ফ্রিল্যান্স ফটো ইডিটিং করে অনলাইনে আয় করুন

ফ্রিল্যান্স ফটো ইডিটিং করে অনলাইনে আয় করুন অনলাইনে আয় করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে জনপ্রিয় পেশা। ফ্রিল্যান্সিং পেশায় বৈচিত্রের অভাব নেই, ফ্রিল্যান্স ফটো ইডিটিং তার মধ্যে অন্যতম। ফ্রিল্যান্স ফটো ইডিটিং ( freelance photo editing ) একটি ক্রিয়েটিভ এবং স্ট্রেস ফ্রি কাজ, যেকোন জায়গায় বসে এমনকি ব্যাকগ্রাউন্ডে টিভি চালু রেখেও কাজটি করা যায়।

এসব কিছুর বাইরেও ফটো ইডিটিং করে ভাল পেমেন্ট পাওয়া যায়। ফ্রিল্যান্স ফটো ইডিটিরদের ( freelance photo editor ) বর্তমান চাহিদা অনেক বেশি এবং ভবিষ্যতেও যে এর পরিমাণ বাড়তে থাকবে তা বলাই যায়।

সূচীপত্র
ফ্রিল্যান্সিং কি (what is Freelancing)?
১৮১৯খ্রিস্টাব্দে “Walter Scott” নামক এক লেখকের বইতে প্রথমবার Freelancer শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ধারণা করা হয় মধ্যযুগে একধরনের ভাড়াটে যোদ্ধা ছিল যারা অর্থের বিনিময়ে রাজা-বাদশাহদের জন্য যুদ্ধ করতো, এই যোদ্ধাদের থেকেই ফ্রিল্যান্সার শব্দের উৎপত্তি।

অর্থাৎ কোন কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে মুক্তভাবে কোন কাজ করাকে ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) বলা হয় এবং যারা এধরনের মুক্ত পেশায় যুক্ত তাদেরকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সার (Freelancer)।

বর্তমানে আমাদের কাজগুলো অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়ায় ফ্রিল্যান্সিং পেশাও অনলাইনে চলে এসেছে। কিন্তু সত্য কথা হলো একজন লেখকও ফ্রিল্যান্সার।

ফ্রিল্যান্স ফটো ইডিটিং কি, কি কাজ করতে হয়?
মুক্ত পেশায় প্রচুর বৈচিত্র রয়েছে আলোচনার শুরুতেই বলেছিলাম। ফটো ইডিটিংও আমাদের ফ্রিল্যান্স মার্কেটের একটি বড় সেক্টর। আমরা যেমন একটি ছবি তোলার পর ছবিটাকে সুন্দর করার জন্য বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে ইডিট করি, ফ্রিল্যান্স ফটো ইডিটিং করতেও একই কাজ করতে হয়, পার্থক্য হলো নিজের ছবি ইডিট না করে অন্যের ছবি ইডিটিং করতে হবে।

ফ্রিল্যান্স ফটো ইডিটিং ( freelance photo editing ) পেশা হলো কোম্পানী বা ক্লায়েন্টের চাহিদামতো সুন্দর এবং ব্যবহার উপযোগী করে তোলা। অনলাইন টুলস, ফটোশপ প্রভৃতি সফটওয়্যার ব্যবহার করে কাজগুলো করতে হয়। একটি ছবি ইডিট করতে color correction, airbrushing, enhancing, color grading, cropping নিয়ে কাজ করতে হয়।

এক্সপার্ট ফটো ইডিটররা সাধারণ একটি ছবিকে বিভিন্ন ফিল্টার এবং টুলস এর অসাধারণ ব্যবহার নিশ্চিত করে সাধারণ একটি ছবিকেও ডায়নামিক লুক দিতে পারে।

কোম্পানীর কেন ফ্রিল্যান্স ফটো ইডিটর প্রয়োজন?
কেন প্রয়োজন বোঝার জন্য কোম্পানীর বিজনেস মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে হবে। একটি কোম্পানীর প্রোডাক্ট মার্কেটিং, সার্ভিসিং এবং ব্রান্ডিং করার জন্য হাই কোয়ালিটি লোগো এবং ছবির প্রয়োজন হয়। তাছাড়াও ব্যাক কভার, প্যাকেজিং এবং বিজ্ঞাপনের জন্য ইউনিক আইডিয়া সম্বলিত ছবির প্রয়োজন হয়, যা ইডিটিং ছাড়া সম্ভব নয়। একজন গ্রাহক হিসেবে আপনিও সেই সাইটকে বেশি বিশ্বাস করবেন যেখানে স্টক ফটোর পরিবর্তে ইউনিক এবং নিজস্ব ছবি ব্যবহার করা হয়।

আমাদের দেশীয় ই-কমার্স সাইটগুলো তেকে প্রোডাক্ট নিয়ে প্রায়সই আমাদের অভিযোগ থাকে, ছবিতে একরকম অথচ প্রোডাক্ট দিয়েছে অন্যরকম। এসব ঝামেলার মূল কারণ ছবিগুলো তারা হাই কোয়ালিটি কোন ব্রান্ড থেকে নিয়ে সাধারণ মানের জিনিসের সাথে ব্যবহার করছে। ফলাফল হিসেবে দিন দিন আমাদের মতো গ্রাহকের আস্থা হারিয়ে ফেলছে।

