আজকের আলোচ্য বিষয় ভিডিও দেখে টাকা ইনকাম। আপনাদের ২০টি ওয়েবসাইট কিংবা এপের বর্ণনা দেব। যেখান থেকে সহজেই ভিডিও দেখে আয় করতে পারবেন। অনলাইনে আয় করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ভিডিও দেখে বা এড দেখে আয়। এরকম কতগুলো সাইট বা এপস আছে। যেখান থেকে এড বা ভিডিও দেখে টাকা আয় করা যায়। তবে আয় করার পরিমাণ এবং কোয়ালিটি খুবই কম হয়। তারপরো আমি ইন্টারনেটের অন্যান্য স্প্যামিং সাইট থেকে কয়েকশ গুণ ভালো সাইট নিয়েই আলোচনা করব। যাতে আপনাদের এ বিষয়ে আর স্প্যামিংয়ের স্বীকার না হতে হয়। তাহলে চলুন দেরী না করে শুরু করি।
ভিডিও দেখে টাকা ইনকাম কিভাবে হবে?
প্রথমে আপনাকে কিছুটা ধারণা দিয়ে দেই। যে এসব ওয়েবসাইট থেকে আয় করার উপায় কি রকম? এসব সাইট আপনাকে স্পন্সার করা ভিডিও গুলো দেখিয়ে থাকে। অথবা কোনো এপ্লিকেশন একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যাপী চালানোর কথা বলে। এভাবে আয় করা যায়। ২০টি লেজিট ওয়েবসাইট, যারা আপনাকে পেমেন্ট দিবে। তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
১। National Consumer Panel। অনলাইন সার্ভে ভিডিও প্ল্যাটফর্ম।
এটি এমন একটি কোম্পানি যারা কাস্টমারদের বিভিন্ন তথ্য-ব্যবহার সম্পর্কিত ডাটা সংগ্রহ করে। মানে তথ্য সংগ্রহ করে। এজন্য তারা জরিপ কিংবা ভিডিও আকারে জরিপ প্রদান করে। সেগুলো পূরণ করেও আপনি এখানে আয় করতে পারেন।
তার আগে ভিডিও জরিপ সম্বন্ধে ধারণা দিয়ে রাখি। ভিডিও জরিপ এমন একটি জরিপ ব্যবস্থা, যেখানে ভিডিও দেখে টাকা ইনকাম করা যায়। একই সাথে জরিপও পূরণ করা সম্ভব। এবং সে ভিডিওতে বিভিন্ন পণ্যের সম্বন্ধে জানা যায়। আর এই মাধ্যমে মূলত সাইটে ইউজারদের অর্থ দিয়ে থাকে। এখানে যে সকল জরিপ আছে সেগুলো পূরণ করার মাধ্যমে আপনাদের থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে। এবং তার বদলে যথাপোযুক্ত অর্থ প্রদান করবে। এটি ডাটা এন্ট্রি জব এর মত নয়। বরং এটি আপনার কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে নিবে।
এর এপ ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আই-ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রোডাক্ট স্ক্যান করতে পারেন। কিংবা এই এখানে এই সাইটের নিজস্ব অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। এখানে যত বেশি জরিপ পূরণ করবেন, তত বেশি আয় করতে পারবেন। এর নিজস্ব অ্যাপ আছে। সেখান থেকে জরিপ পূরণ করলে আয় করা যায়। এখান থেকে এন সি পি পয়েন্ট অর্জন করতে পারেন। সে পয়েন্টগুলো পরবর্তীতে গিফট কার্ড কিংবা অনলাইন ক্যাশ নেয়ার জন্য রিডিম করে নিতে পারেন।
২। AppNana ইনকাম করুন:
