তুলা চাষে লাভবান ঝালকাঠির চাষিরা কটন ইউনিট কর্মকর্তা (গাবখান ইউনিট) সৈয়দ শাহিন হোসেন গাজী বলেন, ‘ঝালকাঠি গাবখান থেকে এ তুলা ক্রয় করে নিয়ে যাওয়া হয় যশোরের ঝিকড়গাছার একটি বেসরকারী জিনার মিলে। সেখানে মেশিনের মাধ্যমে জিনিং করে বিভিন্ন কটন মিলে বিক্রি করা হয়। তুলা চাষকে কেন্দ্র করে ঝালকাঠির স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ঝালকাঠিতে অনেক পতিত জমি থাকায় এ অঞ্চল তুলা চাষের উপযোগী।’
ঝালকাঠির গাবখান গ্রামের একটি তুলা চাষের বাগান
ঝালকাঠি সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে তুলা চাষ করে আর্থিক লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। এসব তুলা সরাসরি মিল কর্তৃপক্ষ কিনে নেয়ায় তাদের লাভ হচ্ছে বেশি আর এতে তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় আরও অনেক চাষি।
সদর উপজেলার গাবখান-ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের কৃষিভিত্তিক গাবখান গ্রামে যশোর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় পরীক্ষামূলক ভাবে ২০১১ সালে শুরু হয় রূপালি-১ এবং হোয়াইট গোল্ড জাতের তুলার চাষ।
সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক যুগ ধরে তুলা চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছেন বাগান মালিকসহ এখানকার কৃষক ও শ্রমিকরা।
স্থানীয় তুলা চাষিরা জানান, একটু উচু জমিতে কান্দি পদ্ধতিতে আষাঢ় শ্রাবন মাসে তুলার বীজ লাগানো শুরু হয়। বীজ বপনের ৫৫ থেকে ৬০ দিন পরে গাছে ফুল ধরে। সেই ফুল থেকে বের হয় তুলা। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চৈত্র থেকে বৈশাখ মাস জুড়ে তারা মাঠ থেকে তুলা সংগ্রহ করেন। বিগত বছরগুলোতে একর প্রতি ১০ থেকে ১৫ মন তুলার ফলন হয়েছে।
তবে এ বছর আষাঢ় শ্রাবন মাসে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় অনেক গাছ নষ্ট হয়েছে। তাই এ বছর তুলার ফলন কিছুটা কম হওয়ার কথা জানালের কৃষকরা। তারা মনে করেন, সরকার তুলা চাষের দিকে একটু নজর দিলে অনেক কৃষকের কর্মসংস্থান হবে এবং তুলার ব্যপক চাহিদা থাকায় বাজার নিয়েও কোন শংকা থাকবে না।
কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, ‘২০১১ সালে যশোর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় আমি ৮ বিঘা জমিতে তুলা চাষ শুরু করি গাবখান এলাকায়। সেই থেকে এখনও আমি এই তুলা চাষ করে যাচ্ছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে তুলা চাষে কোন লোকসান হয়না। ‘স্থানীয় বেকার ও বয়স্ক লোক দিয়ে এ তুলা মাঠ থেকে সংগ্রহ করে থাকি। তাতে তাদের সংসার খরচটাও এই সিজনে ভালো ভাবে চালাতে পারে। তুলা আমি মাঠ থেকেই যশোরসহ বিভিন্ন মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করে থাকি। শুধু তুলাই নয়, এ তুলার বীজ থেকে তৈল ও খৈড় তৈরি করে বাড়তি আয় করাও সম্ভব।’
দিনমজুর লাল মিয়া হওলাদার বলেন, ‘গাছে ফুল ধরেছে। আর কয়েকমাস পরেই তুলার ফলন হবে। আমি কয়েক বছর ধরে এ বাগানে কাজ করি। বীজ রোপন এবং পরিচর্যা করি দৈনিক মজুরী হিসেবে। তুলা ফলনের পর মাঠ থেকে তুলা তুলে দিয়ে কেজি প্রতি ৩০ টাকা মজুরী পাই। মৌসুমে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কেজি তুলা মাঠ থেকে সংগ্রহ করতে পারি। আমার বয়স হয়েছে এখন আর কেউ কাজে নেয় না, এই তুলাটা চাষ হয় বলে আমি এখানে কাজ করে টাকা রোজগার করতে পারি।’
আরেক দিনমজুর হেনারা বেগম বলেন, ‘গাবখান এলাকায় তুলা চাষ শুরু হওয়া থেকে আমি প্রতি বছর এখানে কাজ করি। তবে রোপনের কাজ করিনা, আমি শুধু গাছ থেকে তুলা তুলি। আমার স্বামী একজন দিনমজুর, তার আয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয় তাই এ তুলা তুলে যে টাকা পাই তা থেকে আমাদের সংসার ও ছেলে-মেয়ের খরচ চালাই।’
কটন ইউনিট কর্মকর্তা (গাবখান ইউনিট) সৈয়দ শাহিন হোসেন গাজী বলেন, ‘ঝালকাঠি গাবখান থেকে এ তুলা ক্রয় করে নিয়ে যাওয়া হয় যশোরের ঝিকড়গাছার একটি বেসরকারী জিনার মিলে। সেখানে মেশিনের মাধ্যমে জিনিং করে বিভিন্ন কটন মিলে বিক্রি করা হয়। তুলা চাষকে কেন্দ্র করে ঝালকাঠির স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ঝালকাঠিতে অনেক পতিত জমি থাকায় এ অঞ্চল তুলা চাষের উপযোগী।’
Comments (No)