ভাল কোম্পানী তাদের গ্রাহকের আস্থা কখনো হারাতে চাইবেনা। কিন্তু শুধুমাত্র একটি ভাল মানের ক্যামেরা দিয়েই ফটো পাবলিশ করার মতো কোয়ালিটিতে আসে না, তাই তাদের ছবিগুলোকে সুন্দর করে তুলতে আপনার মতো এক্সপার্ট ফটো ইডিটর প্রয়োজন।

আপনি প্রশ্ন করতে পারেন- তারা কেন একজন কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে না। হ্যা অনেক কেম্পানি যাদের প্রতিদিন ছবি ইউট করার প্রয়োজন হয়, তারা অবশ্যই একজন দক্ষ ইডিটর নিয়োগ দেন। কিন্তু যাদের নিয়মিত প্রয়োজন নেই তাদের জন্য এটা ব্যয়বহুল। এক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সার এবং ছোট কোম্পানীর মধ্যে ডিল দুপক্ষের জন্যই উইন উইন সিচুয়েশান।

ফটো ইডিটিং এ ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার
আপনি হয়তো ভাবছেন কোম্পানী ছাড়া তাহলে তো মনে হয় খুব বেশি কাজ নেই। না ভুল ভাবছেন, কারণ আপনার কাজের ক্ষেত্র শুধু কোম্পানির সাথেই সীমাবদ্ধ নয়। অনেকেই আছেন যারা পোর্টফোলিও বানাতে চান, তাছাড়া ওয়েডিং ফটো এবং পুরাতন নষ্ট ছবি ঠিক করার মতো কাজ মার্কেটে প্রচুর রয়েছে।ফটো-ইডিটর

বর্তমানে অনেক ফটোগ্রাফার স্টক ফটো মার্কেটে ছবি বিক্রি করে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘ এবং কম সময়ের জন্য ছবি ইডিটিং করানোর কন্টাক্ট করে থাকে।

মূল কথা হলো আপনি যদি ভাল ছবি ইডিট করতে সক্ষম হন তবে কাজের অভাব হবে না।

ফটো ইডিটর হতে কি ধরনের স্কিল প্রয়োজন:
তো! একজন সফল ফটো ইডিটর হতে হলে কি ধরনের স্কিল ডেভলপ করতে হবে?

প্রশ্ন যখন ফটো ইডিটিং নিয়ে, তখন একমাত্র উত্তর অ্যাডবি ফটোশপ (Adobe Photoshop)। ছবি ইডিট করার যত সফটওয়্যার আছে তার মাঝে (Adobe Photoshop সফটওয়্যারটি সবচেয়ে কার্যকরী এবং এক কথায় সেরা।

উপরে ছবি ইডিট করতে যেসব কাজ করতে হয় উল্লেখ করেছিলাম, সবগুলো কার্যকরীভাবে করার জন্য প্রচুর টুলস রয়েছে অ্যাডবি ফটোশপ সফটওয়্যারটিতে।

ফ্রিল্যান্স ফটো ইডিটিং করে অনলাইনে আয় করুন

ছবি ইডিটিং কে প্রো লেভেলে নিয়ে যেতে ফটোশপের পাশাপাশি Adobe Illustrator সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এই দুইটি সফটওয়্যারের উপর ভাল দক্ষতা থাকলে আপনাকে স্বাগতম, আপনি ফটো ইডিটর ফ্রিল্যান্সার হিসেবে মার্কেটে প্রবেশ করতে পারেন।

ফটো ইডিটর হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে আপনার কোন সার্টিফিকেটের দরকার নেই। তবে দ্রুত কাজ পেতে নিজের কাজের পোর্টফোলিও সুন্দরভাবে সাজাতে হবে।

তাছাড়া প্রতিটি কাজ ভালভাবে ডেলিভারি করার পর ক্লায়েন্টের থেকে রিভিউ এবং রেটিং নিবেন। নতুন ক্লায়েন্টরা আপনার পূর্বের কাজের রেটিং দেখেই মূল্যায়ন করবে।

ছবি ইডিট ( freelnce photo edit ) করার কাজ কোথায় পাবো?
আপনার কাজের কি ধরনের স্কিল প্রয়োজন সে সম্পর্কে ধারণা হয়েছে, ধরে নিচ্ছি প্রয়োজনীয় স্কিল আপনার রয়েছে। কাজ করার জন্য অর্থাৎ আয় করার জন্য এখন আপনার কাজ পেতে হবে। প্রশ্ন হলো কাজ কোথায় খুঁজবেন?

