ট্রেডমার্ক বা ব্যবসা স্বত্ত্ব হল একটি প্রতীক যা দ্বারা একটি উৎস থেকে আগত পণ্য বা সেবা থেকে অন্য উৎসের পণ্য বা সেবা পৃথক করা যায়। একজন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা যেকোন আইন সিদ্ধ সত্ত্বাই ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী হতে পারে। সাধারণত ট্রেডমার্ক পণ্যের মোড়কের গায়ে, চালানপত্রে অথবা পণ্যের রসিদে অঙ্কিত থাকে। এছাড়া স্বত্বাধিকারীর ব্যবসায়িক স্থাপনায়ও এই প্রতীক প্রদর্শিত হয়ে থাকে। ট্রেডমার্কস রেজিষ্ট্রেশন কিভাবে করতে হয়
স্বতন্ত্র পণ্যের মালিকানা স্বত্ব দাবি করার জন্য সাধারণত ট্রেডমার্ক ব্যবহার করা হয়। সত্ত্বধিকারী ব্যতীত অন্য কেউ কোন পণ্যের ট্রেডমার্ক নিয়ে ব্যবসা করলে বা বিজ্ঞাপন দিলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী হওয়া ছাড়াও এটি লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবহার করা যেতে পারে। সচরাচর খেলনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানসমূহ ট্রেডমার্কের লাইসেন্স করার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা ও বিপণন করে থাকে।
ট্রেডমার্ক বোঝাতে সাধারণত নিম্নের প্রতীক গুলো ব্যবহার করা হয়:
✤ ইংরেজি অক্ষর TM বা ট্রেডমার্ক হল অনিবন্ধিত ট্রেডমার্কের প্রতীক। এটি কোন পণ্য বা ব্র্যান্ডকে মানুষের সাথে পরিচিত করানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
✤ ইংরেজি অক্ষর SM বা সার্ভিস মার্ক। এটিও কোন পণ্য বা ব্র্যান্ডকে মানুষের সাথে পরিচিত করানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
✤ একটি বৃত্তের মাঝে R যার অর্থ হল এটি নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক।
সাধারণত ট্রাডমার্ক একটি ছবি, বর্ন, অক্ষর অথবা প্রতীক হয়ে থাকে। যদি কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র সেবা প্রদান করে তাহলে ট্রেডমার্কের বদলে সার্ভিস মার্ক কথাটিও ব্যবহার করা যায়।
কিভাবে আাবেদন করবেন:
বাংলাদেশের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার বরাবরে পণ্যের ধরন অনুযায়ী নিবন্ধনের আবেদন করতে হবে। আবেদন পাওয়া যাবে অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (www.dpdt.gov.bd)। আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আবেদন ফি জমা করতে হয়। কত ধরনের পণ্য বা সেবার জন্য নিবন্ধন চাওয়া হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে নিবন্ধন ফি কত হবে। তবে প্রথমেই পণ্য ও সেবার আন্তর্জাতিক শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী আপনার পণ্য কোন শ্রেণীভুক্ত তা আবেদনে লিখতে হবে। আন্তর্জাতিক নাইস (NICE) অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী পণ্যের শ্রেণী জেনে নিতে হবে।
আবেদন জমা দেওয়ার পর পরীক্ষা করে দেখা হয়। আবেদন ত্রুটিপূর্ণ বা আপত্তিকর হলে লিখিত জানিয়ে দেওয়া হবে। আপনি জবাব প্রদান এবং শুনানির সুযোগ পাবেন। জবাব সন্তোষজনক না হলে আপনার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হবে। আপনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দিলেও আবেদনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হবে। আবেদনের বিষয়ে কোনো আপত্তি না থাকলে বা আপত্তির ক্ষেত্রে প্রদত্ত জবাব সন্তোষজনক হলে আবেদনটি জার্নালে প্রকাশের সিদ্ধান্ত হবে। আপনাকে তখন জার্নাল ফি জমা দিতে বলা হবে।
আবেদনের বিরোধিতা:
জার্নাল প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আবেদনটির বিরোধিতা করতে পারেন। বিরোধিতা হলে একটি বিরোধিতার মামলা হবে। মামলার ফলাফল নিবন্ধন আবেদনকারীর বিপক্ষে গেলে নিবন্ধনের আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হবে। এবং ফলাফল নিবন্ধন আবেদনকারীর পক্ষে হলে নিবন্ধন প্রদানের লক্ষ্যে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
যেসব মার্ক নিবন্ধন করা যাবে না:
কুৎসামূলক বা দৃষ্টিকটু মার্ক; বিদ্যমান কোনো আইনের পরিপন্থী মার্ক, প্রতারণামূলক বা বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী মার্ক, সাদৃশ্যপূণ মার্ক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সৃষ্টি করতে পারে এমন মার্ক; কোন দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা অফিসের নাম, মনোগ্রাম, মানচিত্র, পতাকা, জাতীয় প্রতীকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো মার্ক, রাসায়নিক পণ্য প্রভৃতি মার্কের জন্য আবেদন করা যাবে না।
ট্রেডমার্ক নকল করলে প্রতিকার:
ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ অনুযায়ী কোনো নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক নকল করলে ট্রেডমার্ক লঙ্ঘনের জন্য মামলা করা যাবে। আর যদি কোনো অনিবন্ধিত ট্রেডমার্ক নকল করা হয় তাহলে পাসিং অফের (অন্যের পণ্য নিজের নামে চালানো) মামলা করা যাবে। এসব মামলা করতে হয় জেলা জজ আদালতে। এ ছাড়া মিথ্যা ট্রেডমার্ক ব্যবহারের জন্য প্রথম শ্রেণীর বিচারিক হাকিম বা মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। দায়ী ব্যক্তির সর্বনিম্ন ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত জেল বা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
✤ পে-অর্ডারের মাধ্যমে ফি জমা দেওয়ার ডকুমেন্ট।
✤ মনোগ্রাম সংযুক্তি (নয় কপি)
ফি: পণ্যের পরিমাণের উপর ফির পরিমাণ নির্ভর করে:
[ক্রমিক – পণ্যর পরিমান – আবেদন ফি – নবায়ন ফি]
(১) – ১ টি পণ্য – ১,৫০০ টাকা – ৫,০০০ টাকা
(২) – ২-৪ ট পণ্য – ২,৫০০ টাকা – ১০,০০০ টাকা
(৩) – ৪ এর অধিক পণ্য – ৩,৫০০ টাকা – ১৫,০০০ টাকা
রেজিষ্ট্রেশনের সময়সীমা: ৭ বছর। এরপর ১০ বছরের জন্য নবায়ন করা যায়।
Comments (No)