এপনানা এমন একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। যেখানে ভিডিও দেখার পরিবর্তে পয়েন্ট রিডিম করার ব্যবস্থা আছে। এটি জনপ্রিয় অনলাইন এপ্লিকেশন। যেটি প্লে স্টোর থেকেও ডাউনলোড করা যায়। এখানে আপনি পয়েন্ট জমিয়ে এমাজন গিফট কার্ড, গুগল গিফট কার্ড রিডিম করতে পারেন।
পয়েন্ট গুলো আপনারা ২০-৩০ সেকেন্ডের ভিডিও দেখে রিডিম করতে পারবেন। এখানে বন্ধু-বান্ধব রেফার করার মাধ্যমেও আয় করা যায়। যখন কেউ আপনার রেফারটি গ্রহণ করবে। সাথে সাথে ২৫০০ পয়েন্ট নিয়ে নিতে পারবেন।
এপনানার মিনিমাম পে-আউট হলো ২ ডলার। যেটি পেপাল অথবা গুগল গিফট কার্ড রিডিম করে নিতে পারেন। আপনাকে সিমপ্লি রেজিস্ট্রার করতে হয় জি-মেইল একাউন্ট ব্যবহার করে। সাথে পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। তারপর এটি সম্পন্ন হয়ে যাবে। যদি পেপাল ব্যবহার করেন, তাহলে সাথে সাথে পেমেন্ট রিডিম করতে পারবেন। আর গিফট কার্ড হলে, রিডিম কোর্ড ১ সপ্তাহ পর আসে।
৩। SuccessBux । সহজেই ভিডিও দেখে অনলাইনে আয়।
সাক্সসেস বাক্স একটি অনলাইন ওয়েবসাইট। এটি আরেকটি ফ্রী ওয়েবসাইট। যে্টি ভিডিও দেখে টাকা আয় করার সুবিধা দেবে। এই ওয়েবসাইট রেগুলার ইউজারদেরকেই কেবল এলাও করে। এখানে কোনো ভিডিও রান করে, আপনি দরকারী কাজে যেতে পারবেন না। বরং মাঝে মধ্যেই ভিডিও তে ক্লিক করতে হয়।
এখানে আয় করার কিছু উপায় আছে। প্রথমত এখানে ভিডিও দেখে টাকা ইনকাম করা যায়। আবার অনলাইন রেডিও শুনেও আয় করা যায়। এছাড়াও রেফার করে। আবার অন্যের প্রোডাক্ট টেস্ট বা রিভিও করেও আয় করা যায়। এখানে ১০ মিনিট ধরে যেকোনো রেডিও শুনলেই পাবেন $0.005।
এখানে কিছু পেইড মেম্বারসিপ আছে। যেগুলো টাকা দিয়ে কিনে নিলে, আপনি আপনার রেফারদের থেকে ১০০ ভাগ আয় পাবেন। রেফার করার ভালো প্রতিভা থাকলে এই ওয়েবসাইট আপনার জন্য। এখানে মিনিমাম ১ ডলার উইথড্র করতে পারবেন। উইথড্র করার উপায় পেপাল কিংবা পেয়জা।
৪। Swagbucks: অনলাইনে বেস্ট ভিডিও-সার্ভে প্ল্যাটফর্ম:
সোয়াগ বাক একটি আন্তর্জাতিক মানের জরিপ পূরন করার সাইট। জরিপ পূরণ করা শিখে নিতে পারলে, অনলাইনে জরিপ পূরন করেই প্রচুর টাকা ইনকাম করা যায়। ২০০৫ সালে লঞ্চ হওয়া সোয়াগবাক একটি ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক কোম্পানি। যেটি অনলাইনে এড দেখার জন্য টাকা পে করে। অহ না, এটি ডলার পে করে। সোয়াগবাক অনলাইন দুনিয়ায় সবচেয়ে পুরাতন এবং জনপ্রিয় সাইট। এর যথেষ্ট খ্যাতি আছে। তারা আসলেই অর্থ আয় করার সুযোগ দেয়। যারা তাদের দেয়া ভিডিওগুলো ওয়াচ করে বা দেখে তারা আয় করে।
