নিজের আর্ট করা ছবি বিক্রি করে আয় করুন।

নিজের আর্ট করা ছবি বিক্রি করে আয় করুন। 1

নিজের আর্ট করা ছবি বিক্রি করে আয় করুন নিজের আর্ট করা ছবি বিক্রি করে আয় করা এখন আর কঠিন কোন কাজ নয়। বরং, আপনি চাইলে ঘরে বসেই অনলাইনে ছবি বিক্রি করে টাকা আয় করতে পারবেন। এজন্য, আপনার লাগবে না কোন দোকান ভাড়া কিংবা কোন অতিরিক্ত খরচ।

বর্তমানে বিভিন্ন দেশে আর্ট করা ছবির ব্যপক চাহিদা রয়েছে। প্রযুক্তির এই যুগে তাই বেশীরভাগ মানুষ ইন্টারনেটে এসব শিল্পকর্ম খুঁজে থাকে। তাই, আপনি যদি ভাল চিত্রশিল্পী হয়ে থাকেন, তাহলে, টাকা আয় করাটা আপনার জন্য খুব একটা কঠিন কাজ হবে না।

যাইহোক, আজকের এই লেখায় আর্ট করা ছবি বিক্রি করে আয় করার বিস্তারিত নিয়ম কানুন বলার চেষ্টা করা হবে। আশা করি লেখাটি থেকে আপনার উপকৃত হবেন।

নিজের আর্ট করা ছবি বিক্রি করে আয়

১. ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রি করে আয়

অনেক মানুষই আছেন যারা আঁকা ছবি কিনতে খুবই আগ্রহী। বিশেষ করে ঘর সাজাতে, আঁকা ছবির প্রাধান্য অনেক। এমন কিছু ওয়েব সাইট রয়েছে যা আপনার আঁকা ছবি মানুষের কাছে পৌঁছে দিবে। আমি আপনাকে রিকোমান্ড করবো আর্ট সেলের জন্য বেস্ট ২টি ওয়েবসাইট।

i. Artfinder

Art Finder চিত্র শিল্পীদের এমন একটি প্লাটফর্ম দিতে বদ্ধপরিকর, যার মাধ্যমে শিল্পীরা নিজেদের শিল্প সবার সামনে তুলে ধরতে পারেন। তবে Art Finder- এ আপনার শিল্প আপলোড করার জন্য আবেদন করতে হবে। তা তারা গ্রহণ করার পর, আপনার প্রোফাইল সেট আপ করি নিতে হবে। Art Finder ওয়েব সাইটটি নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করছি।

নিজের আর্ট করা ছবি বিক্রি করে আয় করুন। 2

এই সাইটে ৩টি প্লান রয়েছে। যার মধ্যে যে কোনও ১ টি প্লান আপনাকে অবশ্যই সিলেক্ট করতে হবে। প্লানগুলো হলো:

Starter Plan

 – এ প্লানে আপনার কাছ হতে কোনও রকম এক্সট্রা মাসিক ফি নেওয়া হবে না। তবে তারা আপনার সেলের এমাউন্ট হতে ৪০% কমিশন চার্জ কেটে নিবে।
এই প্লানে সর্বোচ্চ ৩০ টি আর্ট সেল করতে পারবেন। এরপর আপনি যদি চান প্লান আপগ্রেড করতে পারবেন।

Standard Plan – এই প্লানে তারা আপনার কাছ থেকে মাসিক 4 ইউরো ফি নিবে। তবে প্রতিটি বিক্রয়ে কমিশন নেমে যাবে ৩৩%। অর্থাৎ এই প্লানে আপনার ১টি বিক্রয়ের মোট এমাউন্টের শুধু্মাএ ৩৩% কমিশন চার্জ করবে। এই প্লানে আনলিমিটেড আর্ট বিক্রয় করতে পারবেন।

