কিভাবে শুরু করবেন চামড়ার বেল্ট এর ব্যবসা

বেল্ট এর ব্যবসা শুরু করার নিয়ম

কি কি উপাদান দিয়ে বেল্ট বানানো হয়?

কিভাবে শুরু করবেন চামড়ার বেল্ট এর ব্যবসা বেল্ট সাধারনত চামড়া, কাপড়, রেক্সিন বা ফেইক লেদার দিয়ে বানানো হয় যেই সকল বেল্ট আমরা কোমরে ব্যবহার করে থাকি।

আজকে চামড়ার বেল্ট এর ব্যবসা নিয়ে বিস্তারিত জানাব।

বেল্ট বানাতে কোন পশুর চামড়া ব্যবহার করা হয়?

সাধারনত গরু বা মহিষের চামড়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে, কারন অনান্য পশু আকারে ছোট হওয়াতে সেই সকল চামড়া দিয়ে বেল্ট বানানো কঠিন, তবে আমরা বাজারে যেসকল ১ পার্ট এর চামড়ার বেল্ট দেখে থাকি সেগুলো ৯৫% মহিষের চামড়ার হয়ে থাকে।

কিভাবে শুরু করবেন চামড়ার বেল্ট এর ব্যবসা 1

কিছু বেল্ট আমরা দেখে থাকি পাশে সেলাই করা ২-৩ পার্ট জোড়া দিয়ে ভিতরে আঠা লাগিয়ে সাইডে সেলাই করা থাকে সেগুলো গরুর চামড়ার।

চামড়ার জুতার ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?

একটি বেল্ট চামড়ার কিনা কিভাবে বুঝবেন?

একটি বেল্ট চামড়ার কিনা সেটা বুঝা অনেক সহজ অনান্য যেকোন চামড়ার পণ্য চাইতে, একটি বেল্ট সাধারনত কিছু ফুটো থাকে যেখানে বেল্ট এর পিনটা ঢুকাতে হয় সেই দিক দিয়ে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন এটা কি মেটেরিয়াল দিয়ে বানানো। যদি সেখান দিয়ে বুঝতে না পারেন তাহলে বেল্ট এর মাথায় একটা পিন দিয়ে বখলেস লাগানোটা খুলে নিলে দেখা যাবে ভিতরে কি ব্যবহার করা হয়েছে।

কি কি মেশিনারী বা যন্ত্রপাতি লাগবে, দাম কত পরবে ?

আমি এখানে একটি ছোট বেল্ট এর কারখানার জন্য সবকিছু জানাচ্ছি, সেলাই মেশিন ১০-২৫ হাজার টাকা, কেঁচি ১০০-১৫০টাকা, রাফি বা এন্টি কাটার ১০০-১৫০টাকা, বড় স্কেল ২০০-৩০০টাকা , ছোট স্কেল ৫০টাকা , চামড়া রেখে কাটার জন্য বড় কাঠ ২০০-৪০০টাকা, স্ক্র ড্রাইভার ৫০টাকা , বেল্ট এর সাইডে রঙ করার জন্য হাতে ব্যবহার করার এইজ কালার মেশিন ৫০০-৭০০টাকা, সীল মারার মেশিন ৭০০০-১০০০০০টাকা ইত্যাদি।

কিভাবে শুরু করবেন চামড়ার বেল্ট এর ব্যবসা 2

তবে আরো বড় আকারে শুরু করতে চাইলে একটি চামড়া পাতলা করার স্কাইভিং মেশিন ২০০০০-৩৫০০০টাকা, সাইডে রঙ করার অটো মেশিন ২০০০০০-৩৫০০০০ টাকা, বেল্ট সাইজ করে কাটার মেশিন ৪০০০০-৭০০০০টাকা, কিনে নিতে পারেন, তবে নতুন কেউ ব্যবসা করতে চাইলে এইসব না কিনে আগে ব্যবসা শুরু করা উচিত, ব্যবসার অবস্থান অনুযায়ি আপগ্রেড মেশিন কেনা যাবে।

কি কি মেটেরিয়াল লাগবে বেল্ট বানাতে?