তারা বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখার জন্য অর্থ প্রদান করে। পেমেন্ট দেয়। সেটা হতে পারে ইউটিউবে ভিডিও অথবা কোন ভিন্ন সাইটের ভিডিও। এমনকি কখনো কখনো কোনো বিশেষ সাইটে টিভি দেখার মাধ্যমে আয় করা সম্ভব। কিংবা তাদের নিজস্ব কোন ভিডিও যদিও ভিউ করেন, তাহলে সেখান থেকে আয় করার সুযোগ দিবে। যেহেতু এটি একটি জরিপ সাইট। সেহেতু এখানে জরিপ পূরণ করে, অনলাইনে এড দেখে, আরো নানা ভাবে আয় করা যায়। এমনকি অনলাইনে শপিং করলেও তারা বিভিন্ন ডিসকাউন্ট দেয়। ডিসকাউন্ট কুপন ইউজ করে আয় করা যায়।
সোয়াগবাক তার ব্যবহারকারীদেরকে মোট $275,000,000 ক্যাশ এবং গিফট কার্ড প্রদান করেছে। ভিডিও দেখার পাশাপাশি, তারা যে সকল কাজের জন্য আপনাকে অনলাইনে অর্থ প্রদান করবেঃ
১) অনলাইন শপিং।
২) অনলাইন সার্ভে পূরণ।
৩) তাদের অফার গুলো পূরণ করা।
৪) ওয়েব ব্রাউজিং।
৫) ওয়েবসাইটে কোন কিছু সার্চ করা।
৬) অনলাইনে কিংবা নিজের মোবাইলে বিভিন্ন। ধরনের গেম ইন্সটল করা।
৭) গেম খেলা।
৮) তাদের মোবাইলে এপ ব্যবহার করা।
এখানে কিছুসংখ্যক ভিডিও দেখেই এস বি পয়েন্ট কামিয়ে নিতে পারেন। ভিডিও দেখার ক্যাটাগরী গুলো হলোঃ ফ্যাশন, ভ্রমণ,খাবার,স্বাস্থ্য,রান্না-বান্না। রাজনীতি, খেলাধুলা নিয়ে সারভে করেও আয় করা যায়। এখানে প্রথমবার সাইন আপ করলেই ৫০ এস বি পয়েন্ট দেয়া হয়। এই এস বি পয়েন্টগুলা গিফট কার্ড হিসেবে রিডিম করে নিতে পারেন। গিফট কার্ড কিভাবে রিডিম করতে হয় তা ব্লগের একেবারে নিচে বলা আছে। সোয়াগ বাক প্রায় ১৩ বছর ধরে পে করে যাচ্ছে। সোয়াগবাকে ভালোমতো কাজ করার জন্য সবচেয়ে বেস্ট Tree VPN.
৫। iRazoo: আয় হবে :
সার্ভে পূরণ কিংবা ভিডিও দেখা এই দুই উপায়ে এখান থেকে অতিরিক্ত টাকা ইনকাম করে নিতে পারেন।
এখানে জরিপ পূরণ করে পয়েন্ট জমিয়ে রাখতে পারবেন। নিজের মতামত শেয়ার করে আয় করতে পারেন। যেকোনো মন- পছন্দের গেম খেলে টাকা ইনকাম করে নিতে পারেন। এখানে আই-রেজু সার্চ আছে। যেখানে প্রতিটি সার্চের জন্য পাবেন ২৫ পয়েন্ট করে।
আপনি ৩০০০ পয়েন্ট কালেক্ট করে নিবেন। এবং সাথে সাথে গিফট কার্ড রিডিম করে নিতে পারেন। এখানে গুগল গিফট কার্ড, এমাজন,ওয়ালমার্ট, বেস্ট বায় গিফট কার্ড রিডিম করতে পারবেন।
৬। Dollartune: ভিডিও দেখে ডলার উপার্জন:
Dollar Tune একটি রিসেন্ট প্রতিষ্ঠান। যেটি পেটিএমেও টাকা উইথড্র করে। কিন্তু বিকাশে টাকা দেয় না। তবে গিফট কার্ড রিডিম করার সুবিধা দেয়।
এখানেও পয়েন্ট নিয়ে আয় করা লাগে। বিভিন্ন ক্যাটাগরীর ভিডিও দেখলেই বিভিন্ন হারে পয়েন্ট নিতে পারবেন।
এই প্ল্যাটফর্মে ১ লাখেরও বেশি ইউজার কাজ করে। বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানী এখানে স্পন্সর করে। যেমনঃ Nissan, Big Bazar, Fbb, Raymond ইত্যাদি।
৭। InboxDollars
