি সার্জিক্যাল অপারেশন/চিকিত্সা ব্যয়৷
সন্তানদের জরুরি শিক্ষাসংক্রান্ত ব্যয় যেমন-ভর্তি, বই কেনা, পরীক্ষার ফিস ইত্যাদি৷
ব্যাংকের নিকট গ্রহণযোগ্য অন্যান্য জরুরি প্রয়োজন৷
(গ) যারা এই প্রকল্পের আওতায় ঋণ পেতে পারেন:
২০ (বিশ) থেকে ৫৫ (পঞ্চান্ন) বছর বয়স সীমার মধ্যে নিম্নে বর্ণিত সার্ভিসগ্রুপের কর্মরত স্থায়ী চাকুরীজীবিগণ এই প্রকল্পের আওতায় ঋণ সুবিধাগ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারেন:
১) সরকারি৷
২) আধা-সরকারি৷
৩) স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান৷
৪) যৌথসংস্থা৷
৫) ব্যাংক (উত্তরা ব্যাংক লিঃ এর চাকুরীজীবিগণ ব্যতীত)৷
৬) বীমা কোম্পানী
৭) সশস্ত্রবাহিনী, বি,ডি,আর, পুলিশ এবং আনসার বিভাগ৷
৮) বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও সরকারি স্কুল শিক্ষক৷
ঌ) মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী৷
১০) ব্যাংকের নিকট গ্রহণযোগ্য অন্যান্য খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান৷
(ঘ) ঋণের পরিমাণ:
সর্বচ্চো টাঃ ১.০০ লক্ষ৷
(ঙ) ঋণ পরিশোধের মেয়াদ:
ক্ষেত্র বিশেষে নির্ধারন যোগ্য কিন্তু ৩ (তিন) বছরের অধিক নয়৷
(চ) সুদ ও অন্যান্য চার্জ:
১) সুদ: ১৬.৫% চক্রবৃদ্ধি হারে বকেয়া কিস্তির উপর কিন্তু ১০ টাকার কম নয়৷
২) দন্ড সুদ: মাসিক ২% হারে বকেয়া কিস্তির উপর কিন্তু ১০ টাকার কম নয়৷
৩) সার্ভিস চার্জ: ঋণের পরিমাণ ৫০,০০০.০০ টাকা পর্যন্ত টাঃ ২৫০.০০ এবং৫০,০০০.০০ টাকার উর্ধ্বে টাঃ ৫০০.০০ (ঋণ প্রদানের পূর্বে এককালীন দেয়)৷
৪) রিন্ক ফান্ডঃ ঋণের অংকের ২% কিন্তু সর্বনিম্ন টাঃ ৩০০.০০ (অফেরতযোগ্য) ঋণ গ্রহণের পূর্বে এককালীন দেয়৷
৫) আবেদন পত্র ও প্রসপেকটাস: মূল্য টাঃ ২৫.০০ (অফেরতযোগ্য)৷
(ছ) ঋণ পরিশোধের পদ্ধতি:
মূল ঋণ ও ইহার উপর অর্পিত সুদ সমান মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে৷ ঋণগ্রহণের পরবর্তী মাস থেকে প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে ঋণ গ্রহিতার মাসিকবেতন থেকে কিস্তি আদায় করা হবে৷ ঋণ গ্রহণের পূর্বে গ্রাহক প্রতিটি কিস্তিরজন্য ব্যাংকের অনুকূলে অগ্রিম চেক জমা দিবে যা নির্দিষ্ট তারিখে সংশ্লিষ্টব্যাংকে পরিশোধের জন্য পেশ করা হবে৷ ঋণ গ্রহণের পূর্বেই ঋণ পরিশোধের সময় ওকিস্তির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে৷
(জ) জামানত ও চার্জ ডকুমেন্টস:
১) ঋণ গ্রহিতার বেতন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রেচুয়েটি ইত্যাদি লিয়েন (Lien) পত্র৷
২) ১৫০.০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল ষ্টাম্প এর উপর ব্যাংকের অনুমোদিতগ্যারান্টি বন্ড যাহা ঋণ গ্রহিতার উপরের পদমর্যাদা সম্পন্ন অফিসার, যে কোনোব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার এবং তার উপরের পদমর্যাদা সম্পন্ন কর্মকর্তাকর্তৃক প্রদেয়৷
৩) বেতন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিশ্চয়তা পত্র৷
৪) ব্যাংকের অনুমোদিত ফরম এ মাসিক কিস্তি পরিশোধের অঙ্গীকার নামা প্রদান৷
৫) গ্রাহক কর্তৃক ঋণ গ্রহণের পূর্বে প্রতিটি কিস্তির জন্য পৃথকভাবে ব্যাংকের অনুকূলে অগ্রিম চেক প্রদান৷
৬) ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী অন্যান্য চার্জ ডকুমেন্টস৷
ঝ) ঋণ আবেদন পদ্ধতি:
১) ব্যাংকের নির্ধারিত ফরম এর সকল কলাম পূরন ও স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনপত্র৷
২) প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার অথবা কোনো ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার বাতদুর্ধ পদমর্যাদার কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্টসাইজ ফটো৷
Comments (No)