Professional Plan – প্রফেশনাল প্লান অনেকটা স্ট্যান্ডার্ড প্লানেরই ডুবলিকেট। এই প্লেনেও ৩৩% কমিশন চার্জ কাটবে প্রতি বিক্রয়ে। তবে মাসিক ফি বেড়ে ১০ % হয়ে যাবে এই প্লানে। এই প্লানে আনলিমিটেড বিক্রয় করতে পারবেন আপনি, ২ নাম্বার প্লানের মতোই। কমিশন ফি আপনার দেওয়া আর্ট ফি এর উপর নির্ভর করে; যা আপনি নিজেই সেট করবেন। এই ফিতে ডেলিভারি ফি থাকে না।

ii. Saatchi Art

Saatchi Art নিজেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন গ্যালারি” হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকে। Saatchi Art-এর মাধ্যমে অনলাইনে আপনার আর্ট বিক্রি শুরু করার জন্য আবেদন করা বেশ সহজ। তবে একাউন্ট তৈরির সময় নিজের সম্পর্কে বর্ণনা করতে ভুলবেন না। কাস্টোমারের ট্রাস্ট বজায় রাখতে এটি খুবই প্রয়োজনীয়। এ ওয়েব সাইট আর্ট সেলের জন্য কোনও মাসিক ফি চার্জ করে না। কিন্তু প্রতি বিক্রয়ের উপর ৩৫% করে চার্জ কাটে।

নিজের আর্ট করা ছবি বিক্রি করে আয় করুন। 3

তবে এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে কখনও কখনও Saatchi Art সংগ্রহকারীদের অর্থাৎ কাস্টোমারদের জন্য প্রচারমূলক অফার চালায়, যেমন 10% – 20% ছাড় দেয়। এই কমিশন বিক্রয় মূল্যের উপর প্রযোজ্য। তাই যদি কেউ আপনার একটি পেইন্টিং কম মূল্যে/ ডিসকাউন্টে কেনে, আপনি তখন তাদের প্রদান করা পরিমাণের 65% পাবেন।

এই ২টি জনপ্রিয় ওয়েব সাইট ছাড়াও আরও অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে সেগুলো হলো,

এই ওয়েব সাইটগুলোর একেক রকম ক্যাটাগরি এবং রিকোয়ারমেন্ট রয়েছে। যার জন্য আগে আপনাকে ওয়েবসাইটগুলোর about, faq এবং Terms and conditions পড়ে তারপর কোন সাইটটি আপনার পছন্দ এবং আপনার জন্য সুবিধা-যোগ্য তাতেই সাইন আপ করুন। চেষ্টা করুন একাধিক ওয়েবসাইটে নিজের একাউন্ট করার। এতে তাড়াতাড়ি অর্ডার পাওয়া সম্ভব। এছাড়া, ফটো বিক্রি করে আয় করার আরও অনেক ওয়েবসাইট আছে, সেগুলো দেখতে পারেন।

২. নিজের তৈরি ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রি করে আয়

উপরের ওয়েব সাইটে আপনার আঁকা ছবি বিক্রি করা ছাড়াও, নিজের ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করেও আপনি ইনকাম করতে পারবেন। এই ব্লগ আপনি একদম ফ্রিতেই তৈরি করতে পারেন।

আপনার কাজ প্রদর্শন করে এমন একটি শিল্পী পোর্টফলিও খুবই প্রয়োজন এই ডিজিটাল যুগে। মানুষ আপনার এই পোর্টফলিও এর মাধ্যমেই আপনার কাজ সম্পর্কে জানতে পারবে। ওয়েবসাইটে নিজের ছবি আর প্রাইজ সহ পোস্ট করে অডিয়েন্সদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।

এ মাধ্যমে ছবি বিক্রি করে আয় এর পাশাপাশি গুগল এডসেন্স এপরুভাল নিয়েও আয় শুরু করতে পারেন আপনি। আর যদি প্রফোশনাল ছবি বিক্রির ওয়েসাইট তৈরি করতে চান তাহলে, Web Developer Omar Faruk ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। উনার ফোন নাম্বার: 01961547802