চামড়া, বখলেস, কয়েক ধরনের আঠা, বখলেস লাগাবার পিন বা স্ক্র, সুতা, বখলেস এর মাথায় লাগানোর জন্য ছোট পলি, বড় পলি, সাইডে লাগানোর জন্য এইজ কালার (জার্মানী/চায়না)।

বেল্ট তৈরিতে দরকারি মেশিনপত্র, মেটেরিয়াল বা কাঁচামাল কোথায় পাওয়া যাবে?

কাঁচামাল এবং মেশিনপত্র সকলকিছু পেয়ে যাবেন ঢাকার বংশাল এবং সিদ্দিকবাজারে, তবে কিছু মেশিন নবাবপুর ধোলাইখাল এলাকা থেকে কিনতে হবে।

দুবাইয়ের উটের বেল্ট তৈরি হচ্ছে রাঙামাটির কোমর তাঁতে

সরাসরি বেল্ট এর উপর কোন ট্রেনিং বা কোর্স বাংলাদেশে নেই,

তবে চামড়াজাত পন্যের ওপর ট্রেনিং বা কোর্স রয়েছে,যেখানে বেল্ট এর উপর ধারনা দেওয়া হয়।

রাঙামাটির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারীদের কোমর তাঁতে তৈরি উটের বেল্ট রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। এ বেল্ট এরই মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে দুবাইয়ে। আর কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় পাহাড়ি নারীদের এ কাজে আগ্রহও বেড়েছে।

কিভাবে শুরু করবেন চামড়ার বেল্ট এর ব্যবসা 3

ঘরে বসেই তারা করতে পারছেন আত্মকর্মসংস্থান

জানা গেছে, ২০০৬ সালে এক দুবাই প্রবাসীর অনুরোধে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের জুনুমা ছড়া গ্রামে রমিকা দেওয়ান কোমর তাঁতে তৈরি করেন উটের বেল্ট। দুবাইয়ে এই বেল্ট রপ্তানি করার পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর ওই এলাকার গ্রামবাসীর মধ্যেও এর উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ে।

এ অবস্থায় উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসেন রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য ঝর্ণা খীসা। সম্প্রতি তিনি বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আমি কাউখালীতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের নিয়ে কোমর তাঁতে তৈরি উটের বেল্ট রপ্তানি করছি দুবাইয়ে। ওই দেশে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এ বেল্ট। তবে সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ কর্মসংস্থান প্রসারিত করা যাচ্ছে না।

কোমর তাঁতিদের একজন বলেন, সুতা দিয়ে কোমর তাঁতে তৈরি করা হয় এ বেল্ট। সেলাই করে তৈরি করতে হয় এটি। এক সেট অর্থাৎ ছোট-বড় সাইজের ৪৫টি বেল্ট তৈরি করতে সময় লাগে একমাস। এরপর রপ্তানি করা হয় দেশের গন্ডি পেরিয়ে দুবাইয়ে।

কিভাবে শুরু করবেন চামড়ার বেল্ট এর ব্যবসা 4

রাঙামাটি কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি মিনু রানী চাকমা বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে উটের বেল্ট তৈরির শ্রমিকরা। তিনি বলেন, এ উটের বেল্ট তৈরি করতে পরিশ্রম অনেক। তবুও পাহাড়ি নারীরা জুম চাষের পাশাপাশি এ কাজ করছেন।

স্থানীয়রা বলেন, পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিলে কোমর তাঁতে তৈরি এ উটের বেল্টের পাশাপাশি অন্যান্য বস্ত্র বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এর মধ্য দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।আমার রাজশাহী

