নজিরবিহীন এক প্রেম ! নারীকে বিয়ে করলো আরেক নারী

16534_323982871069391_1906561347_nএকদমই নজিরবিহীন এক প্রেম!

বিপরীত লিঙ্গের নয়, বরং সমলিঙ্গের দু’জন মানুষ জড়িয়েছে পরস্পরের প্রেমে। শুধু কি প্রেম, সে প্রেম রীতিমতো পরিণয়ে গড়িয়েছে।
হ্যাঁ, মালাবদল করে দুই তরুণী, সানজিদা আর পূজা, ঘরও বেঁধেছেন গোপনে।
এরপর এ নিয়ে হয়ে গেল কতো না নাটক—
থানা-পুলিশ, লোক জানাজানি!

পশ্চিমা সমাজে হলে খুব একটা অবাক হতো না কেউ। কেননা সেখানে নারী সমকামিতা বা লেসবিয়ান প্রেমের নজিরও ভুরি ভুরি।
কিন্তু ব্যাপারটা যে ঘটেছে বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল সমাজে। সমাজের ট্যাবু ভাঙ্গা এই বিরলতম ঘটনাটি তাই ভুরু কপালে তুলে দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

পিরোজপুর জেলার দুই তরুণী শ্রাবন্তী রায় পূজা (১৬) ও মোছাম্মৎ সানজিদা (২১).  টানা ক’বছর ধরে প্রেম করে গেছেন দু’জনে—নিভৃতে, গোপনে।

তাদের পরিচয়টা হয়েছিল মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে। দিনে দিনে তাদের সখ্য রূপ নেয় প্রেমে।
তারপর তার সিদ্ধান্ত নেয় দূরে কোথাও পালিয়ে গিয়ে ঘর বাঁধবে। যেমন বলা তেমনই কাজ।

গত ১৪ জুলাই ঘর ছেড়ে পিরোজপুর থেকে ঢাকায় চলে আসেন দু’জন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহম্মদীয়া হাউজিংয়ের ৫ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাসা ‘ময়না ভিলা’য় ‘সুখের ঠিকানা’য় ভাড়া নেন।

এদিকে শ্রাবন্তী রায় পূজার বাবা কৃষ্ণকান্তি শীল মেয়েকে না পেয়ে গত ২০ জুলাই পিরোজপুর সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিরোজপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদল কৃষ্ণ অপহরণকারীকে গ্রেফতারের জন্য সোর্স নিয়োগ করেন।
তিনি জানতে পারেন পূজাকে ‘অপহরণকারী’ আর কেউ নন, তিনিও আরেকজন নারী। তার নাম মোছা. সানজিদা ।তাদের মোবাইল ট্র্যাকিং করে তিনি জানতে পারেন তারা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বাসায় অবস্থান করছেন।

পরে র‌্যাব-২ এর সহযোগিতায় সানজিদা ও পূজাকে মঙ্গলবার দুপুরে ময়না ভিলা থেকে আটক করা হয়। উদ্ধারের পর তাদের প্রেমের বিষয়ে জানা যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সানজিদা পিরোজপুর গভর্নমেন্ট সোহরাওয়ার্দী কলেজের অনার্সের ছাত্রী। সানজিদা র‌্যাবকে জানান, তারা একে অপরকে দীর্ঘ দিন ধরে ভালোবেসে আসছিলেন। শেষমেষ ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে পিরোজপুর থেকে ঢাকায় পালিয়ে আসেন দু’জনে।পূজাও র‌্যাব কর্মকর্তা লে. সাজ্জাদকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে বলেছেন, ‘একটা ছেলে যদি একটি মেয়েকে ভালো বাসতে পারে, তবে একটা মেয়ে কেন আরেকটা মেয়েকে ভালোবাসতে পারবে না?’‘ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে আমরা ঢাকায় এসেছি। হিন্দুশাস্ত্র মতে সোমবার সন্ধ্যায় ওই বাসায় সিঁদুর পরিয়ে সানজিদা আমাকে বিয়ে করেছে।’

পূজা নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবার দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদল কৃষ্ণ হতবাকই হয়েছেন শুধু। কারণ এমন অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড তিনি কস্মিনকালেও দেখেননি বা শোনেননি।এসআই কৃষ্ণ বাংলানিউজকে তার বিস্ময় মেশানো প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘প্রথমে আমি মনে করেছিলাম পূজাকে কোনো প্রেমিক এসে নিয়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তদন্ত করে গিয়ে দেখি, এতো আরেক নারী সানজিদা। আর সেই হলো কিনা পূজার প্রেমিক!’তিনি বলেন, মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আমরা যখন তাদের সন্ধান পাই তখন র‌্যাব-২ এর সহায়তায় তাদের আটক করি।র‌্যাব-২ এর লে. সাজ্জাদ জানান, ‘তাদের উদ্ধার (আটক) করার পর তাদের কথাবার্তা শুনে অবাক হয়েছি। কারণ একটি ছেলে একটি মেয়েকে ভালোবাসে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটি মেয়ে আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করে ঘর বেঁধেছে—এমনটাতো এদেশে স্বপ্নেও বিরল।’উদ্ধারের পর দু’জনকে র‌্যাব-২ শিয়া মসজিদ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পূজার বাবার করা মামলার সূত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআইর বাদল কৃষ্ণের কাছে সোপর্দ করা হয়।বাদল তাদের নিয়ে পিরোজপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন। সানজিদার বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ও পূজার বাড়ি পিরোজপুর সদর থানার কুমুড়িয়া গ্রামে।

Comment (1)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