. ক্রেতাদের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করে

আপনি যখন প্রথম প্রথম একজন শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করবেন, তখন আপনার আর্ট ক্রয়ের সম্ভাব্য ক্রেতাদের সাথে কিভাবে যোগাযোগ স্থাপন করবেন বা তাদের পছন্দ সম্পর্কে জানবেন তা জানা দুঃসাধ্য মনে হতে পারে। যদিও আর্ট ডিলার এবং ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ বা দেখা করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তবে এগুলোর মাঝে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি হল, আত্মবিশ্বাসী হওয়া।

সারা বছর ধরে পাবলিক গ্যালারিগুলো এক্সিভিশনের কাজ করে যাচ্ছেই। আপনি সোশাল মিডিয়া এবং ওয়েবসাইটে সার্চ

নিজের আর্ট করা ছবি বিক্রি করে আয় করুন। 4

করলেই এমন উন্মুক্ত গ্যালারি খুজে পাবেন। এখানে আর্ট সেল করা প্রায় অসম্ভব কিন্তু আপনি শিল্পের প্রতি উৎসাহিত মানুষদের সাথে একটা ভালো নেটওয়ার্ক স্থাপন রতে পারবেন।

একটা সময় তারা কোনও না কোনও আর্টের প্রতি আকর্ষিত হয়ে কিনতে আগ্রহ হবেন। এ ছাড়া, আপনি গ্যালারিতে কিউরেটর এবং পরিচালকদের প্রভাবিত করতে পারেন আপনার ট্যালেন্ট দ্বারা। যার ফলে আপনি আসলে তাদের কাছে আপনার কাজটি হস্তান্তর করতে পারেন।

৪. শিল্প মেলায় বিক্রি করার জন্য আবেদন করতে পারেন

শিল্প মেলা অনেক বড় একটি মেলা। শীর্ষ মেলাগুলি আর্ট ডিলার, গ্যালারিস্ট, কিউরেটর এবং শিল্পীদের আকৃষ্ট করে। শিল্পীদের জন্য মেলায় প্রদর্শনের আবেদন কখন খোলা থাকে তা জানতে তাদের ওয়েব সাইটটি ঘাটাঘাটি করতে হবে একটু। আনার স্থানীয় মেলা খুঁজতে গুগলে সার্চ করতে বসুন।

নিজের আর্ট করা ছবি বিক্রি করে আয় করুন। 5

আপনি যদি এমন মেলাগুলোতে একবার প্রদর্শনী করতে পারেন তাহলে আপনার বিক্রয় নিশ্চিত। যারাই আপনার কাজ দেখতে চেষ্টা করবেন নিজের বিজনেস কার্ড তাদের দেওয়ার। সবার সাথে ফ্রেন্ডলি এবং কথা বলুন তাদের মতামত জানুন আপনার আর্ট সম্পর্কে।

৫. অন্যের জন্য বইয়ের কভার তৈরি করুন

বইয়ের কভার আর্ট বা ডিজাইন করার কাজ করে আপনি ভালো পরিমাণ ইনকাম করতে পারবেন।কভার ডিজাইনর খুঁজছেন এমন লেখককে খুজে পেতে আপনি Fiverr, Freelencer, upwork একাউন্ট খুলতে পারেন। fiverr কিভাবে কাজ করে? লেখাটি পড়লে Fiverr সম্পর্কে জানতে পারবেন। এসব সাইটে অংসখ্য কভার ডিজাইনার রয়েছে, নিজেকে লেখকদের কাছে ইউনিক ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে নিজের প্রফাইলকে নিখুঁত, সুন্দর ও প্রয়োজনীয় ছবি, কাজ আপলোড করতে হবে।

৬. সোশিয়াল- মিডিয়াতে নিজের আর্ট সম্পর্কে প্রচার এবং বিক্রয় করুন

আপনি যখন নতুন নতুন কাজ শুরু করছেন। আপনার জন্য বেস্ট অপশন সোশিয়ল মিডিয়া। ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করেন না এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর। আপনি এখানেই সব থেকে বেশী শিল্প প্রেমী অডিয়েন্স খুজে পাবেন।তাই চেষ্টা করুন একটিভ থাকতে এসব সোশিয়াল সাইটে এবং নিজের একটি ভেরিফাইড পেইজ গঠন করুন।

