“ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট” এর যেসব বিষয়ে দক্ষতা থাকতে হয়ঃ আমাদের আগের দুটো পর্ব থেকে আপনারা জেনেছেন “ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট” কি? এর মাধব্যে কিভাবে আয় করা যায় এবং এখানে সফলতার সাথে কাজ করতে কি ধরনের প্রস্তুতি দরকার হয়।আজ আমরা জানবো ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কাজ নিয়মিত পেতে হলে এবং একজন দক্ষ ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিজের ব্র্যান্ড তৈরিতে কোন কোন কাজে দক্ষতা অর্জন করা যায় সহজেই।
কোন কাজই আসলে কঠিন না, যদি তা শিখে নেয়ার আগ্রহ থাকে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু শিখলে সেখানে পুরোপুরি সফলতা নাও আসতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো কাজটি শেখার জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ আছে কিনা তা বিবেচনায় রাখা।
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে গুগল বা ইউটিউব থেকে আমরা প্রতিনিয়ত অনেক ধরনের কাজ ঘরে বসেই শিখতে পারি। তবে তার আগে কোন কাজে দক্ষতা অর্জন করবো এবং সেই কাজের মাধ্যমে আমরা কিভাবে আয় করতে পারবো তা ভেবে নেয়া প্রয়োজন।
আসুন, এমন কিছু কাজ এবং সেখানে কিভাবে দক্ষতা অর্জন করে অনলাইনে আয় করতে পারবেন তা বিশতভাবে জেনে নেই।
মাইক্রোসফট অফিসঃ (Microsoft Office)
একটি অফিসের প্রধান কাজগুলো সুন্দর সুশৃঙ্খল ভাবে করতে যেই সফটওয়্যার গুলো দরকার হয়, তাদের সমন্বয়ে মাইক্রোসফট এনেছে “মাইক্রোসফট অফিস” (Microsoft Office). এর প্রধান সফটওয়্যার গুলো হলোঃ মাইক্রোসফট ওয়ার্ড (Microsoft Word), মাইক্রোসফট এক্সেল (Microsoft Excel),
মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট (Microsoft Power point), মাইক্রোসফট এক্সেস (Microsoft Access) এছাড়াও বেশ কিছু ফিচার সফটওয়্যার যুক্ত হয়েছে এই “মাইক্রোসফট অফিস” প্যাকেজে। তবে সব গুলোই বিশেষ কিছু কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ভার্চুয়াল অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কাজের জন্য “মাইক্রোসফট অফিস” ভালো ভাবে জানা প্রয়োজন। অনেক ক্লায়েন্ট উল্লেখ করে দেয় যে মাইক্রোসফট অফিস জানতে হবে। তাছাড়া আমাদের প্রাত্যহিক কাজ যেমন ডকুমেন্ট লেখা এর জন্য “ওয়ার্ড”, অর্থের লেনদেন এর বিশেষ ভাবে হিসেব নিকেস রাখার জন্য এক্সেল
আবার অফিসের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ডাটা গুলো সুবিন্যস্ত এবং নিরাপদে দীর্ঘদিন সংগ্রহ করতে অফিস এক্সেস এবং সেই অর্গানাইজড ডাটা গুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য পাওয়ার পয়েন্ট এর প্রয়োজন হয়। এ রকম আরও বেশ কিছু ফিচার আছে যা ডিজিটালি অফিস ম্যানেজমেন্ট এর জন্য আবশ্যক। এছাড়া অফিসিয়াল ইমেইল লিখা, ইমেইল রিসিভ ও রিপ্লাই করা এসব জানা থাকাও আবশ্যক অফিস ম্যানেজমেন্ট এর জন্য।
অনলাইনে গুগল বা ইউটিউবে ফ্রি “মাইক্রোসফট অফিস”এর কোর্স রয়েছে। একটু সময় আর ধৈর্য নিয়ে আপনাদের নিয়মিত তা অনুশীলন করতে হবে। যখন আপনি নিজে মাইক্রোসফট অফিসের বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে বাস্তবিক সব কাজ করতে পারবেন তখন এই কাজের জন্য “ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট” পোস্টে অনলাইনে আবেদনের উপযুক্ত হবেন।
সোস্যাল মিডিয়া ম্যানেজার: (Social Media Manager)
এ সময়ের অন্যতম পেশা হচ্ছে “সোস্যাল মিডিয়া ম্যানেজার”। বিশ্বের সর্বত্র পণ্য ও সেবার ব্র্যান্ডিং এর জন্য সোস্যাল মিডিয়ার ভূমিকা অন্যতম। প্রধানতঃ ফেইসবুক (facebook), ইনস্টাগ্রাম(Instagram), লিঙ্কডইন(LinkedIn), টুইটার(Twitter), ইউটিউব (YouTube) ইত্যাদি রয়েছে।
