বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের ১৪ শতাংশই বাংলাদেশের

বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের ১৪ শতাংশই বাংলাদেশের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় ১৫৭ কোটি মানুষ ফ্রিল্যান্সিং করেন। তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছর বা তার নিচে। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশি মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৪ শতাংশ।

বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারের ১৪ শতাংশই বাংলাদেশে, সুযোগ হাজারের বেশি বিষয়ে

বিশ্বের ১৫৭ কোটি মানুষ ফ্রিল্যান্সিং করেন। বর্তমানে বিশ্বের মোট ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে ১৪ শতাংশই বাংলাদেশের। তাঁরা দেশে বসে অনলাইনে বিভিন্ন কাজ করেন। 

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।  বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান তানজিবা রহমান জানান, বাংলাদেশ থেকে ১৫৩টি মার্কেটপ্লেসে কাজ করা হয়। সেগুলো হিসাব করলে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ।

বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের ১৪ শতাংশই বাংলাদেশের 1

ওয়েব ডিজাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রতি ঘণ্টায় তারা গড়ে ২১ থেকে ২৮ মার্কিন ডলার আয় করেন। 

ডব্লিউটিওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বর্তমানে দেশের জিডিপিতে আইসিটি খাতের অবদান ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ খাতে সরাসরি ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০২৫ সালে সেটি বেড়ে ৫ লাখ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, কনসালট্যান্সি সার্ভিস, নন-কাস্টমাইজ কম্পিউটার সফটওয়্যার, ডেটা প্রসেসিং ও হোস্টিং সার্ভিস, কম্পিউটার মেরামতসহ বিভিন্ন সেবা রপ্তানি চার বছরের ব্যবধানে দেড় গুণের বেশি বেড়েছে।

বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারের ১৪ শতাংশই বাংলাদেশে, কাজ করছেন হাজারের ও বেশি বিষয় নিয়ে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের ১৪ শতাংশই বাংলাদেশের 2

এবারের এই প্রতিবেদনের ‘ The nascent digital services sector in Bangladesh’ এই অধ্যায়ে বলা হয়েছে, অনলাইন ফ্রিল্যান্স এ বৈশ্বিক কর্মশক্তির প্রায় 14 শতাংশই বাংলাদেশে। এর মাধ্যমে সৃজনশীল ও মাল্টিমিডিয়া সংক্রান্ত অনলাইন সার্ভিসে বাংলাদেশ একদম শীর্ষে অবস্থান করছে। 

তবে ডব্লিউটিওর এই প্রতিবেদনে দেশে কত ফ্রিল্যান্সার আছেন, তার সঠিক কোনো তথ্য-উপাত্ত দেয়া নেই। তবে প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায় দেশে মোট ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। তারা আবার এই তথ্যটি পেয়েছে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান তানজিবা রহমান এর সূত্রে। তবে যথাযথ মনিটরিং না থাকায় এ তথ্যটি নিশ্চিত করে এখনো বলা সম্ভব না।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় কিছু কাজ যা স্থানীয় কর্মীর মাধ্যমে করালে তাতে খরচ বেশি হয়। আবার অনেক সময় চাহিদামতো কর্মীও পাওয়া যায় না। তখন তারা এসব কাজগুলো করার জন্য বাইরে থেকে চুক্তিভিত্তিক ভাবে (আউটসোর্সিং) নির্দিষ্ট কাজটি করিয়ে নেন। এতে ওই প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির যেমন অর্থ সাশ্রয় হয়, তেমনি যেকোনো স্থান থেকে কাজটি করে ওই ব্যক্তিও আয় করেন। 

বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের ১৪ শতাংশই বাংলাদেশের 3

আর বাংলাদেশে এই  ফ্রিল্যান্সিং এ উত্থান এর মূল কারন হল অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও নিম্ন মজুরি। এখানে যেমন প্রচুর লোক প্রতিনিয়ত ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসছে তেমনি অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে অনেক কমে ফ্রিল্যান্সার পাওয়া যায়। ফলে বায়ার রা ও আকৃষ্ট হন। আর এই কারনেই হু হু করে বাড়ছে এর চাহিদা।