InboxDollars ও একটি বেশি পে করা সাইট। এখানে ভিডিও দেখে টাকা ইনকাম করা যায়। আবার এড ওয়াচ করবার জন্য পেমেন্ট দেয়া হয়। এখানেও বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে ভিডিও ওয়াচ করার সুযোগ দেয়া হয়। এটা স্প্যামিং মনে হলেও সত্যি যে, এখানে প্রথম বার এন্ট্রি বোনাস দেয়া হয় ৫ ডলার। এর জন্য শুধুমাত্র একটি ভিডিওর শর্ট ক্লিপ দেখতে হয়।
এখানে পেপাল, গিফট কার্ডস এর মাধ্যমে পেমেনট দেয়া হয়।
৭। My Points: জনপ্রিয় পিটিসি সাইট:
My Pointsও অন্যান্যদের মতো জনপ্রিয় একটি এপলিকেশন সাইট। এই এপটি আপনাকে জরিপ পূরণ করার জন্য বলবে। ওয়েব সার্চ করার জন্য বলবে। এর পরিবর্তে ডলার পেমেন্ট দেয়া হয়। এছাড়াও এখানে ইমেইল রিডিং এর জন্য পে করা হয়। আপনার ইমেইল ঠিকানায় প্রতিদিন পেইড মেইল আসবে। সেগুলো পড়েও ইনকাম করা যায়। এড ওয়াচ করে আয় করা এখানকার জনপ্রিয় মাধ্যম।
একটি নির্দিষ্ট টপিক বাছাই করে সে টপিকের উপর দৈনিক ৫০০ এরও বেশি পয়েন্ট ইনকাম করতে পারবেন। এড দেখে, হলিউডের নিউজ দেখেও আয় করা যায়।
প্রথমবার এখানে সাইন আপ করলেই স্বাগত বোনাস হিসেবে একটি ডিসকাউন্ট কুপন দেয়া হয়। যেটি ব্যবহার করে শপিং করতে পারি।
৮। MyPoints। প্রমো কোড, রিওয়ার্ড, পেইড সার্ভে:
যদিও একটি জরিপ সাইট। তবে এখানে ইউটিউব ভিডিও দেখে আয় করার সুযোগ আছে। এখানে নিজস্ব ভিডিও দেখে আয় করা যায়। সে পয়েন্টগুলো রিডিম করে গিফট কার্ড নেয়া যায়। গিফট কার্ড এর ব্যবহার অনেকটা ডলারের মত। গিফট কার্ডে ডলার সঞ্চয় করা থাকে। সে ডলার ব্যবহার করা যায় বিভিন্ন ধরনের পণ্য ক্রয় করতে। যেমনঃ আমাজন গিফট কার্ড ব্যবহার করে আপনি কেনাকাটা করতে পারেন। একইভাবে গুগোল গিফট কার্ড ব্যবহার করে গুগলে যে কোন পণ্য কিংবা যেকোন সার্ভিস নিতে পারেন।
এ সাইটে প্রতিদিন আপনি 500 পয়েন্ট আয় করতে পারেন।তার চেয়ে মজার ব্যাপার এখানে আপনি যে কোন মজার ভিডিও দেখে টাকা ইনকাম করতে পারেন। এজন্য আপনাকে কোন বোরিং ভিডিও দেখতে হবে না। বিভিন্ন হাস্যকর ভিডিও আছে, কিংবা কৌতুক কৌতুক ভিডিও আছে। যেগুলো দেখে আপনি বিনোদন পাবেন।
শুধুমাত্র ভিডিও দেখে উপার্জনই নয়, বরং শপিং করে, গেম খেলে, এমনকি তাদের দেওয়া ইমেইল পড়েও আয় করা যায়।এ সাইটটির 1996 সাল থেকে শুরু করেছে তাদের যাত্রা। এবং সাইটটি এখন পর্যন্ত চলছে। কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই।
কিভাবে গিফট কার্ড রিডিম করবেনঃ
যে সাইট থেকে রিডিম করবেন সেখানে পর্যাপ্ত পয়েন্ট জমলে রিডিম করার জন্য এপ্লাই করবেন। তারা আপনার ইমেইল এড্রেসে ৩-৪ দিনের মধ্যেই রিডিম কোড পাঠাবে। যদি এটি গুগল গিফট কার্ড হয়, তাহলে প্লে স্টোরে গিয়ে কোডটি ব্যবহার করে রিডিম করে নিন। আর এমাজন হলে, এমাজনের এপে গিয়ে রিডিম করে কেনা কেটা করুন।
Comments (No)