এছাড়াও বিষয় ভিত্তিক আরও অসংখ্য অনলাইন মিডিয়া রয়েছে। বর্তমানে এসব মিডিয়াগুলোর মাধ্যমেই মূল মার্কেটিং করা হয়। তাই সোস্যাল মিডিয়া পরিচালনায় একটু দক্ষ হলে কাজ পাওয়া অনেক সহজ হয়। সেই সাথে কনট্যান্ট লিখা এবং ছবি এডিটিং এ দক্ষতা আপনার যোগ্যতা বাড়িয়ে দেবে বহু গুন।
তবে মনে রাখতে হবে যে সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত একাউন্ট চালানো আর কোন কোম্পানির মার্কেটিং এর জন্য একাউন্ট পরিচালনার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। তাই এসব বিষয়ে অবশ্যই পর্যাপ্ত পড়াশুনা বা কোন কোর্স করে নেয়া দরকার। অনলাইনেই এ সংক্রান্ত অনেক টিউটোরিয়াল আছে।
ফটোগ্রাফি/ভিডিওগ্রাফি/এডিটিংঃ (Photography/Videography/Editing
একটা ভালো ছবি যে পরিমাণ তথ্য উপাত্য দিতে পারে, তা হাজার শব্দের কোন ডকুমেন্টও পারবে না। তেমনি ছোট একটা ভিডিও ক্লিপ পুরো বিষয়টাকে এক ঝলকে স্পষ্ট করে তুলতে পারে। আজকাল প্রযুক্তির যুগে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এসব কাজের বিনিময় হচ্ছে হরহামেশা ।
তাই এসব সুবিধা থেকে নিজেদের বঞ্চিত করা ঠিক নয়। আসুন অনলাইনে বা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো ছবি তোলার কলা কৌশল মানে ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফি সাথে এসবের এডিটিং বিষয় গুলো একটু শিখে নেই। মাত্র ৩ মাসের একটা ছোট্ট প্রশিক্ষনের মাধ্যমেই আপনি এ সংক্রান্ত বিভিন্ন টুলস সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।
তবে ক্রিয়েটিভ কাজের জন্য সময়টাকে উন্মুক্ত করে দিতে হয় কিন্ত অন্য কারো কাজ করতে গেলে ডেড লাইনটি আবার ভুলে গেলে চলবে না। বর্তমান মার্কেট প্লেস গুলোতে প্রায় ৩০% থেকে ৪০% কাজই কোন না কোন ভাবে এর সাথে সম্পৃক্ত।
এসইও-সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনঃ (SEO- Search Engine Optimization)
সার্চ ইঞ্জিন কি? আর এর অপটিমাইজেশন কেন প্রয়োজন? “সার্চ ইঞ্জিন” বলতে আমরা প্রধানত বুঝি গুগলকে। যদিও এছাড়াও আরও বেশ কিছু সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে যেমন ইয়াহু। আর “অপটিমাইজেশন” করতে হয় কোম্পানির বিভিন্ন “ওয়েবসাইট” গুলোকে যাতে তা সার্চ ইঞ্জিন উপযোগী হয়।
উদাহরণ স্বরূপঃ যদি কোন “ট্যুর এন্ড ট্রাভেল” কোম্পানি তাদের ট্যুর প্যাকেজ সবাইকে জানানোর জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করে, তবে তাকে সেই ওয়েবসাইটটিকে এমন ভাবে অপটিমাইজ করতে হয় যেন অধিকাংশ কাস্টোমার গুগুলে সার্চ দিয়ে সহজেই খুঁজে পায়।
এই “এসইও “ এক্সপার্টদের ও জব বাজারে এখন অনেক চাহিদা কেননা, প্রতিনিয়ত বিশ্বে নুতন সব ছোট বড় কোম্পানি সেই সাথে তাদের ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে। আর স্বাভাবিকভাবেই প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই ওয়েবসাইট এর “এসইও” করতে হচ্ছে। মার্কেট প্লেস এর ৩০% কাজই এখন এসইও এক্সপার্টদের দক্ষলে। এই কাজ শিখলে সারা বছর আপনার কাজের অভাব হবে না।ইনকাম ও অন্যান্য পেশার চেয়ে অনেক বেশি হবে।
এই কাজ শিখতে কিছুটা সময় বেশি লাগতে পারে, বিশেষ করে যাদের ওয়েবসাইট এবং এর ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে আগে থেকে জানা নেই। তবে শিখতে বেশ সহজ এনং অভিনব, যে কেউ চাইলেই শিখে নিতে পারবে, শুধু একটু মনোনিবেশ করা আর সময় দেয়া দরকার।
শেখার পর সাথে সাথে কোন ওয়েবসাইট নিয়ে হাতে কলমে প্র্যাকটিজ করা জরুরী যাতে ভূলে না যান। অনলাইনে ফ্রি ওয়েবসাইট করার অনেক টুলস এবং সেই সংক্রান্ত টিউটোরিয়াল আছে। তেমনি এসইও ফ্রিতে শেখারও অনেক সাইট রয়েছে। তবে এটি যেহেতু প্রাকটিক্যালি কাজ করার বিষয় তাই কোন প্রতিষ্ঠান থেকে সর্ট কোর্স করে নিলে ভালো। কোথাও ইন্টার্নি না পেলে নিজেই ওয়েবসাইট বানিয়ে ইনকাম শুরু করতে পারেন।
