অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা করার অন্যতম সহজ উপায় রিসেল ব্যবসা। একজন রিসেলার উত্পাদক ও ক্রেতার মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করেন। অর্থাত্ আপনি উত্পাদকের থেকে পণ্য সংগ্রহ করে ক্রেতার কাছে বিক্রি করবেন সেই পণ্য। আপনাকে কোনও পণ্য তৈরি করতে হবে না বা পণ্য মজুতও রাখতে হবে না, আপনার কাজ শুধু উত্পাদকের থেকে পণ্য কিনে তা ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এমন কি আজকের ইন্টারনেটের যুগে ঘরে বসেই এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
রিসেল ব্যবসা করার সুবিধা
রিসেল ব্যবসা শুরু করার সব থেকে বড় সুবিধা হল খুব কম টাকা বিনিয়োগ করেই এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। অনলাইনে ব্যবসা শুরু করে অনেকটাই কমিয়ে ফেলা যায় খরচ। পাশাপাশিই এই ব্যবসায় আপনি নানা ধরণের পণ্য বিক্রি করতে পারেন।
রিলেস ব্যবসা সাধারণতঃ দুভাবে হয়। এক, আপনি উত্পাদক সংস্থার থেকে পণ্য কিনে তার ওপর লাভের মার্জিন রেখে ক্রেতার কাছে বিক্রি করলেন অথবা আপনি ক্রেতার থেকে অর্ডার নিয়ে তার বিনিময়ে উত্পাদকের থেকে কমিশন নিলেন। এই দুই ক্ষেত্রেই প্রাথমিক বিনিয়োগ কম এবং লাভ বেশি।
রিসেল ব্যবসার আরও একটি সুবিধা হল আপনি যতগুলো খুশি ব্র্যান্ডের জিনিস আপনার রিসেল প্ল্যাটফর্ম থেকে বিক্রি করতে পারবেন, বিক্রি করতে পারেন বিভিন্ন ধরণের জিনিসও।
আপনি ধরুন জামাকাপড় বিক্রি করবেন বলে ঠিক করলেন। তাহলে আপনি আপনার রিসেল প্ল্যাটফর্মে জামাকাপড়ের পাশাপাশিই জুতো, গয়না, ব্যাগ ইত্যাদি নানা কিছু রাখতে পারেন। বস্তুতঃ এতে লাভ বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি। ক্রেতা একটি জিনিস দেখে উত্সাহিত হয়ে আপনার প্ল্যাটফর্মে এসে আরও অন্যান্য জিনিস পছন্দ করে কিনতে পারেন।
ডিস্ট্রিবিউটর বা হোলসেলাররা এক সঙ্গে যথেষ্ট মাল মজুত করে তবেই জিনিস বিক্রি শুরু করতে পারেন। ফলে নতুন ধরণের জিনিস যোগ করা খরচ ও সময় সাপেক্ষ। কিন্তু রিসেল ব্যবসায় নতুন পণ্য যোগ করা খুবই সহজ, কারণ আপনাকে বিক্রির আগে জিনিস সংগ্রহ করতে হচ্ছে না। ফলে নতুন পণ্য নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা অনেক সহজ।
পাশাপাশি এই ব্যবসায় আর্থিক ঝুঁকিও অনেকটাই কম। আপনি যেহেতু প্রথমেই অনেক টাকা বিনিয়োগ করে ফেলছেন না ফলে ব্যবসা না চললে ব্যবসার ধরণ ও পণ্য পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।
আরো পড়ুন: ২৬ টি লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া যা আপনি শুরু করতে পারবেন মাত্র ১০ হাজার টাকায়
রিসেল ব্যবসা শুরু করবেন কী ভাবে
পণ্য ও ক্রেতা নির্বাচন
যেকোনও ব্যবসা শুরুরই প্রথম ধাপ হল পণ্য বা পরিষেবা নির্বাচন। অর্থাত্ ব্যবসা শুরু করার আগেই ঠিক করে নিন আপনি কোন জিনিসের ব্যবসা শুরু করতে চান। যে পণ্যের ব্যবসা শুরু করছেন সে বিষয়ে আপনার প্রাথমিক জানা বোঝা থাকলে ব্যবসা করতে সুবিধা হবে। না থাকলে গবেষণা করুন, সেই পণ্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করুন। পণ্যের গুণমান, দাম ইত্যাদি নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করুন।
পাশাপাশিই ঠিক করুন আপনার ক্রেতা কারা হতে পারে। এবিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকলে তবেই আপনি আপনার অভীষ্ট ক্রেতার কাছে পৌঁছতে পারবেন।
কোথায় বিক্রি করবেন- নিজস্ব ওয়েব স্টোর না ই-কমার্স মার্কেট প্লেস?