তবে সুদক্ষ ও মানসম্মত কাজ না দিতে পারলে এ ক্রমবর্ধমান চাহিদার বাজার ধরা যাবে না। এজন্য বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সহায়তা যেমন ভালো ইন্টারনেট সংযোগ, কাজের পরিবেশ, ফোরাম সাপোর্ট, গাইডলাইন ইত্যাদি নিশ্চিত করা গেলে আগামীতে এ চাহিদা আরো বাড়বে বলে আশা করা যায়।

করমুক্ত থাকছে ফ্রিল্যান্সারদের আয়

ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর দিতে হবে না বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি জানান, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের কোনো উৎসে কর দিতে হবে না। তারা ট্যাক্সের আওতার বাইরে।

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ফেলিসিটি ইন্টারনেট ডাটা সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বিএফএসআই ক্লাউড এবং সাইবার সিকিউরিটি’ শীর্ষক নলেজ শেয়ারিং অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান।

ফ্রিল্যান্সারদের আয়কর প্রসঙ্গে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিগত ১৪ বছরে প্রযুক্তিবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার ফ্রিল্যান্সিং খাতের উন্নয়ন ও বিকাশে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য প্রশিক্ষণ, উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে অনুদান প্রদান, তাদের আইডিসহ নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে এবং ফ্রিল্যান্সারদের বিভ্রান্ত করতে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। এমনকি তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও আমাকে নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।

এর আগে গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ফ্রিল্যান্সারদের সেবার বিনিময়ে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের ১০ শতাংশ কর দেয়ার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর অঞ্চল-১১ এর মঙ্গলবারের (১২ সেপ্টেম্বর) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশ জারি করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, ফ্রিল্যান্সিং খাতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বের এ শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অংশ প্রায় ১৬ শতাংশ। তবে এ খাতের কর্মী হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও আয়ের দিক থেকে ৮ম। বিশ্বে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাজার দেড় ট্রিলিয়ন ডলার।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, নতুন আয়কর আইনেও ফ্রিল্যান্সারদের আয় করমুক্ত রাখা হয়েছে। ফলে ফ্রিল্যান্সারদের টাকা দেশে রেমিট্যান্স আকারে আসলেও কোনো কর দিতে হবে না। তবে বিদেশ থেকে আসা কোনো সেবা, রেভিনিউ শেয়ারিং ইত্যাদি বিদেশ হতে আয় হিসেবে আসা রেমিট্যান্স থেকে উৎসে কর কর্তন করা হবে।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের সাথে কথা বলে আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের উপর কোনো ধরনের উৎসে কর দিতে হবে না। তারা এর আওতার বাইরে থাকবে।

বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের ১৪ শতাংশই বাংলাদেশের 4

তিনি আরও বলেন, ফ্রিল্যান্সাররা দেশে রেমিটেন্স আনলে তাদেরকে ৪ শতাংশ ইনসেনটিভ দেয়া হয়। যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

আই‌সি‌টি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের নানা প্লাটফর্ম থে‌কে যে পরিমাণ ডেটা বর্তমানে বাংলাদেশে আসছে, সেগুলো যদি পুরোটা সংরক্ষণ করতে পারি, তাহলে বিলিয়ন ডলার বিজনেস অপোরচুনিটি তৈরি হবে।

আরও পড়ুন: ফ্রিল্যান্সার থেকে তরুণ উদ্যোক্তা

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এস এম জাফর উল্লাহ, ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেডের চেয়ারম্যান মইনুল হক সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বক্তব্য দেন।

দেশে ফ্রিল্যান্সার কত সঠিক হিসাব নেই

বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের ১৪ শতাংশই বাংলাদেশের 5

দেশে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে কী পরিমাণ জনশক্তি জড়িত আছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই কারও কাছে। তবে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অন্তত ৬ লাখ লোক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এই পেশার সঙ্গে জড়িত আছে।

ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) ২০২০ সালের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে অনলাইন লেবার সাপ্লাই কমেছে। আইএলও তাদের প্রতিবেদনে শতাংশ হারে উল্লেখ করলেও প্রকৃত সংখ্যা কারও কাছে পাওয়া যায়নি।