এখন আসি আর্ট করতে কি প্রয়োজন হবে আপনার। ড্রয়িং করার জন্য আপনার কিছু আবশ্যিক বস্তুর/ সরন্জ্ঞামের প্রয়োজন পড়বে। সেগুলো সম্পর্কে আপনার জানা উচিত যদি আপনি সিরিয়াসলি ছবি আঁকার মাধ্যমে ইনকাম করতে আগ্রহী হন।

পেনসিল

ছবি আঁকতে নরমাল পেনসিল এবং কালার পেনসিল দুটোই দরকার হয় তা সবাই জানেন। কিন্তু পেনসিলের বিভিন্ন নম্বর রয়েছে। সাধারণত HB, 2B, 3B, 4B থেকে শুরু করে GB পর্যন্ত পেনসিলের প্রয়োজন হয়।

যে পেনসিলটির নম্বর যতো বেশী হয় ততোই পেনসিলটির দাগ গারো হয়ে থাকে। ছবিতে আলো ছায়ার প্রভাব এবং ভিন্নতা বুঝাতে এগুলো ব্যবহার করা হয়। আপনি যেকোনো লাইব্রেরি বা মুদি দোকানে এগুলো সহজেই কিনতে পেয়ে যাবেন।

আঁকবার রঙ

সাধারণত ছবি আঁকতে জল রঙ, তেল রঙ,এ্যাকরেলিক রঙ, প্যাস্টেল রঙ, পেনসিল রঙ ইত্যাদি ব্যবহৃত করা হয়। আপনি যে ধরনের রঙ ব্যবহার করতে কমফরেবল বা ব্যবহার করতে চাচ্ছেন তা-ই ব্যবহার করতে পারবেন। আবার ছবির ফিনিশিংটা আকর্ষণীয় ও ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয় Fuje রঙ। যা আপনি দোকানে পেয়ে যাবেন।

ছবি আঁকার কাগজ

সাধারণভাবে আমরা যেসকল কাগজ ব্যবহার করে থাকি লিখালিখি করতে তা দিয়ে উন্নতমানের ছবি আঁকা সম্ভব নয়। ছবি আঁকার জন্য ব্যবহৃত হয় যে কাগজগুলো তা হলো

  • স্কলার পেপার
  • কেন্ট পেপার
  • হ্যাণ্ডমেড পেপার
  • প্যাস্টেল পেপার
  • হার্ডবোর্ড পেপার
  • ক্যানভাস অয়েল পেপার প্রভৃতি কাগজ ব্যবহার করতে পারেন।
নিজের আর্ট করা ছবি বিক্রি করে আয় করুন। 6

জল রঙ ব্যবহারের জন্য স্কলার ও হ্যান্ডমেড পেপার দরকার হয়ে থাকে। তেল রং ব্যবহারের করলে অবশ্যই Canvace ব্যবহার করা উচিত।

বাকি ছোটোখাটো সরঞ্জাম

রঙ ব্যবহার করার জন্য পানির পাএ, রঙ রাখার প্ল্যাট প্রয়োজন পড়ে। ড্রইং করার জন্য বোর্ড যা সাধারণত কোয়ার্টার সাইজ, হাফ সাইজ এবং ফুল সাইজ ইত্যাদি মাপের হয়ে থাকে, বোর্ড ক্লিপ/ পিন, পেনসিল কাটার, অবশ্যই প্রয়োজন।

এ সকল জিনিস আপনি যদি দোকানে সহজে খুজে না পান তাহলে, অনলাইনে এবং বিভিন্ন ফেসবুক ব্রান্ডের পেইজ হতে কিনে নিতে পারবেন আপনার ছবি আঁকার জন্য সকল প্রয়োজনীয় পেনসিল, রঙ, তুলি, কাগজ, ড্রইং বোর্ড।

পরিশেষে

এই ছিল আজকে নিজের আর্ট করা ছবি বিক্রি করে আয় করার উপায়। আশা করি, লেখাটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