অনলাইন রিসেলিংয়ের ব্যবসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল কোথায় আপনি আপনার পণ্য বিক্রি করবেন। এক্ষেত্রে দুধরনের সুযোগ রয়েছে, এক আপনি আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখান থেকেই যাবতীয় পণ্য বিক্রি করলেন। আর দুই, আপনি অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন অ্যামাজন, ই-বে অথবা ফ্লিপকার্টের মাধ্যমে আপনার রিসেল ব্যবসা শুরু করলেন।
আরো পড়ুন : আপনার ব্যবসার আইডিয়াটি কি সত্যিই লাভজনক? যাচাই করুন এইভাবে
ই-কমার্স মার্কেট প্লেস-এ বিক্রি
অনলাইনে রিসেলিং ব্যবসা শুরু করার সবথেকে সহজ উপায় প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে জিনিস বিক্রি। এই উপায়ে এক সপ্তাহের মধ্যেই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
এক্ষেত্রে আপনার বিকল্পগুলি হল– ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজন, ই-বে, শপক্ল্যুস, পেটিএম।
পদ্ধতি– আপনাকে এই কোম্পানিগুলোর সংশ্লিষ্ট পেজ-এ গিয়ে আপনার ব্যবসার নাম ও বিবরণ নথিভুক্ত করতে হবে। নথিভুক্তির সময়ে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, প্যান নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়। কোনও কোনও কোম্পানি ঠিকানার প্রমাণ পত্রও চেয়ে থাকে। এই দলিলগুলি স্ক্যান করে আপলোড করে দিলে তা যাচাই করতে সাধারণতঃ দিন দুয়েক সময়ে নেয় এই সব সংস্থা।
এই পদ্ধতিতে রিসেল ব্যবসা করার সুবিধা– আপনাকে মার্কেটিং নিয়ে ভাবতে হবেনা। এই প্রতিটি অনলাইন মার্কেট প্লেস-এরই নিজস্ব ক্রেতা রয়েছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ক্রেতা এইসব সাইট থেকে জিনিস কেনেন ফলে আপনি সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন ক্রেতার কাছে।
ছোট শুরুয়াতি ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ সুবিধাও দেয় কোনও কোনও সংস্থা। এরকমই প্রকল্প অ্যামাজন লঞ্চপ্যাড। এক্ষেত্রে পেমেন্ট গেটওয়ে বা টাকা সংগ্রহের বিষয়ও আপনাকে ভাবতে হবে না। বিক্রির টাকা সরাসরি আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে। শিপিংয়ের দায়িত্বও নেবে এই সংস্থাগুলিই। ফলে একদিকে যেমন আপনার টাকা বাঁচবে, অন্যদিকে বাঁচবে শ্রমও। পাশাপাশিই অনেক সংস্থাই প্যাকেজিংয়ের উপাদানও সরবরাহ করে থাকে।
এই পদ্ধতিতে রিসেল ব্যবসা করার অসুবিধা– প্রতিটি বিক্রিতে একটা বড়রকমের কমিশন কাটে এই সমস্ত সংস্থা। কখনো কখনো তা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অবধি হতে পারে। ফলে আপনার লাভের পরিমাণ খানিক কমবে। এছাড়াও তাদের সাইটে আপনার পণ্যটি কীভাবে ডিসপ্লে করা হবে তার ওপর আপনার কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট সাইট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
আরো পড়ুন: লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া খুঁজছেন? জেনে নিন ৬টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ
নিজস্ব ওয়েব স্টোর থেকে বিক্রি