ঘরেই বেল্টের কারখানা

কোমর বন্ধনী বা বেল্ট ছাড়া অনেকেরই সাজ সম্পূর্ণ হয় না। সারা বছরই এর সমান চাহিদা, তাই বিক্রিও ভালো। বেল্ট তৈরির একটি কারখানা করতে বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। বাসায় খালি ঘর থাকলেই বেল্ট তৈরির ছোট কারখানা করা যায়, প্রথম দিকে একাই শুরু করতে পারেন। জিনজিরা, চকবাজার, ইসলামবাগ, যাত্রাবাড়ী, বিবির বাগিচা, সায়েদাবাদ, রায়েরবাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আছে বেল্টের ছোট-বড় কারখানা। ব্যবসা শুরুর আগে বেচা-বিক্রি আর কাঁচামাল সংগ্রহের খোঁজখবর এসব কারখানা থেকেই নিতে পারেন।

কী কী লাগবে

কমপক্ষে আট ফুট বাই আট ফুটের একটি ঘর লাগবে। এ ছাড়া লাগবে চামড়া অথবা রেক্সিন। আঠা, সেলাই মেশিন, বোর্ড কাগজ, ডাইস মেশিন ইত্যাদি।

বেল্ট যেভাবে বানানো হয়

বেল্ট হয় তিন রকমের_শুধু চামড়ার, চামড়া ও রেক্সিনের ও শুধুই রেক্সিনের। চামড়ার বেল্টগুলো চামড়া কেটে সাইজ করে তার এক মাথায় বকলেস লাগালেই হয়ে গেল। কখনো কখনো ডাইস মেশিনের ছাপ দিয়ে নকশা করা হয়। চামড়া-রেক্সিনের তৈরি বেল্টগুলোর ওপর দিকে থাকে চমড়া আর নিচের অংশে রেক্সিন।

কিভাবে শুরু করবেন চামড়ার বেল্ট এর ব্যবসা 5

দুই পাশ সেলাই দিয়ে বকলেস লাগালেই প্রস্তুত হয়ে যায়। আর রেক্সিনের বেল্টগুলোর কাজ হয় কয়েক স্তরে। বেল্টের মাপমতো কাগজ কেটে তার দুই পাশে রেক্সিন দিয়ে মুড়িয়ে আঠা লাগাতে হয়। তারপর সেলাই করতে হয়। সবশেষে বকলেস লাগিয়ে দিতে হয়। তবে কম্পানির নাম খোদাই করতে চাইলে ডাইসের ব্লকে রেখে ছাপ দিতে হবে।

কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি

সেলাই মেশিন কেনা যাবে আট হাজার টাকার মধ্যে। আর ডাইস মেশিন কিনতে খরচ পড়বে ১০ হাজার টাকা। আর প্রতিবার ডাইস বানাতে খরচ হবে এক থেকে তিন হাজার টাকা। এক গজ চার গিরা করে একেকটা চামড়া কেনা যাবে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে। একই মাপের রেক্সিন ৭০০ টাকা। বুক্কা বা কাগজের বোর্ড ৩০০ টাকা, তিন স্তরে বানানো বেল্টের নিচের অংশের চামড়ার দাম পড়বে ৫০০ টাকার মতো। আঠা দুই কেজির বোতলের দাম ৭০০ টাকা।

কোথায় কোন কাঁচামাল পাওয়া যায়

সব রকমের কাঁচামাল পাওয়া যাবে সিদ্দিকবাজার, নবাবপুর, চকবাজার, বংশাল বা রায়েরবাজারে। মেশিন কেনার জন্য যেতে হবে ঢাকার বংশাল অথবা ধোলাইখালে।

কাজ ও আয়

একজন লোক দৈনিক ৫০টি বেল্ট বানাতে পারে। পাইকারিভাবে প্রতিটি চামড়ার বেল্ট ১২০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়, রেক্সিন-চামড়ার বেল্ট বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। আর শুধুই রেক্সিনের বেল্ট বিক্রি করা যায় ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আর প্রতিটি বেল্টেই ৩০ থেকে ৪০ টাকা লাভ থাকে।

প্রশিক্ষণ নেবেন যেখানে

সরকারিভাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন তিন মাসের একটি কোর্স করায়। চাইলে এখানে যোগাযোগ করে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।

নকশা কেন্দ্র

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