আইএলও’র প্রতিবেদনে প্রথমেই আছে ভারত, অর্থাৎ মোট অনলাইন লেবার সাপ্লাইয়ের প্রায় ৩৩ শতাংশ ভারতের, ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৬ শতাংশ। এরপর বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আছে প্রায় ১৩ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে ছিল ২০ শতাংশের কাছাকাছি। বাংলাদেশের পরই অবস্থান পাকিস্তানের অবস্থান, তবে ব্যবধান খুবই সামান্য। এরপর আছে যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপিন্স, যুক্তরাজ্য এবং ইউক্রেইন।

আইএলও’র প্রতিবেদন বলছে, ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদার দিক থেকে প্রথমেই আছে যুক্তরাষ্ট্র, তবে ২০১৮ সালের তুলনায় এই চাহিদা প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা কমলেও অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, ভারত এবং যুক্তরাজ্যে চাহিদা কিছুটা বেড়েছে বলে জানায় আইএলও। ফ্রিল্যান্সেরদের চাহিদার তালিকার প্রথম দিকে আরও আছে সিঙ্গাপুর এবং ইসরায়েল।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের অনলাইন লেবার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ভারত লেবাররা ৫৮ শতাংশই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং প্রযুক্তিগত কাজ করে অনলাইনে। সেখানে বাংলাদেশের মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ করে এই সেক্টরে। অনলাইন লেবার ইনডেক্সে ভারতের অবস্থান প্রথম এবং বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।

সরকারের আইসিটি বিভাগ বলছে, দেশে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ লাখ, যারা অন্তত ১০০ মিলিয়ন ডলার আয় করে। তবে এর মধ্যে ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সার দেড়-দুই লাখ হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিএফডিএস)।

এই ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে যারা ছোট ছোট দলে কাজ করেন, তারাসহ মোট সাড়ে ৩ লাখের মতো ফ্রিল্যান্সার আছেন। ঝরে পড়া ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা মিলিয়ে ছয় লাখের মতো হতে পারে বলে ধারণা বিএফডিএস’র।

ফ্রিল্যান্সারদের যে পরিসংখ্যান আছে, সেটা পুরোটাই অনুমাননির্ভর বলে জানা গেছে। ২০১৭ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটা স্টাডির তথ্যমতে, সাড়ে ৬ লাখের মতো ফ্রিল্যান্সার বাংলাদেশে কাজ করেন।

বিএফডিএস’র জেনারেল সেক্রেটারি মাহফুজ রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা অনুযায়ী, ফুল টাইম ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং করে দেড় থেকে ২ লাখ। এদের সঙ্গে অনেকেই ছোট ছোট টিমে কাজ করছেন, তাই সবমিলিয়ে সাড়ে ৩ লাখের মতো হবে বলে আমাদের ধারণা।

আবার সিজনাল ফ্রিল্যান্সার আছে অনেকে, হয়তো তারা শুরু করেছে, কিছু টাকা আয় করেছে। আবার অন্য কোথাও চাকরি পেয়েছে এবং তারা চলে গেছে। সেগুলো মিলিয়ে আমাদের ধারণা— মোট ফ্রিল্যান্সার ৬ লাখের মতো হবে।

ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের সব টাকা দেশে আসে না

ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আয়ের একটা বড় অংশ আসে পে-অনইয়ার অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে। আর তাদের পেমেন্ট বাংলাদেশে প্রসেস করে ব্যাংক এশিয়া। শতভাগ পেমেন্ট পে-অনইয়ারে না আসলেও সিংহভাগই আসে এই গেটওয়ের মাধ্যমে।

২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্যাংক এশিয়া ওই বছরে ১৯৪ মিলিয়ন ডলার ছাড় দিয়েছে পে-অনইয়ারের মাধ্যমে আসা অর্থ। তবে ফ্রিল্যান্সারদের কাজের পরিধি যখন বেড়ে যায়, অনেকজন মিলে যখন কাজগুলো করেন, তাদের একটা বড় অংশই দেশে টাকা নিয়ে আসে না। ফলে সেই আয়ের কোনও হিসাব নেই। আর যাদের জন্য ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করেন, তারা সবাই বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানি।

ফ্রিনল্যান্সাররা জানান, আয়ের টাকা থেকে অনলাইনের টুলস কিনতে হয়। দেশে ইন্টারন্যশনাল ক্রেডিট কার্ডে একবারে (ওয়ানটাইম) সর্বোচ্চ পেমেন্ট করা যায় ৩০০ ডলার। কিন্তু সেগুলো কিনতে তাদের বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়। তাই অনেক টাকাই ফ্রিল্যান্সাররা অনলাইনে রেখে দেন। সব মিলিয়ে ধারণা করা হয়, প্রতি বছর ফ্রিল্যান্সারদের আয় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