দুভাবে আপনি আপনার নিজস্ব ওয়েব স্টোর তৈরি করতে পারেন। আপনি আপনার নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে তার মাধ্যমে জিনিস বিক্রি শুরু করতে পারেন অথবা অনলাইন স্টোর ক্রিয়েটরের সাহায্যে আপনি আপনার ওয়েব স্টোরটি তৈরি করতে পারেন।
নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করলে ডোমেইন কেনা, ওয়েবসাইটের ডিজাইন, ওয়েব হোস্টিং, পে-মেন্ট গেটওয়ে সেটআপ করা ইত্যাদি যাবতীয় দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে। অন্যদিকে স্টোর ক্রিয়েটরের সাহায্যে তৈরি করলে এই দায়িত্বের অনেকটাই কমে যাবে।
স্টোর ক্রিয়েটরের ক্ষেত্রে আপনার বিকল্পগুলো হল– জেপো, বিল্ড এ বাজার, শপিফাই, শিপরকেট ইত্যাদি।
পদ্ধতি– এই সাইটগুলোর মধ্যে কোনও একটিতে আপনার নাম নথিভুক্ত করুন এবং পণ্য তালিকা যুক্ত করুন। আপনি আপনার নিজস্ব পেমেন্ট গেটওয়ে লিঙ্ক করতে পারেন অথবা সংশ্লিষ্ট সাইটের পেমেন্ট গেটওয়ে-ও ব্যবহার করতে পারেন।
এই পদ্ধতিতে রিসেল ব্যবসা করার সুবিধা- এই সাইটগুলোর মাধ্যমে ব্যবসা করার মূল সুবিধা হল কোনও রকম প্রযুক্তিগত দক্ষতা না থাকলেও সহজেই আপনি আপনার অনলাইন স্টোর তৈরি করে ফেলতে পারবেন এবং তা নিজের পছন্দ ও প্রয়োজন মতো সাজাতেও পারবেন। আপনিই ঠিক করতে পারবেন কোন পণ্য কোথায় কীভাবে ডিসপ্লে হবে। ওয়েবসাইট তৈরির খরচ ও ঝক্কি এড়িয়েই আপনি তৈরি করে ফেলতে পারবেন আপনার পছন্দ মতো স্টোর।
এই পদ্ধতিতে রিসেল ব্যবসা করার সুবিধা- এই পদ্ধতিতে ব্যবসা করার মূল সমস্যাটি হল মার্কেটিং ও ক্রেতার বিশ্বাস অর্জন। এই পদ্ধতিতে ব্যবসা করলে আপনার অনলাইন স্টোরের যাবতীয় প্রচারের দায়িত্ব আপনার নিজের। পাশাপাশি অনেক সময়েই ক্রেতা সম্পূর্ণ অজানা নতুন অনলাইন স্টোর থেকে কিনতে দ্বিধা করেন। ফলে ক্রেতার মনযোগ ও বিশ্বাস অর্জন করা এক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আরো পড়ুন : ২৫ টি অল্প টাকায় লাভজনক ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসার আইডিয়া – শুরু করুন আজই!
উপরের যেকোনও একটি পদ্ধতি বেছে নিয়ে অল্প টাকায় শুরু করতে পারেন আপনার রিসেল ব্যবসা। ঘরে বসে লাভজনক ব্যবসা করার অন্যমত সহজ উপায় এই রিসেলিং। সঠিক পরিকল্পনা করে এগোন। কোন মাধ্যমটি বেছে নিলে আপনার ব্যবসা সবথেকে বেশি লাভজনক হবে সে বিষয়ে তুল্যমূল্য বিচার করুন।
প্রতিদিনের হিসেব রাখুন। মার্কেটিং করার প্রয়োজন হলে এমন মাধ্যম বেছে নিন যাতে কম টাকা বিনিয়োগে পৌঁছতে পারেন বেশি সংখ্যক ক্রেতার কাছে। আপনার অনলাইন স্টোরের প্রচারের জন্য ফেসবুক অ্যাড এর সাহায্য নিতে পারেন। অনলাইন রিসেল ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্রেতার সঙ্গে আপনার সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ কম, আপনার পণ্যই সেখানে আপনার একমাত্র পরিচয়। ফলে পণ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট যত্নবান হোন।
নতুন নতুন পণ্যের খোঁজ রাখুন। আপনার প্রতিযোগীদের ব্যবসা কৌশল ও পণ্য নির্বাচনের দিকেও নজর রাখুন। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই শুরুয়াতি ব্যবসায় প্রতিযোগীরাই সব থেকে ভাল শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে থাকে।