জামানত ছাড়াই কোটি টাকা ঋণ পেতে যা করবেন জামানত ছাড়াই এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তফসিলি সব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ঋণ বিতরণ করবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে রাষ্ট্রয়াত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তিখাতের উদ্যোক্তারা অগ্রাধিকার পাবেন। এ ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার জন্য ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ নামের ৫০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ জামানতবিহীন এই ঋণ চার শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত একজন উদ্যোক্তা নিতে পারবেন। পাঁচ বছরের মধ্যে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘স্টার্ট-আপ বলতে আমরা যেটা বোঝাচ্ছি, তা হলো সাধারণত দেখা যায় নতুন কিছু উদ্যোক্তা আছে, যাদের মেধা আছে। কিন্তু অর্থ নেই। তারা এমন ইনোভেটিভ কিছু করছে, যা দেশ ও জাতির জন্য ভালো। কিন্তু অর্থের অভাবে তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না। এজন্য তাদের সার্টিফিকেট জমা রেখে তাদের জন্য স্টার্ট-আপ লোন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত এই ঋণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান। তবে ঋণের আকার নির্ভর করতে প্রজেক্টের মূল্যায়নের ওপর।
যেভাবে ঋণের আবেদন করতে হবে
বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল হলেও এটি বিতরণ করা হবে তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে। দেশের সকল তফসিলি ব্যাংক এই তহবিল হতে ঋণ দিতে পারবেন। তবে যেসব ব্যাংক এই তহবিলের পুনঃঅর্থায়ন সুবিধাগ্রহণ করতে চাইবে, তাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের সাথে অংশগ্রহণ চুক্তি করতে হবে।
এই ঋণ পেতে হলে একজন উদ্যোক্তাকে তার প্রকল্পের যাবতীয় বিবরণী, পরিকল্পনা, নিজস্ব বিনিয়োগের ধরণ ইত্যাদির বিস্তারিত তুলে ধরে ফর্ম পূরণ করে সংশ্লিষ্ট তফসিলি ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। ব্যাংক তার আবেদনে সন্তুষ্ট হলে প্রকল্প মূল্যায়ন করে তার ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করবে।
আবেদন করার জন্য যেসব যোগ্যতা থাকতে হবে
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আবেদনকারী নতুন উদ্যোক্তাকে সরকারি অথবা যথাযথ কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত বেসরকারি উদ্যোক্তা উন্নয়নপ্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোক্তা উন্নয়ন, ব্যবসা পরিচালনা, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি বা অন্য কারিগরি বিষয় (পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, যন্ত্রপাতি মেরামত ইত্যাদি) সাফল্যের সাথে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
ডিগ্রিধারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ অথবা কারিগরি প্রশিক্ষণের মূল সনদ জামানত হিসেবে ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষা না থাকলে উদ্যোক্তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ বাস্তব ভিত্তিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও নতুন উদ্যোগ পরিচালনার সক্ষমতা থাকতে হবে।
সম্পূর্ণ সৃজনশীল উদ্যোগের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার বয়স হতে হবে ২১ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। ঋণখেলাপি কোনো ব্যক্তি এই তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবেন না।
জামানত
ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত গ্যারান্টি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ অথবা কারিগরি যোগ্যতার সনদ জামানত হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। এসব সনদ ব্যাংকের কাছে জমা রাখতে হবে। ব্যক্তিগত গ্যারান্টি বলতে বোঝানো হচ্ছে, ব্যাংক ও গ্রাহক মিলে উভয়পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যক্তির অঙ্গীকারনামা থাকতে হবে। তবে এ ধরনের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দু’জনের বেশি নেয়া যাবে না।
ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০ ভাগ নারী উদ্যোক্তাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। কোনো উদ্যোক্তা যেকোনো একটি উদ্যোগে একবারের বেশি ঋণ নিতে পারবেন না।
ঋণের সুদ ও মেয়াদ
স্টার্ট-আপ ফান্ড থেকে যারা ঋণ নেবেন, তাদের তিন কিস্তিতে ঋণ বিতরণ করা হবে। একজন উদ্যোক্তা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। তবে তা নির্ভর করতে তার প্রকল্পের মূল্যায়নের ওপর।
যেখানে ব্যাংকার ও গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ চার শতাংশ সুদে তিন ও ছয়মাস মেয়াদী কিস্তিতে পাঁচ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
স্টার্ট-আপ তহবিলের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। তবে প্রয়োজনে তা আরো বাড়ানো হবে।
ব্যাংকগুলো এই ঋণ বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে পুনঃঅর্থায়ন করে নিতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ০.৫০ শতাংশ হারে অর্থায়ন নিয়ে ব্যাংকগুলো গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করবে। ব্যাংকগুলোকে ২০২০ সালের হিসাব থেকেই নিজস্ব স্টার্ট-আপ তহবিলে অর্থ স্থানান্তর শুরু করতে হবে। ২০২২ সাল থেকে ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ বিতরণের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল থেকে ঋণ নেয়া যাবে। Online Income Tunes
প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ উদ্যোক্তাদের
অনলাইনে বাসায় তৈরি পিঠা ও মিক্সড ড্রাই ফুড বিক্রি করেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের হালিমা আক্তার ইতি। তিনি ঢাকা সিটি কলেজ থেকে ব্যবসা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি এখন অনলাইনের পাশাপাশি একটি মার্কেটেও দোকান দিতে চান। এজন্য তিনি ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগে হালিমা খুশি হলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ব্যাংকগুলোর জটিল নিয়মের কারণে ঋণের সুযোগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তা ছাড়া ঋণের পরিমাণ নির্ধারণে মূল্যায়নের নামে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের ঘুষবাণিজ্য করার আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
হালিমা আক্তার ইতি বলেন, ’ঋণ নিতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে যোগাযোগ করে দেখেছি, তারা যেসব নিয়মকানুনের কথা বলে, তা পূরণ করে আমাদের মতো ছোট উদ্যোক্তার ঋণ পাওয়া প্রায় অসম্ভব।’
অনলাইনে জামাকাপড় বিক্রির একটি শপ রয়েছে নাজমুন নাহারের। তিনিও ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছেন। নাজমুন নাহার বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ফান্ড তৈরি ভালো খবর। কিন্তু নিয়মগুলো এমন করতে হবে, যাতে আমাদের মতো সাধারণ উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ পেতে পারেন।’
চামড়াজাত পণ্য তৈরি করে রফতানি করেন আরেকজন উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি। তিনি অবশ্য এ ধরনের ফান্ডের ব্যাপারে তেমন একটা আশাবাদী নন। তাসলিমা বলেন, ‘এর আগেও এরকম অনেক ফান্ডের কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু নানা নিয়মকানুনের জালে ছোট উদ্যোক্তারা তা পান না। কারা পান, কিভাবে পান আমরা জানি না। হয়তো এজন্য নানা কানেকশন লাগে। তাই এই ফান্ডও কতটা সহায়ক হবে নিশ্চিত নই।’
Comments (No)