ফ্রিল্যান্সিং পেশায় কাজ পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ফ্রিল্যান্সিং সাইটে কাজের জন্য বিড করা। বিড অর্থ হলো কোন ক্লায়েন্ট কাজের বিবরণী দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং সাইটে প্রকাশ করে। তখন কাজটি পাওয়ার জন্য আগ্রহী ফ্রিল্যান্সাররা চেষ্টা করে এজন্য নিজের দক্ষতা এবং কাজটি আপনাকে দিলে কতটা ভালভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন সে বিষয়ে ভালভাবে লিখে সাবমিট করতে হয়।

ক্লায়েন্ট যতগুলো সিভি পাবে তার মধ্য থেকে যাকে পছন্দ করবে তিনিই কাজটি পাবেন। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে সম্পর্ক হয়ে গেলেও ক্লায়েন্ট এর থেকে কাজ পাবেন। কিছু ফ্রিল্যান্সিং সাইটের নাম এবং এড্রেসিআপনার সুবিধার্থে দিয়ে দিলাম।

ফাইবার.কম
ফ্রিল্যান্সার.কম
আপওয়ার্ক.কম
এছাড়াও আরো অনেক ফ্রিল্যান্সিং সাইট রয়েছে, যেখানে আপনার কাজের বিবরণী দিয়ে, গিগ প্রকাশ করে কাজ পেতে পারেন। নতুন নতুন শুরু করার সাথে সাথেই কাজ পাবেন এমনটা আশা করলে দ্রুতই আশাহত হবেন। আপনার প্রথম কাজ পেতে যত টাইমই লাগুক, দ্বিতীয় কাজ খুব দ্রুত পাবেন, তাই ধৈর্য্য ধরুন আর বিড করতে থাকুন।

আরো উপায় আছে কাজ পাওয়ার, যেমন কোন কোম্পানীর সাথে ডিল করা এবং নিজস্ব ওয়েবসাইট বানিয়ে প্রচার করার মাধ্যমেও কাজ পেতে পারেন।

ফটো ইডিটিং পেশার ভবিষ্যত এবং ইনকাম
আমরা প্রতিনিয়ত অনলাইনের উপর আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। কিছুদিন পর হয়তো ডাক্তাররাও আর চেম্বার না খুলে অনলাইনেই চিকিৎসা দেওয়া শুরু করবে। এমতাবস্থায় অবস্থায় আপনার ফটো ইডিট নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং ( freelance photo edit ) পেশায় যেতে শঙ্কার কিছু নেই। দিন দিন এর মার্কেট বাড়তেই থাকবে।

প্রতিটি ছবির জন্য ৫ডলার থেকে ৫০ডলার বা তারও বেশি নিতে পারেন। তবে মূল্য বৃদ্ধি করার জন্য নিজের ব্রান্ডশীপ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মার্কেটে আপনার রেটিং এবং চাহিদা তৈরি হবার পর মূল্য বাড়াতে পারেন। ফাইবারে ৩ধরনের সার্ভিস দেওয়া হয়,

ব্যাসিক
স্টআপান্ডার্ড এবং
প্রিমিয়াম
ফ্রিল্যান্স ফটো ইডিটিংসার্ভিসের বিভিন্ন সুবিধার কমবেশি থাকে এসব ক্রাইটেরিয়াতে। স্বাভাবিকভাবেই একটির চেয়ে অন্যটির মূল্য বেশি। উপরের যে গিগ টি ১০ডলার থেকে শুরু হয়েছে তিনি ১টি ছবি প্রিমিয়াম ক্যাটাগরিতে ইডিট করে দিতে ৫০ডলার নেন।

এখন আপনিও যদি একই মূল্য দেন তাহলে ক্লায়েন্ট তাকেই কাজটা দিবে, যেহেতু তার রেটিং বেশি অর্থাৎ বেশি বিশ্বস্ত। তাই শুরুতে অন্যদের চেয়ে কম দাম রাখেন। এক্সপার্টরা যে দামে ১টি ফটো ইডিট করছে আপনি একই মূল্যে ৩টি ফটো ইডিট করে দিন। তারপরেও মাস শেষে হাজার ডলার পার হয়ে যাবে যদি কাজ ভাল করতে পারেন এবং ক্লায়েন্টকে খুশি করতে পারেন। ভাগ্য ভাল হলে পার্মানেন্ট ক্লায়েন্টও পেয়ে যেতে পারেন।

শেষ কথা:
ফ্রিল্যান্সিং আমাদের বেকার সমস্যায় আক্রান্ত জাতির জন্য স্মার্ট সমাধান। আমাদের আশে পাশে অনেক ভাল ফটো ইডিটর ( photo editor ) রয়েছেন যারা কিনা শুধু পাসপোর্ট সাইজের ফটো ইডিট করে নিজেদের ভবিষ্যত নষ্ট করছেন। আপনার নিজের ব্যবসা ছাড়তে বলছি না, পাশাপাশি করতে বলছি।

অনেকে ভাল ফটোশপ ইডিটর ফ্রিল্যান্সিং করতে ইচ্ছুক বলে প্রোগ্রামিং শিখতে শুরু করেছে, অথচ ফ্রিল্যান্স ফটো ইডিটিং ( freelance photo editing ) করেও যে করা যায় সেই খবর রাখেননি।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