কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়

কর্মসংস্থান ব্যাংক রাষ্ট্র মালিকানাধীন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। দেশের বেকার বিশেষ করে বেকার যুবদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করে দারিদ্র্য বিমোচন করার লক্ষ্যে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭নং আইন দ্বারা কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় 1

সরকার বর্ণিত আইন এর ১(২) ধারাতে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ৩০ জুন, ১৯৯৮ মোতাবেক ১৬ আষাঢ়, ১৪০৫ বঙ্গাব্দ তারিখে কর্মসংস্থান ব্যাংক আইন বলবৎ করেন। অতঃপর ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮ তারিখ হতে প্রধান শাখা, ঢাকা থেকে ঋণ বিতরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, ১, রাজউক এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ এ অবস্থিত। সমগ্র দেশে রয়েছে ব্যাংকের ১৫টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও ২১২টি শাখার নেটওয়ার্ক। জেলা সদরে ৬৪টি, প্রধান শাখা, ঢাকা ব্যতিত ঢাকা মহানগরে ৬টি এবং উপজেলা সদরে ১৪২টি শাখার মাধ্যমে ব্যাংক সেবা প্রদান করছে।

সেবাসমূহ ও সিটিজেন চার্টারঃ

ব্যাংক জামানত গ্রহণ করে অথবা জামানত ব্যতিরেকে সকল প্রকার অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিশেষ করে বেকার যুবদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ণ করে। এছাড়াও সরকারের বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে “ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্প“, “শিল্প কল-কারখানায় স্বেচ্ছা-অবসর/কর্মচ্যুত শ্রমিক/কর্মচারীদের পূনঃপ্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান কর্মসূচী“ এবং অর্থ-মন্ত্রণালয়ের অধীনে “কৃষি ভিত্তিক শিল্পে ঋণ সহায়তা কর্মসূচী”-তে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

১।   শাখা, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে নিম্নোক্ত সেবা প্রদান করছে।

ক) নিজস্ব কর্মসূচীঃ

১.  দেশের বেকার বিশেষ করে বেকার যুবদের আত্ম-কর্মসংস্থানে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান কর্মসূচী।

খ) সরকারের বিশেষ কর্মসূচীঃ

১.  কৃষি ভিত্তিক শিল্পে ঋণ প্রদান কর্মসূচী;

২.  শিল্প কারখানা/প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছা-অবসর/কর্মচ্যুত শ্রমিক/কর্মচারীদের কর্মসংস্থানে জামানত বিহীন ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান কর্মসূচী;

৩.  বাঝুঁকানিশি-বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রম নিরসন কল্পে ঋণ প্রদান কর্মসূচী।

গ)কনজুমারস ক্রেডিট ও বিভিন্ন কর্মচারী ঋণঃ ব্যাংকে কর্মরত সকল স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন ভোগ্যপন্য সামগ্রী ক্রয়ে/মটর সাইকেল ক্রয়ে/ গৃহ নির্মাণে ঋণ প্রদান কর্মসূচী।

২।  কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় 2

ক) উদ্যোক্তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে;

খ) শাখার অধিক্ষেত্রের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে;

গ) বেকার/অর্ধবেকার হতে হবে;

ঘ) বয়স সাধারণতঃ ১৮ হতে ৪৫ বছর হতে হবে। তবে পুরাতন ঋণ গ্রহীতাদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিলযোগ্য;

ঙ)  উদ্যোক্তাকে ইকুইটি বহনের ক্ষমতা থাকতে হবে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);

চ)  প্রকল্প পরিচালনার বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ/ অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

ছ)  ঋণ ব্যবহারের যোগ্যতাসহ ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা ও আর্থিক আচরণে সুনামের অধিকারী হতে হবে;

জ) অন্য কোন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও অথবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ খেলাপী হলে ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না;

ঝ) ঋণ নীতিমালার অন্যান্য নিয়মাবলী অনুসরণে সক্ষম হতে হবে।

৩।   ঋণের আবেদন জমাদান ও নিষ্পত্তিকরণঃ

ক) ব্যাংকের নির্ধারিত ফরমে (১০০.০০ টাকা মূল্য) ঋণের আবেদন করতে হবে, কোন প্রসেসিং ফি নাই;

খ) ঋণের আবেদন গ্রহণের সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে এর নিষ্পত্তি করা হবে।

৪।   ঋণের খাতঃ

মৎস্য সম্পদ, প্রাণী সম্পদ, বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, সেবা খাত, বাণিজ্যিক খাত ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রকল্প।

৫।   সুদের হারঃ

ক) উৎপাদনশীল ও সেবামূলক খাতের ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার বার্ষিক শতকরা ১১ টাকা (Flat Rate), ঋণটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ১% যোগ করে সুদারোপযোগ্য;

খ) বাণিজ্যিক খাতের ঋণের ক্ষেত্রে বার্ষিক শতকরা ১৩ টাকা (Flat Rate), ঋণটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ১% যোগ করে সুদারোপযোগ্য;

গ) কৃষি ভিত্তিক শিল্পখাতে বার্ষিক ৮%-৯%;

ঘ)  ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক ঋণ কর্মসূচী-১৩%।

*ব্যাংকের সুদের হার পরিবর্তন যোগ্য।

কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় 3

৬।   ঋণের মেয়াদ ও পরিশোধসূচীঃ

ক)সাধারণত: ২ বছর। তবে প্রকল্পের প্রকৃতি, আকার, সম্ভাব্য মুনাফা ও ঋণ – পরিশোধের ক্ষমতা বিবেচনা করে ঋণের মেয়াদ ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর হতে পারে;

খ) উৎপাদিত পণ্য/সেবার বিপণন/বাজারজাতকরণের উপর ভিত্তি করে মাসিক/ত্রৈমাসিক/ষান্মাসিক/এককালীন কিস্তির পরিশোধসূচী দেয়া হয়।

৭।   মাসিক সঞ্চয় (বাধ্যতামূলক)

ঋণের পরিমাণমাসিক সঞ্চয়সঞ্চয়ের টাকা উত্তোলন
৫০০০০.০০ টাকা পর্যন্ত১০০.০০ টাকাঋণের হিসাব বন্ধ হলে এবং পুন: ঋণ না নিলে সঞ্চয়ের টাকা উত্তোলন করা যাবে।
৫০০০০১/-টাকা হতে ১০০০০০/-টাকা পর্যন্ত১৫০.০০ টাকা
১০০০০১/- টাকা হতে ৩০০০০০/-টাকা উপরে২০০.০০ টাকা
৩০০০০১/-টাকা হতে ৫০০০০০/-টাকা পর্যন্ত৩০০.০০ টাকা
৫০০০০০/-টাকার উর্দ্ধে৫০০.০০ টাকা

৮।   বলবৎ ষ্ট্যাম্প এ্যাক্ট অনুযায়ী  চার্জ ডকুমেন্টে নিম্নরূপ মূল্যমানের ষ্ট্যাম্প ব্যবহৃত হবে (ষ্ট্যাম্প এ্যাক্ট পরিবর্তনের সাথে সাথেপরিবর্তনযোগ্য);

ক)ডিপি নোট/ডবল পার্টি ডিপি নোটঃ

১.  ২০০০.০০ টাকা মূল্যমানের জন্য ১০.০০ টাকা;

২.  ২০০০.০০ টাকার ঊদ্ধে ১০,০০০.০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের জন্য ২০.০০ টাকা
৩.  ১০০০০.০০ টাকার ঊর্ধ্ব মূল্য মানের জন্য ৫০.০০ টাকা।

Comments (No)

Leave a Reply

এই সাইটের কোন লেখা কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