কনট্যান্ট মার্কেটিংঃ (Content Marketing)
কোন বিশেষ ডকুমেন্ট, সোস্যাল মিডিয়ার পোস্ট বা কোন আর্টিকেল, ইভেন্ট ডিটেইলস লিখার জন্য ভালো “কনট্যান্ট রাইটার”দরকার হয়। আপনি যদি ইংরেজি ভাষায় অথবা অন্য যে কোন ভাষায় বিশেষ পারদর্শী হোন, তাহলে একজন “কনট্যান্ট রাইটার “ হিসেবে নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারেন। এই পেশায় অনলাইনে “ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট” ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানিতে ফ্রিল্যান্সিং করার সুবিধা রয়েছে।
ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য উক্ত বিষয়ে নিয়মিত পড়াশুনা করা, ইংরেজি ভাষায় বই, জার্নাল নিয়মিত পড়া, ইংরেজি ছবি, ডকুমেন্টারি মুভি দেখা এবং ভাষার যথাযথ অনুশীলনের প্রয়োজন। ভাষা দক্ষতার জন্য অনলাইনে অনেক ফ্রি কোর্স আছে।
এফিলিয়েট মার্কেটিংঃ (Affiliate Marketing)
এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো কোন কোম্পানির পণ্য অনলাইনে বিক্রি করে কমিশন প্রাপ্ত হওয়া। অনলাইনে কোম্পানির পণ্য বিক্রয় করার জন্য প্রয়োজন হয় একটি ভালো মানের ওয়েবসাইট। সেই ওয়েবসাইটটির প্রচার ও প্রমোশন এর দরকার হয় যাতে তা সঠিক কাসটোমারের কাছে পৌঁছে । এখানে ভালো একটি ওয়েবসাইট বানানো থেকে শুরু করে এর প্রমোশনের জন্য সঠিক কিছু কৌশল জানতে হয়। এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আয় করতে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হলেও, একবার ইনকাম শুরু হলে ঘরে বসেই প্রতি মাসে আয় হতে থাকে।
এফিলিয়েট মার্কেটিং জন্য বিশেষ প্রস্তুতির দরকার আছে, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এফিলিয়েট মার্কেটিং হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে থাকে। তাছাড়া অনলাইনেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ট্রেনিং দিয়ে থাকে।
ডিজিটাল মার্কেটিংঃ (Digital Marketing)
কোন পণ্য বা সেবার প্রোমোশনের জন্য যখন ডিজিটাল বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করা হয় সেটাই ডিজিটাল মার্কেটিং। ডিজিটাল এসব মাধ্যমকে কিভাবে দক্ষতার সাথে কাজে লাগানো যায় সে সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা জরুরী। প্রধানতঃ যেসব উপায় ও মাধ্যম ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্তর্ভুক্ত তাহলোঃ
১। ওয়েবসাইট বিল্ডিং
২। সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
৩। কনট্যান্ট মার্কেটিং
৪। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
৫। ইমেইল মার্কেটিং
৬। ফটো/ভিডিও মার্কেটিং
৭। এফিলিয়েট মার্কেটিং
৮।অনলাইন এডভাটাইজিং
উপরে যেসব কাজের কথা বলা হয়েছে যা জানা থাকলে আপনি সহজেই “ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট” এর কাজটি পেয়ে যাবেন। তবে সব সময়ই মনে রাখতে হবে যে, নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে আপডেট থাকতে হবে। ভালো কমিউনিকেশন স্কিল আর দক্ষতা এবং সময়ের মূল্যায়ন থাকলে এ পেশায় অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের জন্য।
উপরে উল্লেখিত কাজ গুলো ছাড়াও বেশ কিছু সহজ সাধ্য কাজও আছে যেগুলো জানা থাকলে ঘরে বসে যে কেউ “ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট” হিসেবে সারা বিশ্বে কাজ করতে পারবে। পরবর্তিতে সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার প্রত্যশা আছে।
Comments (No)