এই প্রসঙ্গে বিএফডিএস’র জেনারেল সেক্রেটারি মাহফুজ রহমান বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের একটা অংশ পুনরায় তাদের বিনিয়োগ করা লাগে। একবার যখন ডলার বাংলাদেশে চলে আসে, তখন সেটা আবারও ইউএস ডলারে কনভার্ট করে চালাতে গেলে বিনিময় হারের কারণে কিছু টাকা নষ্ট হয়।

তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডে ৩০০ ডলারের বেশি পেমেন্ট করা যায় না। ফ্রিল্যান্সারদের অনেক টুলস আছে, যেগুলোর দামই শুরু হয় ৪০০ ডলার থেকে। সার্ভারের বিল দেওয়া লাগে এক হাজার থেকে দেড় হাজার ডলার। সেক্ষেত্রে কার্ডে পেমেন্ট করা যায় না। এই কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে আয়ের একটা অংশ বাইরে রেখে দেন, যাতে পুনরায় সেটা কাজে লাগাতে পারেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু সার্ভিস আছে ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার দেখা যাচ্ছে, সরাসরি ফোরেক্স ট্রেডিং না হলেও কোনও না কোনোভাবে সেটার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ হচ্ছে। যেখানে সেবা দিচ্ছি সেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সির যোগসূত্র আছে। অর্থাৎ যাদের কাজ তারা ক্রিপ্টোকারেন্সিতেই পেমেন্ট দেবে। আমাদের দেশের আইনে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন বৈধ না। অনেকে আবার তাই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না— এসব সোর্স থেকে আয়ের টাকা নিয়ে আসতে।

এই ভয় কাজ করে যে, আইনি সমস্যায় পড়বেন কিনা। সে কারণেও অনেকে টাকা বাংলাদেশ পর্যন্ত নিয়ে আসেন না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি ছিল– ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নগদ ভর্তুকি দেওয়া হোক। তাহলে আশা করা যায়, অনেকেই দেশের ভেতরে টাকা আনার জন্য উদ্বুদ্ধ হবেন। এছাড়া যেসব সমস্যার কারণে টাকাগুলো দেশে নিয়ে আসতে পারেন না, সে সমস্যার বাস্তব সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি আমরা।’

তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি মূল ইস্যু না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেক ধরনের বিল পে, টুলস কেনার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয়, সেটার সমাধান করতেই অনেকে দেশে টাকা আনেন না।’ যাদের কাজের পরিমাণ বেশি, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা বেশি বলে মনে করেন তিনি।

মাহফুজ রহমান বলেন, ‘আমরা আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে সবাইকেই বলেছি যে, ফ্রিল্যান্সাররা যেন প্রয়োজন অনুযায়ী ডলার খরচ করতে পারেন।তবে সেটার জন্য একটা কাজ এগিয়ে এসেছে। এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) অ্যাকাউন্ট তৈরির কাজ চলছে। এটা চালু হলে ১০০ ডলার আয়ের ৭০ শতাংশ আবার ডলার হিসেবেই খরচ করা যাবে।

অ্যাকাউন্ট হবে বাংলাদেশি ব্যাংকেই। একটি ডলার অ্যাকাউন্ট হবে, আরেকটি টাকার অ্যাকাউন্ট হবে। এই অ্যাকাউন্টের সুবিধা এতদিন পর্যন্ত যারা বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সদস্য ছিলেন, কিংবা প্রাইভেট কোম্পানি ছিল, তাদের ছিল। কিন্তু দেখা গেছে, ইন্ডিভিজুয়াল ফ্রিল্যান্সারের জন্য কিংবা কম আয়ের ফ্রিল্যান্সারের জন্য লিমিটেড কোম্পানি করা অসাধ্য বিষয়।

সরকারের সহায়তায় যারা ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড হোল্ডার, তাদের জন্য আমরা এই অ্যাকাউন্ট সহজলভ্য করার কাজ শুরু করেছি। ব্র্যাক ব্যাংক পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে কয়েকজন ফ্রি ল্যান্সারকে নিয়ে শুরু করেছে। আশা করছি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তারা পুরোদমে চালু করতে পারবে।’

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